গুজরাটে নিখোঁজ কালাচান ত্রিপুরার পরিবার দ্বারে দ্বারে ঘুরছে সাহায্যের আশায়!
ত্রিপুরার দক্ষিণ প্রান্তের এক নিঃস্ব পরিবার আজ চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছে। কারণ, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য কালাচান ত্রিপুরা (২৩) প্রায় এক মাস আগে গুজরাটে কর্মক্ষেত্র থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছেন। আজও তার কোনো খোঁজ মেলেনি। পুলিশ ও প্রশাসনের নির্লিপ্ত ভূমিকার কারণে হতাশায় ভেঙে পড়েছেন পরিবার-পরিজন।
কালাচান ত্রিপুরা দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম মহকুমার বাসিন্দা। তিনি জীবিকার সন্ধানে গিয়েছিলেন গুজরাট রাজ্যের ভালসাদ জেলার উমরগাঁও অঞ্চলে, যেখানে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, ৬ মার্চ তিনি অসুস্থ বোধ করেন এবং সহকর্মীদের জানান যে তিনি বাড়ি ফিরতে চান। সেই অনুযায়ী রেলস্টেশনের দিকে রওনা দেন বলেই জানিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর থেকেই তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
৭ মার্চ থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে গুজরাটে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। সাব্রুম থানাতেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু সেখান থেকে জানানো হয়, ঘটনাটি তাদের আওতার বাইরে, তাই তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না। অপরদিকে গুজরাটের উমরগাঁও থানার সঙ্গে পরিবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো সদুত্তর মেলেনি।
পরিবারের সদস্যরা বলছেন, “আমরা এক মাস ধরে শুধু প্রতিশ্রুতি শুনে যাচ্ছি। কোনো পুলিশ আমাদের সাহায্য করছে না। রাজ্য সরকার কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়নি।” এমনকি, এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল বা অরাজনৈতিক সংগঠনও তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। ফলে, একেবারে ভেঙে পড়েছেন কালাচানের বাবা-মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। দরিদ্র পরিবারটির পক্ষে গুজরাটে বারবার যাওয়া, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কিংবা আইনি সহায়তা নেওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যের প্রশাসন কীভাবে এতটা নির্লিপ্ত থাকতে পারে? একজন ত্রিপুরাবাসী যুবক কর্মস্থলে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরও কেন আজ পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট তদন্ত শুরু হয়নি? ত্রিপুরা সরকারের কাছে পরিবারের আকুতি—তাঁদের ছেলের সন্ধান যেন দ্রুত পাওয়া যায় এবং গুজরাট প্রশাসনের সঙ্গে রাজ্য সরকার যেন সরাসরি হস্তক্ষেপ করে। একমাত্র উপার্জনক্ষম যুবক নিখোঁজ—এই অবস্থায় পরিবারটির আর্থিক ও মানসিক দুঃস্থতা চরমে পৌঁছেছে।
ত্রিপুরার সাধারণ মানুষ এবং নাগরিক সমাজের কাছেও এই ঘটনা একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে—বাইরের রাজ্যে কর্মরত ত্রিপুরার যুবকদের নিরাপত্তা আদৌ রয়েছে কি? সমাজ সচেতন মহল মনে করছেন ত্রিপুরা সরকারের হস্তক্ষেপ ও ত্বরিত পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই কালাচান ত্রিপুরাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব—এই আশাতেই এখনও চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় তার পরিবার।