রাজ্যের প্রধান রেফারেল সরকারি মেডিকেল কলেজ জিবিপি হাসপাতাল হলো রাজ্যের মধ্যে রোগীর উন্নত চিকিৎসার একমাত্র ভরসার স্থল। আগরতলা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগীরা চিকিৎসা করাতে আসেন। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে গুরুতর অসুস্থ রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করে জিবিপিতে পাঠানো হয়। রাজ্য সরকারও সেই কারণে উন্নত চিকিৎসা পরিকাঠামো তৈরি করার উপর জোর দিয়েছে। বর্তমান বিজেপি জোট সরকার রোগীর উন্নত চিকিৎসা পরিষেবায় সুপার স্পেশালিটি পরিকাঠামোও তৈরি করেছে। কিন্তু রাজ্য সরকার রোগীর চিকিৎসা পরিষেবায় উন্নত চিকিৎসা পরিকাঠামো গড়লেও হাসপাতালের একাংশ সিনিয়র চিকিৎসক রোগীর চিকিৎসা পরিষেবায় হাসপাতালের জন্য যথাযথ সময় না দেওয়ায় রোগীরা সমস্যায় পড়ছেন। বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ তথা স্পেশালিস্ট চিকিৎসকদের একটি ছোট অংশ হাসপাতালে উপস্থিত থেকে রোগীর চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার প্রতিদিনের যে রুটিন রয়েছে সেই রুটিন অমান্য করছেন বলে অভিযোগ।
হাসপাতালে যে রুটিন রয়েছে তা হলো প্রতিদিন (ছুটির দিন ছাড়া) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চিকিৎসকরা বহির্বিভাগে (OPD) বসে রোগী দেখবেন। তার ফাঁকে সময় করে অন্ত:বিভাগে (ইনডোর) গিয়ে রোগী দেখবেন। বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে বহির্বিভাগ বন্ধ হয়ে গেলে তারপর বিকাল ৪টা ৩০ মিনিট থেকেই রাত ১০টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত প্রতিটি বিভাগে অন্ত: বিভাগে অর্থাৎ ইনডোরে ভর্তি চিকিৎসাধীন রোগী ও নতুন ভর্তি হওয়া রোগী দেখার জন্য একজন করে স্পেশালিস্ট চিকিৎসক থাকবেন। রাত ১০টা ৩০ মিনিটের পর স্পেশালিস্ট চিকিৎসক প্রতিটি বিভাগের জন্য একজন করে বাড়িতে অনকলে থাকবেন। রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে বহির্বিভাগ খোলা পর্যন্ত সকাল ৯টা অবধি অনকলে চিকিৎসক থাকবেন। গুরুতর অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য হাসপাতাল থেকে অনকলে চিকিৎসককে ডেকে আনা হবে। রবিবার বা সরকারি ছুটির দিন হাসপাতালের বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় প্রতিটি বিভাগে রুটিন ও রোস্টার অনুযায়ী অন্ত: বিভাগে তথা ইনডোরে ভর্তি চিকিৎসাধীন রোগী দেখার জন্য একজন স্পেশালিস্ট চিকিৎসক হাসপাতালে উপস্থিত থাকবেন বা রোগী দেখে যাবেন। রোগীর চিকিৎসা পরিষেবায় হাসপাতালের এই রুটিন আগের রুটিন পরিবর্তন করে চালু হয়েছিল বিজেপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর।
২০১৮ সালের শেষদিকে রুটিন চালু হলেও এই রুটিন স্পেশালিস্ট চিকিৎসকদের ছোট একটি অংশ ঠিকমতো না মানায় হাসপাতালে ভর্তি গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবার কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে বলে অভিযোগ। কেন স্পেশালিস্ট চিকিৎসকদের ছোট অংশ রুটিন যথাযথভাবে মানছেন না সে বিষয়ে হাসপাতালের এক আধিকারিকের বক্তব্য, হাসপাতালের রোগী দেখার রুটিন ও রোস্টার যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য বারবার সার্কুলার দেওয়া হচ্ছে। তারপরও পরিবর্তন নেই বলে তিনি জানান। হাসপাতালে চিকিৎসকদের মধ্যে যারা মেডিকেল কলেজের ফ্যাকাল্টি তাদের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব কলেজ প্রিন্সিপালের। কলেজ ফ্যাকাল্টি নয়, এমন চিকিৎসকদের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব হাসপাতাল মেডিকেল সুপারের। অভিযোগ, ছোট অংশের স্পেশালিস্ট চিকিৎসকদের রুটিন ও রোস্টার যথাযথভাবে না মানায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে মেডিসিন, গাইনো ও প্রসূতি, সার্জিক্যাল, ট্রমা এসব বিভাগকে। সেক্ষেত্রে হাসপাতালের প্রায় সব বিভাগেই সবসময় উপস্থিত থেকে রোগীর চিকিৎসা পরিষেবার প্রধান ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট তথা পিজি চিকিৎসক ও শিক্ষানবিশ ইন্টার্নরাই। যেহেতু রাজ্যের প্রধান রেফারেল হাসপাতাল জিবিপি তাই এখানে সারা রাজ্য থেকে বহু গুরুতর সঙ্কটাপন্ন অসুস্থ রোগী উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা নিতে আসছেন। সেইজন্য সবসময় স্পেশালিস্ট চিকিৎসকের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে হাসপাতালের নিষ্ঠাবান চিকিৎসকদের অভিমত। জিবি হাসপাতালে চিকিৎসকের খুব ছোট অংশ বাদে সিংহভাগ চিকিৎসকই হাসপাতালে এসে রোগীর চিকিৎসা পরিষেবা সঠিকভাবে প্রদানে উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে দিনরাত্রি কাজ করে চলেছেন। রোগীর চিকিৎসা পরিষেবার কাজে সেসব চিকিৎসকরা যথেষ্ট দায়িত্ব নিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।