নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করাই হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষায় বদ্ধপরিকর। নাগরিকদের মানবাধিকার যাতে কোনওভাবে লঙ্ঘিত না হয় রাজ্য সরকার সে বিষয়ে সচেষ্ট রয়েছে। আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা একথা বলেন। ত্রিপুরা মানবাধিকার কমিশনের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবছর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের মুল ভাবনা হল ‘আওয়ার রাইট, আওয়ার ফিউচার, রাইট নাউ’।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের সভ্যতা, সংস্কৃতি পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। একে ধবংস করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে বিভেদকামী একটি শক্তি এখনও সচেষ্ট রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ মন্ত্রে সকলকে চলার কথা বলেছেন। আর এই ভাবনা নিয়ে চললেই মানবাধিকার দিবস পালন ফলপ্রসু হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৩ সালে মানবাধিকার সুরক্ষা আইন লাগু হলেও বিগত রাজ্য সরকার মানবাধিকার কমিশন গঠন করার জন্য কোনও সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশের পর ২০১৬ সালে ত্রিপুরা মানবাধিকার কমিশন গঠিত হয়। কিন্তু এই কমিশন জনগণের আশা আকাঙ্খা পূরণে কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি। নতুনভাবে গঠিত বর্তমান কমিশন অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি করছে এবং জনগণের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্বে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ সহ বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে এবং ক্ষতিগ্রস্থদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সারা দেশে তিনটি নতুন ফৌজদারি আইন প্রণীত হয়েছে। গত ১ জুলাই ২০২৪ থেকে এই আইনগুলি কার্যকর হয়েছে। এই আইনগুলি হল- ভারতীয় ন্যায় সংহিতা-২০২৩, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা-২০২৩ এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম-২০২৩। এই তিনটি আইন প্রণয়নের মুখ্য উদ্দেশ্য হল দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের মাধ্যমে নারী, শিশু সহ সকল স্তরের জনগণের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করা।এই নতুন তিনটি ফৌজদারি আইনের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলি হল ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ১৭৩ ধারা মূলে যেকোন নাগরিক যে কোনও স্থান থেকে এফআইআর দায়ের করতে পারবেন। এই আইনে পুলিশকে বেআইনীভাবে অর্জিত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। নতুন আইনে চার্জশীট দাখিলের ৬০ দিনের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শুরু নিশ্চিত করা এবং বিচার শেষ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে রায় ঘোষণার সংস্থানও রয়েছে।
অনুষ্ঠানে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন বলেন, দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নাগরিকদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই সমান অধিকার প্রদানের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হলে মানবাধিকার কমিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন ঝর্ণা দেববর্মা বলেন, জনগণের মৌলিক অধিকারকে অগ্রাধিকার দিয়েই দেশ ক্রমশঃ এগিয়ে চলছে। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা হিউম্যান রাইটস কমিশনের চেয়ারম্যান জাস্টিস স্বপন চন্দ্র দাস বলেন, নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলো সুরক্ষিত থাকায় আমাদের দেশের গণতন্ত্র মজবুত রয়েছে। স্বাগত বক্তব্যে ত্রিপুরা মানবাধিকার কমিশনের সচিব রতন বিশ্বাস বলেন, প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর মর্যাদার সঙ্গে রাজ্যে মানবাধিকার দিবস পালন করা হয়। মানবাধিকার দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে এবছর বিভিন্ন ইভেন্ট যেমন বসে আকোঁ প্রতিযোগিতা, প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরার এডভোকেট জেনারেল শক্তিময় চক্রবর্তী এবং লোকাযুক্ত বি কে কিলিকদার।