আগরতলা পুর নিগমে কর ফাঁকি রোধে ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার!
কর ফাঁকি রোধ এবং জমির সঠিক পরিমাপ নিশ্চিত করতে অভিনব উদ্যোগ নিল আগরতলা পুর নিগম। এবার থেকে ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে নিগম এলাকার জমির পরিমাপ করা হবে। শহরের রাস্তাঘাট, জলনিকাশি ব্যবস্থা, এবং সম্পত্তির সঠিক হিসাব পেতে এই আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার করবে পুর নিগম। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয় আগরতলা পুর নিগমের কনফারেন্স হলে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধানসভার উপাধ্যক্ষ রামপ্রসাদ পাল, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, ডেপুটি মেয়র মনিকা দাস দত্ত, কমিশনার শৈলেশ কুমার যাদব, বিধায়িকা মিনারানী সরকার এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
পুর নিগম সূত্রে জানা গেছে, আগরতলা শহরের অনেক বাসিন্দা বাড়ির সঠিক পরিমাপ গোপন করে ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছেন। তিনতলা বাড়ি থাকার পরেও দ্বিতল ভবনের কর পরিশোধ করছেন অনেকেই। জমির পরিমাপেও গরমিল করে কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি, পুর নিগমের জমি দখল করে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ঘটনাও ঘটছে। এবার ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে জমির সঠিক পরিমাপ করে এইসব ট্যাক্স ফাঁকি রোধ করতে চাইছে আগরতলা পুর নিগম।
মেয়র দীপক মজুমদার জানিয়েছেন, ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আগরতলার ৫১টি ওয়ার্ডের জমি পরিমাপ করা হবে। এর ফলে জমির সঠিক পরিমাণ জানা যাবে এবং সেই অনুযায়ী কর নির্ধারণ করা হবে। শুধু তাই নয়, ড্রোনের মাধ্যমে পাওয়া ছবি এবং তথ্যের ভিত্তিতে শহরের উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি আরও বলেন, “শহরবাসী তাদের বাড়িঘরের সঠিক পরিমাপ সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং প্রয়োজনে পুর নিগম থেকে কাগজপত্র দেওয়া হবে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় জমি পরিমাপ হলে কারো পক্ষেই অভিযোগ তোলার সুযোগ থাকবে না।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপাধ্যক্ষ রামপ্রসাদ পাল বলেন, “এটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি এবং একে আমি মোদি ম্যাজিক বলেই অভিহিত করব। ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে জমির পরিমাপে স্বচ্ছতা আসবে, যা নাগরিকদের মধ্যে আস্থা তৈরি করবে।” তিনি আরও বলেন, সঠিক পরিমাপের ফলে জমি সংক্রান্ত জালিয়াতি ও দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হবে। ‘সিটি সার্ভে’ নামক এই প্রকল্পের মাধ্যমে আগরতলা পুর নিগম এলাকায় এক বছরের মধ্যে ভূমি জরিপের কাজ সম্পন্ন হবে। প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে নাগরিকদের হাতে থাকবে সঠিক এবং আপ-টু-ডেট ভূমি রেকর্ড। এতে করে জমি সংক্রান্ত বিরোধ কমবে, সম্পত্তি লেনদেন সহজ হবে এবং নগর পরিকল্পনায় গতি আসবে। একইসাথে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে এবং জমি সংক্রান্ত জালিয়াতি ও দুর্নীতির পথও বন্ধ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মেয়র দীপক মজুমদার আরও জানান, দেশের ১৫২টি শহরে ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে জমি পরিমাপ করা হবে, যার মধ্যে আগরতলা শহরও রয়েছে। এই উদ্যোগকে প্রশংসনীয় বলে অভিহিত করেছেন উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বিভিন্ন ওয়ার্ডের কর্পোরেটারদের এই প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করা হয়। তাদেরকে ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ভূমি পরিমাপের পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যাতে প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহারে জমির সঠিক হিসাব ও কর আদায়ে স্বচ্ছতা আসবে বলে আশাবাদী আগরতলা পুর নিগম। এ উদ্যোগকে ইতিমধ্যেই সাধুবাদ জানাচ্ছেন নগরবাসী।