উন্নয়নের প্রশ্নে সমালোচনার সম্মুখীন কমিউনিস্ট!
সাধারণ মানুষের স্বার্থে উন্নয়নমূলক কাজকে রাজনীতির হাতিয়ার না করার আহ্বান জানালেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। তিনি বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। ইতিমধ্যেই উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে জিএসডিপি (গ্রস স্টেট ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) ও মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে ত্রিপুরা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছেছে, যা সরকারের উন্নয়নমূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। শুক্রবার আগরতলার ৩৯ নং পুর ওয়ার্ডের উদ্যোগে আয়োজিত এক মেগা রক্তদান শিবিরের উদ্বোধনকালে মুখ্যমন্ত্রী একথা বলেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি রাজ্যের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে ফের একবার কমিউনিস্ট শাসনের তীব্র সমালোচনা করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রক্তদান শুধুমাত্র মানবিক দায়িত্ব নয়, এটি স্বাস্থ্যের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, দাতার শরীরে কোনো অসুখ আছে কি না। তেমনই সমাজের মধ্যেও যদি অস্বচ্ছতা থাকে, তাহলে সেটাও সমাজ গ্রহণ করবে না। একসময় ত্রিপুরায় সর্বত্র অস্বচ্ছতা বিরাজ করছিল। যার ফলে জনগণ সেই পুরনো শাসনব্যবস্থাকে পরিত্যাগ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সর্বদা স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন, আর বর্তমান সরকার সেই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই কাজ করছে।”
তিনি আরও বলেন, রক্তের চাহিদা বাজার থেকে মেটানো সম্ভব নয়, বরং তা স্বেচ্ছা রক্তদানের মাধ্যমেই পূরণ করা যায়। হাসপাতালগুলোর অপারেশনের সময় রক্তের প্রয়োজন হয়, তাই এই ধরনের কর্মসূচি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ত্রিপুরাবাসীর মানবিকতা ও সহযোগিতার মনোভাবের প্রশংসা করে বলেন, কোভিড মহামারির সময় এবং সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতিতেও সাধারণ মানুষ প্রশাসনের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। মাত্র ৩-৪ দিনের মধ্যে সরকার দুর্যোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ত্রিপুরা বর্তমানে উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম সেরা পারফর্মিং রাজ্য হিসেবে উঠে এসেছে। তিনি বলেন, “ত্রিপুরা উত্তর-পূর্ব ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয়ের রাজ্য। অথচ এটি সারা দেশের মধ্যে তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য। তার পরও আমরা একাগ্রতার অভাব দেখাইনি। একসময় এই রাজ্যে শুধু ‘জিন্দাবাদ’ স্লোগান তোলা হতো, কিন্তু বাস্তব উন্নয়ন তেমন কিছুই হয়নি।”
কমিউনিস্ট শাসনের কঠোর সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কমিউনিস্টরা রাজ্যে চাকরির সুযোগ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে গেছে। তারা রাস্তাঘাট, ড্রেন সংস্কার থেকে শুরু করে উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করেছিল। ঋণের বোঝা রেখে গিয়েছিল তারা, যা বর্তমান সরকারকে পরিশোধ করতে হচ্ছে। গত অর্থবছরে রাজ্যের বাজেট ছিল ২৭,৮০০ কোটি টাকা, যা এবার আরও বাড়তে পারে। আমাদের নিজস্ব উৎস থেকে মাত্র ৩,৭০০ কোটি টাকা আসে, তার মধ্যে ২৫% আমরা এডিসিকে দিতে বাধ্য। তবুও ডাবল ইঞ্জিন সরকারের সুবিধার কারণে উন্নয়নমূলক কাজ জোরদার করা সম্ভব হয়েছে। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।”
এদিকে, রাজধানীর লেইক চৌমুহনী বাজারে সম্প্রতি পরিচালিত উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। সরকার যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা জনগণের কল্যাণের জন্যই।”
এই রক্তদান শিবিরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র ও বিধায়ক দীপক মজুমদার, বিধায়িকা মীনা রানী সরকার, ৩৯ নং পুর ওয়ার্ডের কর্পোরেটর অলক রায়সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। মুখ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যের মাধ্যমে পরিষ্কার বার্তা দিলেন যে, রাজ্যের উন্নয়নের পথে বাধা নয়, বরং সহযোগিতা করাই সকলের উচিত। আগামীতেও উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।