CPIM

CPIM কি ধর্মের রাস্তাতেই হাঁটতে চলেছে এবার?

CPIM এর এবারের পার্টি কংগ্রেস নতুন দিশার সন্ধানে!

ভারতের পরিবর্তিত রাজনীতিতে কি নতুন ভাবে ভাবনা চিন্তা করতে চলেছে CPIM? চলতি বছরের অনুষ্ঠিত হতে চলা CPIM পার্টি কংগ্রেসে নতুন দিশা কি হবে? কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে?বিজেপির মতাদর্শকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ করার মতোই বা কি অস্ত্র হাতে নেবে বামেরা? পার্টি কংগ্রেসের আগে খসড়া প্রতিবেদনে এ নিয়ে নানা বিষয় স্থান পেয়েছে বলে খবর।

ধর্মকে আফিমের সঙ্গে যারা তুলনা করতো, সেই রাজনৈতিক দল এখন নিজেদের রাজনৈতিক দিশা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ধর্মকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আগেই ভারতীয় মনীষীদের গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদের ছবি স্থান দিয়েছিল CPIM। এবার গোটা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ধর্মীয় ভাবাবেগকে গুরুত্ব না দিয়ে দল ভবিষ্যতে এগোতে চাইছে না। ২০২৫ সালেই মাদুরাইতে অনুষ্ঠিতব্য এই পার্টি কংগ্রেসের জন্য দল ইতিমধ্যেই খসড়া প্রস্তাব তৈরি করে নিয়েছে বলে খবর। এতদিন পর্যন্ত বামেদের মতে ধর্ম হচ্ছে আফিম এর মত। নির্দিষ্ট যেকোনো ধর্ম বিরোধী অবস্থান সিপিআইএমের। জানা গেছে আসন্ন কংগ্রেসে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে চাইছে সিপিআইএম। কারণ হচ্ছে সমাজে ধর্মীয় কর্মসূচি বাড়ছে। দলের বিশ্বাস, তাই ধর্মীয় আস্থাবান লোকেদের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে। সিপিআইএম অনুধাবন করছে যে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ধার্মিকতার জন্য বিজেপি এবং আরএসএস, বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই যতটা জানা গেছে দলের খসড়া প্রস্তাবে মোটামুটি ঠিক হয়েছে যে, ধার্মিক লোকেদের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করার জন্য তাদের ধর্মনিরপেক্ষতার রাস্তায় নিয়ে আসতে হবে। কারণ CPIM তাদের রাজনৈতিক বন্ধু কংগ্রেসের শ্রেণী চরিত্র নিয়ে সন্দিহান। তাই খসড়া প্রস্তাবে বলা হচ্ছে কংগ্রেসের শ্রেণী চরিত্র বিচার করতে হবে।কংগ্রেস কোথায় রাজনৈতিকভাবে দাঁড়িয়ে আছে সেটা বামেদের কাছে স্পষ্ট নয়। কংগ্রেস যে নিজেদের নতুন করে বামপন্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে তাতে সিপিআইএমের ক্ষতি হচ্ছে। কংগ্রেসের নতুন উদারনীতিবাদ বামেদের জন্য আরও বেশি সমস্যার। কারণ এটা কংগ্রেস নিজেদের পরিচালিত সরকারকে দিয়ে বাড়াতে চাইছে, যেটা বামেদের জন্য লোকসানের। কংগ্রেসের রাজনৈতিক চরিত্রের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করা সিপিআইএম মনে করছে, যে কোন সময় কংগ্রেস নিজেদের ধর্মীয় অবস্থান গ্রহণ করতে পারে। কংগ্রেস যে কোন সময় হিন্দুত্বের সঙ্গে সমঝোতা করতে পারে। এই তালিকায় শুধু কংগ্রেস নয়, ডিএমকে, আরজেডি, এনসিপি সহ আরো অনেক ইন্ডিয়া জোটের দল রয়েছে। তাই আগামী কংগ্রেসে সিপিআইএম ধর্ম নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে রাজনৈতিক লাইন নির্ধারণ করবে। শুধু তাই নয় সিপিআইএম এখন মনে করছে, সমাজতন্ত্রের পথ ভারতীয়ত্বের উপর নির্ভর করতে হবে, বহিরাগত তত্ত্বের মাধ্যমে নয়। একসময় প্রচার ছিল যে মস্কোতে যদি বৃষ্টি হয় তবে ভারতের কমিউনিস্ট মাথার উপর ছাতা ধরতো। নতুন ধারা অনুযায়ী তারা সমাজতন্ত্রকে আবার পুনরোজ্জীবিত করতে চায়। কারণ ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স এর সঙ্গে যেন সিপিআইএম নিজেদের গুলিয়ে না আনে। সিপিআইএম ইন্ডিয়া জোটের শক্তির চাইতে, বাম শক্তিগুলোকে একত্রিত করার উপর অধিক গুরুত্ব দিতে চাইছে। সিপিআই মনে করে যে বিজেপি বিরোধী গদবাধা রাজনীতিতে চলার ফলে সিপিআইএম নিজেদের জনসমর্থন হারিয়েছে। যার ফলে বিজেপি এখন ত্রিপুরা পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলেও নিজেদের রাজনৈতিক শক্তি নিয়ে প্রবেশ করেছে, যেখানে সিপিআইএম অনেকটা পিছিয়ে গেছে বা যাচ্ছে। ত্রিপুরায় ক্ষমতায় বিজেপি, পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি, কেরলেও তৃতীয় শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি। এ অবস্থায় সিপিএমের দুর্বলতায় যে সবচেয়ে বেশি লাভবান বিজেপি হচ্ছে তা দলটি বিশ্বাস করে। মূলত এই জনসমর্থন কমার পেছনে গত বেশ কয়েক বছর ধরেই তাদের অনুধাবন, CPIM নির্বাচনী রাজনীতিতে বেশি ঝুঁকে গেছে, এর ফলে সংগঠনের শক্তি বৃদ্ধিতে গতি কমেছে এবং জনবল হ্রাস পেয়েছে। তাই আসন্ন কংগ্রেসে ‘নতুন সাধারণ সম্পাদক’ নির্বাচনের চাইতেও দলের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক লাইন নির্ধারণকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে দেশের এই বাম শক্তি।