অফিসার সংকটে ত্রিপুরা পুলিশ

ত্রিপুরা পুলিশে পদোন্নতি বন্ধের জেরে চরম অফিসার সংকট!

ত্রিপুরা রাজ্য পুলিশ বিভাগে ভয়াবহ অফিসার সংকট ও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ পদোন্নতির কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রশাসনিক কাজের পরিকাঠামো প্রায় ভেঙে পড়েছে। রাজ্য পুলিশ, টিএসআর ও অন্যান্য আরক্ষা শাখাগুলিতে শূন্যপদ, অতিরিক্ত কাজের চাপ, দায়িত্বের ভারসাম্যহীনতা এবং প্রশাসনিক উদাসীনতায় ক্রমেই গভীর সংকট তৈরি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অভ্যন্তরেই ক্ষোভ বাড়ছে। সূত্র অনুযায়ী, রাজ্যের বিভিন্ন থানাসহ টিএসআরের একাধিক ব্যাটেলিয়নে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই অফিসার সংকট প্রকট। বহু থানায় একজন অফিসারকে একাধিক দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। এমনকি দক্ষিণ ও উত্তর রেঞ্জের ডিআইজি পদ একজন আধিকারিক একাই বহন করছেন বহু বছর ধরে। জেলা পুলিশ সুপার অফিসগুলিতেও হাতে গোনা কিছু ডেপুটি এসপি, অতিরিক্ত এসপি ও ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার দিয়ে চলছে পুরো প্রশাসন।

এমন পরিস্থিতিতে জটিলতা আরও বাড়িয়েছে পদোন্নতির বিষয়ে প্রশাসনিক উদাসীনতা। জানা গেছে, ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর রাজ্যের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (পারসোনাল অ্যান্ড ট্রেনিং) বিভাগ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি (ফাইল নম্বর-10(3)-GA(P&T)/15) জারি করে রাজ্য পুলিশে গ্রেড-ওয়ান ও গ্রেড-টু স্তরের অফিসার পদ সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। পদোন্নতির জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে ফাইল টিপিএসসিতে পাঠানো হলেও অজ্ঞাত কারণে তা কার্যকর হয়নি।

এদিকে অফিসার সংকটের ফলে থানার সাধারণ কাজ, রিপোর্ট লেখা, তদন্ত, নজরদারি — সব ক্ষেত্রেই বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বপালনের বদলে অফিসারদের করণিকের কাজেও জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে। ভিআইপি মুভমেন্ট হলে ব্যস্ততা আরও বাড়ে, যার ফলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়ছে। জেলা পর্যায়ের পুলিশ অফিসগুলিতে কর্মসংস্কৃতি একেবারে তলানিতে। সবচেয়ে সংকটজনক অবস্থা দেখা দিয়েছে ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস (টিএসআর) বাহিনীগুলিতে।

মোট ১৪টি টিএসআর ব্যাটেলিয়ন রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলের অধীনে পরিচালিত হলেও সেখানে সহকারী কমান্ডেন্ট পদে চরম শূন্যতা। দিল্লি ও ছত্তিশগড়ে মোতায়েন টিএসআরের দুই বাহিনীতে প্রতিটি বাহিনীতে থাকা সাতটি কোম্পানির জন্য মোট ১৪ জন সহকারী কমান্ডেন্ট প্রয়োজন হলেও রয়েছেন মাত্র চারজন। ফলে একজন ছুটিতে থাকলে অপর সহকারী কমান্ডেন্টকে পুরো বাহিনীর দায়িত্ব বহন করতে হচ্ছে, যা থেকে তৈরি হচ্ছে অপারেশনাল বিশৃঙ্খলা। অন্যদিকে, টিএসআরের সাধারণ জওয়ানরাও অবর্ণনীয় পরিস্থিতির শিকার। ছুটি চেয়েও পাচ্ছেন না, জিপিএফের টাকা তুলতে গিয়ে হয়রানির মুখে পড়ছেন। বহু জওয়ান অভিযোগ করেছেন, বহিঃরাজ্যে কর্মরত থাকায় তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে বাহিনীর ভিতরেই হতাশা ও অসন্তোষ বাড়ছে।

সবমিলিয়ে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনে এখন চরম এক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নিচুতলার কর্মীরা এক পদে ১২-১৫ বছর ধরে কর্মরত থেকেও পদোন্নতির সুযোগ পাচ্ছেন না, ফলে অবসরের আগেই তারা মনোবল হারাচ্ছেন। উপরতলার পদোন্নতি হলে তবেই তো নিচের স্তরে শূন্যপদ তৈরি হবে — এমন যুক্তি সামনে রেখে বহু আরক্ষা কর্মী মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব ও রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশকের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, “পদোন্নতি হলেই কাজের প্রতি আগ্রহ ও উৎসাহ বাড়ে। দপ্তরের শূন্যপদ পূরণ না হলে, কাজের গুণগত মান ও আইনশৃঙ্খলা দুই-ই মুখ থুবড়ে পড়বে।” ত্রিপুরার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর রাখার জন্য শিগগিরই সরকারের উচ্চমহলের তরফে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা, এখন সেটাই দেখার।About Us

রেলপথে সক্রিয় মাদকচক্র

লেডি মাফিয়ার নেতৃত্বে চলছে রেল পথে মাদক সাম্রাজ্য!

রেলপথকে ব্যবহার করে ত্রিপুরায় গড়ে উঠেছে একটি সুসংগঠিত এবং বিপজ্জনক মাদক পাচার চক্র। এই চক্রের শীর্ষে রয়েছেন এক প্রভাবশালী লেডি মাফিয়া, যিনি “নমোঃ কোম্পানির প্রোডাক্ট” নামে পরিচিত। জানা গেছে, আগরতলা রেল স্টেশন কেন্দ্র করে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে এই চক্রের জাল। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের কার্গো কামরাকে ব্যবহার করেই রমরমা চলছে কোটি টাকার গাঁজা পাচার, আর কলকাতার বড়বাজার থেকে আসছে নিষিদ্ধ কফ সিরাপ ‘ফেন্সি’।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পাচারকারীরা যেন “ইজারা” পেয়েই বসেছে মাদক কারবারের। বিনা লগ্নিতে তারা ঘরে বসে পাচ্ছে কমিশনের মোটা অঙ্ক। রাজনৈতিক আশীর্বাদে প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি এবং কর্মকর্তাদের মদতে পাচারকারীরা বারবার কৌশল পাল্টে নিরাপদে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ব্যবসা। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ট্রেনের কার্গো ব্যবস্থার ভার এখন বিহারের একটি সংস্থার হাতে। এই সংস্থা নিয়মিত গাঁজার প্যাকেট রেলের মালখানায় মজুত করে এবং পরে তা পার্সেল কামরায় তুলে দেয়। কলকাতার বড়বাজার থেকে আসা কফ সিরাপ ‘ফেন্সি’ আবার সীমান্তবর্তী এলাকা বিশালগড় হয়ে পাচার হচ্ছে বাংলাদেশে।

আগরতলা, ধর্মনগর, বদরপুর, শিলচর সহ একাধিক রেল স্টেশনে সক্রিয় রয়েছে এই মাদক চক্রের লিঙ্কম্যানরা। শুধু রেল কর্মীরা নয়, আরপিএফ জওয়ানদের একাংশও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। কমিশনের বিনিময়ে তারা চোখ বুজে মাদক বোঝাই পার্সেল ঢুকতে সাহায্য করছেন বলে অভিযোগ। বিশালগড় হয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর দায়িত্বে রয়েছেন একজন রাষ্ট্রবাদী নেত্রীর ভাই। পাশাপাশি অন্তত চারজন মণ্ডল সভাপতিও এই কারবার থেকে নিয়মিত কমিশন পাচ্ছেন বলে খবর।

এই গোটা চক্রের মূল মাথা ‘লেডি মাফিয়া’ কুট্টি, যার ভাই বর্তমানে নারকোটিক্স আইনে জেলে। ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে এখন কুট্টিই গোটা ব্যবসা সামলাচ্ছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে পাঠানো গাঁজার চালান মাঝপথে নামিয়ে দেওয়া হয় অসম সীমান্তের নির্জন কোনো স্টেশনে। সেখান থেকে স্করপিও, ভলবো বাসে পাচার হয় বিহারে। জানা গেছে, বিহারী গাঁজাব্যবসায়ীরা ত্রিপুরার গাঁজার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, ফলে তারা এখন রাজ্যে গাঁজা চাষেও লগ্নি করছে। আগরতলা রেল স্টেশনের পরিত্যক্ত কোয়ার্টারগুলিকে পরিণত করা হয়েছে নেশার গুদামে। গভীর রাতে সেখানে চলে মাদকের আসর। সিদ্ধিআশ্রম, ওএনজিসি, বাধারঘাট এলাকার কিশোর-তরুণরা রাতভর এই এলাকায় নেশায় মত্ত থাকে। শুধু আগরতলা নয়, রাজ্যের অন্যান্য স্টেশনেও মাদকচক্রের প্রভাব গভীর।

রেল যাত্রীদের অভিযোগ, সন্ধ্যার পর স্টেশন এলাকাগুলোতে কোনও পুলিশি নজরদারি নেই। ফলে পাচারকারীরা প্রকাশ্যেই তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, রেল পুলিশের একটি অংশ এবং স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় এই বিপজ্জনক চক্র দিনের পর দিন অক্ষত রয়েছে। রাজ্যে বাড়ছে মাদকসেবী কিশোর ও তরুণের সংখ্যা। বিভিন্ন ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য — ফেন্সি, ট্যাবলেট, ব্রাউন সুগার, হেরোইন — প্রতিনিয়ত প্রবেশ করছে রেলপথে। ফলে ধ্বংসের মুখে পড়ছে রাজ্যের যুবসমাজ।

সাধারণ মানুষ এবং যাত্রীদের প্রশ্ন — কেন এই চক্র এখনও অক্ষত? প্রশাসন কি চোখ বন্ধ করে রেখেছে? মাদক পাচার রুখতে কবে কঠোর পদক্ষেপ নেবে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার? এই মাদক চক্র নিয়ন্ত্রণ কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নয়, সমাজের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব। এই মাফিয়া চক্রের শিকড় যত গভীরে গিয়ে থাকুক না কেন, রেলপথকে নিরাপদ ও যুবসমাজকে রক্ষা করতে হলে এখনই সকলে একজোটে প্রতিরোধ করে তুলতে হবে বলে সচেতন মহলের অভিমত।About Us

সাব্রুম সীমান্ত আবারো মাদক পাচারের করিডোর

আন্তর্জাতিক মাদকচক্রের নিশানায় দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম সীমান্ত!

ত্রিপুরার দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত সাব্রুম সীমান্ত ফের আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারীদের রুট ম্যাপে ফিরে এসেছে। রেল ও সড়ক পথে পুলিশের কড়াকড়ি এবং নিয়মিত ধরপাকড়ের জেরে পাচারকারীরা এখন সীমান্তবর্তী অঞ্চলকে মাদক পাচারের জন্য বেছে নিচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, থাইল্যান্ড ও মায়ানমার থেকে বাংলাদেশ হয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক এই রুট ধরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ঢুকছে।

পাচারের জন্য ব্যবহৃত এই করিডোরটি একসময় ‘সোনালী রুট’ নামে পরিচিত ছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফের সেই পুরনো পথকেই সক্রিয় করা হয়েছে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সক্রিয় মাদক চক্রগুলি থাইল্যান্ড ও মায়ানমার থেকে হিরোইন, চরস, ব্রাউন সুগার-এর মতো বিপুল পরিমাণ মাদক এনে বাংলাদেশে সংরক্ষণ করছে। সেখান থেকে মাদক পাচার করা হচ্ছে সাব্রুম সীমান্ত ঘেঁষা মাগরুম, বৈষ্ণবপুর, জলেয়া ও শিলাছড়ির ভগবান টিলা দিয়ে।

ত্রিপুরার দক্ষিণ সীমান্তের বহু এলাকায় এখনো কাঁটাতারের বেড়া নেই। যেসব জায়গায় সীমান্ত উন্মুক্ত, সেখান থেকেই সবচেয়ে বেশি পাচার হচ্ছে বলে জানা গেছে। এই অনিরাপদ সীমান্ত এলাকাগুলি আন্তর্জাতিক মাদকচক্রের জন্য ‘সুবর্ণ সুযোগ’ তৈরি করেছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও পাচারকারীরা নানা কৌশলে তাদের চোখে ধুলো দিয়ে পাচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ত্রিপুরার ভৌগোলিক অবস্থান পাচারকারীদের পক্ষে অত্যন্ত সুবিধাজনক। একদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম, অপরদিকে মিজোরাম, মণিপুর ও আসামের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুবাদে এই পথটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভিতরে দ্রুত মাদক প্রবেশের উপযুক্ত করিডোর হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রুট ধরে শুধু মাদক নয়, বহু আন্তর্জাতিক অপরাধচক্রের কার্যকলাপও তীব্রতর হতে পারে।

সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বহু যুবক-যুবতীকে মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে পাচারকারীরা তাদের দলে টেনে নিচ্ছে। স্থানীয় স্তরে ‘ক্যারিয়ার’ হিসেবে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। পুলিশের একাংশ মনে করছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় কর্মসংস্থানের অভাব এবং প্রশাসনিক নজরদারির ঘাটতি পাচারের বিস্তারে বড় ভূমিকা রাখছে। সম্প্রতি প্রায় প্রতি সপ্তাহেই রাজ্যের বিভিন্ন অংশ থেকে কোটি কোটি টাকার মাদকসহ পাচারকারীদের আটক করা হচ্ছে। তবু পাচারের ধারা থামছে না। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অনেক ক্ষেত্রেই বড় চক্রের মূল পরিকল্পনাকারীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো (Narcotics Control Bureau), বিএসএফ ও রাজ্য পুলিশের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকায় পুরো চক্র ভাঙা যাচ্ছে না।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা বারবার বলেছেন “নেশামুক্ত ত্রিপুরা” গড়ার কথা। কিন্তু মাদক পাচারের এই বিস্তার সেই প্রতিশ্রুতিকে কার্যত প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পাচারের বিরুদ্ধে শুধু কথা নয়, প্রয়োজন জোরালো প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও কেন্দ্রীয় সহযোগিতা। ত্রিপুরার সাব্রুম সীমান্ত যে আবার আন্তর্জাতিক মাদক পাচারের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠছে, তা এখন স্পষ্ট। প্রশাসনের উচিত দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো এবং পাচারকারীদের চক্র ভেঙে ফেলা; নাহলে এই চক্র এক সময় পুরো রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।About Us

স্বচ্ছ নিয়োগনীতির নামে চলছে প্রহসন

বিরোধীদের অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর স্বচ্ছ নিয়োগ নীতিতে বাইরের রাজ্যের সুপারিশে হচ্ছে চাকরি!

ত্রিপুরায় সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা একদিকে দাবি করেছেন, “সরকার নিয়মনীতি মেনেই স্বচ্ছতার সাথে চাকরি দিচ্ছে। কাউকে বঞ্চিত করা সরকারের লক্ষ্য নয়।” অন্যদিকে, বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী এই প্রক্রিয়াকে “নিয়োগ উৎসবের নামে প্রভাব বিস্তারের কৌশল” বলে আক্রমণ করেছেন।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, বর্তমান সরকার পূর্বতন সরকারের সেই পদ্ধতির অবসান ঘটিয়েছে, যেখানে চাকরি পেতে পার্টি অফিসে লাইন দিতে হতো বা নেতার বাড়ি ঘুরে বেড়াতে হতো। তিনি বলেন, “আজ আর সেই অবস্থা নেই। এখন স্বচ্ছতা বজায় রেখে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি কর্মসংস্থান ও চাকরির সুযোগ তৈরি করবো—সেই পথেই হাঁটছি।” তিনি জানান, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জয়েন্ট রিক্রুটমেন্ট বোর্ড ত্রিপুরা (JRBT)-র মাধ্যমে গ্রুপ সি পদে ১,৯৮০ জন প্রার্থীকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। কৃষি সহায়ক, এলডিসি-সহ ৩৫টি দপ্তরে এই নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। রাজ্যের ছেলে-মেয়েদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে পিআরটিসি (PRTC) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন, আমরাও সেই লক্ষ্যে কাজ করছি,” বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

তবে বিরোধী দলনেতা তথা সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী সরকারের এই দাবি মানতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, “স্বচ্ছতা থাকলে রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে মন্ত্রীদের মাধ্যমে চাকরি দেওয়ার প্রয়োজন হতো না। সচিব বা অধিকর্তারাই যদি নিয়োগপত্র দিতেন, তাহলে বোঝা যেত প্রক্রিয়াটি নিরপেক্ষ। এখনকার এই ‘নিয়োগ অনুষ্ঠান’ আসলে প্রার্থীদের প্রভাবিত করার রাজনৈতিক চেষ্টামাত্র।” তিনি অভিযোগ করেন, ত্রিপুরার এমএ, এমএসসি ডিগ্রিধারী যুবকেরা যেখানে গ্রুপ ডি পদে নিযুক্ত হচ্ছেন, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া বা আসামের ধুবড়ি জেলা থেকে অষ্টম বা নবম শ্রেণি পাস প্রার্থীদের চাকরি দেওয়া হচ্ছে আরএসএস ও বিজেপি নেতাদের সুপারিশে। “এটাই যদি স্বচ্ছতা হয়, তাহলে প্রশ্ন তো উঠবেই,” মন্তব্য করেন তিনি।

চৌধুরীর দাবি, রাজ্যে বর্তমানে ৫১,০০০-এর বেশি শূন্য পদ রয়েছে। অথচ সরকার গর্ব করে মাত্র ২২৮টি শিক্ষক পদে নিয়োগপত্র বিলি করছে। আরও ১৮ থেকে ১৯টি দপ্তরের শূন্যপদের তথ্য সরকার প্রকাশ করছে না বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। এই নিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। শাসক দল স্বচ্ছতা ও নিয়মের কথা বললেও, বিরোধী পক্ষের অভিযোগ—এই নিয়োগ কার্যত এক ধরনের প্রহসন এবং রাজনৈতিক স্বার্থসাধনের হাতিয়ার। সরকারি পরিসংখ্যান, শূন্যপদের সংখ্যা এবং বাইরের প্রার্থীদের নিয়োগ নিয়ে এবার আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না হলে বিতর্ক থামার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।About Us