সরকারের সাফল্য!

বিরোধীদের বিভ্রান্তি; সরকারের পাল্টা তথ্য প্রকাশ!

সরকারের সাড়ে ৬ বছরে সাফল্য তুলে ধরে আজ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্য বিজেপি, এই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী রাজ্যের যুবসমাজকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ উঠেছে বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে এবং সরকারপক্ষ দাবি করেছে, গত সাড়ে ছয় বছরে রাজ্যে ২২ হাজারেরও বেশি সরকারি চাকরি প্রদান করেছে, এবং ভবিষ্যতে আরও ১৫ হাজার চাকরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে

সরকারের মুখপাত্র জানান, ক্ষমতায় আসার পর থেকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল। সেই লক্ষ্যেই ধারাবাহিকভাবে কাজ চলছে। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ইতিমধ্যেই ২২ হাজারেরও বেশি নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি, আরও চার হাজার পদে নিয়োগ শীঘ্রই হবে এবং নতুনভাবে ৮ হাজার পদ সৃষ্টির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, স্কিল ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে ৪০৬৭ জনকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সরকারের দাবি, স্ব-সহায়ক দলের সংখ্যা আগের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পূর্ববর্তী সরকারের সময় যেখানে সাড়ে চার হাজার স্ব-সহায়ক দল ছিল, সেখানে বর্তমানে তা বেড়ে ৫৩ হাজারে পৌঁছেছে। পাশাপাশি, রাজ্যে বর্তমানে ৫১ হাজারের বেশি মানুষ বার্ষিক লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন, যা অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রমাণ।

মুখপাত্র বলেন, সাম্প্রতিক বন্যার সময় দ্রুত ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের সহযোগিতায় ৪০ কোটি টাকার প্রাথমিক সহায়তা প্রদান করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৫৬৪ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করে। এছাড়া, পুনরুদ্ধারের জন্য অতিরিক্ত ২৮৮.৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

সরকারপক্ষের দাবি, যখন কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথভাবে জনগণের জন্য কাজ করছে, তখন বিরোধী দলগুলো মিথ্যা প্রচার চালিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বিরোধীরা সাধারণ মানুষের আর্থিক সহায়তাকে ‘ভিক্ষা’ বলে অপমান করছে, যা নিন্দনীয়।

সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যমন্ত্রিসভা ৩১৫টি নতুন পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করা হচ্ছে, এবং বিরোধীদের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষই সঠিক জবাব দেবে।

ন্যায়বিচারের দাবি

SHBI ইট ভাট্টার শ্রমিকরা ন্যায়বিচার না পেয়ে বিচারপতির শরণাপন্ন!

নিজের পরিশ্রমের ন্যায্য পাওনা চাইতে গিয়ে নির্মম অত্যাচারের শিকার হতে হলো একদল নিরীহ শ্রমিককে। বিহার রাজ্যের এই বহিরাগত শ্রমিকরা ত্রিপুরার বিশালগড়ের পুটিয়া রহিমপুর এলাকায় SHBI ইটভাটায় কাজ করছিলেন। কিন্তু যখন তারা তাদের প্রাপ্য পারিশ্রমিকের দাবি জানান, তখনই শুরু হয় ভয়ঙ্কর নির্যাতন।

অভিযোগ উঠেছে, ইটভাটার মালিক সেলিম মিয়া ও মনির হোসেনের নির্দেশেই শ্রমিকদের উপর শারীরিক আক্রমণ চালানো হয়। শুধু তাই নয়, তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে উল্টে শ্রমিকদের উপরই দমন-পীড়ন চালিয়েছে স্থানীয় কলমচৌড়া থানার কিছু পুলিশকর্মী।

অসহায় শ্রমিকরা যখন দেখেন যে পুলিশের কাছ থেকেও ন্যায়বিচার পাওয়া সম্ভব নয়, তখন তারা শেষ পর্যন্ত বিশালগড় মহকুমা আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালতে বিচারপতির কক্ষে গিয়ে তারা নিজেদের নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার দাবি করেন। মুহূর্তের মধ্যেই আদালত চত্বরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে দ্রুত বিশালগড় থানার পুলিশ ও TSR বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মধ্যেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, কেন শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিকে উপেক্ষা করা হলো? কেন প্রশাসন শ্রমিকদের পাশে না দাঁড়িয়ে অত্যাচারীদের আড়াল করার চেষ্টা করছে? এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন এই ঘটনার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয় এবং নির্যাতিত শ্রমিকরা আদৌ ন্যায়বিচার পান কিনা।

মাধ্যমিক ফেল বিধায়ক

বক্সনগর বিধায়কের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হলে অনধিকার প্রবেশ!

ত্রিপুরার বক্সনগর বিধানসভার বিধায়ক তোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনেই তিনি নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকে পরীক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট করেছেন বলে অভিযোগ। সাধারণত পরীক্ষার হলে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারেন না, এমনকি অভিভাবকদেরও নিষেধাজ্ঞা থাকে। তবে বিধায়কের আচরণে সেই নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা চলাকালীন রাজনৈতিক নেতাদের প্রবেশ সাধারণত বিরল ঘটনা। কিন্তু বক্সনগরের নগর উচ্চ বিদ্যালয়ে বিধায়ক তোফাজ্জল হোসেনের অনধিকার প্রবেশ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। তিনি পরীক্ষা শুরুর আগেই হলে ঢুকে পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পরামর্শ দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের হাত তুলিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথোপকথন করেন, যা পরীক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশে ব্যাঘাত ঘটায়। এমনকি, তাঁর কথাবার্তায় পরীক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিধায়কের নিজস্ব শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তিনি নিজেই মাধ্যমিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিলেন বলে জানা গেছে। সেই ব্যক্তি কীভাবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পরামর্শ দিতে পারেন, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এক শিক্ষার্থী কটাক্ষ করে বলেন, “যিনি নিজেই মাধ্যমিক পাশ করেননি, তিনি আমাদের কী শেখাতে এলেন?”

পরীক্ষা হলে উপস্থিত হয়ে বিধায়ক পরীক্ষার্থীদের বলেন, “ভালোভাবে পরীক্ষা দাও, মুখ্যমন্ত্রী, আইএএস, আইপিএস হতে হবে!” এমনকি তিনি শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে মুখ ফসকে ‘গুডলাক’ এর বদলে ‘ব্যাডলাক’ বলে ফেলেন, যা নিয়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে হাস্যরস ছড়িয়ে পড়ে। যদিও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই তাঁর কথায় বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন।

এই অনধিকার প্রবেশের ঘটনায় শিক্ষা দপ্তর ও ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, পরীক্ষা হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও অনুমতি দেওয়া হয় না। তাহলে একজন বিধায়ক কীভাবে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করলেন?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে বিধায়ক যে কাজ করেছেন, তা শুধুমাত্র দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়, বরং এটি একপ্রকার রাজনৈতিক প্রচারের অংশ। বিজেপি সরকারের আমলে নেতামন্ত্রীরা পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকে নিজেদের প্রচার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের সন্তানরা পরীক্ষার হলে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে, আর সেখানে বিধায়ক এসে পরামর্শ দিতে গিয়ে অযথা বিভ্রান্তি তৈরি করলেন! এভাবে চলতে থাকলে পরীক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে।” শিক্ষকদের একাংশও মনে করছেন, পরীক্ষার হলে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রবেশ বন্ধ হওয়া উচিত। কারণ, এতে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ বাড়ে এবং পরীক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়।

এই ঘটনায় বিধায়ক তোফাজ্জল হোসেনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে শিক্ষামহলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।অভিভাবক ও শিক্ষকদের দাবি, ভবিষ্যতে এই ধরনের অনধিকার প্রবেশ বন্ধ করা হোক এবং পরীক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখা হোক। এখন দেখার, শিক্ষা দপ্তর ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়।

সিপিআইএম পার্টির রাজ্য সম্মেলন

সিপিআইএম সর্বহারার পার্টি হয়েও সম্মেলনে কোটি টাকার আড়ম্বর!

ডানকুনিতে চলছে সিপিআইএমের তিনদিনের রাজ্য সম্মেলন। অথচ, গরিবের পার্টি বলে পরিচিত এই দলটির সম্মেলনে কোটি টাকারও বেশি খরচ হচ্ছে! রাজ্যজুড়ে একের পর এক নির্বাচনী বিপর্যয়ের পর যেখানে সংগঠন চাঙ্গা করাই প্রধান লক্ষ্য হওয়ার কথা, সেখানে কেন এত আড়ম্বর? দলীয় কর্মী থেকে সাধারণ মানুষ— সকলের মধ্যেই উঠছে প্রশ্ন।

রাজ্য সম্মেলনে আসা ৫০০-র বেশি প্রতিনিধির জন্য রাজকীয় আতিথেয়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিল্লি রোড ও দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে ১৫টিরও বেশি হোটেল, লজ ও গেস্ট হাউস ভাড়া নেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন তাদের জন্য থাকছে চন্দননগরের জলভরা, চণ্ডীতলার গুড়ের মিষ্টি, জনাইয়ের মনোহরা এবং প্রসিদ্ধ রাবড়ির মতো সুস্বাদু খাবার। প্রতিনিধিদের সম্মেলনস্থলে আনার জন্য রিজার্ভ গাড়ির ব্যবস্থাও রয়েছে। এখানেই শেষ নয়! সংবাদমাধ্যমের কাছে দলের গোপন তথ্য যেন না পৌঁছায়, তার জন্যও নেওয়া হয়েছে কড়া ব্যবস্থা। প্রতিনিধি তালিকায় থাকছে সিরিয়াল নম্বর ও কোডিং, দেওয়া হচ্ছে ছবি-সহ আইডি কার্ড। এমনকি কোনও তথ্য ফাঁস যাতে না হয়, সেই কারণে কোনও পিডিএফ ফাইলও দেওয়া হচ্ছে না।

এক সময় বাংলার ছাত্র-যুব সমাজের মধ্যে সিপিআইএমের বিশাল প্রভাব ছিল। কিন্তু এখন আর আগের মতো উচ্ছ্বাস নেই তরুণদের মধ্যে। দলের সর্বভারতীয় নেতা প্রকাশ কারাট স্বীকার করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে ছাত্র-যুব আন্দোলনে অংশগ্রহণ থাকলেও পার্টিতে নতুন প্রজন্মকে ধরে রাখা যাচ্ছে না। কেরলের সঙ্গে তুলনা টেনে কারাট বলেন, “কেরলে পার্টির ২২% সদস্যের বয়স ৩১ বছরের নিচে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এই হার অনেক কম।” যদিও কেরলে নতুনদের জায়গা দেওয়ার কথা বলা হলেও, মুখ্যমন্ত্রী এখনো ৯০ বছরের এক প্রবীণ নেতা। তাই বাস্তবে তরুণ নেতৃত্ব গঠনের প্রক্রিয়া কতটা কার্যকর, সে নিয়েও প্রশ্ন থাকছে।

গত তিন বছরে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই ২৫ হাজার সদস্যের পার্টি সদস্যপদ খারিজ হয়েছে, যদিও নতুনদের অন্তর্ভুক্তি কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাচ্ছে। রাজ্য সম্পাদক মহঃ সেলিমও স্বীকার করেছেন, “নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্বে আনতে হবে, ছাত্র-যুব আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।” অনেক দিন ধরেই দলের অন্দরে আলোচনা চলছে যে, সিপিআইএম শহুরে পার্টিতে পরিণত হচ্ছে। গ্রামের মানুষের সঙ্গে যে সম্পর্ক আগে ছিল, তা অনেকটাই হারিয়ে গেছে। সম্মেলনে এই নিয়েও আত্মসমালোচনা হয়েছে। অনেক নেতাই মনে করছেন, ‘তোবড়ানো গাল, ভেঙে যাওয়া মুখ’-এর পরিবর্তে এখন দলে চকচকে মুখের আধিক্য দেখা যাচ্ছে। কৃষক-শ্রমিকদের পার্টি হওয়ার বদলে দল যেন শুধুই মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের দলে পরিণত হচ্ছে। তাই পার্টির অভিমুখ আবার গ্রামবাংলার দিকে ঘোরানোর কথা বলা হচ্ছে।

২০১১ সালে ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই নির্বাচনী লড়াইয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে সিপিআইএম। প্রতি সম্মেলনেই দল ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে পরিবর্তন আসেনি। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু প্রশ্ন একটাই— এত কিছুর পরেও কি আদৌ ভোটের ময়দানে দৃশ্যমান হতে পারবে সিপিআইএম? সম্মেলনে আড়ম্বর যতই থাকুক, দলের ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। পার্টির অভ্যন্তরে আত্মবিশ্লেষণ চলছে, তবে তার বাস্তব রূপায়ণ কতটা সম্ভব হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।About Us

সরকারি website গুলির কচ্ছপ গতি দশা!

সরকারি website গুলির লুডিং টাইম বেশি হওয়ায় কর্মীদের কাজ বিঘ্নিত!

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ডিজিটালাইজেশন এক অবশ্যম্ভাবী প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে। ভারতবর্ষ তথা ত্রিপুরা রাজ্যও এই ডিজিটাল বিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছে। সরকারি দপ্তরগুলিতে ইন্টারনেট ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কাজকর্ম চালানো এখন এক দৈনন্দিন বাস্তবতা। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির তথ্য আপলোড, সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণের জন্য নির্ভর করতে হয় সরকারি ওয়েবসাইটগুলির ওপর। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, এই ওয়েবসাইটগুলির ধীরগতি ও ত্রুটিপূর্ণ পারফরম্যান্সের কারণে বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত কর্মচারীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

প্রতিদিন অফিসে এসে কর্মচারীরা একটাই সমস্যার সম্মুখীন হন— ওয়েবসাইট চালু হচ্ছে না, সার্ভার ডাউন, বা ইন্টারনেট সংযোগ ব্যাহত। ফলে দাপ্তরিক কাজ সম্পাদন করতে ব্যাপক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। এর ফলে সাধারণ নাগরিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের নানান প্রয়োজনীয় পরিষেবা পেতে দপ্তর থেকে দপ্তরে ঘুরতে হচ্ছে, কিন্তু সমস্যার কোনো কার্যকর সমাধান মিলছে না। কর্মচারীরা কোনোভাবেই এই প্রযুক্তিগত সমস্যার জন্য দায়ী নন, অথচ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে দোষ চাপাচ্ছেন ওয়েবসাইট ব্যবহারকারী কর্মীদের ওপর।

বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত একাধিক কর্মচারীর মতে, ইন্টারনেট সংযোগ এবং সরকারি ওয়েবসাইটগুলোর অব্যবস্থাপনা এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে দিনে ৮ ঘণ্টা অফিস করেও প্রকৃতপক্ষে কাজ করার সুযোগ থাকে মাত্র ২-৩ ঘণ্টা। বাকি সময় পার করতে হয় ওয়েবসাইট চালুর অপেক্ষায়। এতে একদিকে সরকারি পরিষেবা যেমন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।

প্রযুক্তিবিদদের মতে, সরকারি ওয়েবসাইটগুলোর ধীরগতির অন্যতম কারণ হলো সার্ভারের অক্ষমতা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং দুর্বল ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ। অনেক ক্ষেত্রেই ওয়েবসাইটগুলো আপডেট না হওয়ায় সেগুলোতে ত্রুটি থেকে যায়, যা কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। পাশাপাশি, বিভিন্ন দপ্তরে ব্যবহৃত ইন্টারনেট কানেকশনের মান অত্যন্ত নিম্নমানের, যা সরকারি পরিষেবাগুলোকে আরও দুর্বল করে তুলছে।

সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, সরকার এই সমস্যার দিকে নজর দেবে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। সার্ভার আপগ্রেড, উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা, এবং ওয়েবসাইটগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশেষজ্ঞ দল নিয়োগ করা এখন সময়ের দাবি। তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তর যদি এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে ডিজিটালাইজেশনের লক্ষ্যে রাজ্যের অগ্রগতি ব্যাহত হবে। সরকারের উচিত অবিলম্বে ওয়েবসাইটের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রযুক্তিগত অবকাঠামো উন্নয়ন করা। আধুনিক সার্ভার, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ, এবং প্রশিক্ষিত প্রযুক্তিবিদ নিয়োগ করা জরুরি। সরকারি দপ্তরে একটি বিশেষ প্রযুক্তি সেল গঠন করা হলে এই সমস্যার সমাধান দ্রুত সম্ভব হবে। এছাড়া, কর্মচারীদেরও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার যাতে তারা ওয়েবসাইট ব্যবহারের ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে ওঠেন।

নাগরিকদের হয়রানি কমানোর জন্য অবিলম্বে ওয়েবসাইটের সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন সচেতন মহল। তারা মনে করেন, উচ্চস্তরের একশ্রেণীর আমলার অবহেলার কারণেই এই সমস্যাগুলো দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে। ওয়েবসাইট নিয়ে বড় ধরনের কোন আর্থিক দুর্নীতির কথাও তারা উড়িয়ে দেননি। তবে এখনই যদি ওয়েবসাইট গুলির সমস্যার সমাধানে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে সরকারি পরিষেবার বিশ্বাসযোগ্যতা বড় ধরনের সংকটে পড়তে পারে।

অল ইন্ডিয়া পুলিশ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ-2025!

আগরতলায় ৭৩তম বি এন মল্লিক স্মৃতি অল ইন্ডিয়া পুলিশ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শুভ উদ্বোধন!

ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় প্রথমবারের মতো আয়োজিত হচ্ছে ৭৩তম বি এন মল্লিক স্মৃতি অল ইন্ডিয়া পুলিশ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২৫। সোমবার উমাকান্ত ফুটবল স্টেডিয়ামে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা প্রতিযোগিতার শুভ উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষায় ত্রিপুরা পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে এবং তাদের ১৫০ বছরের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাতেই নয়, খেলাধুলার ক্ষেত্রেও ত্রিপুরা পুলিশের একটি উজ্জ্বল ভাবমূর্তি রয়েছে।

এই অল ইন্ডিয়া পুলিশ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় দেশের ২৫টি রাজ্য, ৪টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং ৭টি কেন্দ্রীয় বাহিনী অংশগ্রহণ করছে। পুরুষ বিভাগে ৩৬টি দল এবং মহিলা বিভাগে ৯টি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। পশ্চিম ত্রিপুরা, দক্ষিণ ত্রিপুরা এবং গোমতী জেলার ৫টি অ্যাস্ট্রোটার্ফ ফুটবল মাঠে আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতার ম্যাচগুলি অনুষ্ঠিত হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে। তাঁদের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলেই বর্তমানে রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। তিনি ত্রিপুরা পুলিশের প্রশংসা করে বলেন, এই চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজনের জন্য ত্রিপুরা পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই। এটি রাজ্যের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে, প্রথমবারের মতো এত বড় অল ইন্ডিয়া লেভেলের একটি প্রতিযোগিতা ত্রিপুরায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এই ধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের খেলোয়াড়দের মধ্যে সৌহার্দ্য ও পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। এটি শুধুমাত্র ক্রীড়ার ক্ষেত্রেই নয়, সামগ্রিকভাবে জাতীয় সংহতির ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তিনি অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের ত্রিপুরার কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও পর্যটন কেন্দ্রগুলি ঘুরে দেখার আহ্বান জানান।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা বর্তমানে দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’র বিভিন্ন পরিকল্পনা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর ফলে সড়ক, রেল, বিমান পরিষেবার উন্নতি ঘটছে এবং রাজ্যের সার্বিক বিকাশ ত্বরান্বিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ‘হীরা মডেল’ রাজ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। এর আওতায় ৬টি জাতীয় সড়কের উন্নয়ন ও নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ত্রিপুরার এমবিবি বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরে রূপান্তরিত করা হয়েছে, যা রাজ্যের সংযোগ ব্যবস্থাকে আরও সুসংহত করেছে।

অনুষ্ঠানে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক (DGP) অমিতাভ রঞ্জন, এডিজিপি (ট্রেনিং) এম রাজা মুরুগণ, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়ামন্ত্রী টিংকু রায়, ডিজিপি ইন্টেলিজেন্স অনুরাগ ধ্যানকর-সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এডিজিপি (এপি) জি এস রাও স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং ত্রিপুরা পুলিশের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এছাড়া মুখ্যমন্ত্রী ৪৫টি দলের ম্যানেজারদের সঙ্গে পরিচিত হন এবং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়।

এই অল ইন্ডিয়া পুলিশ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ শুধুমাত্র একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নয়, বরং এটি দেশের বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ বাহিনীর মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার বন্ধনকে আরও দৃঢ় করবে। ত্রিপুরায় এই প্রতিযোগিতার আয়োজনের মাধ্যমে রাজ্যের ক্রীড়া পরিকাঠামো ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে দেশব্যাপী তুলে ধরার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত চলবে এই প্রতিযোগিতা, যেখানে দেশসেরা পুলিশ ফুটবল দলগুলির প্রতিযোগিতার উত্তেজনা তুঙ্গে উঠবে।