amc 1 1

পুর ও নগর সংস্থায় বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পাহাড়

লোকসানে চলছে রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম৷ অথচ সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমান বেড়েই যাচ্ছে। পরিশোধের নামগন্ধ নেই৷ অথচ সাধারণ মানুষ বা সাধারণ বিদ্যুৎ ভোক্তা ঠিকভাবে বিদ্যুৎ বিল মিটিয়ে না দিলে লোকজন গিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে দেয়৷ কিন্তু রাজ্যের প্রায় সবকটি পুর ও নগরসংস্থায় কোটি টাকার উপর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে আছে৷ কোন অভিযান নেই। কেন ওই সব সংস্থার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে না সেটাই প্রশ্ন। অথচ বিদ্যুৎ চুরি অর্থাৎ হুকলাইন বন্ধে ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেড জরিমানা এবং ব্যবহার্য জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা সহ আইনি পথে হাঁটার প্রতিবিধান কখনো কখনো প্রয়োগ করলেও ওই সব সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে এ ধরনের কোন পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা জানা নেই কারোর।

জানা গেছে বিদ্যুতের বিল বকেয়া রাখার ক্ষেত্রে প্রথম স্থানেই রয়েছে ধর্মনগর পুর পরিষদ। এখন পর্যন্ত ধর্মনগর পুর পরিষদের কাছে ৪ কোটি ৬১ লক্ষ পুর পরিষদের কাছে ৪ কোটি ৬১ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা বিদ্যুতের বিল বকেয়া রয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আগরতলা পুর নিগম। এদের বকেয়ার পরিমাণ ১ কোটি ৭৮ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা। অথচ সম্পদ করের জন্য নিগমের তাগাদার কুল নেই৷ তৃতীয় স্থানে রয়েছে কুমারঘাট পুর পরিষদ। এদের বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার পরিমাণ ১ কোটি ৬ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। একই রকম ভাবে রানিরবাজার পুর পরিষদের বকেয়া ৪ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা। জিরানিয়া নগর পঞ্চায়েতের বকেয়া ৪ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা। উদয়পুর পুর পরিষদের বকেয়া ৩ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা। বিশালগড় পুর পরিষদের বকেয়া ১ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা। মেলাঘর পুর পরিষদের বকেয়া ২১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। সোনামুড়া নগর পঞ্চায়েতের বকেয়া ১৫ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা। বিলোনিয়া পুর পরিষদের বকেয়া ৩ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকা। সাব্রুম নগর পঞ্চায়েতের বকেয়া ৪৪ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা। শান্তিরবাজার পুর পরিষদের বকেয়া ৪০ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা। পানিসাগর নগর পঞ্চায়েতের বকেয়া ৪ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা। তেলিয়ামুড়া নগর পঞ্চায়েতের বকেয়া ৪৭ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা। আমবাসা পুর পরিষদের বকেয়া ৮ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা। কৈলাশহর পুর পরিষদের বকেয়া ৩ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা। মোহনপুর বকেয়া ৩ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা। মোহনপুর পুর পরিষদের বকেয়া ৭২ হাজার টাকা। অমরপুর নগর পঞ্চায়েতের বকেয়া ৪৩ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে কমলপুর নগর পঞ্চায়েত এবং খোয়াই পুর পরিষদের কোন বকেয়া নেই। আগরতলা পুর নিগম সহ সমস্ত পুর পরিষদ এবং নগর পঞ্চায়েত এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা অক্ষুন্ন রাখা এবং বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য সমস্ত বকেয়া বিল পরিশোধ করার জন্য নিগমের তরফে অনুরোধের পর অনুরোধ জানানো হলেও কারোর কোন হেলদোল নেই।
আগরতলা তিনটি হলের বকেয়া বিদ্যুত বিল এক কোটি ৭৩ লক্ষ টাকার উপরে। এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল মিটিয়ে দেওয়ার কোন খবর নেই। এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল স্যান্দন পত্রিকায়৷
আগরতলার রবীন্দ্রশতবার্ষিকী ভবনে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ৯৫ লক্ষ টাকার উপরে অর্থাৎ এক কোটি টাকার কাছাকাছি। মুক্তধারা হলে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া কুড়ি লক্ষ টাকার উপর। নজরুলকলাক্ষেত্রে ৫৮ লক্ষ টাকার উপর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। বাড়ি ঘরে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। দুমাস বিল ঠিকঠাক ভাবে মিটিয়ে দেওয়া না হলে বিদ্যুৎ নিগমের কর্মীরা গিয়ে হাজির হয়। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সোসাইটি পরিচালিত হলগুলোতে এক কোটি ৭৩ লক্ষ টাকার উপর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া। তাহলে কেন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে না। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায় না করেই মানুষের উপর অতিরিক্ত মাশুল চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কোথাও কোনো রকম বিদ্যুৎ চুরি দেখলে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এর প্রতিবাদ করতে এবং নিগমকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানানো হলেও কেন বকেয়া বিল আদায়ে নিগমের ভুমিকা থাকবে না।
কারণ কোন ধরনের বিদ্যুৎ চুরি তথা হুক লাইন বৈধ গ্রাহকদের বিদ্যুৎ জনিত সমস্যার কারণ। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিল সময়মতো মিটিয়ে দিয়ে ৩ শতাংশ ছাড় পাশাপাশি ডিজিটাল তথা অনলাইন পদ্ধতিতে মিটিয়ে দিয়ে আরও অতিরিক্ত এক শতাংশ ছাড়ের সুযোগগ্রহণ করার জন্য নিগমের তরফে বার বার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের পাশাপাশি সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রতিও সময়মতো বিদ্যুৎ বিল মিটিয়ে দেওয়ার জন্য নিগমের তরফে অনুরোধ জানানো হলেও সরকারি সংস্থাগুলোর কোন হেলদোল নেই। আগরতলা পুর নিগম সহ রাজ্যের মোট ২০টি নগর প্রতিষ্ঠান নগরায়নের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন শহরে উন্নয়নের ধ্বজা কে তুলে ধরেছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবেই বহুদিন ধরেই এই নগর প্রতিষ্ঠান গুলোর বেশিরভাগ এর কাছেই বিদ্যুতের বিল বকেয়া পড়ে রয়েছে। নিগমের তরফে বারবার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও আগরতলা পুর নিগম সহ বিভিন্ন পুরসভা এবং নগর পঞ্চায়েত গুলো বিদ্যুতের বিল যথাসময়ে মিটিয়ে না দিয়ে বকেয়ার পাহাড় দাঁড় করিয়ে দেওয়ায় ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেড পরিকাঠামো ক্ষেত্র উন্নয়নে দারুন এক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে বলা যায়। আর এর খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *