উন্নয়নমূলক কাজে রাজনীতি নয়

উন্নয়নের প্রশ্নে সমালোচনার সম্মুখীন কমিউনিস্ট!

সাধারণ মানুষের স্বার্থে উন্নয়নমূলক কাজকে রাজনীতির হাতিয়ার না করার আহ্বান জানালেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। তিনি বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। ইতিমধ্যেই উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে জিএসডিপি (গ্রস স্টেট ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) ও মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে ত্রিপুরা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছেছে, যা সরকারের উন্নয়নমূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। শুক্রবার আগরতলার ৩৯ নং পুর ওয়ার্ডের উদ্যোগে আয়োজিত এক মেগা রক্তদান শিবিরের উদ্বোধনকালে মুখ্যমন্ত্রী একথা বলেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি রাজ্যের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে ফের একবার কমিউনিস্ট শাসনের তীব্র সমালোচনা করেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রক্তদান শুধুমাত্র মানবিক দায়িত্ব নয়, এটি স্বাস্থ্যের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, দাতার শরীরে কোনো অসুখ আছে কি না। তেমনই সমাজের মধ্যেও যদি অস্বচ্ছতা থাকে, তাহলে সেটাও সমাজ গ্রহণ করবে না। একসময় ত্রিপুরায় সর্বত্র অস্বচ্ছতা বিরাজ করছিল। যার ফলে জনগণ সেই পুরনো শাসনব্যবস্থাকে পরিত্যাগ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সর্বদা স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন, আর বর্তমান সরকার সেই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই কাজ করছে।”

তিনি আরও বলেন, রক্তের চাহিদা বাজার থেকে মেটানো সম্ভব নয়, বরং তা স্বেচ্ছা রক্তদানের মাধ্যমেই পূরণ করা যায়। হাসপাতালগুলোর অপারেশনের সময় রক্তের প্রয়োজন হয়, তাই এই ধরনের কর্মসূচি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ত্রিপুরাবাসীর মানবিকতা ও সহযোগিতার মনোভাবের প্রশংসা করে বলেন, কোভিড মহামারির সময় এবং সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতিতেও সাধারণ মানুষ প্রশাসনের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। মাত্র ৩-৪ দিনের মধ্যে সরকার দুর্যোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ত্রিপুরা বর্তমানে উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম সেরা পারফর্মিং রাজ্য হিসেবে উঠে এসেছে। তিনি বলেন, “ত্রিপুরা উত্তর-পূর্ব ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয়ের রাজ্য। অথচ এটি সারা দেশের মধ্যে তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য। তার পরও আমরা একাগ্রতার অভাব দেখাইনি। একসময় এই রাজ্যে শুধু ‘জিন্দাবাদ’ স্লোগান তোলা হতো, কিন্তু বাস্তব উন্নয়ন তেমন কিছুই হয়নি।”

কমিউনিস্ট শাসনের কঠোর সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কমিউনিস্টরা রাজ্যে চাকরির সুযোগ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে গেছে। তারা রাস্তাঘাট, ড্রেন সংস্কার থেকে শুরু করে উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করেছিল। ঋণের বোঝা রেখে গিয়েছিল তারা, যা বর্তমান সরকারকে পরিশোধ করতে হচ্ছে। গত অর্থবছরে রাজ্যের বাজেট ছিল ২৭,৮০০ কোটি টাকা, যা এবার আরও বাড়তে পারে। আমাদের নিজস্ব উৎস থেকে মাত্র ৩,৭০০ কোটি টাকা আসে, তার মধ্যে ২৫% আমরা এডিসিকে দিতে বাধ্য। তবুও ডাবল ইঞ্জিন সরকারের সুবিধার কারণে উন্নয়নমূলক কাজ জোরদার করা সম্ভব হয়েছে। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।”

এদিকে, রাজধানীর লেইক চৌমুহনী বাজারে সম্প্রতি পরিচালিত উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। সরকার যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা জনগণের কল্যাণের জন্যই।”

এই রক্তদান শিবিরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র ও বিধায়ক দীপক মজুমদার, বিধায়িকা মীনা রানী সরকার, ৩৯ নং পুর ওয়ার্ডের কর্পোরেটর অলক রায়সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। মুখ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যের মাধ্যমে পরিষ্কার বার্তা দিলেন যে, রাজ্যের উন্নয়নের পথে বাধা নয়, বরং সহযোগিতা করাই সকলের উচিত। আগামীতেও উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিপ্রা চুক্তি নির্বাচনী চাল

তিপ্রা চুক্তি নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ!

কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে বলেছেন, তিপ্রা মথা, কেন্দ্র এবং ত্রিপুরা সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিপাক্ষিক চুক্তি (তিপ্রা চুক্তি) ছিল নিছকই একটি নির্বাচনী চাল, যার মাধ্যমে রাজ্যের আদিবাসীদের প্রতারিত করা হয়েছে।

তিপ্রা চুক্তির প্রথম বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে শ্রী রায় বর্মন অভিযোগ করেন, বিজেপি রাজনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তিপ্রা মথার প্রতিষ্ঠাতা প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মাকে ব্যবহার করেছে এবং পরে তাঁর দলকে রাজ্য সরকারের অংশ করে নিলেও চুক্তির প্রতিশ্রুতিগুলি বাস্তবায়নের কোনও উদ্যোগ নেয়নি। তিনি জানান, ২ মার্চ ২০২৪ তারিখে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি ছয় মাসের মধ্যে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও, এক বছর কেটে গেলেও কোনও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। “আসলে কী বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল, সেটাই কেউ জানে না। কারণ এই চুক্তির মধ্যে কোনও স্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই,” – মন্তব্য করেন কংগ্রেস নেতা।

সুদীপ রায় বর্মন বলেন, বিজেপির প্রকৃত উদ্দেশ্য আদিবাসীদের ক্ষমতায়ন নয়। তিনি উত্তর-পূর্বের ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত এলাকায় উন্নয়নের অভাব এবং ১২৫তম সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, বিজেপি চাইলে সহজেই বিলটি পাশ করাতে পারত, কিন্তু তা করেনি। তিনি রাজ্য সরকারকে ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের (টিটিএএডিসি) অধীনে ভিলেজ কমিটি নির্বাচনের বারবার বিলম্বের জন্য দায়ী করেন। যদিও ত্রিপুরা হাইকোর্টে সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হবে, কিন্তু এ নিয়ে এখনও কোনও অগ্রগতি হয়নি। “যখন জনস্বার্থের বদলে রাজনৈতিক স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, তখন টিটিএএডিসি এলাকার মানুষের দুর্দশা স্পষ্ট হয়ে ওঠে,” – বলেন রায় বর্মন।

তিনি দাবি করেন, ভিলেজ কমিটির নির্বাচন ১২৫তম সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ হওয়ার পরই হওয়া উচিত, যাতে আদিবাসী এলাকায় উন্নয়নের জন্য যথাযথ তহবিলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়। “সংবিধান সংশোধন হলে ভিলেজ কমিটিগুলো সরাসরি কেন্দ্রীয় তহবিল পাবে, যেমনটি বর্তমানে পঞ্চায়েত রাজ ও পৌরসভাগুলি ৭৩তম ও ৭৪তম সংশোধনী আইনের মাধ্যমে পেয়ে থাকে,” – তিনি ব্যাখ্যা করেন। শ্রী রায় বর্মন আরও অভিযোগ করেন, বিজেপি সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে ১২৫তম সংশোধনী বিল পাশ করতে দেরি করছে, কারণ এতে স্বশাসিত জেলা পরিষদগুলোর ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, যা মূলত খ্রিস্টান আদিবাসীদের অধীন।

“এই মানসিকতার কারণেই আদিবাসীদের সাংবিধানিক অধিকার দিতে দেরি করা হচ্ছে,” – বলেন কংগ্রেস নেতা। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে দ্রুত ১২৫তম সংবিধান সংশোধনী পাশ করার আহ্বান জানান এবং বলেন, কংগ্রেস দল সরাসরি তহবিলপ্রাপ্তির দাবিকে সমর্থন করে। “জেলা পরিষদ এলাকাগুলোর বাসিন্দারা জিএসটি’র মাধ্যমে পরোক্ষ কর দেন, তাই তাদেরও কর রাজস্বের ন্যায্য অংশ পাওয়ার অধিকার রয়েছে,” – বলেন সুদীপ রায় বর্মন। তিনি বলেন, বিজেপি একদিকে আদিবাসী ও তিপ্রা মথার নেতৃত্বকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে, অন্যদিকে কংগ্রেস সবসময় ত্রিপুরার আদিবাসীদের অধিকার ও ক্ষমতায়নের জন্য লড়াই করবে।

ইন্ডিয়া বুকস অফ রেকর্ডসে ঝুমার নাম

তাস দিয়ে মানচিত্র বানিয়ে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে এ নাম!

ফের ইন্ডিয়া বুক অব রেকর্ডসে নাম তুলল ঊনকোটি জেলার কুমারঘাট মহকুমার প্রতিভাবান ছাত্রী ঝুমা দেবনাথ। পরপর দু’বার এই রেকর্ড গড়ে গোটা রাজ্যের গর্ব হয়ে উঠেছে সে। সম্প্রতি, ২৫ মিনিটে ৯৪১টি তাস দিয়ে এশিয়ার মানচিত্র তৈরি করে সে দ্বিতীয়বারের জন্য ইন্ডিয়া বুক অব রেকর্ডসে নিজের নাম নথিভুক্ত করেছে। ফটিকরায় দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ঝুমা দেবনাথ সায়দারপার গ্রাম পঞ্চায়েতের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তার বাবা হরিপদ দেবনাথ পেশায় একজন ব্যাংক কর্মচারী ও জ্যোতিষী, যিনি “যাদুকর” হিসেবেও সুপরিচিত। মেয়ের এই সাফল্যে দারুণ গর্বিত তিনি।

প্রথম রেকর্ড গড়ার কাহিনি!

ঝুমার প্রতিভার স্বীকৃতি প্রথম আসে ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে, যখন সে ৮৫০টি তাস দিয়ে ভারতের মানচিত্র তৈরি করে ইন্ডিয়া বুক অব রেকর্ডসে নাম তুলেছিল। তার এই কৃতিত্বের জন্য সে স্বর্ণপদক, শংসাপত্র, আইডি কার্ড, রেকর্ড বুক এবং একটি বিশেষ ব্যাজ লাভ করে। তখন থেকেই সে আরও বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।

দ্বিতীয়বার নতুন ইতিহাস!

প্রথম সাফল্যের পর আরও বড় কিছু করার ইচ্ছে নিয়ে ঝুমা আরও কঠোর পরিশ্রম শুরু করে। অবশেষে ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে অনলাইনের মাধ্যমে দ্বিতীয়বার ইন্ডিয়া বুক অব রেকর্ডসে তার নাম নথিভুক্ত হয়। এবার সে ৯৪১টি তাস ব্যবহার করে মাত্র ২৫ মিনিটে এশিয়ার মানচিত্র তৈরি করে নতুন রেকর্ড গড়ে। দ্বিতীয়বারের জন্যও সে সুবর্ণপদক, ব্যাজ, শংসাপত্র, রেকর্ড বুক, পেন এবং আইডি কার্ড লাভ করে।

উচ্ছ্বাস!

ঝুমার পরপর দুটি রেকর্ড গড়া নিয়ে তার পরিবারে খুশির হাওয়া বইছে। বাবা-মা মেয়ের এই সাফল্যে দারুণ গর্বিত। পাশাপাশি, কুমারঘাট মহকুমা জুড়ে নবীন ও প্রবীণদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে। এলাকার বাসিন্দারা তার প্রতিভার প্রশংসা করে জানিয়েছেন, ঝুমা ভবিষ্যতে আরও বড় সাফল্য অর্জন করবে এবং রাজ্যের নাম উজ্জ্বল করবে

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা!

ঝুমা জানায়, ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়ের ভালোবাসা ও সমর্থন তাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। সে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে সায়দারপার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। বর্তমানে সে ফটিকরায় দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করছে। ভবিষ্যতে সে আরও নতুন রেকর্ড গড়তে চায় এবং পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের প্রতিভাকে আরও বিকশিত করতে চায়। ঝুমার এই সাফল্য প্রমাণ করে, কঠোর পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাস থাকলে অসম্ভব কিছুই নয়। তার এই কৃতিত্ব ভবিষ্যতে বহু শিক্ষার্থীর অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

নিরাপত্তার খেলা

পাকিস্তানের মাটিতে নিরাপত্তাহীনতায় ক্রিকেট!

সন্ত্রাস আর অস্থিতিশীলতার জন্য গোটা বিশ্বে কুখ্যাত পাকিস্তান। একাধিক জঙ্গি সংগঠনের আশ্রয়স্থল এই দেশকে আন্তর্জাতিক মহলও বহুবার সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। ভারত বরাবরই পাকিস্তানের এই দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে, আর ঠিক সেই কারণেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত তাদের খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার প্রশ্নে পাকিস্তানের মাটিতে খেলতে পাঠায়নি।

নিরাপত্তাঃ

এবার প্রশ্ন উঠছে, নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারত পাকিস্তানের মাটিতে খেলতে রাজি হয়নি কিন্তু পাকিস্তান কেন ভারতের মাটিতে খেলতে রাজি নয়? এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সময় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ভারত যদি পাকিস্তানে না যায়, তাহলে পাকিস্তানও ভারতে খেলতে আসবে না। ভারতের না যাওয়ার যৌক্তিক কারণ ছিল। পাকিস্তানের মাটিতে ভারতীয়দের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে! তাই স্বাভাবিকভাবেই বিসিসিআই (BCCI) চেয়েছিল নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলতে।

কিন্তু পাকিস্তান এখন সেই একই যুক্তি দিয়ে ভারতের মাটিতে খেলতে যেতে চাইছে না! এটা নিতান্তই হাস্যকর যুক্তি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটা শুধুই একগুঁয়েমি এবং ভারতকে ছোট করার চেষ্টা শুধুমাত্র। ভারত পাকিস্তানের মতো সন্ত্রাসপ্রবণ দেশ নয়। ভারত নিয়মিত আইসিসির (ICC) অন্যান্য টুর্নামেন্ট আয়োজন করে এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট বাজারও ভারত। তাহলে কেন পাকিস্তান ভারতের মাটিতে খেলতে চাইছে না?

কোণঠাসা করার চেষ্টা?

অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, পাকিস্তানের এই সিদ্ধান্তের পেছনে তাদের আসল উদ্দেশ্য ভারতকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপে ফেলা। পাকিস্তান চায়, ভারত যেন রাজনৈতিক কারণে ক্রিকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ভারত ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কোনো বড় টুর্নামেন্টই সফলভাবে আয়োজন করা সম্ভব নয়।

ভারতে খেলা না হওয়ার সম্ভাবনা!

এশিয়া কাপ ২০২৫-এর আয়োজক ভারত হলেও, পুরো টুর্নামেন্ট হতে পারে শ্রীলঙ্কা অথবা দুবাইয়ে। কারণ পাকিস্তান ভারতের মাটিতে খেলতে রাজি নয়। ফলে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (ACC) চাইছে পুরো টুর্নামেন্ট ভারতের বাইরে সরিয়ে নিতে। দুবাইয়ের গরমের কারণে শ্রীলঙ্কার মাঠ ব্যবহার করতে পারে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল। ২০২৩ সালের এশিয়া কাপেও পাকিস্তান আয়োজক হয়েও ভারতের ম্যাচ শ্রীলঙ্কায় রাখা হয়েছিল। এবার সেই একই ফর্মুলায় পুরো টুর্নামেন্টই ভারত থেকে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে। তবে আয়োজক হিসেবে থাকবে ভারতই ।

এশিয়া কাপের মহারণ!

ক্রিকেট মহলে গুঞ্জন চলছে, এশিয়া কাপের সূচি এমনভাবে তৈরি করা হতে পারে যাতে কমপক্ষে দু’বার ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হয়। গ্রুপ পর্বে দুই দলকে একই গ্রুপে রাখা হতে পারে। যদি দুই দল ফাইনালে পৌঁছে যায়, তাহলে তিনবারই মুখোমুখি হতে পারে ক্রিকেটের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীরা

রাজনৈতিক খেলা!

ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট মানেই রোমাঞ্চ। কিন্তু পাকিস্তান সবসময়ই ক্রিকেটকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছে। ভারত যেখানে ক্রিকেটের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তার প্রশ্নে আপসহীন, সেখানে পাকিস্তান ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতকে বিপাকে ফেলতে চাইছে। বিশ্ব জানে, পাকিস্তান হচ্ছে সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর। তাই ভারত সেই দেশের মাটিতে খেলতে যেতে চায়নি এবং সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পাকিস্তান কেন ভারতের মতো নিরাপদ দেশে খেলতে রাজি নয়? এর পেছনে আসল রহস্য কী? এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন!

প্রধানমন্ত্রীর হাতে ঐতিহ্যবাহী লণ্ঠন

বিহার নির্বাচনের পূর্বে প্রধানমন্ত্রী মোদির হাতে লন্ঠন!

ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে রাজ কাপুর এক অবিস্মরণীয় নাম। অভিনয়, পরিচালনা ও প্রযোজনার মাধ্যমে ভারতীয় সিনেমাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এই কিংবদন্তির জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কাপুর পরিবার এক বিশেষ উদ্যোগ নিল। জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Narendra Modi) সঙ্গে দেখা করতে দিল্লিতে হাজির হয়েছিলেন কাপুর পরিবারের প্রবীণ ও নবীন প্রজন্মের সদস্যরা। সেই বিশেষ সাক্ষাৎ শুধুমাত্র সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎই ছিল না, বরং কাপুর পরিবার প্রধানমন্ত্রীকে উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছিল এক ঐতিহ্যবাহী বস্তু— রাজ কাপুরের ব্যবহার করা বিখ্যাত লণ্ঠন।

সংগ্রহশালায় আইকনিক’ লণ্ঠন!

কাপুর পরিবারের অন্যতম বর্তমান মুখ রণবীর কাপুর প্রধানমন্ত্রী মোদির হাতে তুলে দেন সেই লণ্ঠন, যা ১৯৬০ সালের বিখ্যাত হিন্দি ছবি ‘জিস দেশ মে গঙ্গা বহেতি হ্যায়’-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে ব্যবহৃত হয়েছিল। এই সিনেমায় রাজ কাপুরের অভিনয় ছিল মনে রাখার মতো। তার চরিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এই লণ্ঠন আজও সিনেপ্রেমীদের কাছে এক আবেগের প্রতীক। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে কাপুর পরিবার সেই লণ্ঠনটিকে সংরক্ষণ করে রেখেছিল, কিন্তু এবার সেটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হলো। প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালায় এটি সংরক্ষিত থাকবে এবং ১লা মার্চ থেকে দর্শনার্থীরা সেটি দেখতে পাবেন।

ভারতীয় সিনেমার ‘শো ম্যান’!

ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে রাজ কাপুর এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রগুলি কেবল বিনোদনের মাধ্যম ছিল না, বরং সমাজের বাস্তবতা, মানবিকতা এবং আবেগের প্রতিচ্ছবি ছিল। ‘শ্রী ৪২০’, ‘আওয়ারা’, ‘মেরা নাম জোকার’, ‘সঙ্গম’, ‘ববি’ সহ বহু কালজয়ী সিনেমা ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। শুধু ভারতেই নয়, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন, মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতেও রাজ কাপুরের সিনেমা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। তাঁর চলচ্চিত্রের গান আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালার তরফে জানানো হয়েছে, রাজ কাপুরের এই লণ্ঠন শুধুমাত্র একটি সিনেমার স্মারক নয়, এটি ভারতীয় সংস্কৃতির এক মূল্যবান প্রতীক। বিবৃতিতে বলা হয়েছে—
“এই লণ্ঠন ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের প্রতিচিহ্ন। এটি রাজ কাপুরের অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যিনি ভারতীয় সিনেমাকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন। কাপুর পরিবারের এই উপহার শুধু একটি স্মৃতিচিহ্ন নয়, বরং ভারতীয় সংস্কৃতির অতীত ও বর্তমানের সংযোগস্থাপন করে।”

রাজ কাপুরের উত্তরাধিকারী!

কাপুর পরিবার ভারতীয় চলচ্চিত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে রেখেছে। পৃথ্বীরাজ কাপুর থেকে শুরু করে রাজ কাপুর, তারপর ঋষি কাপুর, রণধীর কাপুর, করিশ্মা কাপুর, কারিনা কাপুর, রণবীর কাপুর পর্যন্ত এই পরিবার একাধিক প্রজন্ম ধরে বলিউডকে সমৃদ্ধ করেছে। কাপুরদের এই উত্তরাধিকার আজও সমানভাবে বহন করে চলেছে বর্তমান প্রজন্ম। রণবীর কাপুর বর্তমানে বলিউডের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় অভিনেতা। তাঁর ‘রকস্টার’, ‘বরফি’, ‘সঞ্জু’, ‘তু ঝুঠি ম্যায় মক্কার’ সহ একাধিক ছবির মাধ্যমে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অন্যদিকে, কাপুর পরিবারের আরেক সন্তান, আদর জৈনও চলচ্চিত্রে নিজের পরিচিতি গড়ে তুলছেন। কাপুর পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও এখনও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সক্রিয় রয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রতিক্রিয়া!

রাজ কাপুরের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কাপুর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আপ্লুত হয়েছিলেন। তিনি নিজেও সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলেন— “রাজ কাপুর শুধু ভারতীয় চলচ্চিত্রের একজন মহান অভিনেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক প্রকৃত শিল্পী, যিনি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। কাপুর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে ও তাঁদের থেকে এই মূল্যবান স্মারক গ্রহণ করে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।”

সিনেপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণ!

প্রধানমন্ত্রীর সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত রাজ কাপুরের এই লণ্ঠন নিঃসন্দেহে ভারতীয় সিনেমার প্রেমীদের জন্য এক বিশেষ আকর্ষণ হতে চলেছে। ১লা মার্চ থেকে জনসাধারণ এটি সরাসরি দেখতে পারবে। সিনেমাপ্রেমীরা হয়তো এই ঐতিহাসিক স্মারক দেখতে ভিড় জমাবেন সংগ্রহশালায়। রাজ কাপুরের লিগ্যাসি শুধু সিনেমার পর্দায় সীমাবদ্ধ নেই, তাঁর অবদান ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে উঠেছে। কাপুর পরিবার যে উত্তরাধিকারকে আজও সম্মান ও শ্রদ্ধার সঙ্গে বহন করে চলেছে, তা এই বিশেষ উপহারের মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো।

পঞ্চায়েতস্তরে দুর্নীতি

পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ি থেকে উদ্ধার সরকারি সিমেন্ট!

রাজ্যের পঞ্চায়েত স্তরে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। তবে এবার সেই দুর্নীতির আঁচ এসে পড়েছে জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মার নির্বাচনী ক্ষেত্র কৃষ্ণপুরে। চাঞ্চল্যকর ঘটনা, মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের এক প্রভাবশালী বিজেপি নেতা নির্মল সরকারের বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছে ২৮ বস্তা সরকারি সিমেন্ট! অভিযোগ উঠেছে, সরকারি প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ এই সিমেন্ট তিনি নিজের স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য বাড়িতে মজুত রেখেছিলেন।

সূত্রের খবর, মধ্য কৃষ্ণপুর পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামী তথা বিজেপির খোয়াই জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল সরকারের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে ২৮ বস্তা সরকারি সিমেন্ট। স্থানীয় বাসিন্দারা এবং বিজেপির একাংশই এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হন এবং ব্লকের আধিকারিকদের খবর দেন। পরে ব্লকের কর্মীরা এসে নির্মল সরকারের বাড়ি থেকে সিমেন্ট উদ্ধার করেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকার একটি সরকারি ড্রেন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ছিল এই সিমেন্ট। কিন্তু অভিযোগ, ড্রেনের কাজ সম্পন্ন না করেই নির্মল সরকার ঐ সিমেন্ট নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। এ নিয়ে বিজেপির স্থানীয় কর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভ ছড়িয়েছে।

এই ঘটনার পর বিজেপির স্থানীয় একাংশ নেতারা সরাসরি নির্মল সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তাঁদের বক্তব্য, নির্মল সরকার দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি নির্মাণসামগ্রী লুটপাট করছেন। সরকারি ইট, রড ও সিমেন্ট ব্যবহার করে নিজের বাড়ি তৈরি করারও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, জমি দখলের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন তিনি।

তবে এত বড় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরও নির্মল সরকারের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। কেন এখনও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো না, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিজেপির কর্মীদের একাংশও এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের বক্তব্য, যাঁর বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাঁকে কীভাবে খোয়াই জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেওয়া হলো? কাদের অনুমোদনে তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হলেন?

এই ঘটনার পর বিরোধী দলগুলিও সরব হয়েছে। সিপিআইএম এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, বিজেপির আমলে পঞ্চায়েত স্তর থেকে শুরু করে রাজ্য স্তর পর্যন্ত দুর্নীতি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বিরোধীদের বক্তব্য, ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ার কারণেই নির্মল সরকারের বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

এখন প্রশ্ন একটাই—নির্মল সরকারের বাড়ি থেকে সরকারি সিমেন্ট উদ্ধারের পরও কেন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো না? প্রশাসনের নীরবতা কি তাঁকে আড়াল করার প্রচেষ্টা? বিজেপির একাংশও যখন দুর্নীতির অভিযোগ তুলছে, তখন কি দল এই বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেবে? না কি সবকিছু ধামাচাপা পড়ে যাবে? এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন ও দল কী সিদ্ধান্ত নেয়। কৃষ্ণপুরের সাধারণ মানুষের একটাই দাবি—যেই দুর্নীতি করুক না কেন, তার বিরুদ্ধে অবিলম্বে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

আগরতলা লেইক চৌমুহনী বাজারে উচ্ছেদ অভিযান

আগরতলা পুর নিগম, লেইক চৌমুহনী বাজারটিকে আধুনিকীকরণ করবে!

আগরতলা পুর নিগমের উদ্যোগে শহরের বাজারগুলিকে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে গড়ে তোলার কাজ জোরকদমে চলছে। এই লক্ষ্যেই লেইক চৌমুহনী বাজারের বেআইনি দোকান উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। পুর নিগমের এই অভিযানে ১০০টিরও বেশি বেআইনি দোকান ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

লেইক চৌমুহনী বাজার দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন অনিয়ম ও বেআইনি কার্যকলাপের কারণে আলোচনায় ছিল। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বাজারে বেআইনি মদের ঠেক, অবৈধ লেনদেন এবং জায়গা দখল করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। এই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বেশ কয়েকবার সরজমিনে পরিদর্শন করেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার। পরিদর্শনের পর বাজার কমিটির সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন মেয়র। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বেআইনি দোকানদারদের স্বেচ্ছায় দোকান সরিয়ে নেওয়ার সময় দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও দোকানদাররা স্বতঃপ্রণোদিতভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ফলে, পুর নিগমের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে বেআইনি দোকান উচ্ছেদ করা হয়।

এই অভিযান সম্পর্কে মেয়র দীপক মজুমদার বলেন, “আগরতলা পুর নিগম নগরীর বাজারগুলিকে আধুনিক ও পরিচ্ছন্ন করে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বেআইনি দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বাজার এলাকাকে মুক্ত করা হচ্ছে, যাতে ব্যবসায়ীরা বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন।” তিনি আরও বলেন, “বেআইনি দোকানদারদের উচ্ছেদের ফলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের পুনর্বাসনের দিকেও নজর দেবে পুর নিগম। আগামী এক মাসের মধ্যে বাজার এলাকা পরিষ্কার করে ব্যবসায়ীদের বৈধভাবে ব্যবসার সুযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।”

মেয়র দীপক মজুমদার জানিয়েছেন, বাজার এলাকায় বেআইনি নির্মাণ ও আবর্জনা ফেলার ফলে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছিল এবং দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। পাশাপাশি, নদীর পারের বেআইনি দোকানগুলোর কারণে নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এই ধরনের অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেয়র বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, “উন্নয়নমূলক কাজে বিরোধীরা রাজনৈতিক বাধা সৃষ্টি না করে, শহরের উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা করুক।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, এর আগে বটতলা বাজারে বেআইনি নেশার ঠেক ভেঙে দেওয়া হলেও বিরোধীরা তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল।

বাজার পরিদর্শনকালে মেয়রের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রের মণ্ডল সভাপতি অমিতাভ ভট্টাচার্য ও অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা। আগরতলা পুর নিগমের এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বাজার এলাকার পরিবেশ উন্নত করার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পুর নিগম কর্তৃপক্ষ।

অর্থনীতি চাঙ্গায় one nation one election

‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে, অর্থনীতি ও গণতন্ত্র সুদৃঢ় করার প্রয়াস!

‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থনীতির পাশাপাশি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাও আরও সুদৃঢ় হবে। এই ব্যবস্থার ফলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও বজায় থাকবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই উদ্যোগকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।

সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ আজকের সময়ের এক অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। বারবার নির্বাচনের কারণে প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। প্রতিবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে স্কুল-কলেজে ভোট গ্রহণের জন্য ক্লাস বন্ধ রাখতে হয়, শিক্ষকদের ভোট পরিচালনার কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়, এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের একটানা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়।

তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর কোনো না কোনো নির্বাচন লেগেই থাকে—লোকসভা, বিধানসভা, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত, পুরসভা, স্বশাসিত সংস্থা ইত্যাদির জন্য। বারবার নির্বাচনের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যেও একধরনের ক্লান্তি তৈরি হয়। তবে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ চালু হলে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচন হবে, ফলে প্রশাসনিক ব্যস্ততা কমবে, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়বে এবং দেশের অর্থনীতি প্রসারে বলিষ্ঠ ভূমিকা নেয়া যাবে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একাধিক নির্বাচনের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে, ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল, যা দেশের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা যেত। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রায় ১.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ বাস্তবায়িত হলে এই ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে। এছাড়া, কালো টাকা ব্যবহার করে নির্বাচনে জয়লাভের প্রবণতা কমবে এবং হিসাব-বহির্ভূত তহবিল নিয়ন্ত্রণে আসবে।

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার কারণে উন্নয়নমূলক কাজ ব্যাহত হয়। একবার নির্বাচন ঘোষিত হলে কোনো নতুন প্রকল্প বা গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না। ফলস্বরূপ, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বিলম্বিত হয়। ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ ব্যবস্থা চালু হলে এই সমস্যাগুলি দূর হবে, কারণ প্রশাসনকে ঘন ঘন নির্বাচনের জন্য থমকে যেতে হবে না। এতে সরকার নিরবচ্ছিন্নভাবে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবে।

মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বিশ্বের অনেক দেশেই একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যেমন ব্রাজিল, সুইডেন, বেলজিয়াম, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস প্রভৃতি দেশে এই ব্যবস্থা সফলভাবে কার্যকর হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যদি বিশ্বের এত দেশে একযোগে নির্বাচন হতে পারে, তাহলে আমাদের দেশে তা কেন সম্ভব নয়?”

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ-এর নেতৃত্বে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ বাস্তবায়নের জন্য বিস্তারিত সুপারিশ করেছে। এই কমিটিতে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, গুলাম নবি আজাদ, হরিশ সালভে সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সরকার ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ নিয়ে একটি বিল লোকসভায় পেশ করে। এতে ২৬৯ জন পক্ষে ভোট দেন এবং ১৯৮ জন বিপক্ষে ভোট দেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ ও বিজেপি প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর সব্যসাচী দাশগুপ্ত, অল ত্রিপুরা মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রতন সাহা, ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ ত্রিপুরা প্রদেশ কনভেনর ড. জহর লাল সাহা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এক দেশ, এক নির্বাচন চালু হলে কস্ট এফিসিয়েন্সি, গভর্নেন্স ও স্থিতিশীলতা, ফেডারেল কাঠামোর সমন্বয়, ভোটারদের অংশগ্রহণ, এবং দেশের অর্থনীতির জন্য সুবিধা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, দেশের সমৃদ্ধি ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সবাই এই উদ্যোগকে সমর্থন করবেন।

মাদক চোরাচালান রোধে বড় সাফল্য

আসাম রাইফেলস ও কাস্টমসের যৌথ অভিযানে ৩০ কোটি টাকার মাদক বাজেয়াপ্ত!

রাজ্যের মাদক চোরাচালান রোধে আবারও বড় সাফল্য পেল আসাম রাইফেলস ও কাস্টমস বিভাগ। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চালানো এক যৌথ অভিযানে প্রায় ১,৫০,০০০ টি ইয়াবা ট্যাবলেট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, যার আনুমানিক আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা।

ধলাই জেলার আমবাসায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ১২০৯৮ নম্বর শতাব্দী এক্সপ্রেসে যৌথভাবে তল্লাশি চালায় আসাম রাইফেলস ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তল্লাশির সময় ট্রেনের এক বেওয়ারিশ লাগেজ থেকে বিপুল পরিমাণ নেশা সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। তবে, এখনও পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। আসাম রাইফেলসের একজন মুখপাত্র জানান, আসাম রাইফেলস নিয়মিতভাবে রাজ্যে নেশা সামগ্রী চোরাচালান প্রতিরোধে সক্রিয় রয়েছে, এবং এই অভিযান চোরাচালান বিরোধী চলমান প্রচেষ্টার একটি অংশ এবং এটি ত্রিপুরা সরকারের নেশামুক্ত ত্রিপুরা গঠনের একটি প্রয়াস।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত আসাম রাইফেলস ২২টি সফল অভিযান পরিচালনা করেছে। এসব অভিযানে প্রায় ৯২.৫৫ কোটি টাকার চোরাচালানকারী পণ্য বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ইয়াবা, ব্রাউন সুগার, গাঁজা, এবং অন্যান্য নিষিদ্ধ দ্রব্য রয়েছে। উদ্ধারকৃত ইয়াবা ট্যাবলেটগুলি পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। মাদক চোরাচালানের মূল চক্র উদ্ঘাটনে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী হওয়ায়, ত্রিপুরা রাজ্য মাদক চোরাচালানের অন্যতম ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে অনেকদিন ধরেই। তবে রাজ্য প্রশাসন, আসাম রাইফেলস, বিএসএফ, এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থা যৌথভাবে মাদক চোরাচালান বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ধরনের অভিযানের ফলে মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, যা রাজ্যের যুব সমাজকে নেশার কবল থেকে রক্ষা করতে সহায়ক হবে বলে মনে করছে প্রশাসন।