সহকারি হাইকমিশনার অফিস আক্রান্তের জের, নিরাপত্তাজনিত কারনে বন্ধ ভিসা প্রদান

সহকারি হাইকমিশনার অফিস আক্রান্তের জের, নিরাপত্তাজনিত কারনে বন্ধ ভিসা প্রদান

অগ্নিগর্ভ পদ্মাপার। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনার অফিস আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় বুধবার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ভিসা অফিস। মঙ্গলবারের ঘটনায় উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ প্রশাসন। আগরতলা সহকারী হাইকমিশনার অফিসের বাইরে একটি বিবৃতি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে লেখা আছে, নিরাপত্তাজনিত কারনে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন অফিস থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ভিসা প্রদান। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন বাংলাদেশ থেকে আসা অনেক মানুষ। সহকারী হাইকমিশন অফিসের সামনে ভীড় করেন তারা৷ সোমবার আচমকা বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন অফিসে হামলা হয়৷ সে দেশের জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। ভিসা অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।

সোমবারের ঘটনার নিন্দা করেছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহাও। তিনি জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ হতে পারে। কিন্তু এ ধরনের আচরণ কখনওই মেনে নেওয়া যায় না। নিন্দা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রক। তারা রাজ্যকে কড়া নিরাপত্তা ব্যাবস্থা গ্রহন করার নির্দেশ দিয়েছে৷ বিবৃতিতে বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, কোনও দেশের দূতাবাস বা উপদূতাবাসকে নিশানা করা কাম্য নয়, তা যে পরিস্থিতিই হোক না কেন। ভারতে বাংলাদেশের দূতাবাস এবং উপদূতাবাসগুলির সামনে নিরাপত্তা বৃদ্ধিও করা হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশে সোমবার রাতেই কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে তিন জন সাব ইনস্পেক্টরকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ক্লোজ় করা হয়েছে এক ডেপুটি পুলিশ সুপারকেও। সোমবার বাংলাদেশের উপদূতাবাসে হামলার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেফতারও করেছে ত্রিপুরা পুলিশ। সোমবারের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে বাকি অভিযুক্তদেরও শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে বলে খবর। এদিকে সোমবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার থেকে ভিসা সরবরাহ প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ।

ফলে বিপাকে কাঁটাতারের ওপারের মানুষ । বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতির জেরে চিকিৎসা বা অন্য প্রয়োজনে ওপার বাংলা থেকে আসা মানুষজনের মধ্যেও উদ্বেগ বেড়েছে। ‌দেশে ফেরার জন্য তাঁরা মঙ্গলবার সহকারি হাইকমিশন অফিসে ভিড় করেছেন। আবার বাংলাদেশ যাঁরা গিয়েছিলেন,ভারতীয় নাগরিকরাও দেশে ফেরার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশে এখন যা পরিস্থিতি তাতে শুধুই অশান্তির আগুন জ্বলছে। তদারকি সরকার সেই অশান্তি কমাতে পারছে না। অথচ এই তদারকি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের নোবেল পুরষ্কার রয়েছে শান্তির দূত হিসাবে। এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে এবার বন্ধ হয়ে গেল ভিসা প্রদান৷ এদিকে সীমান্তে বন্ধের মুখে আমদানি রফতানি। তাতে বেশি ক্ষতি বাংলাদেশেরই। মঙ্গলবার বাংলাদেশ থেকে কোন পন্যসামগ্রী আসে নি৷ এখন দু’‌তিন মাস আগে যাদের ভিসা করা হয়েছে সেইসব পর্যটকরা যাতায়াত করতে পারবেন ।

মঙ্গলবার আগরতলা-আখাউড়া স্থলবন্দরেও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে একটি সংগঠন। পুলিশের তরফে ওই কর্মসূচিতে কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে স্থলবন্দরের কাছে। কেন্দ্রের নির্দেশে রাজ্যের সর্বত্র নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বাংলাদেশের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারি এবং সে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগে গত কয়েক দিন ধরেই দু’দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছেন ভারতীয়েরা। সমাজমাধ্যমে দু’দেশের সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে বাগ্‌যুদ্ধ চরমে। দিল্লি থেকে ঢাকাকে বার বার অনুরোধ করা হয়েছে সে দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। যদিও বাংলাদেশের দাবি, সে দেশের সংখ্যালঘুরা নিরাপদেই রয়েছেন।

এই আবহে বাংলাদেশে এখন সীমান্ত বাণিজ্যের উপর প্রভাব পড়েছে ব্যাপকভাবে। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ সীমান্ত হাট। যা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। আগে প্রত্যেকদিন ২০০ পণ্যবাহী ট্রাক যেত। এখন সংখ্যা একশোরও কম। তাই প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে। আগে বাংলাদেশের ১০০ টাকা প্রতি বাটা ছিল ৭২–৭৫ টাকা। এখন সেটা নেমেছে ৬৯ টাকায়। সুতরাং আগামীদিনে আরও বড় সমস্যার মুখে পড়তে পারেপদ্মাপারের দেশ। বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নানা অত্যাচারের ঘটনা সামনে আসছে। হিন্দু নির্যাতন বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করল আরএসএস। আন্তর্জাতিক মঞ্চে জনমত গড়ে তোলার জন্য কেন্দ্রের কাছে দাবি তুলেছে তারা। সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এখন বাংলাদেশে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *