news default thumb

অপারেশনের কাপড় রয়ে গেল পেটের মধ্যেই : চেন্নাই এপেলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ ত্রিপুরা রাজ্যের এক রোগীর

চেন্নাইয়ের অ্যাপেলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠল। শুধু গাফিলতিই নয়, অ্যাপেলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করল ভোক্তা আদালত। রাজ্যে চিকিৎসায় উন্নত পরিষেবা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই চেন্নাই এর এপোলোতে ছুটে যান চিকিৎসা পরিষেবা নিতে। চেন্নাইয়ের অ্যাপেলোর উপর অগাধ বিশ্বাস অধিকাংশ মানুষের। অথচ রাজ্যে ডাক্তার মানিক সাহার নেতৃত্বাধীন সরকার স্বাস্থ্য হাব করার উদ্যোগ নিয়েছে। জিবি হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নত করা হচ্ছে। তারপরেও মানুষের আস্থা বা বিশ্বাস নেই একাংশ চিকিৎসকদের উপর। ফলে এই রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবা নেওয়ার পরেও একাংশ মানুষ ছুটে যান চেন্নাইয়ের এপেলোতে অ্যাপেলোর চিকিৎসকদের পরামর্শকে বেদবাক্য বলে মেনে নেন তারা। আর এই এপেলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠলো। আগরতলার শহরদক্ষিনাঞ্চলের বাধারঘাটের মাতৃপল্লির বাসিন্দা শ্রীমতী দুলুরানী সাহা। স্বামী মৃত যতীন্দ্র চন্দ্র সাহা।২০০৭ সালের ১১জানুয়ারি গলব্লাডার অপারেশন করার জন্য চেন্নাই এর অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি হন দুলুরানি।বর্তমানে তার বয়স ৮০ পেরিয়ে গেছে। সে বছর অর্থাৎ ২০০৭ সালের ১২ই জানুয়ারি সার্জন টি. পৃথ্বী রাজ, অ্যাপোলো হাসপাতালে ওই মহিলার গল ব্লাডার অপারেশন করেন। সে বছরের ২১ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ হওয়ার পর আগরতলায় ফিরে আসেন তিনি । চিকিৎসা খরচ বাবদ ৭৬,৯৩০ টাকা অ্যাপোলো হাসপাতালকে মিটিয়ে দিতে হয়। গত ২০০৭ সালের ৪ মে দুলু রানি সাহা পুনরায় প্রচন্ড পেট ব্যথায় কষ্ট পেতে থাকেন। তিনি বুঝতে পারছেন না চেন্নাই থেকে অপারেশন করে আসার পর কেন ফের পেট ব্যাথা।

আগরতলায় বিশিষ্ট শল্য চিকিৎসক বি. চৌধুরীর কাছে ছুটে যান তিনি। প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসিত হন। পরে ২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর শ্রীমতী সাহাকে কলকাতার আইএলএস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শল্য চিকিৎসক ডাক্তার সমরেশ ব্যানার্জী পুনরায় আল্ট্রা সোনোগ্রাফি সহ বিভিন্ন রকম ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করার পর শ্রীমতী সাহার পেটে ফের অপারেশন করা হবে জানিয়ে দেন। অপারেশন করতে গিয়ে ডাক্তারবাবুদের চক্ষু চড়কগাছ। শ্রীমতী সাহার পেটের ভেতর থেকে অ্যাপোলো হাসপাতালের লোগো এবং নম্বর সহ একটি তোয়ালে বের করা হয়। অ্যাপোলো হাসপাতালের পরিষেবার গাফিলতি এতেই প্রমানিত। শ্রীমতী সাহা দীর্ঘ ১ বৎসর ধরে শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। পরে অ্যাপোলো হাসপাতালের কাছে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চেয়ে ২০০৮ সালের ৫ নভেম্বর একটি উকিল নোটিশ দেওয়া হয়। অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে কোনো সদুত্তর না পেয়ে রোগীর পরিবার আগরতলার ভোক্তা সুরক্ষা আদালতে ২০০৯সালে মামলা দায়ের করেন। আবেদনকারিণী মোট ৭,৬২,২৪০ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা দাখিল করেন। কিন্তু আগরতলা ভোক্তা সুরক্ষা আদালতের এক্তিয়ার বহির্ভূত হওয়ার কারনে মামলাটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন দুলু রানির পরিবার। অবশেষে চেন্নাই এর তিরুভাল্লুরের District Consumer Disputes Redressal Commission, এ মামলাটি পুনরায় ২০১০ সালের ৫ জানুয়ারী দায়ের করা হয়। মামলাটির নম্বর আরবিটি/সিসিনম্বর 39/2010। সুদীর্ঘ ১৬ বৎসর লড়াই এর পর ভোক্তা সুরক্ষা সংরক্ষণ আদালত অ্যাপোলো হাসপাতালকে দোষী সাব্যস্ত করে। আবেদনকারিণী মানসিক অবসাদ, আর্থিক সংকট ও শারিরীক যন্ত্রণায় ভোগার জন্য ও চিকিৎসার গাফিলতির জন্য চলতি বছরের ২১ মে মোট ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ধার্য করা হয়।

বলা হয়, রায়ের কপি পাওয়ার ৬ সপ্তাহের ভেতর আবেদনকারীকে প্রদান করতে হবে। অন্যথায় বিলম্বিত প্রদানের জন্য উক্ত ক্ষতিপূরণের টাকার ওপর অতিরিক্ত বাৎসরিক ৯শতাংশ হারে সুদ হিসাবে দিতে হবে। সম্প্রতি ঋতিপূরণের টাকা আবেদনকারিণীকে প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে আবেদনকারিণীর বয়স ৮০ বছর। ভোক্তা সুরক্ষা সংরক্ষণ আদালতে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট প্রশান্ত কুমার পাল, শ্রীমতী কে.এলাস জি, চামকি রাজ (চেন্নাই), মিস্টার মিহির কান্তি রায়, এবং মিস্টার সুবীর বৈদ্য সহ অন্যান্য আইনজীবীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *