TTADC

বাস পরিষেবার নামে এডিসি প্রশাসনের ব্যবসা?

বাস পরিষেবার নামে বাণিজ্যে নেমেছে এডিসি প্রশাসন ? এতটাই কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়েছে যে এখন পর্যন্ত দরপত্র জমা দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না কোন সংস্থা বা অপারেটর। এমনিতেই সারা রাজ্যে এখন বাসের যাত্রী সংখ্যা একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বাস চালিয়ে লাভের মুখ দেখতে মালিকদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। একাংশ বাস মালিকরাই বলছেন বাণিজ্য একেবারেই নেই। তার ওপর এডিসি প্রশাসনের খাই মেটাতে গিয়ে ব্যবসা একেবারে লাটে উঠবে বলেই মনে করছেন বিভিন্ন সংস্থার মালিকপক্ষ। শর্তাবলী দেখলে যে কারোর চোখ কপালে উঠবেই। বাস মালিকরা বলছেন এডিসির শর্ত মেনে বাস চালালে লোকসান হবে। উল্টো পকেট থেকে স্টাফ এর বেতন চালাতে হবে। সম্প্রতি তিনটি টাটা এসি বাস পরিসেবা চালু করার ঘোষণা দিয়েছিল এডিসি প্রশাসন। তিপরা মথার সুপ্রিমো প্রদ্যুত কিশোর বাস চালিয়ে পরিষেবার সূচনা করেছিলেন। এডিসির বিভিন্ন রুটে বাসগুলো চলবে। জনজাতিরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারবেন এসি বাসে চড়ে। অনেকে খুশি হয়েছিল। আবার এডিসি প্রশাসন মুখে তিপরাসাদের জন্য এই পরিষেবা চালু করার কথা বললেও তিনটি এসি বাসকে স্টাফকার হিসেবে ব্যবহার করতে চায় প্রশাসন। দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু কিন্তু উৎসাহ নেই বাস মালিকদের। এডিসি প্রশাসন ইচ্ছে করলেই বাস নিজেরা পরিচালনা করতে পারে । অর্থাৎ এডিসির উদ্যোগেই বাস পরিষেবা জারি রাখা যেতে পারে। কিন্তু দেখা গেছে এডিসি প্রশাসন দায়িত্ব নিজের হাতে না রেখে বিভিন্ন অপারেটরদের হাতে বাস পরিসেবার দায়িত্ব তুলে দিতে চাইছে। দরপত্র আহবান করা হয়েছে এবং বেশ কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। শর্ত দেখেই আক্কেলগুড়ুম হওয়ার অবস্থা।

কি সেই শর্ত? এক একটি বাসের দৈনিক ভাড়া নির্ধারণ হয়েছে আড়াই হাজার টাকা। বরাত পাওয়া সংস্থাকে প্রতি মাসের দশ তারিখের মধ্যে এই টাকা এডিসি প্রশাসনে জমা দিতে হবে। এর আগে পাঁচ লক্ষ টাকা করে বরাত প্রাপ্ত সংস্থাকে সিকিউরিটি মানি হিসেবে জমা করতে হবে। যে ব্যক্তি বা সংস্থা বাস পরিষেবার দায়িত্ব পাবে তার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ হবে এক বছর। এক বছর পর চুক্তি রিনিউ করা হবে। ওই ব্যক্তি বা সংস্থার কাজে এডিসি প্রশাসন সন্তুষ্ট হলে চুক্তির মেয়াদ বাড়াতেও পারে। তিনটি বাস কোন্ কোন্ রুটে চলবে তাও ঠিক করে দিয়েছে এডিসি প্রশাসন। তিনটি বাসে এডিসি প্রশাসনে যারা কর্মচারী রয়েছেন তাদেরকে খুমুলুঙে নিয়ে যাওয়ার জন্যই ব্যবহার করা হবে। শহরের তিনটি জায়গা নন্দননগরের ডনবসকু স্কুল এডিনগর ড্রপ গেট এবং প্রগতি রোডে সকাল ন’টার মধ্যে বাস দাঁড় করাতে হবে। সকাল দশটার মধ্যে কর্মচারীদের খুমলুঙে পৌঁছে দিতে হবে।

আবার বিকাল পাঁচটার সময় খুমুলুঙ থেকে বাসগুলো কর্মচারীদের নিয়ে আগরতলার উদ্দেশ্যে রওনা হবে। কর্মচারীরা যেখানে নামতে চাইবেন সেখানেই তাদের নামাতে হবে। এডিসি প্রশাসনের দেওয়া শর্ত মেনে যদি বাস চালাতে আগ্রহী হয় কোন সংস্থা তাহলে তো প্রতিমাসে ৭৫ হাজার টাকা করে বাস ভাড়া এডিসি প্রশাসনে জমা দিতে হবে। তার উপর রয়েছে চালক ও সহ চালকের বেতন। গাড়ির চালকের বেতন নুন্যতম ১৫ হাজার টাকা। সহচালককে অন্তত ১০ হাজার টাকা তো দিতে হবে। তার ওপর রয়েছে চালক, সহচালকদের খাওয়া খরচ। যেহেতু সিএনজি চালিত বাস তাই প্রতিদিন অন্তত ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার জ্বালানি তো ভর্তে হবে। তারপর বাসে কোন সমস্যা হলে মেরামতি মেরামত করতে হবে। সব মিলিয়ে বরাত প্রাপ্ত সংস্থার প্রতি মাসে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার উপর খরচ রয়েছে। তার উপর এডিসিতে জমা আছে পাঁচ লক্ষ টাকা সিকিউরিটিমানি। স্বাভাবিকভাবেই যারাই দরপত্র জমা দিয়েছেন বা জমা দেবেন বলে স্থির করেছেন তারা এই ব্যবসা করবেন কিনা চিন্তায় আছেন। এখন পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসে নি বলে খবর।

এক বাস মালিক জানিয়েছেন বাসে কোন সমস্যা হলে তা সাড়াই করতে গিয়ে অন্তত ত্রিশ হাজার টাকা খরচ পড়বে। নতুন বাস অন্তত পাঁচ – ছয় মাস সারাইয়ের কোন খরচ নাও লাগতে পারে। কিন্তু এরপর বাসে সমস্যা হলে সারাই তো করতে হবে। ৫০ আসনের বাসে চড়বেন এডিসির কর্মচারীরা। তাদের বেতন থেকেই ভাড়া কেটে নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে প্রতি মাসে ২০০০ টাকা করে ভাড়া ধরলে প্রতিমাসে পঞ্চাশ আসনের বাস থেকে আসবে এক লক্ষ টাকা। আবার ৫০ আসন ভরবে কিনা সেটাও তো প্রশ্ন। এক লক্ষ টাকার প্রতি মাসে বাস থেকে আদায় হলে তারপরেও ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিতে চালাতে হবে। আবার বাসে পুরো যাত্রী হলে ধরে নেওয়া যাক্ প্রতি মাসে রোজগার এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা। তার পরেও তো লোকসানে। তবে এডিসি প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে কর্মচারীদের খুমলুঙে নামিয়ে দিয়ে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত যে মধ্যেকার সময় থাকবে সেই সময়ে বসগুলো অন্যরুটে চালানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। সেই রুটগুলিও ঠিক করে দেবে এডিসি প্রশাসন। তারপরেও কিন্তু আশার আলো দেখছেন না বাস মালিকরা। মাঝখানে চার থেকে সাড়ে চার ঘন্টা সময়ে কতটুকুই বা রোজগার হবে। ফলে এইসব কঠিন শর্ত আরোপ করার কারণে এডিসি প্রশাসন বাস অপারেটর পাচ্ছে না।বাস চালাতে আগ্রহী হচ্ছে না কোন ব্যক্তি বা সংস্থা।

লোকসানে কেইবা বাস চালাবে। বাস দুর্ঘটনাগ্রস্ত হলে বা কোন ক্ষতি হলে সে খরচ বহন করতে হবে অপারেটরদের। আর এডিসির কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ২০০০ টাকা করে পাওয়া যাবে কিনা তাতেও সন্দেহ রয়েছে। বাস মালিকদের বক্তব্য মাসিক ৭৫ হাজার টাকা ভাড়ায় বাস চালানো অসম্ভব। এক সময় বাম আমলে জওহরলাল নেহেরু আরবান কোম্পানি লিমিটেড শহরে বাস পরিষেবা চালু করেছিল। কিছুদিন চলার পর বাস পরিষেবার গঙ্গাপ্রাপ্তি ঘটে। শতাধিক বাস পরিষেবা চালু হয়েছিল। কিন্তু পরিচালনগত ত্রুটির কারণে সেটা স্থায়ী হয়নি। এখন একই অবস্থায় এডিসি প্রশাসনে৷ সব মিলিয়ে বাস পরিসেবা চালু হবে কিনা, আবার চালু হলে কতদিন স্থায়ী হয় সেটাই দেখার৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *