লাল রং ছেড়ে নীল-হলুদকে আপন করল সিপিআইএম?
সময়ের স্রোতে নিজেদের রং বদলে ফেলছে সিপিআইএম! একসময় যে দল লাল ঝান্ডার ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করত, সেই দলই কি এবার তার চিরাচরিত আদর্শ থেকে সরে আসছে? অন্তত তাদের সাম্প্রতিক সোশ্যাল মিডিয়া পরিবর্তন তো সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। বামফ্রন্টের দীর্ঘ লড়াই, শ্রমিক-কৃষকের বিপ্লবী ইতিহাস সবসময় লাল রঙের সঙ্গে যুক্ত ছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, বঙ্গ সিপিআইএমের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল ছবি বদলে গিয়েছে। লালের পরিবর্তে সেখানে জায়গা করে নিয়েছে নীল-সাদার মিশ্রণ। শুধু তাই নয়, বামপন্থার প্রতীক কাস্তে-হাতুড়ির রংও বদলে হয়েছে হলুদ। স্বাভাবিকভাবেই এমন পরিবর্তন রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন ফেলেছে।
বিগত কয়েক বছরে সিপিআইএম একের পর এক নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে দল প্রায় শূন্যে পৌঁছে গেছে। ত্রিপুরাতেও লাল পতাকা অনেকটাই ফিকে। বিজেপির উত্থানের পর থেকে লড়াইয়ে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বামেরা। অনেকের মতে, দলীয় ভাবমূর্তি বদলাতে এবং আধুনিকতার সঙ্গে তাল মেলাতে বামেরা এমন পরিবর্তন এনেছে। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই রং পরিবর্তনের পিছনে আরও গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকতে পারে। সিপিআইএম কি তবে লালের ‘রক্তাক্ত ইতিহাস’ ভুলতে চাইছে? নাকি তারা নতুনভাবে নিজেদের তুলে ধরতে চাইছে?
সোশ্যাল মিডিয়ার কমেন্টস বক্সে সিপিআইএমের এই নীল-সাদা রঙের দিকে ঝোঁকার ঘটনায় তুলনা করা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কারণ, নীল-সাদা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চিরপরিচিত রং। কেউ কেউ কটাক্ষ করে বলছেন, ‘সিপিআইএম কি এবার তৃণমূলের ছায়ায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে?’ সোশ্যাল মিডিয়ায় এই পরিবর্তন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকেই লিখছেন, ‘‘যে দল একসময় প্রযুক্তি বিরোধিতা করত, তারাই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ইমেজ বদলে নিজেদের নতুন ভাবে চেনানোর চেষ্টা করছে।’’ কেউ কেউ বলছেন, ‘‘এবার কি লাল পতাকার জায়গায় নীল-হলুদ পতাকা উঠবে?’’
এ বিষয়ে সিপিআইএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতার বক্তব্য, ‘‘এটা শুধুমাত্র একটা ভিজ্যুয়াল পরিবর্তন। লাল আমাদের রক্তে মিশে আছে, তা মুছে ফেলা সম্ভব নয়। তবে পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া প্রয়োজন।’’
অন্যদিকে, ত্রিপুরা সিপিআইএমের এক কর্মী হতাশার সুরে বলেন, ‘‘আমরা এতদিন যে লালের জন্য লড়াই করলাম, সেই লাল এখন হলুদ হয়ে গেল? তাহলে কি আমাদের আদর্শও বদলে যাবে?’’ সিপিআইএমের এই ‘রং বদল’ শুধুই প্রতীকী পরিবর্তন, নাকি এর মাধ্যমে দল ভবিষ্যতে আরও বড় কিছু ঘোষণা করতে চলেছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এই নতুন ইমেজ তৈরির প্রচেষ্টায় কি আদৌ জনসমর্থন ফিরে পাবে সিপিআইএম? নাকি এই পরিবর্তন আরও বিভ্রান্তি তৈরি করবে?
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সিপিআইএমকে কেবল রঙের পরিবর্তন করলেই চলবে না, তাদের হারানো গণভিত্তিও ফিরে পেতে হবে। ত্রিপুরার মতো জায়গায় যেখানে বামফ্রন্ট একসময় শক্তিশালী ছিল, সেখানেও তাদের পুনরুত্থানের জন্য সংগঠনের ভিতকে আরও মজবুত করতে হবে। সময়ের সঙ্গে বামেদের আদর্শ কি সত্যিই বদলাচ্ছে? নাকি শুধুমাত্র একটি চিত্র পরিবর্তনের মাধ্যমে তারা জনমনে নতুন বার্তা দিতে চাইছে? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে।