সিপিআইএম আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে

খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া সিপিআইএম!

আগামী ২০২৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ময়দানে নামতে শুরু করেছে বিরোধী দল সিপিআইএম। দীর্ঘ ২৫ বছরের শাসনের পরে ২০১৮ সালে ক্ষমতা হারানোর ধাক্কা এখনও পেরিয়ে উঠতে না পারলেও, ক্রমাগত কর্মসূচি, জনসংযোগ ও সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহারকে হাতিয়ার করে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বামেরা। সিপিআইএমের ছাত্র ও যুব শাখা সংগঠনগুলো ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে। মার্চ মাস জুড়ে রাজ্য জুড়ে চালানো ‘মার্চ টু ইউনিট’ কর্মসূচিতে একদিকে যেমন ছিল সাংগঠনিক চর্চা, তেমনি ছিল জনসংযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগ। কর্মসূচির মূল আহ্বান ছিল— “বসুন, কথা বলুন, সমস্যার কথা জানুন, পরিকল্পনা করুন, সমাধানের জন্য আওয়াজ তুলুন।” এর মাধ্যমে যুব সমাজের পুঞ্জিভূত ক্ষোভকে সংগঠিত করে ভোটে পরিণত করার লক্ষ্যে এগোচ্ছে বামেরা।

সিপিআইএম নেতারা মনে করছেন, আগামী ভোটে যুব সমাজের সমর্থন পেলে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল সম্ভব। বাম নেতাদের বক্তব্য, বিগত সাড়ে ছয় বছরের বিজেপি শাসনে জনজীবনে যে চরম অস্থিরতা ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তা এবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিফলিত হবে। ২০১৮ সালে বিজেপির উত্থানের সময়, যাঁরা সিপিআইএম ত্যাগ করে শাসক দলে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের একাংশ ইতিমধ্যেই বিরক্ত ও হতাশ। এরা এখন আবার ফিরতে চাইছেন বাম রাজনীতির ছায়ায়। যদিও মাঝের সময়গুলোতে উপনির্বাচনে ও লোকসভা ভোটে বামেদের ভূমিকা প্রায় নিষ্প্রভ ছিল। জনসংযোগে বারবার চেষ্টা করেও মানুষের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয় সিপিআইএম। মানুষের চোখে বাম রাজত্বের সময়কার বঞ্চনা, দলবাজি, এক শ্রেণীর নেতৃত্বের প্রচন্ড দাম্ভিকতা ও স্বজনপোষণের স্মৃতি এখনও স্পষ্ট।

বাম নেতারা মনে করছেন, শাসক দলের বিরুদ্ধে মানুষের বর্তমান ক্ষোভ ও হতাশাই এখন তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। ডাবল ইঞ্জিন সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার সম্প্রতি প্যারাডাইস চৌমুহনীতে এক জনসভায় সরাসরি আক্রমণ শানান। তিনি দাবি করেন, “২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটেই মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, কিন্তু মথার চক্রান্তে বিজেপি টিকে গিয়েছে।” এবার সেই ভুল না করতে দলের নেতৃত্ব প্রস্তুতি নিচ্ছে সময়ের আগেই। যদিও রাজনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন, শুধু কর্মসূচি দিয়ে চলবে না, বামেদের চাই নতুন প্রজন্মের সঙ্গে গভীর যোগাযোগ। ছাত্র-যুব সমাজকে আদর্শিক দিক থেকে অনুপ্রাণিত করতে না পারলে রাজ্যে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সংগ্রামে সিপিআইএমের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে।

২০২৩ সালে রাজ্যের ৬১ শতাংশ ভোটার বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিলেও, সিপিআইএম সেই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। দলের বর্তমান পলিটব্যুরো সদস্য জীতেন্দ্র চৌধুরীর নেতৃত্বে ভোটের মাঠে নামলেও কাঙ্ক্ষিত ফল আসেনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাম নেতাদের দীর্ঘদিনের শাসনে যে অহংকার তৈরি হয়েছিল, তা ভুলে মাটির কাছাকাছি না এলে মানুষের আস্থা ফিরে পাওয়া কঠিন হবে। তবে এখনো শাসক বিজেপি বাম আমলের ২৫ বছরের শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে চলেছে। সিপিআইএম নেতাদের দুর্নীতি, দলীয়করণ এবং উন্নয়নের ব্যর্থতাকে বারবার তুলে ধরছে জনসভা ও মিডিয়ার মাধ্যমে। যদিও সাধারণ মানুষ এখন ডাবল ইঞ্জিন বনাম সিঙ্গেল ইঞ্জিন সরকারের পার্থক্য বুঝে নিচ্ছে। বাম শাসনে কাজ, রোজগার ও উন্নয়ন ছিল বলেই একাংশ মনে করছে, আর বিজেপি শাসনে তা শুধু কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।

এই মুহূর্তে সিপিআইএম তাদের সংগঠনকে পুনর্গঠন ও সক্রিয় করে তোলায় মনোনিবেশ করেছে। দলীয় কর্মীরা যারা এতদিন ঘরে বসে ছিলেন, তারাও এখন আবার মাঠে নামছেন। সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে জনসভা, মিছিল— সব জায়গায় এখন একটি বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে— “পরিবর্তন আসন্ন।” ২০২৮ সালের নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে রাজনৈতিক লড়াইয়ের সমীকরণ। বামেরা শেষ চেষ্টা চালাচ্ছে জনতার আস্থা ফিরে পেতে। তারা জানে, এবারও ব্যর্থ হলে হয়তো স্থায়ীভাবে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। তাই এখন থেকেই কোমর বেঁধে প্রস্তুত হচ্ছে সিপিআইএম। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে মানুষ যদি বাস্তব অভিজ্ঞতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নেয়, তবে আগামী বিধানসভা ভোটে রাজ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে বদল আসতে পারে।About Us

পর্যটনের নতুন দিগন্ত গোমতী নদী

গোমতী নদীকে কেন্দ্র করে জলপথে পর্যটনের নতুন উদ্যোগ!

গত সাত বছরে রাজ্যের সম্ভাবনাময় পর্যটনের ব্যাপক অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। ত্রিপুরায় দ্বিতীয়বারের মতো বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে নেওয়া হচ্ছে একের পর এক নতুন পদক্ষেপ। রাজ্য সরকার পর্যটনকে শিল্পে পরিণত করার পাশাপাশি পর্যটন থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে এবার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে জলপথ ব্যবস্থার ওপর।পর্যটন দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর নেতৃত্বে ইতিমধ্যেই রাজ্যের একসময় অবহেলিত ও অপ্রচলিত পর্যটন কেন্দ্রগুলোর উন্নয়নে শুরু হয়েছে নতুন করে পরিকল্পনা ও ভাবনা। এরই অঙ্গ হিসেবে এবার গোমতী নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হচ্ছে জলপথ পর্যটন ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে পর্যটকরা নদীপথে রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী জানান, গোমতী নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য ইতিমধ্যে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। মূলত মহারানী এলাকা থেকে শুরু করে সীপাহিজলা জেলার সোনামুড়া পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ড্রেজিং প্রকল্পে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১৯.৫ কোটি টাকা। এই কাজ আগামী এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ড্রেজিং শেষ হওয়ার পর গোমতী নদীতে মহারানী থেকে ছবিমুড়া পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য চালু করা হবে বোট ও জেটি পরিষেবা। পর্যটকরা যাতে আরামদায়কভাবে নদীপথে ভ্রমণ করে ছবিমুড়ার অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন, তার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে পর্যটন নিগম।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গোমতী নদীর এই রুটটি ২০২০ সালেই ইন্দো-বাংলাদেশ প্রোটোকল রুট হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রকল্প সম্পন্ন হলে, ছোট বাণিজ্যিক জাহাজের মাধ্যমে ত্রিপুরা থেকে সরাসরি বাংলাদেশের দাউদকান্দি ও ভারতের কলকাতার মধ্যে নৌপথে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে। এর ফলে রাজ্যের পণ্য পরিবহন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ আরও মজবুত হবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে কিছুটা অবনতি ঘটায় আপাতত বাণিজ্যিক জাহাজ পরিষেবা স্থগিত রাখা হয়েছে। তার পরিবর্তে পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে প্রথম ধাপে বোট ও জেটি পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।

পর্যটন দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গোমতী নদীর এই নতুন জলপথে পর্যটন রুট চালু হলে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের আগমন বাড়বে এবং রাজ্যের অর্থনীতি ও পর্যটন শিল্প এক নতুন দিশা পাবে। রাজ্য সরকার আশা করছে, এই উদ্যোগ ত্রিপুরাকে দেশের অন্যতম জলপথ পর্যটন গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। এভাবেই একদিকে যেমন পর্যটনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে, তেমনি রাজ্য সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে ত্রিপুরার দীর্ঘদিনের সম্ভাবনাময় জলপথ ব্যবস্থাও ফিরে পাচ্ছে তার প্রাপ্য মর্যাদা।

গোমতী নদীর বুকে ভেসে বেড়ানো বোটে বসে পাহাড়, জঙ্গল আর নীল আকাশের মাঝে প্রকৃতিকে একেবারে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ ত্রিপুরার পর্যটকদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে তা বলাই বাহুল্য। রাজ্যের পর্যটনের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছে এই প্রকল্প এবং পর্যটনের নতুন ঠিকানা হয়ে উঠছে গোমতী নদী—এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।About Us

বিশ্ব হাসি দিবসে শান্তির বার্তা

বিশ্ব হাসি দিবসে “অল ত্রিপুরা হেলথ এন্ড লাফিং অ্যাসোসিয়েশনের” শান্তির বার্তা!

আজ বিশ্ব হাসি দিবস। প্রতি বছর মে মাসের প্রথম রবিবার বিশ্বজুড়ে পালিত হয় এই বিশেষ দিনটি। এই উপলক্ষে ত্রিপুরা রাজ্যে বর্ণাঢ্য পদযাত্রা ও সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করল অল ত্রিপুরা হেলথ এন্ড লাফিং অ্যাসোসিয়েশন। রাজ্যের ২৪টি Laughing Club-এর যৌথ উদ্যোগে আজ সকালে এক পদযাত্রার আয়োজন করা হয়, যেখানে প্রায় ৭৫০ থেকে ৮০০ সদস্য অংশগ্রহণ করেন। পদযাত্রাটি শুরু হয় তুলসীবতী স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে এবং শেষ হয় আগরতলার সিটি সেন্টারে। সদস্যরা হাতে প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে হাসিমুখে হাঁটেন, পরিবেশন করেন ‘হাসুন, সুস্থ থাকুন’, ‘হাসি মানে শান্তি ও মৈত্রী’র মতো বার্তা।

সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শ্রী শুশীল কুমার দাস জানান, “আমাদের এই Laughing Club গুলি কেবলমাত্র হাসির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এগুলি এক একটি সামাজিক সচেতনতার কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করছে। আজকের এই বিশ্ব হাসি দিবসে আমরা শান্তি, সুস্থতা ও সৌহার্দ্যের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই সকলের মধ্যে।” ত্রিপুরায় প্রথম Laughing Club শুরু হয় ১৯৯৭ সালে মালঞ্চ নিবাসে। মুম্বাই শহরে ১৯৯৫ সালের ৫ই মার্চ বিশ্বে প্রথম Laughing Club আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। বর্তমানে অল ত্রিপুরা হেলথ এন্ড লাফিং অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ২৪টি সেন্টার সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

শুধু হাসির চর্চা নয়, এই সংগঠন বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগের সঙ্গেও জড়িত। রক্তদান শিবির, বস্ত্রদান, অন্ন দান, ও কোভিডকালে সহায়তা—প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভবিষ্যতেও এই রকম কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প প্রকাশ করেছে সংস্থা। শুশীলবাবু আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য একটাই—ত্রিপুরাবাসীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করা। হাসির মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। সেই হাসিই আমাদের শক্তি।” ত্রিপুরার Laughing Club-গুলির এই উদ্যোগ আজ শুধু স্বাস্থ্য সচেতনতাই নয়, সামাজিক সংহতির বার্তাও দিল রাজ্যবাসীকে।About Us

অফিসার সংকটে ত্রিপুরা পুলিশ

ত্রিপুরা পুলিশে পদোন্নতি বন্ধের জেরে চরম অফিসার সংকট!

ত্রিপুরা রাজ্য পুলিশ বিভাগে ভয়াবহ অফিসার সংকট ও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ পদোন্নতির কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রশাসনিক কাজের পরিকাঠামো প্রায় ভেঙে পড়েছে। রাজ্য পুলিশ, টিএসআর ও অন্যান্য আরক্ষা শাখাগুলিতে শূন্যপদ, অতিরিক্ত কাজের চাপ, দায়িত্বের ভারসাম্যহীনতা এবং প্রশাসনিক উদাসীনতায় ক্রমেই গভীর সংকট তৈরি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অভ্যন্তরেই ক্ষোভ বাড়ছে। সূত্র অনুযায়ী, রাজ্যের বিভিন্ন থানাসহ টিএসআরের একাধিক ব্যাটেলিয়নে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই অফিসার সংকট প্রকট। বহু থানায় একজন অফিসারকে একাধিক দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। এমনকি দক্ষিণ ও উত্তর রেঞ্জের ডিআইজি পদ একজন আধিকারিক একাই বহন করছেন বহু বছর ধরে। জেলা পুলিশ সুপার অফিসগুলিতেও হাতে গোনা কিছু ডেপুটি এসপি, অতিরিক্ত এসপি ও ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার দিয়ে চলছে পুরো প্রশাসন।

এমন পরিস্থিতিতে জটিলতা আরও বাড়িয়েছে পদোন্নতির বিষয়ে প্রশাসনিক উদাসীনতা। জানা গেছে, ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর রাজ্যের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (পারসোনাল অ্যান্ড ট্রেনিং) বিভাগ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি (ফাইল নম্বর-10(3)-GA(P&T)/15) জারি করে রাজ্য পুলিশে গ্রেড-ওয়ান ও গ্রেড-টু স্তরের অফিসার পদ সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। পদোন্নতির জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে ফাইল টিপিএসসিতে পাঠানো হলেও অজ্ঞাত কারণে তা কার্যকর হয়নি।

এদিকে অফিসার সংকটের ফলে থানার সাধারণ কাজ, রিপোর্ট লেখা, তদন্ত, নজরদারি — সব ক্ষেত্রেই বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বপালনের বদলে অফিসারদের করণিকের কাজেও জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে। ভিআইপি মুভমেন্ট হলে ব্যস্ততা আরও বাড়ে, যার ফলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়ছে। জেলা পর্যায়ের পুলিশ অফিসগুলিতে কর্মসংস্কৃতি একেবারে তলানিতে। সবচেয়ে সংকটজনক অবস্থা দেখা দিয়েছে ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস (টিএসআর) বাহিনীগুলিতে।

মোট ১৪টি টিএসআর ব্যাটেলিয়ন রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলের অধীনে পরিচালিত হলেও সেখানে সহকারী কমান্ডেন্ট পদে চরম শূন্যতা। দিল্লি ও ছত্তিশগড়ে মোতায়েন টিএসআরের দুই বাহিনীতে প্রতিটি বাহিনীতে থাকা সাতটি কোম্পানির জন্য মোট ১৪ জন সহকারী কমান্ডেন্ট প্রয়োজন হলেও রয়েছেন মাত্র চারজন। ফলে একজন ছুটিতে থাকলে অপর সহকারী কমান্ডেন্টকে পুরো বাহিনীর দায়িত্ব বহন করতে হচ্ছে, যা থেকে তৈরি হচ্ছে অপারেশনাল বিশৃঙ্খলা। অন্যদিকে, টিএসআরের সাধারণ জওয়ানরাও অবর্ণনীয় পরিস্থিতির শিকার। ছুটি চেয়েও পাচ্ছেন না, জিপিএফের টাকা তুলতে গিয়ে হয়রানির মুখে পড়ছেন। বহু জওয়ান অভিযোগ করেছেন, বহিঃরাজ্যে কর্মরত থাকায় তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে বাহিনীর ভিতরেই হতাশা ও অসন্তোষ বাড়ছে।

সবমিলিয়ে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনে এখন চরম এক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নিচুতলার কর্মীরা এক পদে ১২-১৫ বছর ধরে কর্মরত থেকেও পদোন্নতির সুযোগ পাচ্ছেন না, ফলে অবসরের আগেই তারা মনোবল হারাচ্ছেন। উপরতলার পদোন্নতি হলে তবেই তো নিচের স্তরে শূন্যপদ তৈরি হবে — এমন যুক্তি সামনে রেখে বহু আরক্ষা কর্মী মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব ও রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশকের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, “পদোন্নতি হলেই কাজের প্রতি আগ্রহ ও উৎসাহ বাড়ে। দপ্তরের শূন্যপদ পূরণ না হলে, কাজের গুণগত মান ও আইনশৃঙ্খলা দুই-ই মুখ থুবড়ে পড়বে।” ত্রিপুরার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর রাখার জন্য শিগগিরই সরকারের উচ্চমহলের তরফে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা, এখন সেটাই দেখার।About Us

রেলপথে সক্রিয় মাদকচক্র

লেডি মাফিয়ার নেতৃত্বে চলছে রেল পথে মাদক সাম্রাজ্য!

রেলপথকে ব্যবহার করে ত্রিপুরায় গড়ে উঠেছে একটি সুসংগঠিত এবং বিপজ্জনক মাদক পাচার চক্র। এই চক্রের শীর্ষে রয়েছেন এক প্রভাবশালী লেডি মাফিয়া, যিনি “নমোঃ কোম্পানির প্রোডাক্ট” নামে পরিচিত। জানা গেছে, আগরতলা রেল স্টেশন কেন্দ্র করে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে এই চক্রের জাল। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের কার্গো কামরাকে ব্যবহার করেই রমরমা চলছে কোটি টাকার গাঁজা পাচার, আর কলকাতার বড়বাজার থেকে আসছে নিষিদ্ধ কফ সিরাপ ‘ফেন্সি’।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পাচারকারীরা যেন “ইজারা” পেয়েই বসেছে মাদক কারবারের। বিনা লগ্নিতে তারা ঘরে বসে পাচ্ছে কমিশনের মোটা অঙ্ক। রাজনৈতিক আশীর্বাদে প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি এবং কর্মকর্তাদের মদতে পাচারকারীরা বারবার কৌশল পাল্টে নিরাপদে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ব্যবসা। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ট্রেনের কার্গো ব্যবস্থার ভার এখন বিহারের একটি সংস্থার হাতে। এই সংস্থা নিয়মিত গাঁজার প্যাকেট রেলের মালখানায় মজুত করে এবং পরে তা পার্সেল কামরায় তুলে দেয়। কলকাতার বড়বাজার থেকে আসা কফ সিরাপ ‘ফেন্সি’ আবার সীমান্তবর্তী এলাকা বিশালগড় হয়ে পাচার হচ্ছে বাংলাদেশে।

আগরতলা, ধর্মনগর, বদরপুর, শিলচর সহ একাধিক রেল স্টেশনে সক্রিয় রয়েছে এই মাদক চক্রের লিঙ্কম্যানরা। শুধু রেল কর্মীরা নয়, আরপিএফ জওয়ানদের একাংশও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। কমিশনের বিনিময়ে তারা চোখ বুজে মাদক বোঝাই পার্সেল ঢুকতে সাহায্য করছেন বলে অভিযোগ। বিশালগড় হয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর দায়িত্বে রয়েছেন একজন রাষ্ট্রবাদী নেত্রীর ভাই। পাশাপাশি অন্তত চারজন মণ্ডল সভাপতিও এই কারবার থেকে নিয়মিত কমিশন পাচ্ছেন বলে খবর।

এই গোটা চক্রের মূল মাথা ‘লেডি মাফিয়া’ কুট্টি, যার ভাই বর্তমানে নারকোটিক্স আইনে জেলে। ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে এখন কুট্টিই গোটা ব্যবসা সামলাচ্ছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে পাঠানো গাঁজার চালান মাঝপথে নামিয়ে দেওয়া হয় অসম সীমান্তের নির্জন কোনো স্টেশনে। সেখান থেকে স্করপিও, ভলবো বাসে পাচার হয় বিহারে। জানা গেছে, বিহারী গাঁজাব্যবসায়ীরা ত্রিপুরার গাঁজার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, ফলে তারা এখন রাজ্যে গাঁজা চাষেও লগ্নি করছে। আগরতলা রেল স্টেশনের পরিত্যক্ত কোয়ার্টারগুলিকে পরিণত করা হয়েছে নেশার গুদামে। গভীর রাতে সেখানে চলে মাদকের আসর। সিদ্ধিআশ্রম, ওএনজিসি, বাধারঘাট এলাকার কিশোর-তরুণরা রাতভর এই এলাকায় নেশায় মত্ত থাকে। শুধু আগরতলা নয়, রাজ্যের অন্যান্য স্টেশনেও মাদকচক্রের প্রভাব গভীর।

রেল যাত্রীদের অভিযোগ, সন্ধ্যার পর স্টেশন এলাকাগুলোতে কোনও পুলিশি নজরদারি নেই। ফলে পাচারকারীরা প্রকাশ্যেই তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, রেল পুলিশের একটি অংশ এবং স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় এই বিপজ্জনক চক্র দিনের পর দিন অক্ষত রয়েছে। রাজ্যে বাড়ছে মাদকসেবী কিশোর ও তরুণের সংখ্যা। বিভিন্ন ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য — ফেন্সি, ট্যাবলেট, ব্রাউন সুগার, হেরোইন — প্রতিনিয়ত প্রবেশ করছে রেলপথে। ফলে ধ্বংসের মুখে পড়ছে রাজ্যের যুবসমাজ।

সাধারণ মানুষ এবং যাত্রীদের প্রশ্ন — কেন এই চক্র এখনও অক্ষত? প্রশাসন কি চোখ বন্ধ করে রেখেছে? মাদক পাচার রুখতে কবে কঠোর পদক্ষেপ নেবে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার? এই মাদক চক্র নিয়ন্ত্রণ কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নয়, সমাজের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব। এই মাফিয়া চক্রের শিকড় যত গভীরে গিয়ে থাকুক না কেন, রেলপথকে নিরাপদ ও যুবসমাজকে রক্ষা করতে হলে এখনই সকলে একজোটে প্রতিরোধ করে তুলতে হবে বলে সচেতন মহলের অভিমত।About Us

সাব্রুম সীমান্ত আবারো মাদক পাচারের করিডোর

আন্তর্জাতিক মাদকচক্রের নিশানায় দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম সীমান্ত!

ত্রিপুরার দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত সাব্রুম সীমান্ত ফের আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারীদের রুট ম্যাপে ফিরে এসেছে। রেল ও সড়ক পথে পুলিশের কড়াকড়ি এবং নিয়মিত ধরপাকড়ের জেরে পাচারকারীরা এখন সীমান্তবর্তী অঞ্চলকে মাদক পাচারের জন্য বেছে নিচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, থাইল্যান্ড ও মায়ানমার থেকে বাংলাদেশ হয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক এই রুট ধরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ঢুকছে।

পাচারের জন্য ব্যবহৃত এই করিডোরটি একসময় ‘সোনালী রুট’ নামে পরিচিত ছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফের সেই পুরনো পথকেই সক্রিয় করা হয়েছে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সক্রিয় মাদক চক্রগুলি থাইল্যান্ড ও মায়ানমার থেকে হিরোইন, চরস, ব্রাউন সুগার-এর মতো বিপুল পরিমাণ মাদক এনে বাংলাদেশে সংরক্ষণ করছে। সেখান থেকে মাদক পাচার করা হচ্ছে সাব্রুম সীমান্ত ঘেঁষা মাগরুম, বৈষ্ণবপুর, জলেয়া ও শিলাছড়ির ভগবান টিলা দিয়ে।

ত্রিপুরার দক্ষিণ সীমান্তের বহু এলাকায় এখনো কাঁটাতারের বেড়া নেই। যেসব জায়গায় সীমান্ত উন্মুক্ত, সেখান থেকেই সবচেয়ে বেশি পাচার হচ্ছে বলে জানা গেছে। এই অনিরাপদ সীমান্ত এলাকাগুলি আন্তর্জাতিক মাদকচক্রের জন্য ‘সুবর্ণ সুযোগ’ তৈরি করেছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও পাচারকারীরা নানা কৌশলে তাদের চোখে ধুলো দিয়ে পাচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ত্রিপুরার ভৌগোলিক অবস্থান পাচারকারীদের পক্ষে অত্যন্ত সুবিধাজনক। একদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম, অপরদিকে মিজোরাম, মণিপুর ও আসামের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুবাদে এই পথটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভিতরে দ্রুত মাদক প্রবেশের উপযুক্ত করিডোর হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রুট ধরে শুধু মাদক নয়, বহু আন্তর্জাতিক অপরাধচক্রের কার্যকলাপও তীব্রতর হতে পারে।

সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বহু যুবক-যুবতীকে মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে পাচারকারীরা তাদের দলে টেনে নিচ্ছে। স্থানীয় স্তরে ‘ক্যারিয়ার’ হিসেবে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। পুলিশের একাংশ মনে করছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় কর্মসংস্থানের অভাব এবং প্রশাসনিক নজরদারির ঘাটতি পাচারের বিস্তারে বড় ভূমিকা রাখছে। সম্প্রতি প্রায় প্রতি সপ্তাহেই রাজ্যের বিভিন্ন অংশ থেকে কোটি কোটি টাকার মাদকসহ পাচারকারীদের আটক করা হচ্ছে। তবু পাচারের ধারা থামছে না। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অনেক ক্ষেত্রেই বড় চক্রের মূল পরিকল্পনাকারীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো (Narcotics Control Bureau), বিএসএফ ও রাজ্য পুলিশের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকায় পুরো চক্র ভাঙা যাচ্ছে না।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা বারবার বলেছেন “নেশামুক্ত ত্রিপুরা” গড়ার কথা। কিন্তু মাদক পাচারের এই বিস্তার সেই প্রতিশ্রুতিকে কার্যত প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পাচারের বিরুদ্ধে শুধু কথা নয়, প্রয়োজন জোরালো প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও কেন্দ্রীয় সহযোগিতা। ত্রিপুরার সাব্রুম সীমান্ত যে আবার আন্তর্জাতিক মাদক পাচারের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠছে, তা এখন স্পষ্ট। প্রশাসনের উচিত দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো এবং পাচারকারীদের চক্র ভেঙে ফেলা; নাহলে এই চক্র এক সময় পুরো রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।About Us

স্বচ্ছ নিয়োগনীতির নামে চলছে প্রহসন

বিরোধীদের অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর স্বচ্ছ নিয়োগ নীতিতে বাইরের রাজ্যের সুপারিশে হচ্ছে চাকরি!

ত্রিপুরায় সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা একদিকে দাবি করেছেন, “সরকার নিয়মনীতি মেনেই স্বচ্ছতার সাথে চাকরি দিচ্ছে। কাউকে বঞ্চিত করা সরকারের লক্ষ্য নয়।” অন্যদিকে, বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী এই প্রক্রিয়াকে “নিয়োগ উৎসবের নামে প্রভাব বিস্তারের কৌশল” বলে আক্রমণ করেছেন।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, বর্তমান সরকার পূর্বতন সরকারের সেই পদ্ধতির অবসান ঘটিয়েছে, যেখানে চাকরি পেতে পার্টি অফিসে লাইন দিতে হতো বা নেতার বাড়ি ঘুরে বেড়াতে হতো। তিনি বলেন, “আজ আর সেই অবস্থা নেই। এখন স্বচ্ছতা বজায় রেখে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি কর্মসংস্থান ও চাকরির সুযোগ তৈরি করবো—সেই পথেই হাঁটছি।” তিনি জানান, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জয়েন্ট রিক্রুটমেন্ট বোর্ড ত্রিপুরা (JRBT)-র মাধ্যমে গ্রুপ সি পদে ১,৯৮০ জন প্রার্থীকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। কৃষি সহায়ক, এলডিসি-সহ ৩৫টি দপ্তরে এই নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। রাজ্যের ছেলে-মেয়েদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে পিআরটিসি (PRTC) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন, আমরাও সেই লক্ষ্যে কাজ করছি,” বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

তবে বিরোধী দলনেতা তথা সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী সরকারের এই দাবি মানতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, “স্বচ্ছতা থাকলে রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে মন্ত্রীদের মাধ্যমে চাকরি দেওয়ার প্রয়োজন হতো না। সচিব বা অধিকর্তারাই যদি নিয়োগপত্র দিতেন, তাহলে বোঝা যেত প্রক্রিয়াটি নিরপেক্ষ। এখনকার এই ‘নিয়োগ অনুষ্ঠান’ আসলে প্রার্থীদের প্রভাবিত করার রাজনৈতিক চেষ্টামাত্র।” তিনি অভিযোগ করেন, ত্রিপুরার এমএ, এমএসসি ডিগ্রিধারী যুবকেরা যেখানে গ্রুপ ডি পদে নিযুক্ত হচ্ছেন, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া বা আসামের ধুবড়ি জেলা থেকে অষ্টম বা নবম শ্রেণি পাস প্রার্থীদের চাকরি দেওয়া হচ্ছে আরএসএস ও বিজেপি নেতাদের সুপারিশে। “এটাই যদি স্বচ্ছতা হয়, তাহলে প্রশ্ন তো উঠবেই,” মন্তব্য করেন তিনি।

চৌধুরীর দাবি, রাজ্যে বর্তমানে ৫১,০০০-এর বেশি শূন্য পদ রয়েছে। অথচ সরকার গর্ব করে মাত্র ২২৮টি শিক্ষক পদে নিয়োগপত্র বিলি করছে। আরও ১৮ থেকে ১৯টি দপ্তরের শূন্যপদের তথ্য সরকার প্রকাশ করছে না বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। এই নিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। শাসক দল স্বচ্ছতা ও নিয়মের কথা বললেও, বিরোধী পক্ষের অভিযোগ—এই নিয়োগ কার্যত এক ধরনের প্রহসন এবং রাজনৈতিক স্বার্থসাধনের হাতিয়ার। সরকারি পরিসংখ্যান, শূন্যপদের সংখ্যা এবং বাইরের প্রার্থীদের নিয়োগ নিয়ে এবার আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না হলে বিতর্ক থামার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।About Us

জাতিসংঘ সেই পুরানো দালালের ভূমিকায়

পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলায় চীনের প্রভাবে সত্য আড়ালের চেষ্টা জাতিসংঘের!

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও এলাকায় পর্যটকদের ওপর বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত এবং বহু আহত হওয়ার ঘটনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ (UNSC) আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা জানালেও, তাদের ভূমিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীন ও পাকিস্তানের প্রভাবে জাতিসংঘ সত্য গোপন করেছে এবং সন্ত্রাসী দেশের নাম প্রকাশ না করে ঘটনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে হালকা করে উপস্থাপন করেছে।

UNSC-র বিবৃতিতে কেবলমাত্র বলা হয়েছে, “কিছু সশস্ত্র ব্যক্তি” হামলা চালিয়েছে। তবে সেখানে কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের নাম কিংবা হামলার পেছনে থাকা রাষ্ট্রের উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি পরিষদ পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেনি যে, পহেলগাঁও ভারতের সাংবিধানিক অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল। এই ধরণের দায়িত্বজ্ঞানহীন ভূমিকা আন্তর্জাতিক সংগঠনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিসংঘের এই আচরণ প্রমাণ করে যে, UNSC আজ চীনের প্রভাবে পরিচালিত একটি দালাল সংগঠনে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে UNSC-তে রয়েছে ৫টি স্থায়ী সদস্য (আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন ও ফ্রান্স) এবং ১০টি অস্থায়ী সদস্য। হামলার পর আমেরিকা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিলেও, চীন ও পাকিস্তান যৌথভাবে নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনায় এমন চাপ তৈরি করে যে, হামলার দায়ভার স্পষ্টভাবে পাকিস্তানের ওপর আরোপ করা যায়নি। বিশ্লেষকদের মতে, চীনের অনুপ্রেরণাতেই নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিকভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায়। পাকিস্তান বহুদিন ধরেই বিশ্বের সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর হিসেবে অভিযুক্ত হলেও, UNSC-র পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ সেই বাস্তবতাকে আড়াল করে যাচ্ছে।

UNSC-র মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিক নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই আমরা সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি।”
তিনি আরও জানান, “আমরা এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা করি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।” কিন্তু ডুজাররিকের বক্তব্যেও লক্ষ্য করা গেছে, তিনি হামলায় জড়িত সন্ত্রাসী সংগঠনের নাম উল্লেখ করেননি। কোনো দেশের বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু বলেননি। বরং দুই দেশ, ভারত এবং পাকিস্তানকে সমানভাবে সংযম দেখানোর পরামর্শ দিয়ে মূল দায়িত্বকে ঝাপসা করে তোলার চেষ্টা করেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ডুজাররিকের এই বক্তব্যও প্রমাণ করে যে, জাতিসংঘের পুরো প্রতিক্রিয়া একটি পরিকল্পিত পক্ষপাতের ফলাফল। হামলার আসল দায়ীদের নাম না নিয়ে, বরং দুই দেশের মধ্যে ভারসাম্য রাখার প্রচেষ্টা করে UNSC চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।

জাতিসংঘের এই পক্ষপাতের ঘটনা নতুন নয়। কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ও, জাতিসংঘ চীনের পক্ষ নিয়ে কাজ করেছিল। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঐ সময় প্রকাশ্যে বলেছিলেন, “কোভিড ভাইরাস প্রথম চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়লেও, জাতিসংঘ কখনো চীনকে দোষারোপ করেনি। বরং চীনের স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে।” আজকের পহেলগাঁও হামলার ঘটনাতেও সেই একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। চীনের প্রভাবে পাকিস্তানের নাম আড়াল করে মূল সত্যকে লঘু করা হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে আজ প্রশ্ন উঠছে — “যদি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ চীনের প্রভাবেই চলে এবং পাকিস্তানের মতো সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে থাকে, তবে এ সংগঠনের কার্যকারিতা কোথায়?” ভারতের নাগরিকরা মনে করছেন, জাতিসংঘ যদি এভাবে চামচাগিরি চালিয়ে যায়, তবে আন্তর্জাতিক শান্তির স্বপ্ন চিরতরে ভেঙে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান ছাড়া, এবং প্রকৃত দোষীদের শাস্তি না দিয়ে, নিরাপত্তা পরিষদের সমস্ত কর্মকাণ্ড শুধুই প্রহসন।”

বিশ্বশান্তি বজায় রাখার জন্য প্রতিষ্ঠিত সংগঠন যদি নিজেই দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং পক্ষপাতদুষ্ট হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায় থাকবে? পহেলগাঁওর এই নৃশংস হামলার প্রকৃত দোষীদের প্রকাশ্যে এনে যথোপযুক্ত শাস্তি না দিলে, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা আরও বড় হুমকির মুখে পড়বে বলে মত বিশ্লেষকদের। বিশ্ববাসীর সরাসরি প্রশ্ন — “জাতিসংঘ কি তবে এখন চীনের হাতের পুতুল এবং সন্ত্রাসী পাকিস্তানের রক্ষাকর্তা?”About Us

সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার!

পেহেলগাঁওয়ের সন্ত্রাসী হামলার পর ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তে নিরাপত্তা আরো কঠোর!

দেশের উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগাঁও এলাকায় সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদী হামলার ছায়া এবার ছড়িয়ে পড়েছে দূর পূর্বের ত্রিপুরায়। পেহেলগাঁও ঘটনার পর থেকেই সাব্রুম মহকুমা, বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রশাসন কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। বিএসএফ ও ত্রিপুরা পুলিশের যৌথ বাহিনী বিশেষ অভিযান অব্যাহত রেখেছে বৈষ্ণবপুর, জলেফা, দক্ষিণ কলোনি-সহ একাধিক সীমান্তবর্তী গ্রাম ও শহরাঞ্চলে।

মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (SDPO) এবং বিএসএফের যৌথ উদ্যোগে সীমান্তবর্তী বাজার এলাকা, বাসস্ট্যান্ড, চৌমুহনী ও জনবহুল অঞ্চলে সন্দেহভাজন গাড়ি এবং ব্যক্তির উপর কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে।সীমান্তবর্তী রাস্তাগুলির পাশাপাশি কাঁটাতারের ধার ধরে বিএসএফের স্পেশাল মোবাইল টিম টহল দিচ্ছে। বাজার এলাকায় দোকানপাটে তল্লাশি চালানোর কাজ অব্যাহত আছে, বিশেষ করে এমন দোকানে যেখানে বহিরাগতদের আনাগোনা বেশি। স্থানীয় বাজারে মাইকের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, “সন্দেহজনক কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ বা বিএসএফকে জানান। সচেতন থাকুন, নিরাপদ থাকুন।”

জনসচেতনতা বাড়াতে পুলিশের তরফে ছোট ছোট মিটিংও করা হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। SDPO জানান, “আমরা চাই জনগণ আমাদের সহযোগিতা করুক। নিরাপত্তা ব্যবস্থা তখনই কার্যকর হয় যখন স্থানীয় জনগণ সজাগ থাকে এবং প্রশাসনকে সময়মতো তথ্য দেয়।” সাব্রুমের বাসিন্দা প্রবীণ নাগরিক সুভাষ দাস বলেন, “এই ধরনের অভিযান দেখে আমাদের মনে সাহস বাড়ছে। আগে অনেক সময় নিরাপত্তা কম থাকলেও, এখন রাতেও টহল চলছে।”

ত্রিপুরা রাজ্যের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত সাব্রুম মহকুমা — তিন দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত। সাব্রুম শহর থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরেই বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রবেশপথ। এই ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সীমান্তবর্তী অঞ্চল অত্যন্ত সংবেদনশীল। অতীতে বহুবার সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান, অনুপ্রবেশ ও কখনও কখনও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার অভিযোগ উঠেছে। এই প্রসঙ্গে বিএসএফ আধিকারিক বলেন, “বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং সন্ত্রাসী তৎপরতা রুখতে আমরা সদা প্রস্তুত।”

সূত্রের খবর, সীমান্ত এলাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলিতে মোবাইল ভেহিকেল, টাওয়ার নজরদারি, নাইট ভিশন ডিভাইস, সার্চলাইট এবং সিসিটিভি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে। কিছু এলাকায় ড্রোনের মাধ্যমে সীমান্তের ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে খবর, বিশেষ অভিযানে ইতিমধ্যেই কয়েকজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তবে এখনো পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনা সামনে আসেনি এই সীমান্তে।

ত্রিপুরা সরকারের উচ্চপদস্থ সূত্র জানিয়েছে, পেহেলগাঁও ঘটনার পরে গোটা রাজ্যে ‘হাই অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। বিশেষ করে সাব্রুম, বক্সনগর, সোনামুড়া, মেলাঘর ও কৈলাশহর অঞ্চলে বাড়তি নজরদারি চলছে। ত্রিপুরা পুলিশ, বিএসএফ এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি সমন্বিতভাবে নজর রাখছে যাতে কোনো বহিরাগত শক্তি রাজ্যে অনুপ্রবেশ করতে না পারে। SDPO স্পষ্ট ভাষায় জানান, “আমরা এক ইঞ্চি জমিও অবৈধ প্রবেশের জন্য ছেড়ে দেব না। আমাদের বাহিনী প্রস্তুত। সাধারণ নাগরিকের সহযোগিতায় এই চ্যালেঞ্জ আমরা সফলভাবে মোকাবিলা করব।”

সাব্রুমের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলি এখন বাড়তি সতর্কতা এবং নিরাপত্তার মুড়ে ফেলা হয়েছে। রাতভর টহল, চেকপোস্টে যানবাহন তল্লাশি এবং স্থানীয়দের সচেতন করার মাধ্যমে প্রশাসন যে কোনও রকম অনুপ্রবেশ ও সন্ত্রাসী তৎপরতা প্রতিরোধে বদ্ধপরিকর। পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা স্বাভাবিক জীবনযাপনের পাশাপাশি সতর্ক আছেন।About Us

'আবির গুলাল’ মুক্তি পাচ্ছে না ভারতে

পাকিস্তানি শিল্পীর অভিনীত চলচ্চিত্র ‘আবির গুলাল’ মুক্তি পাচ্ছে না ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে!

পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খানের অভিনীত এবং বলিউড অভিনেত্রী বাণী কাপুরের সহ-অভিনীত হিন্দি ছবি ‘আবির গুলাল’ আর ভারতের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে না। কেন্দ্রের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের সূত্র অনুযায়ী, সদ্য জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওে ঘটে যাওয়া নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার পটভূমিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনায় ২৭ জন নিরীহ পর্যটক ও এক কাশ্মীরি নির্মমভাবে প্রাণ হারান, যা গোটা দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়। আগামী ৯ মে ‘আবির গুলাল’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন আরতি এস বাগদি এবং প্রযোজনা করেছেন বিবেক বি আগরওয়াল। কিন্তু মুক্তির আগেই চলচ্চিত্রটি প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়ে, বিশেষ করে রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নব নির্মাণ সেনা (এমএনএস) দলের পক্ষ থেকে। এমএনএস দাবি তোলে, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েনের সময় কোনো পাকিস্তানি শিল্পীর কাজ ভারতে চলতে দেওয়া যাবে না।

পহেলগাঁও হামলার পর চলচ্চিত্রটির বিরোধিতা আরও জোরদার হয়। এমএনএস নেতা আমেয় খোপকর বলেন, “আমরা বহুদিন ধরেই পাকিস্তানি শিল্পীদের ভারতের মাটিতে কাজ করতে বাধা দিয়ে আসছি। এবারও করবো। সাহস থাকলে ছবিটি মুক্তি দিয়ে দেখান, আমরা তা আটকাবই।” একইসঙ্গে, ফেডারেশন অব ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া সিনে এমপ্লয়িজ (FWICE), বলিউডের বৃহত্তম কর্মী সংগঠন, ফের পাকিস্তানি শিল্পী ও প্রযুক্তিবিদদের সম্পূর্ণ বয়কটের ঘোষণা করে।

FWICE-এর বিবৃতিতে বলা হয়, “পহেলগাঁওের সন্ত্রাসী ঘটনার পর আমরা আবারও সমগ্র ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, কোনো পাকিস্তানি শিল্পী, গায়ক বা প্রযুক্তিবিদকে কাজে লাগানো চলবে না। এটি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে কোনো ধরনের পারফর্ম্যান্স বা সহযোগিতা হলেও প্রযোজ্য হবে।” তারা আরও জানায়, কোনো প্রযোজক বা পরিচালক যদি এই নির্দেশ অমান্য করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে কড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংগঠনটি স্পষ্ট করে দিয়েছে, ‘আবির গুলাল’ এর ভারতে মুক্তি প্রতিহত করতে তারা সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের সূত্রে জানা গেছে, দেশের বহু সিনেমা হল মালিক এবং বিনোদন সংস্থাই ‘আবির গুলাল’ প্রদর্শন করতে প্রস্তুত ছিলেন না। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে সিনেমাটি বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমেও #BoycottAbirGulaal ট্রেন্ড ছড়িয়ে পড়ে, জনমত গড়ে ওঠে সিনেমাটি না দেখানোর পক্ষে। সবদিক বিচার করে মন্ত্রক ছবির মুক্তির অনুমতি প্রত্যাখ্যান করেছে।

এদিকে, অভিনেতা ফাওয়াদ খান সোশ্যাল মিডিয়ায় পহেলগাঁও হামলার তীব্র নিন্দা করে শোকপ্রকাশ করেছেন। নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে তিনি লেখেন, “পহেলগাঁওে ঘটে যাওয়া এই নৃশংস ঘটনার খবর শুনে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। নিহতদের পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা রইল। এই কঠিন সময়ে আমরা তাদের জন্য প্রার্থনা করি।”

উল্লেখ্য, পাকিস্তানি শিল্পীদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান নতুন নয়। ২০১৬ সালের উরি হামলার পর ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে পাকিস্তানি অভিনেতাদের কার্যত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। ফাওয়াদ খান সেই সময় করণ জোহরের ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ ছবিতে অভিনয় করে সমালোচনার মুখে পড়েন। পরবর্তীতে করণ জোহর প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করে জানান, তিনি আর পাকিস্তানি শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করবেন না। ২০১৭ সালে শাহরুখ খান অভিনীত ‘রইস’ সিনেমাও বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে, কারণ সেখানে পাকিস্তানি অভিনেত্রী মাহিরা খান ছিলেন মুখ্য ভূমিকায়।

বর্তমানে দেশজুড়ে জাতীয় আবেগ প্রবল। পহেলগাঁও হামলার নির্মমতা দেশবাসীকে ক্ষুব্ধ করেছে। এরই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিনোদন শিল্পের বৃহত্তর অংশ একত্রে ‘আবির গুলাল’ ছবির মুক্তি রোধ করেছে। এ সিদ্ধান্ত দেশের মানুষের আবেগ ও নিরাপত্তার প্রতি সরকারের অঙ্গীকারের প্রতিফলন হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।About Us