চরম অনিশ্চয়তায় SPO জওয়ানদের পরিবারগুলো!
ত্রিপুরা রাজ্যে একসময় উগ্রবাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা SPO (স্পেশাল পুলিশ অফিসার) জওয়ানরা আজ চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। একসময় বৈরি সন্ত্রাস দমন করতে গিয়ে জীবন বাজি রেখে কাজ করা এই জওয়ানদের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে।
২০০০ সালে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের নেতৃত্বে নৃপেন চক্রবর্তীর আমলে রাজ্যে SPO বাহিনী গঠিত হয়। রাজ্য থেকে উগ্রবাদ দূরীকরণের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত SPO জওয়ানদের জঙ্গল অভিযানে পাঠানো হত। তাঁরা রাজ্য পুলিশের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করতেন। তাঁদের নিরলস পরিশ্রমের ফলে রাজ্যে ধীরে ধীরে উগ্রবাদী কার্যকলাপ হ্রাস পায় এবং বর্তমানে ত্রিপুরা শান্তিপূর্ণ রাজ্যে পরিণত হয়েছে। কিন্তু উগ্রবাদ নির্মূল হওয়ার পর এই বাহিনীর কদর কমতে শুরু করে।
২০০০ সালে গঠিত হওয়ার পর থেকে একটানা ২৪ বছর কর্তব্য পালন করলেও এসপিও জওয়ানদের নিয়মিত করা হয়নি। এমনকি তাঁদের বেতন ও ভাতার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার আগে নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, এসপিওদের রাজ্য পুলিশের মতো নিয়মিত করা হবে এবং সমস্ত সুবিধা দেওয়া হবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আজও বাস্তবে রূপ পায়নি। বর্তমানে রাজ্যের ৩৭০০ জন এসপিও জওয়ানকে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও থানার গাড়ি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মাঝে মাঝে তাঁদের প্রশিক্ষণের জন্য ডাকা হলেও কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি। একসময় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এসপিওদের নিজস্ব ক্যাম্প থাকলেও, আজ তাঁরা অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ করছেন।
প্রথম দিকে এসপিও জওয়ানরা ৭,০০০ টাকা মাসিক পারিশ্রমিক পেতেন, যা সম্প্রতি ১২,০০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। তবে তাঁদের দাবি, এই সামান্য বেতন দিয়ে পরিবার চালানো অসম্ভব। তাছাড়া, তাঁদের নিয়মিত পুলিশ কর্মীদের মতো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। একজন এসপিও যদি কর্তব্যরত অবস্থায় মারা যান, তবে তাঁর পরিবারের জন্য নেই কোনো সরকারি সহায়তা। ২০০০ সাল থেকে এপর্যন্ত ১২৬ জন এসপিও জওয়ান মৃত্যুবরণ করেছেন, কিন্তু তাঁদের পরিবারকে সরকার এক টাকাও অনুদান দেয়নি। ফলে তাঁদের পরিবার চরম দুর্দশার মধ্যে পড়েছে। আজ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল এসপিও জওয়ানদের সমস্যার সমাধানে জোরালো দাবিতে সরব হয়নি। ফলে তাঁদের দুর্দশা ক্রমশ বাড়ছে।
একসময় জীবন বাজি রেখে রাজ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এসপিও জওয়ানরা আজ অস্থায়ী কর্মীর মতো কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁদের নিয়মিতকরণের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন জওয়ান ও তাঁদের পরিবার। ভুক্তভোগী এসপিও জওয়ানদের একটাই প্রশ্ন— তাঁরা কি কখনো ত্রিপুরা পুলিশের মতো স্বীকৃতি পাবেন? নাকি তাঁদের সারা জীবন অনিশ্চয়তার মধ্যেই কাটাতে হবে?