রাজ্যে এখনো ম্যালেরিয়া আয়ত্তের মধ্যে আসেনি!
রাজ্যে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কমেছে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে তথ্য ঘাটলে দেখা যাবে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কমেছে। এর একমাত্র কারন হলো, ম্যালেরিয়া প্রবন এলাকায় নিয়মিত স্বাস্থ্য শিবির, আশা কর্মীদের নজরদারি বৃদ্ধি। বলা যায় মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহার নির্দেশে এখন স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিক ও কর্মীরা প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে রক্ত সংগ্রহ করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিসেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করছে৷ গত বছর তথা ২০২৪ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগী সংখ্যা ৯ হাজার ৭৭০ জন।যা ২০২৩ সাল থেকে অনেক কম। স্টেট ম্যালেরিয়া বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে ২০২৩ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২২৪১২ জন। এছাড়া ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত জেলা হচ্ছে ধলাই।ঐ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬৮২০জন। গত বছর আক্রান্ত এলাকাগুলিতে ওষুধি মশারি বিতরণ করা হয়েছে ৯ লাখ পঁচিশ হাজার ১৮৫ টি। এছাড়া স্বাস্থ্য দপ্তর আক্রান্ত এলাকাগুলিতে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য শিবির জারি রেখেছে। শুধু তাই নয় আক্রান্ত এলাকাগুলিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীর রক্ত পরীক্ষা করছে। যার ফলে ম্যালেরিয়া চিহ্নিতকরণ এর কাজ খুব দ্রুত করা সম্ভব হচ্ছে। রাজ্যে গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১১৯৮ জন।তার মানে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও কমেছে ও কোন মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে নি।
গত বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত রাজ্যে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪০৩৪ জন। এই সময়ে ২০২৩ সালে সংখ্যাটা ছিল ৫৬০০জন। ২০২৭ সালের মধ্যে রাজ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়েছে ত্রিপুরা সরকার। তবে এটাও ঠিক, ম্যালেরিয়া প্রবন এলাকায় মাসে দুবার স্বাস্থ্য শিবির করার কথা থাকলেও কিছু কিছু জায়গায় একবারও স্বাস্থ্য শিবির করা হয় নি। এই সময়ে প্রত্যন্ত জনপদে জলবাহিত রোগের সাথে পাল্লা দিয়ে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটে। কিন্তু আগাম স্বাস্থ্য দফতর ব্যবস্থা নিলে কিংবা স্বাস্থ্যশিবির নিয়মিত ভাবে সংগঠিত করলে ম্যালেরিয়ার আক্রমণ থেকে জনজাতি অংশের মানুষ রেহাই পেতে পারেন। যদিও গত কয়েকবছর ধরে ম্যালেরিয়ায় কোনো মৃত্যু নেই। তবে আক্রান্তের ঘটনা ঘটছে। রাজ্যে সবচেয়ে বেশি ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকা হচ্ছে ধলাই জেলা। গত বছর এই জেলাতেও আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে বলে। এই জেলায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩১৪৬ জন। তবে এ বছর ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকাগুলিতে ঘন ঘন স্বাস্থ্য শিবির করার কাজটি আগে থেকেই নেওয়ার ফলে এই বছর ম্যালেরিয়ার আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই কমানো সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে। লংতরাইভ্যালি মহকুমার পূর্ব ও পশ্চিম মালিধর, থালছড়া, গর্জন পাশা, গোবিন্দবাড়ি, তুই পাবাড়ি সহ ধলাই জেলার গঙ্গানগর, গণ্ডাছড়া, আমবাসা, করবুক, শিলাছড়ি, সাব্রুমের মাগরুম এলাকায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় জনজাতি অংশের শিশু ও বৃদ্ধরা৷ রাজ্যে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ম্যালেরিয়ার প্রকোপে প্রচুর মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু এখন স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উন্নত পরিষেবার ফলে ম্যালেরিয়ায় সংক্রমণের হার কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
তবে উদ্বেগ রয়েছে। ২০১৪ সালে ত্রিপুরায় ম্যালেরিয়া ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। ওই বছর ৫১ হাজার ২৪০ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তেমনি ২০১৬ সালে ৩২ হাজার ৫২০ জন ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালে সংক্রমণের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ওই বছর ১২ হাজার ৭৭১ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু একজনও মারা যাননি। এবারো ম্যালেরিয়া ভয়াবহ আকার ধারন করে নি। রাজ্যে ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকাগুলিতে স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হয়। ওষুধ থেকে শুরু করে রক্ত পরীক্ষার কিট পর্যাপ্ত রয়েছে। দপ্তর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে রক্ত পরীক্ষার উপর। তাতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও সঠিক চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন রোগীরা এবং দ্রুত সুস্থ হচ্ছেন। ম্যালেরিয়া থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতামূলক উদ্যোগের পাশাপাশি ঔষধ যুক্ত মশারি বিতরণ ও ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে রক্ত পরীক্ষা করা, ধরা পড়লে ওষুধ দেওয়া, গুরুতর আক্রান্তদের হাসপাতালে নিয়ে আসা, ও ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকাগুলিতে ঘন ঘন স্বাস্থ্য শিবির করা, এই কাজটি আগে থেকেই নেওয়ার ফলে গত বছর ম্যালেরিয়ার আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই কমানো সম্ভব হয়েছে। তবে এটাও ঠিক যে প্রত্যন্ত এলাকায় দফতরের তেমন নজরদারি নেই। পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ না করার কারণে জনজাতি অংশের মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। নেই স্বাস্থ্য শিবির। যাদের একটু সামর্থ্য রয়েছে তারা হাসপাতাল কিংবা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ছুটে এলেও বাকিরা ওঝাদের উপর নির্ভরশীল। ঘরেই কাতড়াতে হয় শিশু থেকে বৃদ্ধ। লংতরাইভ্যালি মহকুমার সীমান্ত এলাকার জনপদগুলোতে বসবাসকারী সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। ফলে তারা চিকিৎসা পরিষেবা নিতে পারছেন না।সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জওয়ানরা কিছু কিছু জায়গায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও বাকিদের সমস্যা বাড়ছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা স্বাস্থ্য পরিষেবাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে চাইছেন। তৃণমূল স্তরের মানুষ যাতে স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে পারেন তারজন্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর সুফল পাচ্ছেন প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ।