বিরোধীদের অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর স্বচ্ছ নিয়োগ নীতিতে বাইরের রাজ্যের সুপারিশে হচ্ছে চাকরি!
ত্রিপুরায় সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা একদিকে দাবি করেছেন, “সরকার নিয়মনীতি মেনেই স্বচ্ছতার সাথে চাকরি দিচ্ছে। কাউকে বঞ্চিত করা সরকারের লক্ষ্য নয়।” অন্যদিকে, বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী এই প্রক্রিয়াকে “নিয়োগ উৎসবের নামে প্রভাব বিস্তারের কৌশল” বলে আক্রমণ করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, বর্তমান সরকার পূর্বতন সরকারের সেই পদ্ধতির অবসান ঘটিয়েছে, যেখানে চাকরি পেতে পার্টি অফিসে লাইন দিতে হতো বা নেতার বাড়ি ঘুরে বেড়াতে হতো। তিনি বলেন, “আজ আর সেই অবস্থা নেই। এখন স্বচ্ছতা বজায় রেখে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি কর্মসংস্থান ও চাকরির সুযোগ তৈরি করবো—সেই পথেই হাঁটছি।” তিনি জানান, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জয়েন্ট রিক্রুটমেন্ট বোর্ড ত্রিপুরা (JRBT)-র মাধ্যমে গ্রুপ সি পদে ১,৯৮০ জন প্রার্থীকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। কৃষি সহায়ক, এলডিসি-সহ ৩৫টি দপ্তরে এই নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। রাজ্যের ছেলে-মেয়েদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে পিআরটিসি (PRTC) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন, আমরাও সেই লক্ষ্যে কাজ করছি,” বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে বিরোধী দলনেতা তথা সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী সরকারের এই দাবি মানতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, “স্বচ্ছতা থাকলে রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে মন্ত্রীদের মাধ্যমে চাকরি দেওয়ার প্রয়োজন হতো না। সচিব বা অধিকর্তারাই যদি নিয়োগপত্র দিতেন, তাহলে বোঝা যেত প্রক্রিয়াটি নিরপেক্ষ। এখনকার এই ‘নিয়োগ অনুষ্ঠান’ আসলে প্রার্থীদের প্রভাবিত করার রাজনৈতিক চেষ্টামাত্র।” তিনি অভিযোগ করেন, ত্রিপুরার এমএ, এমএসসি ডিগ্রিধারী যুবকেরা যেখানে গ্রুপ ডি পদে নিযুক্ত হচ্ছেন, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া বা আসামের ধুবড়ি জেলা থেকে অষ্টম বা নবম শ্রেণি পাস প্রার্থীদের চাকরি দেওয়া হচ্ছে আরএসএস ও বিজেপি নেতাদের সুপারিশে। “এটাই যদি স্বচ্ছতা হয়, তাহলে প্রশ্ন তো উঠবেই,” মন্তব্য করেন তিনি।
চৌধুরীর দাবি, রাজ্যে বর্তমানে ৫১,০০০-এর বেশি শূন্য পদ রয়েছে। অথচ সরকার গর্ব করে মাত্র ২২৮টি শিক্ষক পদে নিয়োগপত্র বিলি করছে। আরও ১৮ থেকে ১৯টি দপ্তরের শূন্যপদের তথ্য সরকার প্রকাশ করছে না বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। এই নিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। শাসক দল স্বচ্ছতা ও নিয়মের কথা বললেও, বিরোধী পক্ষের অভিযোগ—এই নিয়োগ কার্যত এক ধরনের প্রহসন এবং রাজনৈতিক স্বার্থসাধনের হাতিয়ার। সরকারি পরিসংখ্যান, শূন্যপদের সংখ্যা এবং বাইরের প্রার্থীদের নিয়োগ নিয়ে এবার আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না হলে বিতর্ক থামার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।