বিদ্যাব্যবসা বন্ধে জোরালো তৎপরতা

বিদ্যাব্যবসার দায়ে বিলোনিয়ায় ১২ জন সরকারি শিক্ষকের মুচলেকা!

ত্রিপুরা রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি স্কুলে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রাইভেট টিউশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে এসেছে। বারংবার বিতর্ক, তর্ক-বিতর্ক, এমনকি হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও এই বিদ্যাব্যবসা বন্ধ হয়নি। এবার দক্ষিণ ত্রিপুরার বিলোনিয়া মহকুমায় সেই বিদ্যাব্যবসার বিরুদ্ধেই দৃঢ় পদক্ষেপ নিল জেলা শিক্ষা দপ্তর। সোমবার বিলোনিয়া মহকুমার অন্তর্গত রাজনগর ব্লকের বিভিন্ন স্কুলের ১২ জন শিক্ষককে ডেকে পাঠিয়ে টিউশন বানিজ্য না করার মুচলেকা আদায় করলেন বিলোনিয়া স্কুল পরিদর্শক। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক মহল ও শিক্ষা প্রশাসনের অন্দরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

সরকারি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রাইভেট টিউশন কতটা নৈতিক ও আইনসিদ্ধ, তা নিয়ে বহুদিন ধরেই বিতর্ক চলছিল। ত্রিপুরা হাইকোর্ট এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশও জারি করেছিল—সরকারি চাকরিতে থেকে প্রাইভেট টিউশন করা সম্পূর্ণরূপে বেআইনি। বিজেপি সরকারের আগের শিক্ষামন্ত্রী একাধিকবার বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছিলেন। দক্ষিণ ও পশ্চিম জেলার প্রায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক সময় নোটিশও জারি হয়েছিল। রাজধানীর সাতটি স্কুলকে চিহ্নিত করে অন্তত ২৫ জন শিক্ষককে শোকজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু তার বাস্তবায়ন হয়নি। ফলত, অধিকাংশ অভিযুক্ত শিক্ষক নির্ভয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের টিউশন বানিজ্য।

মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা নিজে বিদ্যাব্যবসা রুখতে চান বলে একাধিকবার জানিয়েছেন। এক সময় সিপাহিজলা জেলার জেলা শাসক হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন ডাক্তার বিশাল কুমার এই বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তাকে পশ্চিম জেলায় বদলি হতে হয়েছে, তারপর থেকে তিনি এই ব্যাপারে আর আগ্রহ ও তৎপরতা দেখাননি। এই পরিস্থিতিতে রাজনগর ব্লকের একাধিক বেকার শিক্ষিত যুবক ও গৃহশিক্ষক সম্প্রদায় শিক্ষা দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানান। তাদের দাবি—সরকারি শিক্ষকরা ক্লাস না নিয়ে বা স্কুল ফাঁকি দিয়ে ইনস্টিটিউট খুলে বাসাবাড়িতে টিউশন করাচ্ছেন। ফলে তারা চাকরির সুযোগ বা শিক্ষার্থীদের কাছে সম্মান—দুটো থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে বিলোনিয়া স্কুল পরিদর্শকের দপ্তর ১২ জন সরকারি শিক্ষককে নোটিশ পাঠিয়ে তলব করে। মঙ্গলবার দুপুরে ওই ১২ জনের মধ্যে ১১ জন হাজির হন এবং লিখিতভাবে জানান তারা প্রাইভেট টিউশন করেন না। তবে তারাও স্বীকার করেন যে একাংশ শিক্ষক এখনো প্রাইভেট টিউশন করে চলেছেন। এ পর্যন্ত সোনাপুর দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়, বড়পাথরী দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়, হরিপুর এসবি স্কুল, মনপাথর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, অজগর রহমানপুর উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নাসিরনগর উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ও বাগানবাড়ি উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাংশ শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

বিলোনিয়া বিদ্যালয় পরিদর্শক স্বীকার করেছেন, “কিছু কিছু শিক্ষক প্রাইভেট টিউশন করছেন, এমন অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। আমরা তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করবো এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” তবে এও স্পষ্ট যে এখনও পর্যন্ত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ত্রিপুরা হাইকোর্ট সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন বন্ধে কড়া নির্দেশ দিলেও প্রশাসনিক স্তরে সেই নির্দেশ কার্যকর করতে গড়িমসি দেখা গিয়েছে। আজও বহু শিক্ষক দীর্ঘ বছর ধরে একই স্কুলে বদলিহীনভাবে চাকরি করে নিজেদের “প্রভাব” কাজে লাগিয়ে চুটিয়ে টিউশন বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোতে বিদ্যাব্যবসার রমরমা চলছে প্রায় খোলাখুলি। ভালো ফলাফলের আশায় অধিকাংশ অভিভাবক সরকারি স্কুলের পড়াশোনার তুলনায়, ঐ শিক্ষকদের কর্তৃক পরিচালিত প্রাইভেট শিক্ষক বা ইনস্টিটিউটকেই ভরসা করছেন। এর ফলেই শিক্ষিত বেকার যুবকদের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে। যেখানে আদালতের নির্দেশও কার্যকর হচ্ছে না, সেখানে একাংশ শিক্ষক “রাষ্ট্রবাদী”, “রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা”, এমনকি “বাম আন্দোলনের” প্রাক্তন সৈনিক হিসেবে নিজেদের আড়াল করছেন। এতদিন পর্যন্ত জেলা শিক্ষা অফিসারেরাও কার্যত নির্বিকার ছিলেন। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় সাধারণ মানুষ ও শিক্ষিত বেকাররা আস্থা হারাচ্ছেন।

বিলোনিয়ায় শিক্ষা দপ্তরের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ অবশ্যই প্রশংসনীয়, তবে তা যথেষ্ট নয়। রাজ্য জুড়ে একটি জোরালো এবং নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিটি সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে হবে। হাইকোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে না পারলে, আইনের শাসন প্রশ্নের মুখে পড়বে। একই সঙ্গে রাজ্য সরকারের উচিত বিদ্যাব্যবসা রোধে একটি নির্দিষ্ট বদলিনীতি চালু করা এবং শিক্ষকদের পেশাগত নৈতিকতার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো। জনগণের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে প্রশাসনিক হেলদোল শুরু হলেও এখনই বলা যাচ্ছে না—বিদ্যাব্যবসা সত্যিই বন্ধ হবে কিনা। সময়ই তার উত্তর দেবে।About Us

মুকুল দেবের অকালপ্রয়াণে শোকস্তব্ধ বলিউড

অভিনেতা মুকুল দেবের মৃত্যু সংবাদ জানালেন ভাই রাহুল দেব!

বলিউডের পরিচিত মুখ, অভিনেতা মুকুল দেবের আকস্মিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিনোদনজগতে। মাত্র ৫৪ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন এই প্রতিভাবান অভিনেতা। মৃত্যুর খবর প্রথমবার প্রকাশ্যে আনেন অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ী। কিন্তু মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তখন বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। এবার ভাই ও খ্যাতনামা অভিনেতা রাহুল দেব সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করলেন দাদার মৃত্যুর খবর ও শেষকৃত্যের বিবরণ।
রাহুল দেব তাঁর বিবৃতিতে লেখেন, “গত রাতে নয়াদিল্লিতে আমার দাদা মুকুল শান্তিতে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। এই সময়ে আমাদের পরিবার চরম শোকের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। নয়াদিল্লিতে ওঁর শেষকৃত্যের আয়োজন করা হয়েছে। ওঁর আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করুন।”

সূত্র মারফত জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন মুকুল দেব। তবে গত ৮-১০ দিনে তাঁর শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। চিকিৎসার জন্য তাঁকে নয়াদিল্লির এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেখানেই আইসিইউতে রাখা হয়। শেষপর্যন্ত তিনি ঐ বেসরকারি হাসপাতালেই মারা যান। তবে ঠিক কী রোগে ভুগছিলেন তিনি, সে বিষয়ে পরিবারের তরফে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি এখনও পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। মুকুল দেবের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গেই বলিউডে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মনোজ বাজপেয়ী ছাড়াও সমাজমাধ্যমে শোকপ্রকাশ করেছেন অভিনেতা বিন্দু দারা সিংহ, দীপশিখা নাগপাল, এবং আরও অনেকে। অনেকে তাঁর নয়াদিল্লির বাসভবনে গিয়ে শেষ শ্রদ্ধাও জানিয়েছেন।

মুকুল দেব ১৯৯৬ সালে বলিউডে অভিষেক করেন ‘দস্তক’ ছবির মাধ্যমে, যেখানে এক পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় তাঁর অভিনয় দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। এরপর একাধিক সিনেমায় তিনি অভিনয় করেন পার্শ্বচরিত্রে, কিন্তু তাঁর উপস্থিতি সবসময়ই ছিল শক্তিশালী ও স্মরণীয়। সলমন খান অভিনীত ‘জয় হো’ ছবিতে তাঁর চরিত্র দর্শকদের বিশেষভাবে মনে রয়েছে। হিন্দির পাশাপাশি তিনি মালয়ালম, গুজরাতি, পঞ্জাবি, মারাঠি, ইংরেজি এবং বাংলা চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন। বাংলা ছবিতে তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজগুলির মধ্যে আছে ‘আওয়ারা’, ‘বচ্চন’ এবং ‘সুলতান: দ্য স্যাভিয়র’। বিশেষত অ্যাকশনধর্মী চরিত্রে তাঁর পারফরম্যান্স প্রশংসা কুড়িয়েছিল বাংলা দর্শকদের কাছেও।cropped 800X800

ত্রিপুরায় ৫জির সাথে AI প্রযুক্তির প্রসার

ত্রিপুরায় ৫জি ও AI প্রযুক্তির প্রসারে ডেটা সেন্টার নির্মাণে জমি বরাদ্দ!

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডঃ মানিক সাহা নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘রাইসিং নর্থইস্ট ইনভেস্টরস সামিট ২০২৫’-এ অংশ নিয়ে রাজ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং ৫জি প্রযুক্তির প্রসারে রাজ্য সরকারের নেওয়া একাধিক উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। এই সম্মেলনের মূল থিম ছিল “আইটি ফর অষ্টলক্ষী: বেয়ন্ড দি বিটস অ্যান্ড বাইটস, ইনটু এআই অ্যান্ড ৫জি”, যেখানে উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়নে প্রযুক্তি খাতের ভূমিকা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সাহা বলেন, “ত্রিপুরা সরকার ইতোমধ্যেই আগরতলায় একটি ডেটা সেন্টার নির্মাণের জন্য জমি বন্দোবস্ত করেছে, যা পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম তথ্যপ্রযুক্তি হাবে পরিণত হবে। এই সেন্টার ভবিষ্যতের ডিজিটাল পরিকাঠামোকে মজবুত করবে এবং রাজ্যে বিনিয়োগ আকর্ষণে সাহায্য করবে।”

মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, অষ্টলক্ষী রূপে পরিচিত উত্তর-পূর্ব ভারতের আটটি রাজ্য নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অফুরন্ত সম্পদের আধার। এই রাজ্যগুলিকে দেবী লক্ষ্মীর প্রতিনিধিত্ব হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “উন্নয়নের মূল ভিত্তি হিসেবে আমরা প্রযুক্তিকে গ্রহণ করেছি। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও ৫জি আমাদের প্রশাসনিক কার্যক্রমকে দ্রুত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক করে তুলেছে।” তিনি আরও জানান, রাজ্যের প্রায় ৫৮৩টি গ্রাম এবং সবক’টি শহর ইতোমধ্যেই ৫জি নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে, যা এই অঞ্চলের ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ত্রিপুরা সরকার ৫জি পরিকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ‘ইনফরমেশন টেকনোলজি পলিসি ২০২২’ এবং ‘ডেটা সেন্টার পলিসি ২০২১’ প্রণয়ন করেছে।

মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, এআই প্রযুক্তিকে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে সম্প্রতি ন্যাশনাল ই-গভর্নেন্স ডিভিশন ও ভারত সরকারের ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের সহযোগিতায় একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। কর্মশালাটি এআই ভিত্তিক প্রশাসনের সম্ভাবনা তুলে ধরে, যেমন নীতিনির্ধারণে ডেটা অ্যানালিটিক্স, নাগরিক সেবা সরলীকরণ ও ত্বরান্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ। তিনি বলেন, “ত্রিপুরা সরকার বর্তমানে একটি কাগজবিহীন প্রশাসন চালু করেছে। আগে যেখানে একটি ফাইল প্রক্রিয়াকরণে ৯ দিন লাগত, এখন তা ৩ দিনে সম্পন্ন হচ্ছে। এই ডিজিটাল রূপান্তরের ফলে বার্ষিক প্রায় ৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে, যা প্রশাসনিক দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধির এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।”

ডঃ সাহা ৫জি ও এআই প্রযুক্তির পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে বলেন, “৫জি প্রযুক্তি দ্রুত ডেটা ট্রান্সফার সক্ষম করে, আর এআই বিভিন্ন প্রসেসকে স্বয়ংক্রিয় করে তোলে। এই দুই প্রযুক্তির সম্মিলন শিল্প, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কার্যাবলির প্রতিটি স্তরে বিপুল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।” তিনি বলেন, “এই সংমিশ্রণ শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নয়, বরং এটি কর্মসংস্থান, শিল্পোন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিরও সহায়ক। আগামী দিনে ত্রিপুরা এমন একটি রাজ্যে পরিণত হবে যেখানে প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি রোল মডেল তৈরি করা সম্ভব হবে।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্য সরকার ভবিষ্যতের দিকে নজর রেখে দপ্তর-নির্দিষ্ট এআই পাইলট প্রজেক্ট চালু করতে চলেছে, এবং ইতিমধ্যেই একাধিক সরকারি দপ্তরে ডিজিটাল ইন্টারফেস ও সিঙ্গেল-উইন্ডো সিস্টেম বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যার ফলে নাগরিক পরিষেবাগুলির গতি ও কার্যকারিতা বহুগুণে বেড়েছে।

‘রাইসিং নর্থইস্ট ইনভেস্টরস সামিট ২০২৫’-এ মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রযুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে ত্রিপুরার ভবিষ্যৎ উন্নয়নের রূপরেখা তুলে ধরেছে। রাজ্য সরকার যেভাবে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, এআই এবং ৫জি প্রযুক্তিকে গ্রহণ করে এগিয়ে চলেছে, তা শুধুমাত্র ত্রিপুরাকেই নয়, সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতকে একটি টেকনোলজিক্যাল পাওয়ার হাউজে পরিণত করতে পারে।cropped 800X800

মাওবাদী নিধনে রাজনৈতিক বিতর্ক

মাওবাদীদের পক্ষে সিপিআইএমের বিতর্কিত অবস্থান!

ছত্রিশগড়ের কাংকের জঙ্গলে নিরাপত্তা বাহিনীর সফল অভিযানে ২৭ জন কুখ্যাত মাওবাদীর মৃত্যুকে ঘিরে গোটা দেশে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক। এই অভিযানের বিরুদ্ধে সিপিআইএম পলিট ব্যুরো প্রকাশিত এক বিবৃতিকে ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং বর্তমান সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব। তিনি সিপিআইএম-এর বিবৃতিকে “রাষ্ট্রবিরোধী ও সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল” আখ্যা দিয়ে বলেন, “এই দল এখন কার্যত মাওবাদীদের মুখপাত্র হয়ে উঠেছে।”

বিপ্লব দেব বলেন, “এই বিবৃতি কমিউনিস্ট পার্টির আসল চেহারা সামনে এনে দিয়েছে। আমরা বহুদিন ধরেই বলে আসছি, এদের চিন্তাভাবনা রাষ্ট্রবিরোধী, সমাজবিরোধী এবং গণতন্ত্রবিরোধী। আজ ওরা নিজেরাই প্রমাণ করে দিল। ছত্রিশগড়ে যারা মারা গেছে, তারা কুখ্যাত মাওবাদী, যারা বহু নিরীহ মানুষ, পুলিশ ও আধাসেনার হত্যায় যুক্ত ছিল। তাদের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে সিপিআইএম প্রমাণ করেছে—ওদের হৃদয় ভারতের জন্য নয়, বরং চীন ও পাকিস্তানের প্রতি।” তিনি আরও বলেন, “সিপিআইএম চায় না দেশে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বজায় থাকুক। ওরা প্রতিটি সন্ত্রাসবাদী বা উগ্রপন্থীর পেছনে মানবাধিকারের খোলসে দাঁড়িয়ে থাকে, কিন্তু যারা সেই সন্ত্রাসবাদীদের হাতে নিহত হয়, তাদের অধিকার নিয়ে এদের কোনো মাথাব্যথা নেই। ছত্রিশগড়ের অভিযানে শহিদ হওয়া জওয়ানদের প্রতি একটিও শব্দ নেই ওই বিবৃতিতে। এটা কি ভারতীয় রাজনীতির ভাষা হতে পারে?”

বিপ্লব দেব এও উল্লেখ করেন, “অপারেশন সিন্দুর চলাকালেও আমরা দেখেছি, কিভাবে সিপিআইএম পশ্চিমবঙ্গে পাকিস্তানের স্বার্থে কথা বলেছে। তখনও তারা ভারত সরকারের অভিযানে প্রশ্ন তুলেছিল। আজ ছত্রিশগড়েও সেই একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তারা বারবার প্রমাণ করছে, এদের ভাবাদর্শ, অবস্থান এবং রাজনীতি—সবই ভারতের বিপক্ষে, আর চীন-পাকিস্তানের পক্ষে।” তিনি আরও বলেন, “এই দলটির আর কোনো নৈতিক অধিকার নেই জনমতের অংশ হওয়ার। যারা মাওবাদীদের পাশে দাঁড়িয়ে, সেনাবাহিনীর সাফল্যকে ‘নরহত্যা’ বলে চিহ্নিত করে, তারা কখনই গণতান্ত্রিক কাঠামোয় জায়গা পেতে পারে না।”

ত্রিপুরার সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, “ত্রিপুরাবাসী, দেখুন কারা আপনাদের ধোঁকা দিয়েছে এত বছর। যারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, আর কাজে মাওবাদীদের রক্তরাজনীতিকে সমর্থন করে। সিপিআইএম মুখোশ পরে আছে, কিন্তু ছত্রিশগড়ের ঘটনায় সেই মুখোশ খুলে পড়ে গেছে। এই দল ভারতের স্বার্থ নয়, বরং শত্রু রাষ্ট্রের স্বার্থে কাজ করে।”

২১ মে ছত্রিশগড়ে সংঘটিত সংঘর্ষে ২৭ জন মাওবাদী নিহত হন, যাদের মধ্যে ছিলেন কুখ্যাত নেতা নম্বালা কেশব রাও। এই ঘটনার পরে সিপিআইএম এক বিবৃতিতে বলে, “এই হত্যাকাণ্ড গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। মাওবাদী সমস্যা সামাধানের একমাত্র উপায় সংলাপ, দমনপীড়ন নয়।” এই বিবৃতিকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছে দেশজুড়ে রাজনৈতিক তরজা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, সিপিআইএম-এর এই বিবৃতি ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের পর দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত স্পষ্ট অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার ‘জিরো টলারেন্স টু টেররিজম’ নীতি মেনে চলছে, সেখানে মাওবাদীদের মতো স্বীকৃত সন্ত্রাসবাদীদের পক্ষে বিবৃতি দেওয়া রাজনৈতিকভাবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্তও হতে পারে। ছত্রিশগড়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক ঝড় উঠেছে, তার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন সিপিআইএম-এর সেই বিতর্কিত বিবৃতি। বিপ্লব কুমার দেবের তীব্র ভাষায় আক্রমণ এবং সিপিআইএম-এর প্রতিক্রিয়ার পর, স্পষ্ট হচ্ছে ভারতের মূলধারার রাজনীতি আর মাওবাদী সহানুভূতিশীল রাজনীতির মধ্যে বিরাট ফারাক। এই বিতর্ক কতদূর গড়ায়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।cropped 800X800

পুষ্পবন্ত প্যালেসে হোটেল নির্মাণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত

টাটা গোষ্ঠীর মাধ্যমে পুষ্পবন্ত প্যালেসকে হোটেলের রূপান্তরিত করার লিজ চুক্তি সম্পন্ন!

ত্রিপুরার পর্যটন শিল্পে নতুন দিগন্তের সূচনা হল আজ। ঐতিহ্যবাহী পুষ্পবন্ত প্যালেসকে ফাইভ স্টার হেরিটেজ হোটেলে রূপান্তরিত করতে আজ সরকারি পর্যটন দপ্তর এবং ইন্ডিয়ান হোটেলস কোম্পানি লিমিটেড (আইএইচসিএল) -এর মধ্যে একটি ঐতিহাসিক লিজ এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই প্রকল্পের রূপায়ণের মধ্য দিয়ে ত্রিপুরা এক নতুন পর্যটন গন্তব্য হিসেবে দেশ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিতি লাভ করবে বলে আশাবাদী মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা।

আজ রাজধানী আগরতলার টিআইএফটি (Tripura Institute of Technology and Future Tourism) কনফারেন্স হলে এই লিজ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, পর্যটন দপ্তরের সচিব উত্তম কুমার চাকমা, পূর্ত দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, সচিব পি কে চক্রবর্তী সহ একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারিক। চুক্তি স্বাক্ষরের পর সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ তাদের জন্য এক গৌরবের দিন। ত্রিপুরার মানুষের বহু প্রতীক্ষিত একটি স্বপ্ন আজ বাস্তব রূপ পেয়েছে।

দেশের অন্যান্য রাজ্যে তাজ হোটেলের মতো ব্র্যান্ডেড হোটেল থাকলেও এই রাজ্যে এধরনের হেরিটেজ হোটেল গড়ে তোলার প্রয়াস পূর্বে দেখায়নি কেউ। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আইএইচসিএলের সঙ্গে এর আগে একটি মৌ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল এবং আজ তা আনুষ্ঠানিকভাবে লিজ চুক্তিতে পরিণত হলো। ইচ্ছে করলে আজ থেকেই কাজ শুরু করা যায়। যদিও সরকারের লক্ষ্য দুই বছরের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করা তবে আইএইচসিএল কর্তৃপক্ষের মতে তিন বছর সময় লাগতে পারে এই কাজটি সম্পন্ন করতে।

১৯১৭ সালে আগরতলার রাজপরিবারের শাসনকালে নির্মিত হয় পুষ্পবন্ত প্যালেস। মহারাজা বীরেন্দ্র কিশোর মানিক্য বাহাদুর এই পুষ্পবন্ত রাজপ্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে এটি গভর্ণর হাউজ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও, পরবর্তীতে নতুন গভর্ণর হাউজ নির্মাণ হলে এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল বহুদিন ধরে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই প্রাসাদটির ঐতিহাসিক, স্থাপত্যিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অপরিসীম। তাই এর উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করতে চেয়েছে বর্তমান সরকার। তিনি আরও জানান, হেরিটেজ হোটেলটিতে প্রায় ১০০টি ঘর থাকবে, যার মধ্যে থাকবে ৪টি এক্সক্লুসিভ সুইট। রাজ ঘরানার আদলে ঘরগুলি সাজানো হবে, যাতে অতিথিরা রাজকীয় আতিথেয়তার স্বাদ নিতে পারেন। এটি কোনো সাধারণ কমার্শিয়াল হোটেল নয়, বরং এটি হবে এক ‘রাজসিক অভিজ্ঞতার কেন্দ্র’।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু একটি হোটেল নয়, রাজ্যের পর্যটন খাতের উন্নয়নের এক বিশাল দরজা খুলে গেল বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “টাটা গোষ্ঠীর চেইনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্তরের পর্যটকদের আগমন ঘটবে। তারা শুধু এই হোটেলেই থাকবেন না, রাজ্যের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র যেমন উনাকোটি, নীরমহল, যতেশ্বর মন্দির, সিপাহীজলা ইত্যাদি স্থানের সম্ভাবনাগুলি ঘুরে দেখবেন।” এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরাসরি প্রায় ২০০ জন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। পরোক্ষভাবে আরও বহু মানুষের জীবিকায় এই হোটেল ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে আইএইচসিএল-কে এই হোটেল নির্মাণের জন্য ৭.৭৮ একর জমি লিজে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, “এই কাজ সহজ ছিল না। নানা রকম প্রশাসনিক জটিলতা এবং দাপ্তরিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমরা আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধান করেছি।”

ত্রিপুরার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও পর্যটনের সমন্বয়ে গড়ে উঠতে চলেছে এক অনন্য নিদর্শন — তাজ পুষ্পবন্ত প্যালেস হেরিটেজ হোটেল। এর মাধ্যমে রাজ্য যেমন পর্যটনের নতুন দিশা পাবে, তেমনি কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নেও একটি নতুন অধ্যায় রচিত হবে। এই প্রকল্প কেবল একটি হোটেল নির্মাণ নয়, বরং একসময়কার রাজমহলের গৌরবকে আধুনিক পরিসরে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।About Us

বাংলাদেশী পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা

ভারতের স্থল বন্দর গুলি দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানি বন্ধ করে দিল ভারত সরকার!

সম্প্রতি ভারত সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যার প্রভাব সরাসরি পড়েছে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের অর্থনীতিতে। দেশের একাধিক স্থলবন্দর — বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আসা প্রক্রিয়াজাত পণ্যের আমদানিতে কেন্দ্র নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এতে যেমন আমদানিকারক মহলে শোরগোল পড়েছে, তেমনি শিল্পমহলে এক ধরনের আশাবাদের সঞ্চার হয়েছে। এই নির্দেশিকা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে রেডিমেড গার্মেন্টস, ফল, কার্বনেটেড পানীয়, স্ন্যাকস, প্লাস্টিক ও পিভিসি সামগ্রী, কাঠের আসবাব, কটন ও সুতো-সহ একাধিক প্রক্রিয়াজাত পণ্যে বাংলাদেশ থেকে আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাব দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরে স্পষ্ট, যার মধ্যে ত্রিপুরার আখাউড়া স্থলবন্দর অন্যতম।

এই নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে সোমবার আগরতলা-আখাউড়া আন্তর্জাতিক স্থলবন্দরে ত্রিপুরা সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের উদ্যোগে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দপ্তরের অধিকর্তা শ্রী শৈলেশ যাদব, শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারক সংস্থার প্রতিনিধিরা, স্থানীয় শিল্পপতিরা, বিএসএফ ও কাস্টমস বিভাগের আধিকারিকগণ। বৈঠকের পর শৈলেশ যাদব জানান, “ভারত সরকারের নির্দেশিকা যাতে স্থলবন্দরগুলিতে সুষ্ঠুভাবে কার্যকর হয় এবং ত্রিপুরার বাজারে তার যথাযথ প্রতিফলন ঘটে, সে বিষয়ে একগুচ্ছ গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এই নিষেধাজ্ঞা একদিকে যেমন দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করছে, তেমনি ত্রিপুরায় স্থানীয় শিল্প গড়ে তোলার জন্য একটি নতুন পথ উন্মুক্ত করছে।”

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একাধিক ত্রিপুরার শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী জানান, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে রাজ্যে নতুনভাবে খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ, কনফেকশনারি, প্লাস্টিক সামগ্রী এবং আসবাব তৈরির কারখানা গড়ে তোলার বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। একজন বর্ষীয়ান শিল্পপতি বলেন, “যতদিন বাংলাদেশ থেকে সস্তায় প্রক্রিয়াজাত পণ্য আসত, ততদিন আমাদের নিজস্ব শিল্প দাঁড়াতেই পারত না। এই নিষেধাজ্ঞা এক অর্থে আমাদের ঘরোয়া শিল্পকে রক্ষা করার এবং বিকশিত করার সুযোগ দিচ্ছে।” স্থানীয় বাজারে খাদ্যপণ্য, ভোজ্যতেল, গার্মেন্টসের কিছু ঘাটতি তৈরি হলেও ব্যবসায়ীদের মতে, সেই চাহিদা পূরণে ভারতের অভ্যন্তরীণ জোগান ব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী। বরং আমদানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ত্রিপুরা ও উত্তর-পূর্ব ভারতে স্বনির্ভর শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলার পথে সরকারকে এখনই অগ্রসর হতে হবে।

সারা দেশে এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তকে অর্থনীতিবিদ ও শিল্প বিশেষজ্ঞরা “সুরক্ষামূলক বাণিজ্যনীতি” (Protective Trade Policy) বলে উল্লেখ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ অভিযানের প্রেক্ষাপটে এ এক কৌশলগত পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে আমদানি-নির্ভরতাকে হ্রাস করে স্থানীয় উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সীমান্ত সংলগ্ন রাজ্যগুলিতে বেআইনি পণ্যের প্রবেশ, কর ফাঁকি ও বাজার ধ্বংসের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই উঠে আসছিল। কেন্দ্রের মতে, এই সিদ্ধান্ত দেশীয় শিল্পকে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে এবং স্থানীয় বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে।

এই পরিস্থিতিতে ত্রিপুরা সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, রাজ্যে একটি নতুন ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিকাশ নীতি’ প্রণয়নের কাজ চলছে। সরকারের লক্ষ্য, নিষেধাজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় শিল্প হাব গড়ে তোলা এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রণোদনার মাধ্যমে শিল্পক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া। তবে এরই মাঝে যেহেতু কাঁচা মালের আমদানিতে খুব একটা বিধি নিষেধ নেই তাই ভারতবর্ষের শিল্পপতিরা এই সুযোগটাতে কাজে লাগিয়ে রাজ্যে শিল্প স্থাপনের দার উন্মোচন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, “আমরা বিনিয়োগকারীদের জন্য একধরনের ‘ফাস্ট ট্র্যাক ক্লিয়ারেন্স মেকানিজম’ চালু করার পরিকল্পনা নিচ্ছি, যাতে দ্রুত শিল্প স্থাপনে সহায়তা করা যায়।”

যেখানে একদিকে বাংলাদেশের কিছু ব্যবসায়ী সংস্থা ভারতের এই পদক্ষেপকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলে সমালোচনা করছে, সেখানে ভারতীয় বাণিজ্য জগতে এক নতুন আশাবাদের আবহ তৈরি হয়েছে। ত্রিপুরা সেই সম্ভাবনার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠতে পারে যদি সরকার এবং বেসরকারি শিল্পপতিরা সম্মিলিতভাবে পরিকল্পিত পথে এগিয়ে যান। এই মুহূর্তে আখাউড়া স্থলবন্দর যেন শুধু আমদানি-রপ্তানির ফটক নয়, বরং রাজ্যের শিল্প উন্নয়নের এক সম্ভাবনাময় প্রবেশদ্বার হয়ে উঠেছে। এখন দেখার, রাজ্য সরকার কতটা দ্রুততার সঙ্গে এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ত্রিপুরাকে আত্মনির্ভরতার মডেলে পরিণত করতে পারে।About Us

বাংলাদেশ এখন রাজাকারদের দখলে

বাংলাদেশের বর্তমান সমাজ ১৯৭১ এর রাজাকারদের সুরে কথা বলছে!

এক সময় ভারতের অবদানেই স্বাধীন হয়েছিল বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৩ দিনের ঐতিহাসিক “অপারেশন মুক্তিযুদ্ধ”-এর মাধ্যমে পাকিস্তানি দমন-পীড়নের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান। সেই পূর্ব পাকিস্তানই আজ বাংলাদেশ নামে পরিচিত। কিন্তু আফসোসের বিষয়, সেই বাংলাদেশ এখন ভারতের মিত্র নয়, বরং শত্রুপন্থী পথে হাঁটছে—এমনটাই বলছে ত্রিপুরার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সম্প্রতি বাংলাদেশের তথাকথিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যেটি বৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি এবং যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিতর্কিত অর্থনীতিবিদ এবং অর্ধ নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুস, প্রকাশ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, বিহার, ওড়িষ্যা এবং আসামের কিছু অংশকে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে দাবি করে একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে! বাংলাদেশি নাগরিক মোঃ নাহিদুল ইসলাম সোশ্যাল মিডিয়ায় “বৃহত্তর বাংলাদেশ”-নামে এই মানচিত্রটি প্রকাশ করেন। ইসলাম লিখেছেন, “আমরাও সাহস করতে পারি।” এরপরেই আগুনে ঘি ঢালার মতো করে ইউনুস সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মাহফুজ আলম—যিনি এই সরকারের একজন ‘ডি-ফ্যাকো’ মন্ত্রী বলেই পরিচিত—সেই বিতর্কিত মানচিত্রটি নিজেই শেয়ার করেন। যদিও পরে ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে পোস্টটি মুছে ফেলতে বাধ্য হন তিনি।

বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, এই মানচিত্রটি বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়েছে, যা বর্তমানে রাজাকার-প্রভাবিত একটি ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ই এক সময়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক প্রাণকেন্দ্র ছিল, কিন্তু বর্তমানে এটি চরমপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় ভারতবিরোধী তৎপরতার জন্মস্থান হয়ে উঠেছে।

এই ইস্যুতে ভারতের তরফে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে“আমরা এই বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সংশ্লিষ্ট পোস্ট সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে শুনেছি। আমরা সকল পক্ষকে মনে করিয়ে দিতে চাই—জনসম্মুখে মন্তব্য করার সময় দায়িত্বশীলতা বজায় রাখা উচিত।” এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ত্রিপুরার বিভিন্ন অংশে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। আগরতলা, বিলোনিয়া, ধর্মনগর, উদয়পুরের সাধারণ জনগণের মধ্যে এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলেন, “যে দেশকে ভারত রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছিল, আজ তারাই ভারতের ভূখণ্ড দখলের স্বপ্ন দেখছে? এটা চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতা।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউনুস সরকারের কর্মকাণ্ডে স্পষ্ট চীন ও পাকিস্তানের প্রভাব রয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের পর এই অবৈধ সরকার ক্ষমতায় এসে প্রথমেই পাকিস্তানপন্থী জামায়াতে ইসলামীর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এর ফলে মৌলবাদী চক্র আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।ভারত সবসময়ই বাংলাদেশকে তার বন্ধু প্রতিম প্রতিবেশী হিসেবে মান্যতা দিয়ে এসেছে। কিন্তু বর্তমানে পাকিস্তান এবং চীনের ষড়যন্ত্রে তাদের প্রকৃত বন্ধুকে হারানোর পথে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের এক শ্রেণীর মুক্তিযোদ্ধাদের মতে, পাকিস্তান ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশোধ নিতে এখন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করতে ব্যস্ত। তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, “যেই রাজাকার বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে ছিল, তারাই আজ পাকিস্তান ও চীনের সমর্থনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে সরকার পতন ঘটিয়েছে এবং বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। এই রাজাকার বাহিনীই আজ ভারতের বিরুদ্ধে একের পর এক চক্রান্ত করে যাচ্ছে।” হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের (HBCUC) তথ্যমতে, ইউনুস সরকারের ক্ষমতায় আসার পর মাত্র ১৬ দিনের মধ্যে সংখ্যালঘু হিন্দুদের বিরুদ্ধে ২০০০-এর বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। নিহত হয়েছেন অসংখ্য সংখ্যালঘু মানুষ, ৬৯টি মন্দির আক্রান্ত হয়েছে, নারী নিপীড়নের ঘটনাও ঘটেছে অগণিত। এমনকি কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ISKCON)-কে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যদিও হাইকোর্ট সেটি খারিজ করে দিয়েছে।

ভারতের প্রাক্তন বাংলাদেশে হাইকমিশনার বলেন, “বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। ভারতের পক্ষে এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। পাকিস্তান বাংলাদেশকে ঘাঁটি বানিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে সন্ত্রাস ছড়াতে পারে।” ভারত কখনো চায় না বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা কঠোর মনোভাব পোষণ করতে, কিন্তু ইউনুস সরকারের নেতৃত্বাধীন বর্তমান বাংলাদেশের অবৈধ সরকার ক্রমাগত ভারতের বিরুদ্ধে প্ররোচনামূলক মন্তব্য করে চলেছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে এক বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশ আর আগের বাংলাদেশ নেই। আজ এটি পরিণত হয়েছে এক সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে।”
তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে বাংলাদেশে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

ত্রিপুরার পক্ষে জানানো হয়েছে, “ত্রিপুরা ভারতের গর্ব। আমরা আমাদের ভূখণ্ড রক্ষার জন্য প্রতিটি নাগরিককে সাথে নিয়ে প্রস্তুত। ইউনুস সরকারের অপপ্রচার ও মিথ্যা মানচিত্র আমাদের মনোবল ভাঙতে পারবে না। ভারতীয় সেনা এবং কেন্দ্র সরকারও এই ষড়যন্ত্র নিয়ে সচেতন।” ভারত এক সময় মুক্তি দিয়েছিল বাংলাদেশকে। আজ সেই বাংলাদেশই শত্রুপক্ষের ছায়াতলে এসে ত্রিপুরার মতো শান্তিপূর্ণ রাজ্যকে হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু ভারত চুপ করে বসে থাকার দেশ নয়। ভারতের একতা, শক্তি এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রয়েছে প্রতিটি ভারতবাসীর। কারণ “১৩ দিনে যে দেশ বানিয়েছিল ভারত, চাইলে ১৩ মিনিটেই শেষ করতে ও পারে!” বিশ্লেষকদের মতে, এখন এটাই দেখার বিষয়—ভারত কত দিন তার ধৈর্য ধরে রাখতে পারে।About Us

TSR এর নতুন রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ন

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তর ত্রিপুরার TSR এর জন্য একটি নতুন কেন্দ্রীয় রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ান গঠনের অনুমোদন দিয়েছে!

ত্রিপুরার আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে আরও সুসংহত করতে ও নিরাপত্তা জোরদার করতে রাজ্যে আরও একটি ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ন (IR Battalion) গঠনের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা আজ সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ড.) মানিক সাহা।

মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “ত্রিপুরার জন্য একটি বড় উৎসাহব্যঞ্জক খবর! কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস (TSR)-এর অধীনে আরও একটি ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ন স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে। এর ফলে রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্তও খুলে যাবে। এই সিদ্ধান্তের জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী অমিত শাহজির প্রতি কৃতজ্ঞ।”

সূত্রের খবর, রাজ্যে আরও একটি আইআর ব্যাটেলিয়ন গঠনের দাবিটি কিছুদিন আগে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাতে সরাসরি উত্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা। সেই দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে এবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আনুষ্ঠানিকভাবে এই অনুমোদন দিল। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় সরকার এই নতুন আইআর ব্যাটেলিয়ন গঠনের জন্য এককালীন ৫০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে। এর মধ্যে ৩০ কোটি টাকা পরিকাঠামোগত ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ থাকবে, যা ব্যয় বিবরণী জমা দেওয়ার পর রাজ্য সরকারকে প্রদান করা হবে। তবে জমি ক্রয়ের খরচ এই বরাদ্দের আওতায় পড়বে না।

এই ব্যাটেলিয়ন গঠনের পর, তা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে প্রথম অগ্রাধিকারভুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ, প্রয়োজন অনুযায়ী দেশের যেকোনো প্রান্তে এই TSR-বাহিনী মোতায়েন করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিতে পারবে। এই উদ্যোগের ফলে ত্রিপুরার সীমান্তবর্তী ও দূর্গম এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও মজবুত হবে, পাশাপাশি প্রচুর সংখ্যক স্থানীয় যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দ্রুত এই ব্যাটেলিয়নের গঠন সংক্রান্ত পরিকাঠামো ও নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। ত্রিপুরায় নতুন আইআর ব্যাটেলিয়নের অনুমোদন রাজ্যের জন্য নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কেন্দ্র ও রাজ্যের সমন্বয়ে এই প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে ত্রিপুরা একটি নিরাপদ ও কর্মনির্ভর রাজ্য হিসেবে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।About Us

বিজেপির সাংগঠনিক সংকট প্রকাশ্যে

বিজেপির সাংগঠনিক অচলাবস্থায় রাজনৈতিক গতি বাড়াচ্ছে সিপিআইএম ও কংগ্রেস!

রাজ্যে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির আবহে আপাতত হিমঘরে পাঠানো হয়েছে বিজেপির প্রদেশ সভাপতি নির্বাচন। যদিও দুই দেশের মধ্যে এখন সাময়িক যুদ্ধবিরতি চলছে, তবুও বর্তমান পরিস্থিতিকে যুদ্ধকালীন বলেই চিহ্নিত করছে রাজনৈতিক মহল। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বও মুখ খুলতে পারছেন না—কবে হবে সভাপতি নির্বাচন, তা স্পষ্ট নয় কারও কাছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জুয়েল ওরাং এখনও পর্যন্ত রাজ্যে পা রাখেননি। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে বর্তমান বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ফলে রাজ্য নেতৃত্ব কার্যত বল ঠেলে দিয়েছে দিল্লির কোর্টে এবং তারা নিজেরাও ‘সুখনিদ্রা’য় নিমগ্ন, অভিযোগ দলের অভ্যন্তরেই।

প্রসঙ্গত, এবছরের এপ্রিল মাসের গোড়ায় সংসদের বাজেট অধিবেশন শেষ হওয়ার পরেই বিভিন্ন রাজ্যে তড়িঘড়ি সভাপতি নির্বাচন শুরু হয়েছিল। কিন্তু সূত্রের খবর, নতুন সর্বভারতীয় সভাপতির বিষয়ে আরএসএস ও মোদী-অমিত শাহের মধ্যে মতানৈক্যের কারণে পুরো প্রক্রিয়াই আবার জটিল হয়ে পড়ে। বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সভাপতি নির্বাচনও আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তা নিয়ে আর আলোচনা নয় বলেই দলীয় মহলের দাবি। দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে নতুন সভাপতি না হওয়ায় গোটা সংগঠন কার্যত ছন্নছাড়া অবস্থায় পৌঁছেছে। রাজ্য নেতাদের মুখে এখন আর সভাপতি নির্বাচন নিয়ে তেমন আগ্রহ বা উদ্দীপনা নেই। সাংবাদিক সম্মেলনেও এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে নেতারা অস্বস্তিতে পড়ছেন, কারণ পুরো বিষয়টি এখন দিল্লির অধীন।

তৃণমূল স্তরের সংগঠন কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। আজও রাজ্যের ৪০ শতাংশের বেশি বুথে সভাপতি নির্বাচন হয়নি। দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও পুরনো নেতারাই সেই বুথ পরিচালনা করছেন। কিছু মণ্ডলে সভাপতি নির্বাচিত হলেও কমিটি গঠন হয়নি। একই চিত্র জেলা কমিটিগুলিতেও। নতুন জেলা সভাপতি নির্বাচনের পরেও বহু জায়গায় জেলা কমিটি গঠিত হয়নি। রাজ্যে এখন প্রদেশ, জেলা, মণ্ডল—সব পর্যায়ে সাংগঠনিক কাঠামো স্থবির। মাঝে মধ্যে বৈঠক হলেও শাখা সংগঠনগুলো কার্যত নিষ্ক্রিয়। মহিলা মোর্চা, যুব মোর্চা, ওবিসি মোর্চা, এসসি মোর্চা, জনজাতি মোর্চা এবং কিষাণ মোর্চা—প্রায় প্রতিটি শাখা সংগঠনেই নতুন নেতৃত্ব নেই। এর জেরে নেতাদের মধ্যে কোনও কর্মচাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছে না।

এই যুদ্ধের আবহে কেন্দ্রের নির্দেশে রাজ্যজুড়ে ‘তেরঙ্গা যাত্রা’র মতো দেশপ্রেম জাগানো কর্মসূচি পালন করছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মন কি বাত’ও নিয়মিত সম্প্রচার হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে সংগঠনের পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে রাজ্য নেতাদের তেমন কোনও উৎসাহ নেই। কেবল কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করেই দায় সারা হচ্ছে। এই অচলাবস্থার সুযোগ নিচ্ছে সিপিএম ও কংগ্রেস। কংগ্রেসের ‘সংবিধান বাঁচাও’ কর্মসূচি ইতিমধ্যেই রাজ্যে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে। অন্যদিকে সিপিএম তাদের রাজ্য কমিটির বৈঠকে লড়াই-সংগ্রাম আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুব সংগঠন তিন দফা দাবিকে সামনে রেখে রাস্তায় নেমে পড়েছে বহু আগেই।

নতুন সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় রাজ্য বিজেপির অভ্যন্তরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এতদিন মুখ্যমন্ত্রীর নিজস্ব কোনও গোষ্ঠী না থাকলেও এখন তাঁর নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী লবি তৈরি হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রীকে কেন্দ্র করে প্রশংসার বন্যা বইছে। এতে দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজন তৃণমূল স্তরের কর্মীদের মধ্যেও প্রভাব ফেলেছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক চিত্র দেখা যাচ্ছে জনজাতি মোর্চা এবং ওবিসি মোর্চার ক্ষেত্রে। পাহাড় এখন পুরোপুরিভাবে তিপ্রা মথার উপর নির্ভরশীল। বিজেপির পাহাড়ের অফিসগুলো একে একে গুঁড়িয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছেন কর্মী ও কার্যকর্তারা। জনজাতি মোর্চাকে রাজনৈতিক মহল ‘কোমায়’ বলেই উল্লেখ করছে।

রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব, জনজাতি মোর্চাকে উপেক্ষা করে তিপ্রা মথাকে গুরুত্ব দেওয়ার যে কৌশল নিয়েছে, তার ফলেই সংগঠনের ভিত্তি তলানিতে এসে ঠেকেছে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। একই চিত্র ওবিসি মোর্চার ক্ষেত্রেও। ওবিসি সংরক্ষণ ইস্যু দানা বাঁধলেও কার্যত দল কিছুই করতে পারেনি। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, আগামী বিধানসভা ভোটেও বিজেপিকে আঞ্চলিক দল—তিপ্রা মথা ও আইপিএফটি’র উপর নির্ভর করেই ভোট বৈতরণি পার করতে হতে পারে। যা শাসক দলের জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর বিষয়।

সবমিলিয়ে, রাজ্য বিজেপির অন্দরেই এখন সাংগঠনিক শূন্যতা, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, জনভিত্তির অবনতি ও কর্মী-সমর্থকদের মনোবলহীনতা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। এমন অবস্থায় দলকে টেনে তুলতে হলে দ্রুত নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং কার্যকর সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কোনো বিকল্প নেই—এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের। অন্যথায়, রাজ্যে শাসক দল হিসেবে বিজেপির ভবিষ্যৎ বড়সড় সংকটে পড়তে পারে বলে অভিমত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।About Us

নার্সিং স্টাফরা দীর্ঘ বঞ্চনার শিকার

নার্সিং পেশাকে মানবতার সেবার নাম দিয়ে ঠকানো হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে!

ত্রিপুরার স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করতে ৪৩২ জন নার্স  নিয়োগে বড়সড় পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। এর মধ্যে ৩৩২ জন নিয়মিত নার্সিং অফিসার হিসেবে এবং অতিরিক্ত ১০০ জন চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডঃ মানিক সাহা আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেন।

এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “নার্সিং একটা অত্যন্ত সম্মানজনক ও দায়িত্বপূর্ণ পেশা। রোগী যখন হাসপাতালে আসে, তখন প্রথমে তার পাশে দাঁড়ান নার্সরা। তাঁরা রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে শুরু করে মানসিক সাহচর্য দিয়ে থাকেন। সেবার মধ্য দিয়েই নার্সরা রোগীর মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলেন।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, “২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে আগরতলা নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউটকে ‘আগরতলা গভর্নমেন্ট নার্সিং কলেজ’-এ উন্নীত করা হয়েছে। এখন রাজ্যেই বিএসসি নার্সিং, এমবিবিএস ও বিডিএস-এর মত উচ্চমানের কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে ছেলেমেয়েরা।” তিনি আরও জানান, উদয়পুরের ৪০ আসন বিশিষ্ট এএনএম প্রতিষ্ঠানকে জিএনএম কোর্সে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া দুর্জয়নগরের নার্সিং ইনস্টিটিউটের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন চলছে। নার্সিং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটাতে একাধিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য পরিষেবায় গুণগত পরিবর্তন আনতে ইতিমধ্যেই ২০২৪ সালে রাজ্যে ১৫৩ জন নার্স নিয়োগ হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। বর্তমানে রাজ্যে ৯টি সুপার স্পেশালিটি চিকিৎসা পরিষেবা চালু হয়েছে। স্বাস্থ্য পরিসেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি এবার রাজ্যে বেসরকারি লগ্নিকারীরাও বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, যা এক ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। ডাঃ সাহা এদিনের বক্তব্যে নার্সদের সুরক্ষা, স্বাস্থ্য এবং মানসিক সুস্থতার দিকেও সমান গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, “এই পেশার সঙ্গে যুক্তদের প্রতি আমাদের আরও যত্নশীল হতে হবে।

এবারের আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবসের থিম — ‘আমাদের নার্সগণ আমাদের ভবিষ্যৎ, নার্সদের যত্ন নিন, অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করুন’ — অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।” তিনি বলেন, “নার্সদের মাধ্যমে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান সম্ভব হলে রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কাঠামোও আরও মজবুত হবে।” তবে এক শ্রেণীর নার্সদের মতো এই ধরনের থিম প্রতি বছরেই করা হয়, তবে এই স্লোগান গুলি শুধুমাত্র অনুষ্ঠানের পেছনের ব্যানারেই শোভা পায় এবং আদতে এগুলির কোন প্রয়োগই নেই।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “নার্সিং জগতের পথপ্রদর্শক ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিনেই সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবস পালন করা হয়। তাঁর জন্ম ১৮২০ সালের ১২ মে। ‘লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ নামে যাঁকে সবাই চেনে, তিনি ক্রিমিয়ার যুদ্ধে আহত সৈনিকদের অক্লান্ত সেবা করেছিলেন। তাঁর দেখানো পথেই গড়ে উঠেছে বিশ্বের নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি।” এদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী শ্রী টিংকু রায়, স্বাস্থ্য সচিব কিরণ গিত্যে, স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ তপন মজুমদার, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ অধিকর্তা ডাঃ অঞ্জন দাস, মেডিকেল এডুকেশনের অধিকর্তা ডাঃ এইচ পি শর্মা, ত্রিপুরা নার্সিং কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার রেবেকা ডার্লং সহ রাজ্যের স্বাস্থ্যদপ্তরের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্তা ও বিশিষ্টজনেরা।

কিন্তু ঐদিনের অনুষ্ঠানে ডাক্তার মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের নার্সিং স্টাফদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা এবং প্রতিকূলতা নিরসনে কোন সদিচ্ছা বা আলোচনা শোনা যায়নি। যেখানে ত্রিপুরা রাজ্যে অন্যান্য সব বিভাগে সরকারি কর্মচারীদের জন্য একের পর এক পদোন্নতির ঘোষণা ও বাস্তবায়ন হয়েছে, সেখানে দীর্ঘদিন ধরেই নার্সিং স্টাফদের জন্য কোনও স্পষ্ট পদোন্নতি হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী নিজে একজন চিকিৎসক হয়েও এই সংক্রান্ত বিষয়ে অনুষ্ঠানে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি—এই বিষয়টি নিয়ে চরম হতাশ ও ক্ষুব্ধ রাজ্যের নার্স সমাজ। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী অনেক নার্স আশা করেছিলেন, একজন ডাক্তার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ডাঃ মানিক সাহা তাঁদের বঞ্চনার দীর্ঘ ইতিহাসের প্রতি সুবিচার করবেন এবং অন্তত পদোন্নতি বা গ্রেড পরিবর্তনের বিষয়ে কোনও ঘোষণা করবেন। কিন্তু সেই আশায় কার্যত জল ঢেলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

বর্তমানে ভারতের অধিকাংশ রাজ্যেই নার্সিং কর্মীদের গ্রুপ ‘বি’ পদমর্যাদায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ ত্রিপুরায় আজও নার্সিং স্টাফরা গ্রুপ ‘সি’ তে রয়ে গেছেন। শুধুমাত্র তাঁদের পদের নাম পরিবর্তন করে ‘নার্সিং অফিসার’ বলে ডাকলেই বাস্তব অবস্থার পরিবর্তন হয় না—এমনটাই মত নার্স সংগঠনগুলির। অনেকেই মনে করছেন, এটি একপ্রকার চাতুর্যপূর্ণ চাল মাত্র, যাতে প্রকৃত উন্নতির পরিবর্তে শুধু নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে।

আরও হতাশাজনক বিষয় হলো, কিছুদিন আগে কেন্দ্র সরকার থেকে নার্সদের পোশাক ভাতা প্রদানের বিষয়ে একটি নির্দেশিকা জারি হওয়ার পর রাজ্যের অর্থ দপ্তর সেই ভাতা অনুমোদন করলেও পরে তা আবার বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে নার্সরা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা নিরলস পরিষেবা দিয়ে থাকেন, সেখানে তাঁদের প্রতি এই অবহেলা ও বঞ্চনা একপ্রকার অবিচার বলে মনে করছেন সমাজের বিশিষ্টজনেরা। তাঁদের মতে, একজন ডাক্তার মুখ্যমন্ত্রীর উচিত ছিল এই পেশার সম্মান রক্ষায় এবং দীর্ঘদিনের বৈষম্য দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। মুখ্যমন্ত্রীর এই নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তাই নার্সদের ন্যায্য দাবিকে আরও দীর্ঘসূত্রিতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।About Us