সীমান্ত সমস্যা নিয়ে BSF-BGB বৈঠক দিল্লিতে!
ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী (BSF-BGB) বাহিনীর মধ্যে তিনদিনের সমন্বয় বৈঠক শুরু হয়েছে দিল্লিতে। BSF-র ডিজি দলজিৎ সিং চৌধুরীর নেতৃত্বে ভারতের প্রতিনিধি দল এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (BGB) মেজর জেনারেল মহম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকির নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল এই বৈঠকে অংশ নিয়েছে। বৈঠক চলবে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে অনুপ্রবেশের সমস্যা চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি, মাদক পাচারও উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উত্তর-পূর্ব পরিষদ (NEC) বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং ভারতের বিদেশ দপ্তরের যুগ্মসচিব রাজ্য সফরে এসে, এই বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের নিরাপত্তা আরও জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ত্রিপুরার কৈলাসহর সীমান্তে বাংলাদেশের তরফে নির্মিত বাঁধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মনু নদীর উপর নির্মিত এই বাঁধের কারণে বর্ষার মৌসুমে কৈলাসহরে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা দিল্লি সফরকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন। এবারের বৈঠকে BSF-র তরফে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সাথে এই ইস্যুতে কূটনৈতিক আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
ত্রিপুরার ৮৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের বেশ কিছু অংশ এখনও কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সুরক্ষিত নয়। সোনামুড়া এবং রইস্যাবাড়ির মতো কিছু এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ বাংলাদেশ সরকারের আপত্তির কারণে থমকে আছে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে কাঁটাতার বসানোর সময় ওপারের বাসিন্দাদের হামলার মুখে পড়তে হয়েছে BSF জওয়ানদের। এই ইস্যুও এবারের বৈঠকে বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে জানা গেছে।
বৈঠকে সীমান্তে বেড়া বসানো, অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ, মাদক চোরাচালান রোধ এবং পরিকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। পাশাপাশি, দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়ে যৌথভাবে সীমান্ত সুরক্ষার পরিকল্পনার প্রস্তাব উঠতে পারে।
হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষার জটিলতা বাড়লেও এই বৈঠক দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতি প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে সীমান্ত সুরক্ষা ও পরিকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হতে পারে।
দিল্লির এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক দুই দেশের সীমান্ত সুরক্ষার নতুন দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির বৈঠক থেকে কী ধরনের সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেদিকে নজর থাকবে দুই দেশের প্রশাসন এবং সীমান্ত এলাকার জনগণের।