BJP-র বর্তমান ও প্রাক্তন মন্ডল সভাপতির গোষ্ঠী কোন্দলে উত্তপ্ত চড়িলাম!
গোষ্ঠী কোন্দল ত্রিপুরার রাজনীতিতে কোনো নতুন বিষয় নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে BJP-র অভ্যন্তরীণ বিরোধ বিশেষ করে মন্ডল ও জেলা স্তরে প্রকট হয়ে উঠেছে। সিপাহিজলা জেলার চড়িলাম মন্ডলে বর্তমান এবং প্রাক্তন সভাপতির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়েছে। এই ঘটনা BJP-এর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার সংকটকেই সামনে নিয়ে এসেছে।
চড়িলাম মন্ডলের বর্তমান সভাপতি তাপস দেবনাথ এবং প্রাক্তন সভাপতি রাজকুমার দেবনাথের মধ্যে বহুদিন ধরেই রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত মতবিরোধ চলছিল। জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যায় সিপাহিজলা চিড়িয়াখানার প্রধান ফটকের কাছে উভয় পক্ষের সমর্থকরা মুখোমুখি হয়। প্রথমে বাকবিতণ্ডা এবং পরে তা হাতাহাতি ও সংঘর্ষে রূপ নেয়। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান সভাপতির সমর্থকরা প্রাক্তন সভাপতির ঘনিষ্ঠ এক কার্যকর্তাকে মারধর করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে বিশালগড় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনার পর পুরো এলাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পরপরই BJP-র কর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধই এই সংঘর্ষের মূল কারণ। একাংশ অভিযোগ করেছেন, নেতৃত্বের উদাসীনতার ফলে এই গোষ্ঠী কোন্দল দিন দিন বেড়েই চলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত। একজন বাসিন্দা বলেন, “আগে চড়িলামে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। রাজনীতি, শান্তি এবং উন্নয়নের জন্য হওয়া উচিত; কিন্তু এখন তা বিভাজন এবং সংঘর্ষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।” ত্রিপুরায় BJP-র অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং গোষ্ঠী কোন্দলগুলি ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। মন্ডল স্তর থেকে জেলা স্তর পর্যন্ত গোষ্ঠী কোন্দল দলের শৃঙ্খলাকে দুর্বল করে তুলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বের উদ্যোগের অভাবই এই সমস্যার প্রধান কারণ। দলের একাংশ মনে করেন, ব্যক্তিগত প্রভাব বিস্তারের লড়াই এই সংঘর্ষের মূল কারণ। অন্যদিকে, কিছু নেতার অভিযোগ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফ থেকে সঠিক দিকনির্দেশনা এবং শৃঙ্খলার অভাবের জন্য এমন ঘটনা ঘটছে।
চরিলামে সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহতদের হাসপাতালে পাঠায় ও এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে। যদিও এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি, পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “এলাকার পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। আমরা উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেব।” BJP-র রাজ্য নেতৃত্ব এই ঘটনায় এখনো প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “এই ধরনের ঘটনা দলের ভাবমূর্তিতে আঘাত হানছে। আমরা শিগগিরই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করব।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, শাসক দলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী কোন্দল আগামী দিনে দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষত, ভিলেজ কমিটি নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ধরনের ঘটনা দলের সাংগঠনিক শক্তিকে দুর্বল করতে পারে। বিজেপির জন্য এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যদি দ্রুত হস্তক্ষেপ করে, মন্ডল ও জেলা স্তরে কার্যকরী নেতৃত্ব প্রদান করে, তবে পরিস্থিতি সামলানো সম্ভব হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দলের কর্মীদের মধ্যে ঐক্য স্থাপন এবং গোষ্ঠী কোন্দল বন্ধ করার জন্য কড়া পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায়, এর প্রভাব সরাসরি নির্বাচনী ফলাফলে পড়তে পারে।
চড়িলামের ঘটনা দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলির একটি উদাহরণ। এই ধরনের ঘটনা কেবল দলের ভাবমূর্তিতে আঘাত হানছে না, সাধারণ মানুষের মধ্যেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যদি দ্রুত এই সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ না নেয়, তবে এর ফল ভবিষ্যতে আরও গুরুতর হতে পারে। বিজেপির জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো গোষ্ঠী কোন্দল বন্ধ করে ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে সামনে আসা। কিন্তু এটি আদৌ কতটা সম্ভব হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।