বক্সনগর বিধায়কের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হলে অনধিকার প্রবেশ!
ত্রিপুরার বক্সনগর বিধানসভার বিধায়ক তোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনেই তিনি নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকে পরীক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট করেছেন বলে অভিযোগ। সাধারণত পরীক্ষার হলে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারেন না, এমনকি অভিভাবকদেরও নিষেধাজ্ঞা থাকে। তবে বিধায়কের আচরণে সেই নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা চলাকালীন রাজনৈতিক নেতাদের প্রবেশ সাধারণত বিরল ঘটনা। কিন্তু বক্সনগরের নগর উচ্চ বিদ্যালয়ে বিধায়ক তোফাজ্জল হোসেনের অনধিকার প্রবেশ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। তিনি পরীক্ষা শুরুর আগেই হলে ঢুকে পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পরামর্শ দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের হাত তুলিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথোপকথন করেন, যা পরীক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশে ব্যাঘাত ঘটায়। এমনকি, তাঁর কথাবার্তায় পরীক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিধায়কের নিজস্ব শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তিনি নিজেই মাধ্যমিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিলেন বলে জানা গেছে। সেই ব্যক্তি কীভাবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পরামর্শ দিতে পারেন, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এক শিক্ষার্থী কটাক্ষ করে বলেন, “যিনি নিজেই মাধ্যমিক পাশ করেননি, তিনি আমাদের কী শেখাতে এলেন?”
পরীক্ষা হলে উপস্থিত হয়ে বিধায়ক পরীক্ষার্থীদের বলেন, “ভালোভাবে পরীক্ষা দাও, মুখ্যমন্ত্রী, আইএএস, আইপিএস হতে হবে!” এমনকি তিনি শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে মুখ ফসকে ‘গুডলাক’ এর বদলে ‘ব্যাডলাক’ বলে ফেলেন, যা নিয়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে হাস্যরস ছড়িয়ে পড়ে। যদিও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই তাঁর কথায় বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন।
এই অনধিকার প্রবেশের ঘটনায় শিক্ষা দপ্তর ও ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, পরীক্ষা হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও অনুমতি দেওয়া হয় না। তাহলে একজন বিধায়ক কীভাবে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করলেন?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে বিধায়ক যে কাজ করেছেন, তা শুধুমাত্র দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়, বরং এটি একপ্রকার রাজনৈতিক প্রচারের অংশ। বিজেপি সরকারের আমলে নেতামন্ত্রীরা পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকে নিজেদের প্রচার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের সন্তানরা পরীক্ষার হলে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে, আর সেখানে বিধায়ক এসে পরামর্শ দিতে গিয়ে অযথা বিভ্রান্তি তৈরি করলেন! এভাবে চলতে থাকলে পরীক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে।” শিক্ষকদের একাংশও মনে করছেন, পরীক্ষার হলে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রবেশ বন্ধ হওয়া উচিত। কারণ, এতে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ বাড়ে এবং পরীক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়।
এই ঘটনায় বিধায়ক তোফাজ্জল হোসেনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে শিক্ষামহলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।অভিভাবক ও শিক্ষকদের দাবি, ভবিষ্যতে এই ধরনের অনধিকার প্রবেশ বন্ধ করা হোক এবং পরীক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখা হোক। এখন দেখার, শিক্ষা দপ্তর ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়।