এলবার্ট এক্কা

অনাদরে আর অবহেলায় ডুকলির এলবার্ট এক্কার শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ!

অনাদরে অবহেলায় বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে শহিদ এলবার্ট এক্কার শহীদ স্মৃতি স্তম্ভটি। আগরতলার ডুকলির ইচাবাজার সংলগ্ন স্টেট ব্যাংকের সামনেই রয়েছে এই শহীদ স্মৃতি স্তম্ভটি। এখানেই শহীদ জওয়ান এলবার্ট এক্কার অন্তেষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল। সেনাবাহিনীর ১৪ গার্ড রেজিমেন্টের ল্যান্স নায়েক ছিলেন অ্যালবার্ট এক্কা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এলবার্ট এক্কা সহ ১২ জনের স্মরণে শ্রীপল্লি এলাকায় তাদের কবরস্থানে গড়ে উঠে শহীদস্মৃতি ফলকটি৷ স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপ সরকারের দেওয়া জমিতে একটি সৌধ নির্মিত হয়েছিল। আগে এই এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা ভুবন দাসের উদ্যোগে এখানে ছোট অনুষ্ঠান হত। করোনাকালে ভুবন দাস প্রয়াত হওয়ার পর এখন ফুল মালা দেওয়ার কেউ নেই। ২০২০ সালে শহীদ জওয়ান এলবার্ট এক্কার পরিবার রাজ্যে এসে ওই এলাকার মাটি সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছিলেন। ছিলেন এক্কার স্ত্রীও৷ দেখা করেছিলেন সেই সময়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়ের সাথে। এলাকাটি সংরক্ষণ করার দাবী জানিয়েছিলেন। অ্যালবার্ট এক্কার শহীদ স্মৃতিস্তম্ভকে আরো সুন্দর করা এবং এই এলাকাকে কিভাবে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা যায় তার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে ভাবনাচিন্তা করার দাবি করেছিলেন। আজ পর্যন্ত উপেক্ষিতই রয়ে গেছে এলাকাটি। সোমবার বাংলাদেশ বিজয় দিবস উদযাপনে যখন এলবার্ট এক্কা পার্কে রাজ্যপাল থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর পদস্থ আধিকারিকরা তার স্মৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করছেন। তখন অনাদরে অবহেলায় রয়েছে ডুকলির এলবার্ট এক্কার শহীদ স্তম্ভটি। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ওই এলাকায় কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। এমনকি সেনাবাহিনীর কোন পদস্থ আধিকারিকরা শহীদ স্তম্ভে গিয়ে মাল্যদান করার সময় পেলেন না। অ্যালবার্ট মরণোত্তর পরমবীর চক্র পেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের স্মৃতিতে গড়া সৌধটি রক্ষণাবেক্ষণে সরকারি উদ্যোগ কার্যত দেখা যায়নি। এলাকার যুবক ভুবনই যুদ্ধের পর থেকে সৌধটিকে আগলে রেখেছিলেন।

বিহারের (অধুনা ঝাড়খন্ড) গুমলাতে জন্মগ্রহণ করেন আদিবাসী তরুণ অ্যালবার্ট এক্কা। প্রায় একা হাতে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ত্রিপুরা সীমান্তের কাছে ‘গঙ্গাসাগরের যুদ্ধে’ পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত করেছিলেন। তবে যুদ্ধে ৩ ডিসেম্বর শহীদ হন তিনি। ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ খেতাবের নাম ‘পরম বীর চক্র’। যুদ্ধে অসম সাহসিকতার জন্য পরে এক্কাকে সেই বিরল সম্মানে (মরণোত্তর) স্বীকৃতি জানানো হয়েছে। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে মাত্র ২১ জন সেনা এই সম্মান পেয়েছেন। ল্যান্সনায়েক অ্যালবার্ট এক্কা তাদেরই একজন।

একাত্তরের যুদ্ধে ভারত তার পূর্ব ও পশ্চিম– উভয় সীমান্তেই লড়েছিল আর তার মধ্যে পূর্ব রণাঙ্গনে মাত্র একজনই পরম বীর চক্র পেয়েছেন। তিনিই অ্যালবার্ট এক্কা। শহীদ জওয়ানদের স্মৃতিতে প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর আগরতলার ডুকলিতে হত স্মরণ সভা। বিশেষ কিছু আড়ম্বর করে নয়। এলাকার মানুষজন ঐ সৌধে ফুল মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ‘৭১র যুদ্ধে প্রান দেওয়া সেই বীরদের। ১৬ ডিসেম্বরের আগে তারাই পরিষ্কার করে রাখতো নিজেদের গড়া সৌধটি। কিন্তু এলাকার ভুবন দাসের মৃত্যুর পর উৎসাহ হারিয়ে গেছে। কিন্তু রাজ্য সরকার বা ভারত সরকার কারোর পক্ষ থেকেই উদ্যোগ নেওয়া হয়নি সেই স্মৃতি সৌধটিকে সংরক্ষণ করে রাখার, বা প্রতি বছর সেখানে কোন অনুষ্ঠান করার।

এলাকার মানুষ দাবি করেছিলেন অন্তত এই স্মৃতি সৌধটি অধিগ্রহণ করুক সেনাবাহিনী। প্রথম দিকে সেনা বাহিনী তাতে রাজিও হয়েছিল। কিন্তু পরে সেই উদ্যোগ আর বেশী দূর এগোয়নি। অথচ সেবারের যুদ্ধে ত্রিপুরার অবদান অনেকেই সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করেন। ১৩ লক্ষ মানুষের ত্রিপুরা সেদিন আশ্রয় দিয়েছিল ১৬ লক্ষ বাংলাদেশি উদ্বাস্তুকে। অথচ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে ত্রিপুরায় হয় না কোন বড় ধরণের অনুষ্ঠান। অবহেলায় আর আনাদরে থাকে এলবার্টের শহীদ ফলকটি৷ মুক্তিযুদ্ধের অর্ধশতাব্দী পরে সেনাবাহিনী এই স্মৃতিসৌধটির চারপাশে সৌন্দর্যায়নের কাজ করেছে। উপরে শেড নির্মান করা হবে। চলছে ইট, বালি, সিমেন্টের গাধুনির কাজ৷ এলবার্ট এক্কার শহীদ স্মৃতি ফলকটি যখন অনাদরে, অবহেলায় তখন এলবার্ট এক্কা পার্কে সোমবার সকালে শ্রদ্ধা জানান রাজ্যপাল ইন্দ্র সেনা রেড্ডি নাল্লু।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আগরতলা লিচুবাগানস্থিত অ্যালবার্ট এক্কা পার্কে শহীদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নাল্লু। সেনাবাহিনীর ৫৭ নং মাউন্টেন আর্টি ব্রিগেডের উদ্যোগে আয়োজিত সাইকেল রেলির ও উদ্বোধন করেন তিনি। উপস্থিত ছিলেন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা, ব্যাটেলিয়ানের মেজর জেনারেল সমীর চরণ কার্তীকেয়ন সহ সেনাবাহিনী জওয়ানরা। মহান বিজয় দিবস সম্পর্কে রাজ্যপাল বলেন ১৯৭১ সালের এই দিনেই বাংলাদেশ পাশে দাঁড়িয়ে ভারতীয় জওয়ানরা পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াই করেছে। ভারতীয় জওয়ানদের আত্ম বলিদানের এই ইতিহাস কে স্মরণ করে তিনি তাদের ও পরিবার বর্গের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। সেই সময়ে ৯০ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যদের আত্মসমর্পণের বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি। অনুষ্ঠানে জওয়ানরা গান স্যালুট দেন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *