সীমান্তে

ত্রিপুরা-বাংলাদেশ সীমান্তে উগ্রপন্থী অনুপ্রবেশের আশঙ্কা!

সীমান্ত

ত্রিপুরা ও বাংলাদেশে সীমান্তের এলাকাগুলিতে উগ্রপন্থী তৎপরতা বৃদ্ধির আশঙ্কায় রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। বিশেষত, পাহাড়ি অঞ্চল এবং ত্রিপুরা-মিজোরাম-বাংলাদেশ সীমান্তে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।

একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও কঠোর করা হয়েছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী (BSF) নজরদারি বাড়িয়েছে এবং আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সীমান্তে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ত্রিপুরা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার আইজি কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তী সম্প্রতি ঊনকোটি ও উত্তর ত্রিপুরা জেলা সফর করেন এবং সেখানে নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সীমান্তবর্তী এলাকায় উগ্রপন্থী তৎপরতা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এতে সীমান্ত দিয়ে জঙ্গি ও চোরাকারবারীদের অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

ত্রিপুরার ৮৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের মধ্যে ২৬.৬৪ কিলোমিটার এখনো কাঁটাতারবিহীন। অন্যদিকে, মিজোরামের ৩১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত পুরোপুরি অরক্ষিত, যা নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, মিজোরামেও নিরাপত্তা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে।

২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর, ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা (NLFT) এবং অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স (ATTF)-এর একাধিক উগ্রপন্থী সদস্য ত্রিপুরা সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করা এই জঙ্গিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হলেও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এখনো কিছু উত্তর-পূর্বের জঙ্গি বাংলাদেশে লুকিয়ে আছে।

সীমান্তে নিরাপত্তা আরও কঠোর করতে BSF আধুনিক ড্রোন প্রযুক্তি, কুকুর বাহিনী এবং উন্নত নজরদারি যন্ত্র ব্যবহার করছে। সীমান্ত পরিদর্শনে রয়েছেন BSF-এর শীর্ষ আধিকারিকরা। রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে যাতে কোনো উগ্রপন্থী বা চোরাকারবারী ভারতের মাটিতে প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে।

ভারতের

ভারতের পরমাণু বিদ্যুৎ নিয়ে রাজ্যসভায় প্রশ্ন রাজিব ভট্টাচার্যের!

ভারতের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যতম সেরা বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জিতেন্দ্র সিং। রাজ্যসভায় ত্রিপুরার সাংসদ রাজিব ভট্টাচার্য একটি লিখিত প্রশ্ন করেন, যার উত্তরে মন্ত্রী জানান, ভারতের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তাব্যবস্থায় সুরক্ষিত এবং গত ৫৫ বছরে দেশে কোনও বড় পরমাণু দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেনি।

নিরাপত্তার বিষয়ে কেন্দ্রের আশ্বাস!

মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বলেন, ১৯৬৯ সাল থেকে ভারত পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনা করছে, এবং এখনও পর্যন্ত কোনও সময় নির্ধারিত সীমার বেশি রেডিওঅ্যাক্টিভিটি ছড়ানোর ঘটনা ঘটেনি। পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান— বাতাস, জল ও খাদ্যদ্রব্য (যেমন: শস্য, দুধ, শাকসবজি, মাছ)— এগুলিতে রেডিওঅ্যাক্টিভ উপাদানের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য স্বাধীন এনভায়রনমেন্টাল সার্ভে ল্যাবরেটরিজ (ESL) নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালায়। মন্ত্রী জানান, পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির চারপাশে পাওয়া রেডিওঅ্যাক্টিভিটি সর্বদা পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রক সংস্থা (AERB)-এর নির্ধারিত সীমার অনেক নিচে থাকে।অর্থাৎ, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির কার্যক্রম পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয় এবং এটি আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই পরিচালিত হয়।

প্রথমবার রাজ্যসভায় প্রশ্ন করলেন সাংসদ রাজিব ভট্টাচার্য!

ত্রিপুরার নবনির্বাচিত সাংসদ রাজিব ভট্টাচার্য রাজ্যসভায় প্রথমবার প্রশ্ন উত্থাপন করলেন, যা পরমাণু শক্তির নিরাপত্তা নিয়ে মানুষের মধ্যে আস্থা বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, নিয়মিত পর্যালোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান বিজ্ঞানসম্মত নির্দেশিকা অনুসরণ করেই ভারতের পরমাণু প্রকল্পগুলিকে পরিচালিত করা হয়।

ভারতের পরমাণু শক্তির ভবিষ্যৎ!

সরকারের এই আশ্বাসবাণী ভারতীয় পরমাণু শক্তি ব্যবস্থাকে আরও জনগণের আস্থাভাজন করে তুলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই তথ্য জানার পর দেশের পরমাণু শক্তি ব্যবহারের প্রতি মানুষের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

straightlines

মন্ত্রী অনিমেষ

মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মার নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট।

ত্রিপুরা সরকারের মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা তাঁর নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট তৈরি হওয়ার বিষয়ে সতর্কবার্তা জারি করেছেন। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, তাঁর নাম ও ছবি ব্যবহার করে একটি নকল অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, যা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে।

সতর্ক থাকার অনুরোধ!

মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা স্পষ্টভাবে জানান, “এই অ্যাকাউন্টটি সম্পূর্ণ ভুয়া এবং আমি এর সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নই। এটি মানুষকে প্রতারণার চেষ্টা করতে পারে। দয়া করে এই অ্যাকাউন্টের সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত হবেন না, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করবেন না বা ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না।” তিনি জানান, এটি পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে এবং দ্রুতই ফেসবুকের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হবে। তবে জনগণের সচেতনতা এবং সক্রিয়তা ভুয়া অ্যাকাউন্টের অপব্যবহার রুখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ভুয়া অ্যাকাউন্ট প্রতিরোধের আহ্বান!

মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা তার ফেসবুক ফলোয়ারদের অনুরোধ করেছেন, যদি কেউ এই ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো সন্দেহজনক পোস্ট বা মেসেজ পান, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট করুন। তিনি আরও বলেন, “যেকোনো সন্দেহজনক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সংযোগের আগে প্রোফাইল যাচাই করে নিন। যদি নিশ্চিত হতে না পারেন, তবে সরাসরি আমার অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টে যোগাযোগ করুন।”

বিভ্রান্তি ছড়ানোর শঙ্কা!

সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনীতিবিদের নামে ভুয়া সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই ধরনের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে প্রতারণা বা বিভ্রান্তিকর বার্তা ছড়ানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জনসচেতনতার গুরুত্ব!

ত্রিপুরার জনগণের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী অনুরোধ করেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং ভুয়া অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত হলে তা রিপোর্ট করুন। তিনি বলেন, “আপনাদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই সচেতন থাকলে এমন প্রতারণামূলক কাজ প্রতিরোধ করা সম্ভব।”

কীভাবে রিপোর্ট করবেন?

ফেক অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল খুলে “Report” অপশন সিলেক্ট করুন। “Pretending to be someone” ক্যাটাগরিতে গিয়ে রিপোর্ট করুন। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ পর্যালোচনা করে অ্যাকাউন্টটি মুছে ফেলতে পারে।

straightlines

ড্রাগস্

ত্রিপুরা-মিজোরাম সীমান্তের দামছড়া এখন ড্রাগস্ এর নতুন করিডোর!

মণিপুরে চলমান হিংসাত্মক কার্যকলাপ এবং রাষ্ট্রপতি শাসনের ফলে রাজ্যের নেশা কারবারিরা তাদের পাচারের রুট বদল করেছে। নতুন করে ড্রাগস্ পাচারের মূল করিডোর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ত্রিপুরা-মিজোরাম সীমান্তবর্তী দামছড়াকে। শুধু ত্রিপুরা নয়, এখন এই রুট ব্যবহার করে বাংলাদেশের পাচারকারীরাও ড্রাগস্ এবং ইয়াবার মতো সর্বনাশা নেশাসামগ্রী পাচার করছে।

কিছুদিন আগেও শুধুমাত্র ত্রিপুরার জন্য এই রুট ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের পাচারকারীরাও দামছড়াকে নিরাপদ করিডোর হিসাবে বেছে নিয়েছে। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই নেশা সামগ্রী আমদানির খবর উত্তর জেলার পুলিশ প্রশাসন এবং স্থানীয় রাজনীতিকদের জানা সত্ত্বেও, অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে এই করিডোর দিয়ে রাজ্যে ড্রাগস্ ছড়িয়ে পড়ছে এবং রাজ্যের যুবসমাজ সর্বনাশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

এক সময় রাজ্যের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় ড্রাগস্ এর প্রভাব সীমাবদ্ধ থাকলেও ২০১৮ সালে সরকার পরিবর্তনের পর গ্রাম, পাহাড়, শহর এবং শহরতলীতেও ড্রাগসের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে, এখন মহিলারাও ড্রাগসে আসক্ত হচ্ছে এবং বিভিন্ন রকম নেশা সামগ্রী ব্যবসাতেও যুক্ত হচ্ছে।

নতুন নতুন নেশামুক্তি কেন্দ্র খোলার পরও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ড্রাগস্ এর আগ্রাসন। এমনকি নেশামুক্তি কেন্দ্রের ভেতরেই ড্রাগস্ বিক্রি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে এবং পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে বেশ কয়েকটি ঘটনা। ডাবল ইঞ্জিন সরকারের মূল প্রতিশ্রুতি ছিল ‘নেশামুক্ত ত্রিপুরা’ উপহার দেওয়া। তবে বাস্তবে নেশার প্রভাব দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ড্রাগসের ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে এইডস্ আক্রান্তের সংখ্যাও। রাজধানী আগরতলা থেকে শুরু করে গন্ডাছড়া এবং ছাওমনুর মতো দুর্গম এলাকাগুলোতেও এখন এইডস্ রোগী সনাক্ত হচ্ছে, যা গোটা রাজ্যের জন্য অশনি সংকেত।

এই সর্বনাশের মূল আতুড় ঘর মায়ানমার এবং থাইল্যান্ড, যেখান থেকে মিজোরাম হয়ে দামছড়ার দশরথ সেতু দিয়ে ড্রাগস্ প্রবেশ করছে ত্রিপুরায়। কখনো কখনো চট্টগ্রামের পাহাড়ি পথও পাচারকারীরা ব্যবহার করছে। একসময় কক্সবাজার হয়ে বাংলাদেশে ড্রাগস্ ও ইয়াবা আমদানি হলেও তদানীন্তন হাসিনা সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে সেই রুট বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পাচারকারীরা নতুন করিডোর হিসেবে মিজোরাম-ত্রিপুরা সীমান্তের দামছড়াকে বেছে নিয়েছে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা পুলিশের নজরে এলেও মূল কারবারিদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসন শুধুমাত্র ছোটখাটো পাচারকারীদের গ্রেপ্তার করেই দায় সারছে। মূল মাস্টারমাইন্ডরা থেকে যাচ্ছে পর্দার আড়ালেই।

অজ্ঞাত কারণে রাজ্য সরকারও এই ড্রাগস্ নেটওয়ার্ক ভাঙতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না, যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। তাই প্রশ্ন উঠছে, আদৌ ত্রিপুরা নেশামুক্ত হবে কিনা! বিশেষজ্ঞদের মতে, সীমান্ত এলাকায় পুলিশের নজরদারি বাড়ানো, স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলির সমন্বয় জোরদার করা এবং কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এই পাচারের নেটওয়ার্ক বন্ধ করা সম্ভব। অন্যথায়, যুবসমাজ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে এবং রাজ্যের সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিপর্যস্ত হবে। ত্রিপুরা সরকার কি এবার কঠোর পদক্ষেপ নেবে? নাকি চুনোপুঁটিদের ধরে বড় কারবারিদের আড়ালেই রেখে দেবে? রাজ্যের ভবিষ্যৎ এখন সেই উত্তর পাওয়ার অপেক্ষায়।

straightlines

NSS

“জৈব পদ্ধতিতে মশা নিয়ন্ত্রণ” NSS ইউনিট উইমেন্স কলেজের এক অভিনব প্রয়াস!

রাজধানীর উইমেন্স কলেজ NSS ইউনিটের উদ্যোগে রাজবাড়ী সংলগ্ন এলাকায় এক সচেতনতা মূলক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়, যার মূল লক্ষ্য ছিল রাসায়নিক পদার্থের পরিবর্তে জৈব উপায়ে মশা নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা। মশার তাণ্ডব থেকে নাগরিক সমাজকে রক্ষা করার উপায় নিয়ে এই কর্মসূচিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

বর্তমান সময়ে মশার উপদ্রবে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাসায়নিক স্প্রের পরিবর্তে প্রাকৃতিক ও জৈব পদ্ধতি মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশি কার্যকরী এবং স্বাস্থ্যসম্মত। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই উইমেন্স কলেজ NSS ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবীরা সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেন। কর্মসূচির সময় এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করা হয়, যেখানে জৈব পদ্ধতিতে মশা নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়। লিফলেটের মূল বিষয়বস্তু ছিল:

  • বাড়ির চারপাশে জমা জল পরিষ্কার রাখা
  • ফুলের টব, পুরনো টায়ার, বোতল ইত্যাদিতে জল জমতে না দেওয়া
  • তুলসী, নিম, লেমনগ্রাসের মতো উদ্ভিদ বাড়ির আশেপাশে রোপণ করা, যা মশা তাড়াতে সাহায্য করে
  • ঘরে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি মশারোধী স্প্রে ব্যবহার করা

স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, এলাকায় কিছু নাগরিক ইচ্ছাকৃতভাবে আবর্জনা ড্রেনে ফেলে চলমান নর্দমার জল আটকে দিচ্ছেন। এর ফলে সেই স্থির জলে মশার বংশবিস্তার বেড়ে গিয়ে জনস্বাস্থ্য বিপর্যস্ত হচ্ছে। এই সমস্যা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হল নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

উইমেন্স কলেজ NSS ইউনিটের প্রোগ্রাম অফিসার রমা ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সমগ্র কর্মসূচি পরিচালিত হয়। তিনি বলেন, “শুধুমাত্র প্রশাসনের পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়, নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। মশার উপদ্রব থেকে মুক্তি পেতে আমাদেরই উদ্যোগ নিতে হবে এবং পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে হবে।”

এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা এবং উইমেন্স কলেজ NSS ইউনিটের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে স্বেচ্ছাসেবীদের প্রচেষ্টা এবং সমাজের প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতার প্রশংসা করেন। উল্লেখ্য, মশা নিয়ন্ত্রণে রাসায়নিক স্প্রের অতিরিক্ত ব্যবহার স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে। তাই প্রাকৃতিক ও জৈব পদ্ধতির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উইমেন্স কলেজ NSS ইউনিটের এই প্রচেষ্টা সমাজে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

straightlines

অভিভাবক

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির দৌরাত্ম্যে নাজেহাল অভিভাবকরা!

একদিকে রাজ্যের একের পর এক সরকারি স্কুলে তালা পড়ছে, অন্যদিকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাড়বাড়ন্তে পকেট ফাঁকা হচ্ছে অভিভাবকদের। রাজধানী আগরতলা সহ রাজ্যের প্রায় প্রতিটি মহকুমায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে নতুন নতুন বেসরকারি স্কুল। অথচ সরকারি স্কুলগুলোতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা নেমে এসেছে তলানিতে। এমন অনেক স্কুল আছে যেখানে মাত্র পাঁচ থেকে ছয় জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে।

অভিভাবকরা মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন সরকারি স্কুলগুলি থেকে, সরকারি স্কুলগুলির এই শোচনীয় অবস্থার পেছনের কারণ খুঁজতে তৎপর নয় শিক্ষা দপ্তর প্রশাসন। সরকারের নীরবতায় হতাশ অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে সন্তানদের বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের ডোনেশন না দিলে ভর্তির সুযোগই মিলছে না বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। শিক্ষার মানোন্নয়নের কথা বলা হলেও বাস্তবে বেসরকারি স্কুলগুলির ওপর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই সরকারের। উল্টে এসব স্কুলের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নেতা-মন্ত্রীরা উৎসাহ যোগাচ্ছেন বলেই অভিযোগ। অথচ অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে কোনও রাজনৈতিক দলই মুখ খুলতে রাজি নয়।

শুধু স্কুলেই নয়, রাজ্যের শান্তিনিকেতন ও টি এম সি-র মতো বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলিতেও ফি নিয়ে উঠেছে অভিযোগের ঝড়। ন্যাশনাল মেডিকেল কাউন্সিল (এন এম সি)-এর গাইডলাইন অনুযায়ী, রাজ্যের কোটায় ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের ৫০ শতাংশ ফি ছাড় দেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। ডেভেলপমেন্ট ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও গাইডলাইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। তবুও সরকারের কোনও হস্তক্ষেপ নেই।

ডাবল ইঞ্জিন সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফি নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়নি এখনো। উল্টে বিদ্যা ব্যবসার নামে অভিভাবকদের পকেট কাটছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। সরকারের এই নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অভিভাবক মহল থেকে শুরু করে শিক্ষাবিদরা। রাজ্যে শিক্ষার মান উন্নয়নের কথা বলা হলেও বাস্তবে চিত্রটা একেবারেই বিপরীত। সরকারি স্কুলগুলির করুণ দশা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লাগামহীন বাণিজ্যিকীকরণের জেরে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। শিক্ষার এই বেহাল অবস্থায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। সরকার কি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, নাকি সাধারণ মানুষের ভোগান্তি অব্যাহত থাকবে? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে।

straightlines

ADC

ADC-র গঙ্গানগরে বিল্ডিং উদ্বোধন না করেই ফিরে গেলেন অতিথিরা!

এক অভূতপূর্ব এবং কলঙ্কজনক ঘটনার সাক্ষী থাকল ADC-র গঙ্গানগর। ADC (আটোনোমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল)-র তত্ত্বাবধানে নির্মিত নতুন প্রাণী চিকিৎসালয়ের উদ্বোধন করতে এসে বড়সড় অস্বস্তির মুখে পড়তে হলো অতিথিদের। বিল্ডিংয়ের দেওয়ালে ফাটল দেখা দেওয়ায় উদ্বোধন না করেই ফিরে যেতে বাধ্য হন অতিথি ও কর্মকর্তারা।

ADC-র গঙ্গানগরের প্রাণী চিকিৎসালয়টি নির্মাণ করা হয়েছিল পশুপালকদের জন্য উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এডিসি-র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বহু গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। ব্যান্ড, ফুলের তোড়া, সুসজ্জিত মঞ্চ—সবকিছুই ছিল এক বর্ণময় অনুষ্ঠানের আয়োজনের ইঙ্গিত। কিন্তু উদ্বোধনের কিছুক্ষণ আগেই বিল্ডিং পরিদর্শন করতে গিয়ে আতঙ্ক ছড়ায়। দেখা যায়, সদ্য নির্মিত সেই ভবনের একাধিক দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। এমনকি ছাদের কিছু অংশেও ফাটল লক্ষ্য করা যায়, যা ভবনের স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয়।

অতিথিরা ভবনের এমন অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী, এই ধরনের ফাটল বিল্ডিং ধসের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে, যা প্রাণহানির কারণ হতে পারে। অতিথি ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, উদ্বোধন না করেই অনুষ্ঠান বাতিল করা হবে। উপস্থিত সকলকে দ্রুত সুরক্ষিত স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।

ঘটনার পরই স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের দাবি, নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলেই নতুন বিল্ডিংয়ে এমন ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবন কীভাবে উদ্বোধনের আগেই এমন অবস্থায় পৌঁছালো? স্থানীয়দের দাবি, এডিসি-র কিছু অসাধু আধিকারিক এবং ঠিকাদারের যোগসাজশে এই দুর্নীতি হয়েছে।

ADC-র এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, “এই ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং লজ্জার। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি এবং ইতিমধ্যেই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সিমেন্ট এবং রড ব্যবহার করা হয়েছে, যা ভবনের স্থায়িত্বকে ক্ষুণ্ন করেছে। এই ঘটনায় কাজের স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জনগণের করের টাকায় নির্মিত ভবনে এমন নিম্নমানের কাজ মেনে নেওয়া যায় না বলে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অতিথি এবং স্থানীয় প্রতিনিধিরা এখন অপেক্ষায় আছেন তদন্তের রিপোর্টের এবং দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির।

উদ্বোধন বাতিল হওয়ায় এলাকাবাসী এবং পশুপালকরা হতাশ। তারা দীর্ঘদিন ধরে উন্নত প্রাণী চিকিৎসালয়ের আশায় ছিলেন, কিন্তু এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনায় হতাশা ছড়িয়েছে। অতিথিরা ভবিষ্যতে বিল্ডিংটির সংস্কার এবং সুরক্ষার নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত উদ্বোধনের তারিখ স্থগিত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। এই ঘটনায় গঙ্গানগরবাসীর মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তারা জানতে চাইছে, তদন্ত শেষে কি সত্যিই দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে? নাকি এই ঘটনাও হারিয়ে যাবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মধ্যে!

STN

স্কলারশিপ

উপজাতি পড়ুয়াদের স্কলারশিপ অনিশ্চিত!

স্কলারশিপ না মেলায় উপজাতি পড়ুয়াদের পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বিভিন্ন প্রফেশনাল কোর্সে। বিগত শিক্ষাবর্ষে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রফেশনাল কোর্সে ভর্তি হওয়া বহু এসটি (তফশিলি জনজাতি) ছাত্র-ছাত্রী বর্তমানে চরম অনিশ্চয়তার মুখে। স্কলারশিপ না মেলায় তাদের পড়াশোনার ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে।

মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পর অনেকেই বিএড, ডিএলএড, নার্সিংসহ বিভিন্ন প্রফেশনাল কোর্সে ভর্তি হয়েছিল। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, এসটি ক্যাটাগরির আর্থিকভাবে দুর্বল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পড়াশুনায় আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা রয়েছে, যা তাদের পুরো শিক্ষাবর্ষের খরচ মেটাতে সহায়ক। কিন্তু এ বছর সেই আর্থিক সহায়তা না মেলায়, প্রায় কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী বিপাকে পড়েছে।

২০২৩ সালে যেসব ছাত্র-ছাত্রী প্রফেশনাল কোর্সে ভর্তি হয়েছিল, তাদের স্কলারশিপের জন্য আবেদন করার শেষ তারিখ ছিল ২০২৪ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত। আর যারা ২০২৪ সালে ভর্তি হয়েছিল, তাদের জন্য শেষ তারিখ ছিল ২৫ নভেম্বর। কিন্তু হঠাৎ করেই এই সময়সীমা প্রায় তিন মাস আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়, যার কারণ এখনো অজানা। এই অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তের ফলে অনেকেই সময়মতো আবেদনপত্র জমা দিতে পারেনি। অধিকাংশ প্রফেশনাল কোর্সের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা তখনও শেষ না হওয়ায়, দ্বিতীয় বর্ষের স্কলারশিপের জন্য প্রয়োজনীয় মার্কশিট জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি।

দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করা এসটি ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেই স্কলারশিপের সহায়তার উপর নির্ভর করেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এই সহায়তা না পেলে তাদের পক্ষে প্রফেশনাল কোর্সের খরচ মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। ফলে বহু ছাত্র-ছাত্রীকে পড়াশোনা মাঝপথেই বন্ধ করে দিতে হতে পারে।

এই সমস্যার সমাধানে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো সদুত্তর মেলেনি। রাজ্যের জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা কি পদক্ষেপ নেবেন, সেই দিকে তাকিয়ে আছেন অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীরা।

STN

ত্রিপুরা

‘ত্রিপুরা-আখাউড়া রেল সংযোগ’ পুনরায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু!

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ড. জিতেন্দ্র সিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ড. মানিক সাহা। বৈঠকে রাজ্যে আবহাওয়ার উন্নত পূর্বাভাস ব্যবস্থা, বাঁশ শিল্পের সমৃদ্ধি, প্রশাসনিক বিষয় এবং আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগ সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক বিষয়ে আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রী ড. মানিক সাহা বৈঠকে ত্রিপুরায় উন্নত আবহাওয়া পূর্বাভাস ব্যবস্থা এবং দুর্যোগ প্রস্তুতির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা চান। তিনি উল্লেখ করেন, গত বছর রাজ্যে অস্বাভাবিক হারে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সঠিক সময়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের প্রয়োজনীয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ড. জিতেন্দ্র সিং আশ্বাস দেন যে, মিনিস্ট্রি অফ আর্থ সায়েন্স আগামী এক বছরের মধ্যে রাজ্যে একটি এডভান্সড ওয়েদার রাডার স্থাপন করবে। এই অত্যাধুনিক রাডার সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত ও ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস প্রদান করবে, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় রাজ্যকে বিশেষভাবে সহায়তা করবে।

বৈঠকে রাজ্যের বাঁশ শিল্পের উন্নয়ন নিয়েও বিশদ আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এসময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান, জৈবপ্রযুক্তি ও বাঁশ ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য আসামের জোড়হাট ও মণিপুরের বিশেষ প্রতিষ্ঠানগুলি রাজ্যে সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করবে। এর ফলে ত্রিপুরার বাঁশ শিল্পের আর্থিক সম্ভাবনা বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে।

মুখ্যমন্ত্রী ড. মানিক সাহা আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও জোরদার করার জন্য এই রেল সংযোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ড. জিতেন্দ্র সিং জানান, কেন্দ্রীয় সরকার আগরতলা-আখাউড়া রেল প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং খুব শিগগিরই এই প্রকল্প সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এই বৈঠককে ত্রিপুরার উন্নয়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, প্রশাসনিক সমন্বয় এবং আঞ্চলিক সংযোগের উন্নতির মাধ্যমে ত্রিপুরা আরও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। মুখ্যমন্ত্রী ড. মানিক সাহা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একসাথে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।STN

ত্রিপুরা

সাংবাদিকদের কল্যাণে “ত্রিপুরা ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন”

ত্রিপুরা ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্মেলন রবিবার আগরতলার প্রেস ক্লাবে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলনে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে দুই শতাধিক সাংবাদিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে সাংবাদিকদের পেশাগত উন্নয়ন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে গণমাধ্যমের সম্পর্ক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।

সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “গণতন্ত্রের সঠিক বিকাশে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা সাংবাদিকদের প্রধান দায়িত্ব।” এছাড়া, সংবাদমাধ্যমের বিকাশে রাজ্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা প্রশাসনিক ব্যস্ততার কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি, তবে দিল্লি থেকে পাঠানো এক অডিও বার্তায় তিনি সম্মেলনের সাফল্য কামনা করেন। তিনি বলেন, “গণমাধ্যম গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। সংবাদমাধ্যম ও সরকারের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রেখে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি আরও জানান, রাজ্য সরকার সাংবাদিকদের কল্যাণে একাধিক কর্মসূচি চালু রেখেছে।

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডঃ

সম্মেলন উপলক্ষে শনিবার আগরতলা প্রেস ক্লাব চত্বরে শিশু-কিশোরদের জন্য বসে আঁকো প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিপুল সংখ্যক প্রতিযোগী অংশ নেয়। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন বিধানসভার মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায়। এছাড়া, ত্রিপুরার পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে এক বিশেষ চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ফটো সাংবাদিকদের তোলা দৃষ্টিনন্দন ছবি প্রদর্শিত হয়। পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী প্রদর্শনী পরিদর্শন করে অংশগ্রহণকারীদের সংবর্ধিত করেন এবং বলেন, “এ ধরনের প্রদর্শনী ত্রিপুরার পর্যটন প্রচারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”

সাংগঠনিক আলোচনাঃ

সম্মেলনে সংগঠনের সংবিধান সংশোধন, আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন এবং সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সুনীল দেবনাথ গত এক বছরের কার্যক্রমের রিপোর্ট পেশ করেন, এবং সভাপতি বিজয় পাল সম্মেলন পরিচালনা করেন।

সম্মেলনের সূচনাতেই গত এক বছরে প্রয়াত সাংবাদিকদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়, যা আবেগঘন মুহূর্ত হিসেবে উপস্থিত সাংবাদিকদের মন ছুঁয়ে যায়।

সাংবাদিকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় সংবাদমাধ্যম আরও শক্তিশালী হবে এবং পেশাদার সাংবাদিকতা আরও উন্নত হবে। সম্মেলনটি সাংবাদিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হিসেবে কাজ করেছে, যেখানে সংবাদমাধ্যমের ভবিষ্যৎ ও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে মুক্ত আলোচনা হয়েছে।STN