TSR এর নতুন রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ন

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তর ত্রিপুরার TSR এর জন্য একটি নতুন কেন্দ্রীয় রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ান গঠনের অনুমোদন দিয়েছে!

ত্রিপুরার আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে আরও সুসংহত করতে ও নিরাপত্তা জোরদার করতে রাজ্যে আরও একটি ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ন (IR Battalion) গঠনের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা আজ সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ড.) মানিক সাহা।

মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “ত্রিপুরার জন্য একটি বড় উৎসাহব্যঞ্জক খবর! কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস (TSR)-এর অধীনে আরও একটি ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ন স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে। এর ফলে রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্তও খুলে যাবে। এই সিদ্ধান্তের জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী অমিত শাহজির প্রতি কৃতজ্ঞ।”

সূত্রের খবর, রাজ্যে আরও একটি আইআর ব্যাটেলিয়ন গঠনের দাবিটি কিছুদিন আগে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাতে সরাসরি উত্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা। সেই দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে এবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আনুষ্ঠানিকভাবে এই অনুমোদন দিল। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় সরকার এই নতুন আইআর ব্যাটেলিয়ন গঠনের জন্য এককালীন ৫০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে। এর মধ্যে ৩০ কোটি টাকা পরিকাঠামোগত ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ থাকবে, যা ব্যয় বিবরণী জমা দেওয়ার পর রাজ্য সরকারকে প্রদান করা হবে। তবে জমি ক্রয়ের খরচ এই বরাদ্দের আওতায় পড়বে না।

এই ব্যাটেলিয়ন গঠনের পর, তা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে প্রথম অগ্রাধিকারভুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ, প্রয়োজন অনুযায়ী দেশের যেকোনো প্রান্তে এই TSR-বাহিনী মোতায়েন করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিতে পারবে। এই উদ্যোগের ফলে ত্রিপুরার সীমান্তবর্তী ও দূর্গম এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও মজবুত হবে, পাশাপাশি প্রচুর সংখ্যক স্থানীয় যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দ্রুত এই ব্যাটেলিয়নের গঠন সংক্রান্ত পরিকাঠামো ও নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। ত্রিপুরায় নতুন আইআর ব্যাটেলিয়নের অনুমোদন রাজ্যের জন্য নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কেন্দ্র ও রাজ্যের সমন্বয়ে এই প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে ত্রিপুরা একটি নিরাপদ ও কর্মনির্ভর রাজ্য হিসেবে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।About Us

বিজেপির সাংগঠনিক সংকট প্রকাশ্যে

বিজেপির সাংগঠনিক অচলাবস্থায় রাজনৈতিক গতি বাড়াচ্ছে সিপিআইএম ও কংগ্রেস!

রাজ্যে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির আবহে আপাতত হিমঘরে পাঠানো হয়েছে বিজেপির প্রদেশ সভাপতি নির্বাচন। যদিও দুই দেশের মধ্যে এখন সাময়িক যুদ্ধবিরতি চলছে, তবুও বর্তমান পরিস্থিতিকে যুদ্ধকালীন বলেই চিহ্নিত করছে রাজনৈতিক মহল। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বও মুখ খুলতে পারছেন না—কবে হবে সভাপতি নির্বাচন, তা স্পষ্ট নয় কারও কাছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জুয়েল ওরাং এখনও পর্যন্ত রাজ্যে পা রাখেননি। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে বর্তমান বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ফলে রাজ্য নেতৃত্ব কার্যত বল ঠেলে দিয়েছে দিল্লির কোর্টে এবং তারা নিজেরাও ‘সুখনিদ্রা’য় নিমগ্ন, অভিযোগ দলের অভ্যন্তরেই।

প্রসঙ্গত, এবছরের এপ্রিল মাসের গোড়ায় সংসদের বাজেট অধিবেশন শেষ হওয়ার পরেই বিভিন্ন রাজ্যে তড়িঘড়ি সভাপতি নির্বাচন শুরু হয়েছিল। কিন্তু সূত্রের খবর, নতুন সর্বভারতীয় সভাপতির বিষয়ে আরএসএস ও মোদী-অমিত শাহের মধ্যে মতানৈক্যের কারণে পুরো প্রক্রিয়াই আবার জটিল হয়ে পড়ে। বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সভাপতি নির্বাচনও আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তা নিয়ে আর আলোচনা নয় বলেই দলীয় মহলের দাবি। দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে নতুন সভাপতি না হওয়ায় গোটা সংগঠন কার্যত ছন্নছাড়া অবস্থায় পৌঁছেছে। রাজ্য নেতাদের মুখে এখন আর সভাপতি নির্বাচন নিয়ে তেমন আগ্রহ বা উদ্দীপনা নেই। সাংবাদিক সম্মেলনেও এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে নেতারা অস্বস্তিতে পড়ছেন, কারণ পুরো বিষয়টি এখন দিল্লির অধীন।

তৃণমূল স্তরের সংগঠন কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। আজও রাজ্যের ৪০ শতাংশের বেশি বুথে সভাপতি নির্বাচন হয়নি। দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও পুরনো নেতারাই সেই বুথ পরিচালনা করছেন। কিছু মণ্ডলে সভাপতি নির্বাচিত হলেও কমিটি গঠন হয়নি। একই চিত্র জেলা কমিটিগুলিতেও। নতুন জেলা সভাপতি নির্বাচনের পরেও বহু জায়গায় জেলা কমিটি গঠিত হয়নি। রাজ্যে এখন প্রদেশ, জেলা, মণ্ডল—সব পর্যায়ে সাংগঠনিক কাঠামো স্থবির। মাঝে মধ্যে বৈঠক হলেও শাখা সংগঠনগুলো কার্যত নিষ্ক্রিয়। মহিলা মোর্চা, যুব মোর্চা, ওবিসি মোর্চা, এসসি মোর্চা, জনজাতি মোর্চা এবং কিষাণ মোর্চা—প্রায় প্রতিটি শাখা সংগঠনেই নতুন নেতৃত্ব নেই। এর জেরে নেতাদের মধ্যে কোনও কর্মচাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছে না।

এই যুদ্ধের আবহে কেন্দ্রের নির্দেশে রাজ্যজুড়ে ‘তেরঙ্গা যাত্রা’র মতো দেশপ্রেম জাগানো কর্মসূচি পালন করছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মন কি বাত’ও নিয়মিত সম্প্রচার হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে সংগঠনের পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে রাজ্য নেতাদের তেমন কোনও উৎসাহ নেই। কেবল কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করেই দায় সারা হচ্ছে। এই অচলাবস্থার সুযোগ নিচ্ছে সিপিএম ও কংগ্রেস। কংগ্রেসের ‘সংবিধান বাঁচাও’ কর্মসূচি ইতিমধ্যেই রাজ্যে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে। অন্যদিকে সিপিএম তাদের রাজ্য কমিটির বৈঠকে লড়াই-সংগ্রাম আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুব সংগঠন তিন দফা দাবিকে সামনে রেখে রাস্তায় নেমে পড়েছে বহু আগেই।

নতুন সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় রাজ্য বিজেপির অভ্যন্তরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এতদিন মুখ্যমন্ত্রীর নিজস্ব কোনও গোষ্ঠী না থাকলেও এখন তাঁর নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী লবি তৈরি হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রীকে কেন্দ্র করে প্রশংসার বন্যা বইছে। এতে দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজন তৃণমূল স্তরের কর্মীদের মধ্যেও প্রভাব ফেলেছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক চিত্র দেখা যাচ্ছে জনজাতি মোর্চা এবং ওবিসি মোর্চার ক্ষেত্রে। পাহাড় এখন পুরোপুরিভাবে তিপ্রা মথার উপর নির্ভরশীল। বিজেপির পাহাড়ের অফিসগুলো একে একে গুঁড়িয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছেন কর্মী ও কার্যকর্তারা। জনজাতি মোর্চাকে রাজনৈতিক মহল ‘কোমায়’ বলেই উল্লেখ করছে।

রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব, জনজাতি মোর্চাকে উপেক্ষা করে তিপ্রা মথাকে গুরুত্ব দেওয়ার যে কৌশল নিয়েছে, তার ফলেই সংগঠনের ভিত্তি তলানিতে এসে ঠেকেছে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। একই চিত্র ওবিসি মোর্চার ক্ষেত্রেও। ওবিসি সংরক্ষণ ইস্যু দানা বাঁধলেও কার্যত দল কিছুই করতে পারেনি। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, আগামী বিধানসভা ভোটেও বিজেপিকে আঞ্চলিক দল—তিপ্রা মথা ও আইপিএফটি’র উপর নির্ভর করেই ভোট বৈতরণি পার করতে হতে পারে। যা শাসক দলের জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর বিষয়।

সবমিলিয়ে, রাজ্য বিজেপির অন্দরেই এখন সাংগঠনিক শূন্যতা, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, জনভিত্তির অবনতি ও কর্মী-সমর্থকদের মনোবলহীনতা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। এমন অবস্থায় দলকে টেনে তুলতে হলে দ্রুত নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং কার্যকর সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কোনো বিকল্প নেই—এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের। অন্যথায়, রাজ্যে শাসক দল হিসেবে বিজেপির ভবিষ্যৎ বড়সড় সংকটে পড়তে পারে বলে অভিমত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।About Us

নার্সিং স্টাফরা দীর্ঘ বঞ্চনার শিকার

নার্সিং পেশাকে মানবতার সেবার নাম দিয়ে ঠকানো হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে!

ত্রিপুরার স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করতে ৪৩২ জন নার্স  নিয়োগে বড়সড় পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। এর মধ্যে ৩৩২ জন নিয়মিত নার্সিং অফিসার হিসেবে এবং অতিরিক্ত ১০০ জন চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডঃ মানিক সাহা আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেন।

এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “নার্সিং একটা অত্যন্ত সম্মানজনক ও দায়িত্বপূর্ণ পেশা। রোগী যখন হাসপাতালে আসে, তখন প্রথমে তার পাশে দাঁড়ান নার্সরা। তাঁরা রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে শুরু করে মানসিক সাহচর্য দিয়ে থাকেন। সেবার মধ্য দিয়েই নার্সরা রোগীর মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলেন।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, “২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে আগরতলা নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউটকে ‘আগরতলা গভর্নমেন্ট নার্সিং কলেজ’-এ উন্নীত করা হয়েছে। এখন রাজ্যেই বিএসসি নার্সিং, এমবিবিএস ও বিডিএস-এর মত উচ্চমানের কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে ছেলেমেয়েরা।” তিনি আরও জানান, উদয়পুরের ৪০ আসন বিশিষ্ট এএনএম প্রতিষ্ঠানকে জিএনএম কোর্সে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া দুর্জয়নগরের নার্সিং ইনস্টিটিউটের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন চলছে। নার্সিং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটাতে একাধিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য পরিষেবায় গুণগত পরিবর্তন আনতে ইতিমধ্যেই ২০২৪ সালে রাজ্যে ১৫৩ জন নার্স নিয়োগ হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। বর্তমানে রাজ্যে ৯টি সুপার স্পেশালিটি চিকিৎসা পরিষেবা চালু হয়েছে। স্বাস্থ্য পরিসেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি এবার রাজ্যে বেসরকারি লগ্নিকারীরাও বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, যা এক ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। ডাঃ সাহা এদিনের বক্তব্যে নার্সদের সুরক্ষা, স্বাস্থ্য এবং মানসিক সুস্থতার দিকেও সমান গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, “এই পেশার সঙ্গে যুক্তদের প্রতি আমাদের আরও যত্নশীল হতে হবে।

এবারের আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবসের থিম — ‘আমাদের নার্সগণ আমাদের ভবিষ্যৎ, নার্সদের যত্ন নিন, অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করুন’ — অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।” তিনি বলেন, “নার্সদের মাধ্যমে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান সম্ভব হলে রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কাঠামোও আরও মজবুত হবে।” তবে এক শ্রেণীর নার্সদের মতো এই ধরনের থিম প্রতি বছরেই করা হয়, তবে এই স্লোগান গুলি শুধুমাত্র অনুষ্ঠানের পেছনের ব্যানারেই শোভা পায় এবং আদতে এগুলির কোন প্রয়োগই নেই।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “নার্সিং জগতের পথপ্রদর্শক ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিনেই সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবস পালন করা হয়। তাঁর জন্ম ১৮২০ সালের ১২ মে। ‘লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ নামে যাঁকে সবাই চেনে, তিনি ক্রিমিয়ার যুদ্ধে আহত সৈনিকদের অক্লান্ত সেবা করেছিলেন। তাঁর দেখানো পথেই গড়ে উঠেছে বিশ্বের নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি।” এদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী শ্রী টিংকু রায়, স্বাস্থ্য সচিব কিরণ গিত্যে, স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ তপন মজুমদার, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ অধিকর্তা ডাঃ অঞ্জন দাস, মেডিকেল এডুকেশনের অধিকর্তা ডাঃ এইচ পি শর্মা, ত্রিপুরা নার্সিং কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার রেবেকা ডার্লং সহ রাজ্যের স্বাস্থ্যদপ্তরের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্তা ও বিশিষ্টজনেরা।

কিন্তু ঐদিনের অনুষ্ঠানে ডাক্তার মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের নার্সিং স্টাফদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা এবং প্রতিকূলতা নিরসনে কোন সদিচ্ছা বা আলোচনা শোনা যায়নি। যেখানে ত্রিপুরা রাজ্যে অন্যান্য সব বিভাগে সরকারি কর্মচারীদের জন্য একের পর এক পদোন্নতির ঘোষণা ও বাস্তবায়ন হয়েছে, সেখানে দীর্ঘদিন ধরেই নার্সিং স্টাফদের জন্য কোনও স্পষ্ট পদোন্নতি হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী নিজে একজন চিকিৎসক হয়েও এই সংক্রান্ত বিষয়ে অনুষ্ঠানে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি—এই বিষয়টি নিয়ে চরম হতাশ ও ক্ষুব্ধ রাজ্যের নার্স সমাজ। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী অনেক নার্স আশা করেছিলেন, একজন ডাক্তার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ডাঃ মানিক সাহা তাঁদের বঞ্চনার দীর্ঘ ইতিহাসের প্রতি সুবিচার করবেন এবং অন্তত পদোন্নতি বা গ্রেড পরিবর্তনের বিষয়ে কোনও ঘোষণা করবেন। কিন্তু সেই আশায় কার্যত জল ঢেলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

বর্তমানে ভারতের অধিকাংশ রাজ্যেই নার্সিং কর্মীদের গ্রুপ ‘বি’ পদমর্যাদায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ ত্রিপুরায় আজও নার্সিং স্টাফরা গ্রুপ ‘সি’ তে রয়ে গেছেন। শুধুমাত্র তাঁদের পদের নাম পরিবর্তন করে ‘নার্সিং অফিসার’ বলে ডাকলেই বাস্তব অবস্থার পরিবর্তন হয় না—এমনটাই মত নার্স সংগঠনগুলির। অনেকেই মনে করছেন, এটি একপ্রকার চাতুর্যপূর্ণ চাল মাত্র, যাতে প্রকৃত উন্নতির পরিবর্তে শুধু নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে।

আরও হতাশাজনক বিষয় হলো, কিছুদিন আগে কেন্দ্র সরকার থেকে নার্সদের পোশাক ভাতা প্রদানের বিষয়ে একটি নির্দেশিকা জারি হওয়ার পর রাজ্যের অর্থ দপ্তর সেই ভাতা অনুমোদন করলেও পরে তা আবার বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে নার্সরা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা নিরলস পরিষেবা দিয়ে থাকেন, সেখানে তাঁদের প্রতি এই অবহেলা ও বঞ্চনা একপ্রকার অবিচার বলে মনে করছেন সমাজের বিশিষ্টজনেরা। তাঁদের মতে, একজন ডাক্তার মুখ্যমন্ত্রীর উচিত ছিল এই পেশার সম্মান রক্ষায় এবং দীর্ঘদিনের বৈষম্য দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। মুখ্যমন্ত্রীর এই নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তাই নার্সদের ন্যায্য দাবিকে আরও দীর্ঘসূত্রিতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।About Us

অনুপ্রবেশ দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চাইলেন রাজ্যের মন্ত্রী!

বাংলাদেশ থেকে ক্রমবর্ধমান অবৈধ অনুপ্রবেশে উদ্বেগ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহের হস্তক্ষেপ চাইলেন তিপ্রা মথা দলের রামচন্দ্রঘাট কেন্দ্রের বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা। তিনি কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে একটি বিস্তারিত স্মারকলিপি পাঠিয়ে রোহিঙ্গা মুসলিম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আগত বাংলাদেশিদের অবৈধপ্রবেশ ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

স্মারকলিপিতে বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা অভিযোগ করেছেন, ত্রিপুরা-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমরা দলে দলে ভারতে প্রবেশ করছে। তিনি বলেন, “ত্রিপুরা এখন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের করিডোরে পরিণত হয়েছে।” এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা রেলপথ ও জাতীয় সড়ক ব্যবহার করে অন্যান্য রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সম্প্রতি রাজ্যের চুড়াইবাড়ি সীমান্তে পুলিশ ২৩ জন বিদেশিকে আটক করে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই রোহিঙ্গা মুসলিম, যারা মূলত মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিকও রয়েছে। এই অনুপ্রবেশের পেছনে বাংলাদেশ ও ভারতের দালালচক্র সক্রিয় রয়েছে বলে দাবি করেছেন বিধায়ক দেববর্মা। তিনি স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম শরণার্থী শিবির থেকেই রোহিঙ্গারা দালালদের মাধ্যমে ভারতে প্রবেশ করছে। ত্রিপুরা হয়ে তারা দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে, যা দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক।

শুধু রোহিঙ্গা নয়, বিধায়কের অভিযোগ, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আসা বহু বাংলাদেশি ত্রিপুরার বিভিন্ন উপজেলায় বসতি স্থাপন করেছে। ছাওমনু, গন্ডাছড়া, করবুক ও শিলাছড়ির মতো এলাকাগুলোতে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। তিনি অভিযোগ করেন, “এই অভিবাসীরা অবৈধভাবে আধার কার্ড, রেশন কার্ড সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সংগ্রহ করে নাগরিক সুবিধা ভোগ করছে।” এমনকি কেউ কেউ বনভূমিতে জমির পাট্টাও পেয়ে গেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এইসব অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে অনেকে পেট্রোল পাম্প চালাচ্ছে, গ্যাস এজেন্সির মালিক, আবার কেউ সরকারি ন্যায্যমূল্যের দোকানও পরিচালনা করছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ গাড়ি বা বড় ব্যবসারও মালিক।সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হিসেবে বিধায়ক দেববর্মা দাবি করেছেন, এইসব অনুপ্রবেশকারীদের কেউ কেউ জমির দালালি ও মাফিয়া কার্যকলাপের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি তাদের মধ্যে উগ্রবাদী সংগঠনের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণও রয়েছে বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন তিনি।

বিধায়কের বক্তব্য অনুযায়ী, এভাবে চলতে থাকলে ত্রিপুরা রাজ্যের পাশাপাশি গোটা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা চরম হুমকির মুখে পড়বে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দ্রুত একটি উচ্চ পর্যায়ের বিশেষ কমিটি গঠনের দাবি জানান, যারা বিদেশি নাগরিকদের সনাক্ত করে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করবে। স্মারকলিপিতে বিধায়ক দেববর্মা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, “এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। আমাদের ভূমি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি ধ্বংসের মুখে পড়বে।”

এখন দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা ও ত্রিপুরাকে এই ভয়াবহ অনুপ্রবেশ থেকে মুক্ত করতে কেন্দ্রীয় সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে রাজ্যের মানুষ। ত্রিপুরার মতো সীমান্তবর্তী রাজ্যে বিদেশি অনুপ্রবেশ নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের কার্যকলাপ ও উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে, তা সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্তরে এই বিষয়টি যথাযথ ভাবে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।About Us

TGEA-র উদ্যোগে রক্তদান শিবির

রাজ্যের ব্লাড ব্যাংক গুলির রক্ত সংকট মেটাতে TGEA-র মানবিক মুখ!

ত্রিপুরা সরকারি কর্মচারী সমিতি (TGEA)-র উদ্যোগে আজ একটি জরুরি রক্তদান শিবির অনুষ্ঠিত হয় TGEA কেন্দ্রীয় ভবনে। রাজ্যের রক্ত সংরক্ষণাগাড়ে তীব্র রক্তসংকট দেখা দেওয়ায় এই শিবিরের আয়োজন করা হয়।

এই কর্মসূচিতে সরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং সমাজের প্রতি নিজেদের দায়বদ্ধতার বার্তা দেন। শিবিরের মূল প্রতিপাদ্য ছিল—”আছি মানুষেরই সাথে”। রক্তদানকারীদের উৎসাহ দিতে এবং রক্তের গুরুত্ব বোঝাতে TGEA ভবনে বিভিন্ন সচেতনতামূলক পোস্টার ও ব্যানার লাগানো হয়।

এই দিনটি আন্তর্জাতিক নার্স দিবস হওয়ায় অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত নার্সদের অবদানের স্বীকৃতি জানানো হয়। উপস্থিত বক্তারা বলেন, “রোগীর পাশে সর্বক্ষণ থাকা নার্সরা হলেন স্বাস্থ্যব্যবস্থার অদৃশ্য নায়ক। তাঁদের প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানানো আমাদের কর্তব্য।”

TGEA-র নেতারা জানান, ত্রিপুরায় রক্তের ঘাটতি মোকাবেলায় সরকারি কর্মীদের এই অংশগ্রহণ একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাঁরা আরও বলেন, “শুধু কর্মচারীদের দাবিদাওয়া নয়, বিপদের সময় মানুষের পাশে থাকাও আমাদের দায়িত্ব। এ ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতেও চালু থাকবে বলে তারা জানান।” উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে জরুরি রক্তের চাহিদা দেখা দেওয়ায় স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সংগঠনকে রক্তদানে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানানো হয়েছিল।

এদিনের শিবিরে প্রায় ৪০ জন কর্মচারী রক্তদান করেন। ত্রিপুরা রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পরিষদ এবং বিভিন্ন হাসপাতাল এই উদ্যোগে সহযোগিতা করে। মানবতার এই অনন্য নজির রাজ্যের অন্যান্য সংগঠনগুলিকেও অনুপ্রাণিত করবে বলে আশাবাদী আয়োজকরা।About Us

টিএনজিসিএলের গ্রাহক প্রতারণার ফাঁদ

টিএনজিসিএলকে মনোপলি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের তকমা!

ত্রিপুরা রাজ্যে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা টিএনজিসিএল (ত্রিপুরা ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড) একাধিক অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছে। বাড়ি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কিংবা যানবাহনে ব্যবহৃত সিএনজি—সব ক্ষেত্রেই সংস্থাটির বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বিলিং, স্বচ্ছতার অভাব এবং একচেটিয়া মনোভাবের অভিযোগ তুলে ধীরে ধীরে ক্ষোভ জমছে সাধারণ জনগণের মধ্যে। ডমেস্টিক বা গৃহস্থালির গ্যাস সংযোগে গ্রাহকরা প্রতিনিয়ত অভিযোগ করছেন অতিরিক্ত বিল সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে। জানা গেছে, বর্তমানে মিনিমাম বিলের পরিমাণ ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে, যেখানে অনেক সময় মিটার ঘোরার পরিমাণও যথেষ্ট কম থাকে। মিটার একটু বেশি ঘুরলেই বিলের অংক যেন আকাশ ছোঁয়া হয়ে ওঠে।

অন্যদিকে, বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রেও অভিযোগের অন্ত নেই। সংস্থার তরফে একতরফাভাবে নিয়ম চাপিয়ে দিয়ে বলা হয়েছে, এখন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ই-বিল পাঠানো হবে এবং কাগজের বিল বন্ধ করা হবে। গ্রাহকরা যদি ই-বিল না পান, তাহলে কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করতে হবে এবং তিন দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। গ্রাহকদের অভিযোগ বিল হাতে না পেয়েও পেনাল্টি হিসেবে ২ শতাংশ অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের। টিএনজিসিএল-এর সিএনজি পরিষেবাও ক্রমশ জনসাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। কিছুদিন পরপরই দাম বাড়ছে সিএনজির, এমনকি অনেকে আশঙ্কা করছেন, সিএনজির দাম পেট্রোলের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে খুব শীঘ্রই। যা পরিবেশবান্ধব যানবাহন ব্যবস্থার ওপর একটি বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হলো টিএনজিসিএলের মাধ্যমে আরোপিত ‘ত্রিপুরা রোড ট্রান্সপোর্ট সেস’। এই খাতে প্রতি মাসে ১৯.৫ শতাংশ হারে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। তার উপর রয়েছে আরও ৪ শতাংশ ভ্যাট। গ্রাহকদের প্রশ্ন, এই ‘রোড ট্রান্সপোর্ট সেস’ আদায় করে টিএনজিসিএল কী ধরনের সুবিধা দিচ্ছে রাজ্যবাসীকে? ট্যাক্সের এই অস্বচ্ছ ব্যবস্থার কারণে মনে করা হচ্ছে, টিএনজিসিএল এখন শুধুই একটি বাণিজ্যিক সংস্থা হিসেবে কাজ করছে, যার মূল উদ্দেশ্য লাভজনক ব্যবসা—পরিষেবা নয়। বছর শেষে যদি প্রতিটি গ্রাহক ১৯.৫ শতাংশ হারে সেস প্রদান করেন, তাহলে সেই অংক দাঁড়ায় লক্ষ লক্ষ টাকায়। এই অর্থের হিসাব কোথায়, কাদের কাছে এবং কোন খাতে তা ব্যয় হচ্ছে—তা নিয়ে নেই কোনো স্বচ্ছতা।

টিএনজিসিএল ডিজিটাল লেনদেন উৎসাহিত করতে বলেছে, যারা অনলাইনে বিল মেটাবেন, পরবর্তী বিলে তাদের ৫০ টাকা ছাড় দেওয়া হবে। কিন্তু এই ছাড়ে তেমন উপকার পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। অনেকের মত, লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করে মাত্র ৫০ টাকার ছাড় দিয়ে টিএনজিসিএল আসলে একটি প্রহসন করছে। টিএনজিসিএল যখন রাজ্যে যাত্রা শুরু করে, তখন তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল পরিবেশবান্ধব সমাজ গঠনের। তারা বলেছিল, গ্যাসে স্বয়ংসম্পূর্ণ ত্রিপুরা গড়ে তোলা হবে, যার মাধ্যমে জ্বালানির নিরাপদ ও সহজলভ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে। রাজ্য সরকার ও আসাম সরকারের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা আজ এমন এক অবস্থানে পৌঁছেছে, যেখানে জনগণের মধ্যে মনে হচ্ছে, তারা যেন সুদখোর মহাজনের মতো আচরণ করছে।

টিএনজিসিএলের সেবায় প্রতিযোগিতা না থাকার ফলে সংস্থাটি একপ্রকার মনোপলি ব্যবসা চালাচ্ছে রাজ্যে। নেই বিকল্প সংস্থা, নেই প্রতিদ্বন্দ্বী পরিষেবা প্রদানকারী। এই একাধিপত্যের সুযোগে তারা ইচ্ছামতো নিয়ম চাপিয়ে দিচ্ছে এবং গ্রাহকদের অসুবিধার দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপই করছে না। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, টিএনজিসিএল বর্তমানে একটি প্রভাবশালী বাণিজ্যিক সংস্থায় পরিণত হয়েছে, যারা গ্রাহকদের কথা ভাবার বদলে কেবলই মুনাফার হিসেব কষছে। প্রশ্ন উঠছে—এমন অবস্থা চলতে থাকলে রাজ্যের সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? সরকারের উচিত এই সংস্থার কার্যক্রমের উপর নজরদারি করা এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা। জনগণের করের টাকা দিয়ে চলা একটি সংস্থা যদি জনগণকেই ঠকায়, তাহলে সেই ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখা কতটা যুক্তিযুক্ত—সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।About Us

যুদ্ধের আগুনে পকেট গরম অসাধু ব্যবসায়ীদের

যুদ্ধের আতঙ্কে নিত্যপণ্যের বাজারে চাহিদা ও মূল্য উভয়ই ঊর্ধ্বমুখী!

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আবহ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম ত্রিপুরা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এক ধরনের অজানা আতঙ্ক। সেই আতঙ্কের সরাসরি প্রভাব পড়েছে রাজ্যের বাজারঘাটে। একদিকে যেমন সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মজুত করতে দোকানে দোকানে ভিড় করছেন, অন্যদিকে সুযোগ বুঝে কিছু সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী বাড়িয়ে দিচ্ছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম।
রাজধানী আগরতলার অন্যতম বৃহৎ পাইকারি ও খুচরো বাজার মহারাজগঞ্জ-সহ অন্যান্য বাজারগুলিতে গত কয়েকদিন ধরেই নজরে পড়ছে বাড়তি ভিড়।

বিশেষত বুধবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার রাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি বড় শহরে প্রত্যাঘাতের খবর সামনে আসতেই সেই আতঙ্ক আরও বাড়ে। শুক্রবার সকাল থেকে বাজারগুলিতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষ হুড়োহুড়ি করে চাল, ডাল, তেল, ময়দা, ডিম, শাক-সবজি, মাছ-মাংস, এমনকি জরুরি ওষুধ পর্যন্ত কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। মহারাজগঞ্জ বাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা গেছে, যুদ্ধের পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর থেকেই পোল্ট্রির ডিমের দাম প্রতি পেটিতে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। পাশাপাশি চালের দামও প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে গেছে বলে জানা গেছে। স্বাভাবিক ভাবেই যুদ্ধকালীন এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে কিছু ব্যবসায়ী কৃত্রিম ভাবে সংকট তৈরি করে অধিক মুনাফার লক্ষ্যে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে।

এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, প্রশাসন কি করছে? এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তরফে বাজারে কোনো নজরদারি শুরু হয়নি। নেই কোনো নির্দেশিকা বা বিশেষ তৎপরতা। নেই বাজার অভিযান, নেই মূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। অথচ পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করেই এই সময়ে প্রশাসনের সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল। যাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে, সেই দিকেই প্রশাসনিক নজরদারির প্রয়োজন ছিল বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।

যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তা অনেকটাই মনে করিয়ে দিচ্ছে করোনাকালীন লকডাউনের আগের সময়টিকে। ঠিক যেমনভাবে মানুষ তখন আতঙ্কে চাল, ডাল, তেল, ওষুধ মজুত করতে শুরু করেছিল, তেমনই এখন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এই আশঙ্কায় অনেকে বাড়িতে ২ থেকে ৩ মাসের রসদ মজুত করতে শুরু করেছেন। এমন অনেক পরিবারকে দেখা গেছে যারা তিন থেকে চার মাসের চাল, ডাল, সরিষার তেল, বিস্কুট, শুকনো খাবার এমনকি পানীয় জল পর্যন্ত সংগ্রহ করছেন।

মহারাজগঞ্জ বাজারের এক ব্যবসায়ীর কথায়, “কেউ কেউ এমনও আছেন যারা একসাথে ২৫-৩০ লিটার সরিষার তেল নিয়ে যাচ্ছেন। অথচ সাধারণত ওই পরিবারে মাসে ৩-৪ লিটারের বেশি তেল লাগে না। ওষুধের দোকানেও ভিড় অনেক বেড়েছে। যাঁদের প্রতিদিন ওষুধ খেতে হয়, তাঁরা ৩-৪ মাসের স্টক নিচ্ছেন।” এই মজুতদারি শুধু শহরেই সীমাবদ্ধ নেই, জেলা শহরগুলির বাজারেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। উত্তর, দক্ষিণ, গোমতী, ধলাই— প্রায় সব জেলাতেই বাজারে অস্বাভাবিক চাহিদা বেড়ে গেছে।

এই পরিস্থিতিতে বড় প্রশ্ন উঠে আসছে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া শ্রেণির মানুষদের জীবনযাত্রা নিয়ে। যেখানে একসঙ্গে দুই থেকে তিন মাসের খাদ্যসামগ্রী কিনে রাখার সামর্থ্য নেই, সেখানে যুদ্ধকালীন মূল্যবৃদ্ধি তাদের জীবনে অভিশাপ হয়ে উঠতে পারে। দিন আনি দিন খাই পরিবারের কাছে এই পরিস্থিতি দুর্বিষহ। তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, “আমরা তো দৈনিক আয় করেই চাল-ডাল কিনে খাই। যুদ্ধ হলে যদি কাজ বন্ধ হয়ে যায়, যদি জিনিসের দাম নাগালের বাইরে চলে যায়, তাহলে পরিবার নিয়ে বাঁচব কীভাবে?” রাজ্য খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজ্যে যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী মজুত আছে। সাধারণ মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু বাস্তবে বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ও কৃত্রিম সংকটের আভাস ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—যদি এত মজুত থাকে, তাহলে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন কেন? প্রশাসনের তরফ থেকে এখনো পর্যন্ত বাজারে কোনো অভিযান শুরু হয়নি। কোথাও মূল্য তালিকা যাচাই হচ্ছে না। নেই জরিমানা, নেই শাস্তিমূলক পদক্ষেপ। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য এটি হয়ে উঠছে সোনার সুযোগ। যুদ্ধের আগুনে পকেট ভরাচ্ছেন তারা। অথচ প্রশাসন এখনো নীরব দর্শকের ভূমিকায়। সারা রাজ্যে পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে চাপা ক্ষোভ ক্রমেই জমে উঠছে। কিছু বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সংগঠন ইতিমধ্যেই প্রশাসনের নির্লিপ্ততার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। তাদের বক্তব্য, “যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মানুষ আতঙ্কিত—কিন্তু সরকার চোখ বন্ধ করে বসে আছে। বাজারে নজরদারি নেই, অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে।”

বর্তমানে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হলো, যদি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে রাজ্যের পরিস্থিতি কী হবে? বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা রাজ্য হিসেবে ত্রিপুরা যে স্ট্র্যাটেজিকেলি গুরুত্বপূর্ণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যদি পাকিস্তান বাংলাদেশ হয়ে ভারতের উপর প্রত্যাঘাতের চেষ্টা করে, তবে সীমান্ত রাজ্য হিসেবে ত্রিপুরার ওপর প্রভাব পড়া অবশ্যম্ভাবী।

এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই সাধারণ মানুষ আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, যুদ্ধ যদি তিন থেকে চার মাস গড়ায়, তাহলে পণ্য আমদানি বন্ধ হতে পারে, সীমান্তে সমস্যা দেখা দিতে পারে, রাজ্যে সংকট তৈরি হতে পারে। এমন অবস্থায় পরিবারকে বাঁচাতে এখনই মজুত বাড়াতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত—মানুষকে আশ্বস্ত করা এবং বাজারে নজরদারি জোরদার করা। সঠিক দামে বাজারে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। যুদ্ধ একদিকে দেশের জন্য সংকট, অন্যদিকে কিছু অসাধুর জন্য লোভের উৎস। সাধারণ মানুষ যাতে সেই লোভের শিকার না হন, তা নিশ্চিত করা প্রশাসনের দায়িত্ব।About Us

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে হামলা

ভারতীয় সেনার অপারেশনে বিধ্বস্ত পাকিস্তানি সন্ত্রাসীরা!

পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ বার্তা দিল ভারত। কাশ্মীরের পহেলগাঁওে হিন্দুদের উপর বর্বর জঙ্গি হামলার পর ভারতীয় বায়ুসেনা সুনির্দিষ্ট বিমান অভিযান ‘অপারেশন সিন্দুর’ সংগঠিত করেছে। অভিযানে, পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তত নয়টি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করছে ভারত সরকার। এই অভিযানে ভারতীয় বাহিনী রাফাল যুদ্ধবিমান ও স্ক্যাল্প ও হ্যামার মিসাইল ব্যবহার করে লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট হামলা চালিয়েছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্র জানিয়েছে, নিহত সকলেই জঙ্গি, কোনো সাধারণ মানুষের মৃত্যু ঘটেনি। এই অভিযানে লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মোহাম্মদ ও হিজবুল মুজাহিদিন-এর মতো সংগঠনগুলোর নেতৃত্বকেন্দ্র, অস্ত্রাগার ও যোগাযোগ ঘাঁটিগুলি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

২২ এপ্রিল, ২০২৫। কাশ্মীরের পহেলগাঁওে হিন্দুদের উপর রুদ্ধশ্বাস জঙ্গি হামলা চালানো হয়। নিহত হন ২৬ জন নিরীহ ভ্রমণকারী। এই ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF)। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি স্পষ্ট করে জানায়, এই হামলার পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ হয়েছে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে। এই বর্বরতার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেবিনেট কমিটি দ্রুত প্রতিক্রিয়া নেয় এবং গোপনে পরিকল্পিত হয় ‘অপারেশন সিন্দুর’। সূত্র বলছে, এই আক্রমণে কমপক্ষে ৯০ জন সক্রিয় জঙ্গি মারা গেছে। প্রতিটি ঘাঁটি সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং হামলার সময় রাত হওয়ায় বেসামরিক ক্ষতির সম্ভাবনাও একেবারে ন্যূনতম ছিল। এই হামলার ধ্বংস হওয়া ৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটি হল –

১. মুজাফফরাবাদ (পিওকে): লস্কর-ই-তৈয়বার গোপন সদর দফতর
২. কোটলি (পিওকে): জইশ-ই-মোহাম্মদের প্রশিক্ষণ শিবির
৩. ভিম্বার (পিওকে): হিজবুল মুজাহিদিনের অস্ত্র গুদাম
৪. বাহাওয়ালপুর (পাকিস্তান): জইশ নেতৃত্বের বাসস্থান
৫. মুরিদকে (পাকিস্তান): লস্কর-এর শীর্ষ প্রশিক্ষণ ঘাঁটি
৬. তেহরা কালান: জঙ্গিদের প্রযুক্তি ও রসদ সরবরাহ কেন্দ্র
৭. সিয়ালকোট: কাশ্মীর হামলার মাস্টারমাইন্ডদের ঘাঁটি
৮. আহমেদপুর ইস্ট: বিস্ফোরক গুদাম
৯. চাকোটি (পিওকে): রেডিও কমান্ড ও আন্তঃসীমান্ত যোগাযোগ কেন্দ্র।

‘অপারেশন সিন্দুর’-এ ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই সফল অভিযানের পর প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মানিক সাহা। তিনি বলেন: “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বহুবার বলেছেন—সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই হবে আপসহীন। তিনি বলেছিলেন, কাউকে ছাড়া হবে না। আজকের এই অপারেশন তারই বাস্তব প্রতিফলন। আমরা ত্রিপুরাবাসীরা ভারতের সেনাবাহিনীর পাশে আছি। যারা আমাদের শান্তি নষ্ট করতে চায়, তাদের জন্য একটাই বার্তা—ভারত মাথা নত করবে না।” তিনি আরও বলেন, “ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী রাজ্য হলেও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিকাশের পথে এগোচ্ছি। কিন্তু সীমান্তের ওপারে থাকা সন্ত্রাসের উৎসগুলোকে ধ্বংস করতেই হবে।”

পাকিস্তান সরকার এই হামলাকে “আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করলেও, তাদের কোনো নিরপেক্ষ প্রমাণ নেই। বরং নিজেদের ভূখণ্ডে সক্রিয় সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর অস্তিত্ব এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার পরেও তাদের চলাফেরা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে ইসলামাবাদ। ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর আওতায় ভারতীয় বায়ুসেনার সুনির্দিষ্ট বিমান হামলায় জইশ-ই-মোহাম্মদের পাকিস্তানের বাহাওলপুরে অবস্থিত মূল সদর দফতর সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। BBC-উর্দু নিশ্চিত করেছে, এই সন্ত্রাসী সংগঠনটির প্রধান মাসুদ আজহারের পরিবারের অন্তত ১৪ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছে তার ভাই, দুই ভাইপো, ভাগ্নে ও ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা রক্ষীরা। একটি গোপন সূত্র প্রকাশিত অডিও রেকর্ডিংয়ে শোনা যায় মাসুদ আজহার কান্নারত অবস্থায় বলছে: “আল্লাহ, তুমি আমাকে তুলে নাও… আমি সব হারিয়ে ফেলেছি। ভারত আমার হৃদয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আজ আমার পরিবার শেষ হয়ে গেল।”

ভারতীয় সেনা গোয়েন্দাদের মতে, এই আঘাত জইশ-ই-মোহাম্মদের মনোবলে এক বিশাল ধাক্কা। মাসুদ আজহার বর্তমানে চরম নিরাপত্তায় পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের একটি অজ্ঞাত নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন বলে খবর। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানালেও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা ভারতের পদক্ষেপকে ‘সুনির্দিষ্ট প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর কলামে বিশ্লেষক রবার্ট রিড লিখেছেন, “ভারত যে শুধু কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করে—অপারেশন সিন্দুর তার প্রমাণ।”

ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, “যদি পাকিস্তান জঙ্গিদের মদত দেওয়া বন্ধ না করে, তাহলে ভবিষ্যতে ভারতের জবাব হবে আরও কঠিন। শান্তির পথ একটাই—সন্ত্রাসবাদের উৎস নির্মূল করা।” ভারতের এই অভিযান শুধু প্রতিশোধ নয়, এটি ছিল প্রতিরক্ষা এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কৌশলগত পদক্ষেপ। এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে, ভারতের উপর আঘাত এলে জবাব সীমান্ত পেরিয়ে যাবে। ত্রিপুরার মতো সীমান্তবর্তী রাজ্য থেকেও যখন সমর্থনের সুর উঠে আসে, তখন পুরো দেশ একত্রে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এক শক্ত মুষ্টিতে রূপ নেয়। সন্ত্রাসের মূলোচ্ছেদে ভারত এখন শুধু প্রস্তুত নয়—প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরণের সুনির্দিষ্ট আক্রমণ শুধু সন্ত্রাসী সংগঠনের পরিকাঠামো নয়, তাদের মানসিক ভিত্তিকেও চূর্ণ করে দেবে।About Us

ককবরক ভাষার হরফ আন্দোলনে কংগ্রেসের সমর্থন

ককবরক ভাষার জন্য রোমান হরফ চালুর দাবিকে হাতিয়ার করে পাহাড়ের রাজনীতিতে কংগ্রেস!

ককবরকে রোমান হরফে লেখার দাবিতে বিশাল মিছিল করে শিক্ষা ভবনে স্মারকলিপি জমা দেন আদিবাসী কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। দাবির সপক্ষে আরও তীব্র আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা। এতদিন যেই দাবিতে তিপরা মথা সরব ছিল, সেই একই দাবি নিয়েই এবার রাজনীতির ময়দানে হাজির কংগ্রেসের উপজাতি শাখা।

১২৫ বছরের পুরনো কংগ্রেস পার্টি দীর্ঘদিন ধরেই পাহাড়ে সংগঠন বিস্তারে ব্যর্থ। স্বাধীনতা-উত্তর কালে উপজাতি ভোটব্যাঙ্ক দখলে কখনো টিইউজিএস, কখনো আইএনপিটি, আবার কখনো আইপিএফটির কাঁধে ভর করেছে কংগ্রেস। ১৯৮৮ সালে বামফ্রন্ট সরকারের পতনের পরে উপজাতি যুব সমিতির (টিইউজিএস) সহযোগিতাতেই সরকার গঠন করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু টিইউজিএস-র মনোমালিন্যের কারণেই সুধীর মন্ত্রিসভা ভেঙে পড়ে। পরে সমীর রঞ্জন বর্মনের নেতৃত্বে গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। এরপরও একাধিকবার পাহাড়ে নিজেদের সংগঠন বিস্তারে জনজাতিভিত্তিক দলগুলির সঙ্গে জোট গড়েছে কংগ্রেস, তবে মাটির মানুষের সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। আদিবাসী কংগ্রেস গঠন করেও রাজনৈতিক জমি শক্ত করতে পারেনি পাহাড়ে।

যে রোমান হরফের দাবিতে এতদিন তিপরা মথা রাজপথে আন্দোলন করছিল এবং বিধানসভায় সরব হচ্ছিল, এবার সেই একই দাবিকে সামনে রেখে সংগঠন বাড়ানোর কৌশল নিচ্ছে কংগ্রেস। তিপরা মথার প্রধান প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মা মাঝে মাঝে ভিডিও বার্তা দিয়ে কর্মীদের চাঙ্গা করার চেষ্টা করলেও, মাঠে সংগঠন ধরে রাখা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এই সুযোগেই রোমান হরফের দাবিকে সামনে এনে সংগঠন বিস্তারে ঝাঁপাল আদিবাসী কংগ্রেস।

এই প্রেক্ষাপটে ফের সামনে এসেছে ককবরক ভাষার লিপি বিতর্ক। রাজ্য সরকার ভাষার উন্নয়নে একাধিকবার কমিটি গঠন করলেও, ফল প্রকাশ হয়নি আজও। বর্তমান বনমন্ত্রী তথা তিপরা মথার নেতা অনিমেষ দেববর্মা প্রশ্ন তুলেছিলেন, যারা ককবরক জানেন না, তারা কীভাবে ভাষার উন্নয়নে কাজ করবেন? বাম জমানায় গঠিত তিনটি ভাষা কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন পবিত্র সরকার, প্রয়াত শ্যামাচরণ ত্রিপুরা ও কুমুদ কুন্ডু চৌধুরীর মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। কিন্তু সেই সময়েও লিপি প্রসঙ্গে কোন স্থায়ী সিদ্ধান্ত হয়নি।

বর্তমানে ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং তাদের জনজাতি মোর্চা স্পষ্ট করে জানিয়েছে, রোমান হরফ চালুর বিরোধিতায় তারা অনড়। বিজেপির নেতাদের মতে, ককবরক ভাষার হরফ নিয়ে বিদেশি চক্রান্ত চলছে। তাই কোনও বিদেশি হরফে ভাষা চালু হওয়া উচিত নয়। যতদিন পর্যন্ত ককবরকের নিজস্ব হরফ তৈরি না হচ্ছে, ততদিন দেবনাগরী হরফেই ভাষা চালু থাকবে বলেই তারা মত দিয়েছেন। তাদের মতে, দেবনাগরী হরফ ভগবানের সৃষ্টি। তাই তা “ভগবানের ভাষা।” ইতিমধ্যেই অরুণাচল প্রদেশ ও আসামের বড়োল্যান্ডে দেবনাগরী হরফ চালু হয়েছে — ত্রিপুরাও ঠিক সেই পথেই এগুচ্ছে।

কিন্তু রোমান হরফকে ঘিরে যে আবেগ তিপ্রাসা জনগণের মধ্যে রয়েছে, সেটাকেই এবার পুঁজি করতে চাইছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের নেতাদের মতে, বাংলা বা দেবনাগরী নয় — রোমান হরফই হতে হবে ককবরকের ভবিষ্যৎ। এই আবেগকে ঘিরেই পাহাড়ে নিজেদের অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আদিবাসী কংগ্রেস। রোমান হরফ নিয়ে রাজনীতি যত এগোচ্ছে, ককবরক ভাষার ভবিষ্যৎ ততই অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছে। এই লিপি-যুদ্ধ যে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার হচ্ছে, তা আর অজানা নয়। আদিবাসী কংগ্রেস কতদূর যেতে পারবে এই দাবিকে সামনে রেখে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।About Us

সন্তান বিক্রি! প্রশ্নের মুখে সরকার

সন্তান যেন বোঝা! প্রতিপালনে অক্ষম মায়ের হাতে বিক্রি সদ্যোজাত সন্তান!

সিমনা কাটাছড়া পাড়ায় সদ্যোজাত কন্যা সন্তান বিক্রির অভিযোগ ঘিরে গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকার, সরকারী সহায়তা ও প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে আবারও প্রশ্নের মুখে পড়ল রাজ্যের শাসক ব্যবস্থা। জনজীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণে সরকারের ব্যর্থতা এবং ‘ডাবল ইঞ্জিন’ উন্নয়নের খতিয়ান ফের একবার বিতর্কের কেন্দ্রে।

সূত্রে জানা গেছে, কাটাছড়া পাড়ার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ দাসের স্ত্রী লক্ষ্মীরানী দাস গত ৩০ এপ্রিল সিমনার কাতলামারা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এটি তাদের চতুর্থ সন্তান। কিন্তু জন্মের পর সদ্যোজাতকে বাড়ি না এনে, খোয়াইয়ের অজ্ঞাতপরিচয় এক পরিবারের হাতে তুলে দেন তাঁরা। পরিবারটি জানায়, আর্থিক অনটনের কারণে তারা শিশুটিকে বড় করে তোলার ক্ষমতা রাখে না। ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই প্রতিবেশী বাসনা দাস বিস্ফোরক অভিযোগ করেন, প্রসেনজিৎ ও লক্ষ্মীরানী অর্থের বিনিময়ে কন্যাসন্তান বিক্রি করেছেন। যদিও তারা বাচ্চাকে অন্য পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন, তবে কোন পরিবার এবং কত টাকার বিনিময়ে সেটি ঘটেছে, তা গোপন রেখেছেন।

এই ঘটনা সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পরে শিশুটিকে খোয়াইয়ের বাসিন্দা অপর্ণা দেববর্মা স্বামী সরিন্দ্র দেববর্মার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে স্পেশালাইজ এডাপশন এজেন্সী (আমাদের ঘর)-এ স্থানান্তরিত করা হয়। প্রশাসনের তরফে তদন্ত শুরু হলেও, আর্থিক লেনদেন এবং মানবিক অপরাধের ঘটনা কীভাবে স্থানীয় হাসপাতাল ও প্রশাসনের চোখ এড়াল, সেই প্রশ্ন উঠছে বারবার। হাসপাতালে কর্তব্যরত স্বাস্থ্য কর্মীদের ভূমিকা নিয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে। স্থানীয়দের একাংশ বলছেন, প্রশাসন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে, যা সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য ছিল।

টানা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কেন্দ্র ও রাজ্যে একই রাজনৈতিক দলের শাসন। সরকারি প্রচারে দাবি করা হচ্ছে— “ডাবল ইঞ্জিন সরকার” উন্নয়নের গতি দ্বিগুণ করেছে। কিন্তু সামাজিক সচেতন মহলের মধ্যে বাস্তব চিত্র ঠিক তার উল্টো। আর্থিক অনটন, কর্মসংস্থানের অভাব, স্বাস্থ্য পরিষেবার দুর্বলতা এবং সামাজিক সুরক্ষার ভয়াবহ ঘাটতি— সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ আজ অসহায়। এই শিশু বিক্রির ঘটনা তারই জ্বলন্ত উদাহরণ।

এক মা যখন নিজের সদ্যোজাত কন্যাকে বিক্রি করতে বাধ্য হন, তখন তা শুধুই ব্যক্তিগত ঘটনা নয়— এটা সরকারের চরম ব্যর্থতার প্রতীক। পুষ্টি প্রকল্প, জননীর স্বাস্থ্য সহায়তা, মাতৃত্বকালীন ভাতা বা অঙ্গনওয়াড়ি পরিষেবার বাস্তব অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। বেকারত্ব ও দারিদ্র্য আজ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মানুষ সন্তান জন্ম দেওয়ার পর তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কে থাকেন। যে রাজ্যে সদ্যোজাত শিশুকেও বিক্রির পথে ঠেলে দেওয়া হয়, সে রাজ্যে উন্নয়নের বুলি নিছক লোকদেখানো প্রচারমাত্র। একটি সমাজের উন্নতি নির্ভর করে তার দুর্বলতম অংশের নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত হচ্ছে, তার উপর। আর এই ঘটনাই দেখিয়ে দিল— সরকারের প্রচার যতই জোরদার হোক, মাঠ পর্যায়ে ন্যূনতম সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ।About Us