‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে, অর্থনীতি ও গণতন্ত্র সুদৃঢ় করার প্রয়াস!
‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থনীতির পাশাপাশি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাও আরও সুদৃঢ় হবে। এই ব্যবস্থার ফলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও বজায় থাকবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই উদ্যোগকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ আজকের সময়ের এক অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। বারবার নির্বাচনের কারণে প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। প্রতিবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে স্কুল-কলেজে ভোট গ্রহণের জন্য ক্লাস বন্ধ রাখতে হয়, শিক্ষকদের ভোট পরিচালনার কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়, এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের একটানা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর কোনো না কোনো নির্বাচন লেগেই থাকে—লোকসভা, বিধানসভা, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত, পুরসভা, স্বশাসিত সংস্থা ইত্যাদির জন্য। বারবার নির্বাচনের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যেও একধরনের ক্লান্তি তৈরি হয়। তবে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ চালু হলে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচন হবে, ফলে প্রশাসনিক ব্যস্ততা কমবে, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়বে এবং দেশের অর্থনীতি প্রসারে বলিষ্ঠ ভূমিকা নেয়া যাবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একাধিক নির্বাচনের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে, ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল, যা দেশের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা যেত। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রায় ১.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ বাস্তবায়িত হলে এই ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে। এছাড়া, কালো টাকা ব্যবহার করে নির্বাচনে জয়লাভের প্রবণতা কমবে এবং হিসাব-বহির্ভূত তহবিল নিয়ন্ত্রণে আসবে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার কারণে উন্নয়নমূলক কাজ ব্যাহত হয়। একবার নির্বাচন ঘোষিত হলে কোনো নতুন প্রকল্প বা গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না। ফলস্বরূপ, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বিলম্বিত হয়। ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ ব্যবস্থা চালু হলে এই সমস্যাগুলি দূর হবে, কারণ প্রশাসনকে ঘন ঘন নির্বাচনের জন্য থমকে যেতে হবে না। এতে সরকার নিরবচ্ছিন্নভাবে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবে।
মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বিশ্বের অনেক দেশেই একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যেমন ব্রাজিল, সুইডেন, বেলজিয়াম, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস প্রভৃতি দেশে এই ব্যবস্থা সফলভাবে কার্যকর হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যদি বিশ্বের এত দেশে একযোগে নির্বাচন হতে পারে, তাহলে আমাদের দেশে তা কেন সম্ভব নয়?”
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ-এর নেতৃত্বে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ বাস্তবায়নের জন্য বিস্তারিত সুপারিশ করেছে। এই কমিটিতে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, গুলাম নবি আজাদ, হরিশ সালভে সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সরকার ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ নিয়ে একটি বিল লোকসভায় পেশ করে। এতে ২৬৯ জন পক্ষে ভোট দেন এবং ১৯৮ জন বিপক্ষে ভোট দেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ ও বিজেপি প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর সব্যসাচী দাশগুপ্ত, অল ত্রিপুরা মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রতন সাহা, ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ ত্রিপুরা প্রদেশ কনভেনর ড. জহর লাল সাহা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এক দেশ, এক নির্বাচন চালু হলে কস্ট এফিসিয়েন্সি, গভর্নেন্স ও স্থিতিশীলতা, ফেডারেল কাঠামোর সমন্বয়, ভোটারদের অংশগ্রহণ, এবং দেশের অর্থনীতির জন্য সুবিধা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, দেশের সমৃদ্ধি ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সবাই এই উদ্যোগকে সমর্থন করবেন।