ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রতিফলন!
বাংলাদেশে ইউনুস সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতে, বাংলাদেশি কূটনীতিক মিশনগুলোতে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক রদবদল এবং প্রথম সচিব হিসেবে বিএনপি নেতা আলমাস হোসেনের নিয়োগ সেই পরিবর্তনেরই অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। আগরতলায় নতুন প্রথম সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বিএনপি নেতা এবং বর্তমানে ইউনুস সরকার এর আস্থাভাজন আলমাস হোসেন। এই পদে পূর্বে কর্মরত ছিলেন মোঃ আল আমীন, যিনি শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। ইউনুস সরকারের ক্ষমতাগ্রহণের পরপরই তাঁকে ঢাকায় বদলি করা হয়।
বাংলাদেশে ইউনুস সরকারের ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকেই কূটনীতিক মিশনগুলোতে ব্যাপক রদবদল চলছে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সরিয়ে বিএনপি-জামাত ঘরানার কর্মকর্তাদের নিযুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এরই অংশ হিসেবে আগরতলার সহকারী হাইকমিশনে প্রথম সচিব পদে পরিবর্তন আনা হলো।
গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির পর আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের অফিসের সামনে এক বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়েছিল। এই বিক্ষোভ প্রদর্শনে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে বিক্ষোভকারীরা অফিস চত্বরে প্রবেশ করে। এই ঘটনার পরপরই আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ভিসা ও কনস্যুলার সার্ভিস সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। সম্প্রতি আবারও সেই সেবা চালু করা হলেও কর্মকর্তাদের দ্রুত বদলি করা শুরু করেছে ইউনুস প্রশাসন।
মোঃ আল আমীন, যিনি প্রথম সচিব হিসেবে আগরতলায় দায়িত্ব পালন করছিলেন, তাঁকে গত বছরের ৮ই আগস্ট ঢাকায় বদলি করা হয়। তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের, বিশেষত ত্রিপুরার জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই তাঁকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়, যা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ইউনুস সরকারের ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকেই প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্তরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের ছাটাই এবং মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর খড়্গ নেমে এসেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ কূটনীতিক মিশনগুলো থেকেও পরিবর্তনের হাওয়া বইছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ সরকারের এই প্রশাসনিক পরিবর্তন কেবলমাত্র কর্মক্ষেত্রের রদবদল নয়, বরং এটি রাজনৈতিক প্রভাবেরই বহিঃপ্রকাশ। আগরতলায় নতুন প্রথম সচিব হিসেবে আলমাস হোসেনের যোগদানের ফলে বাংলাদেশ-ভারত বিশেষত ত্রিপুরার সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার মধ্যে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গভীর। তবে কূটনীতিক স্তরে এমন পরিবর্তনের ফলে এই সম্পর্কের ওপর কী প্রভাব পড়বে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউনুস সরকারের এই পদক্ষেপ ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, আগরতলায় আলমাস হোসেনের কার্যকলাপ এবং তাঁর নেতৃত্বে কূটনৈতিক মিশনের ভূমিকা নিয়ে কৌতূহল ও জল্পনা তুঙ্গে। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশ সরকারের এই কূটনীতিক রদবদল ভবিষ্যতে কী প্রভাব ফেলে।