শিল্প দপ্তরের অধিকর্তা কাইজার দেববর্মা জমি কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার!
ত্রিপুরায় ১৩৩ কানি জমি কেলেঙ্কারি নিয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছে। এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে শিল্প দপ্তরের প্রাক্তন অতিরিক্ত অধিকর্তা কাইজার দেববর্মাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আদালতের নির্দেশে তাকে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে পশ্চিম থানার পুলিশ কৃষ্ণনগরের বাড়ি থেকে কাইজার দেববর্মাকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, জাল জমির দলিল তৈরি করে ১৩৩ কানি জমি বিক্রি করেছেন এবং ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ১.২৫ কোটি টাকা হাতিয়েছেন। এই কেলেঙ্কারির মূল মামলাটি দায়ের করেছিলেন দিল্লির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ার্ল্ড এডুকেশন মিশন’-এর অধিকর্তা হিমাংশু পাঞ্চাল।
২০২৩ সালের ১২ জুলাই দায়ের হওয়া এই মামলার পর থেকেই কাইজার দেববর্মা পলাতক ছিলেন। পুলিশ ইতিমধ্যে এই মামলায় দেবাশীষ চক্রবর্তী, বিপ্লব শর্মা, রাজেশ ত্রিপুরা, সুব্রত আচার্য এবং উত্তম সাহাকে গ্রেফতার করেছিল। তবে কাইজার দেববর্মা এতদিন পালিয়ে ছিলেন এবং আগাম জামিনের আবেদন করলেও আদালত তা খারিজ করে দেয়।
ভিযোগ অনুসারে, মোহনপুর মহকুমা শাসক অফিস থেকে জাল জমির দলিল তৈরি করে ১৩৩ কানি জমি বিক্রি করেছিলেন কাইজার দেববর্মা। জমি বিক্রির পাশাপাশি, ওয়ার্ল্ড এডুকেশন মিশনের কাছ থেকে ১.২৫ কোটি টাকা অগ্রিম নিয়েছিলেন তিনি। প্রথমে বোধজংনগরে জমি দেখালেও পরে মোহনপুরের কাছে ১৩৩ কানি জমি দেখানো হয়। জমি নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় মিশনের অধিকর্তা হিমাংশু পাঞ্চাল প্রথমে মোহনপুর মহকুমা শাসকের কাছে অভিযোগ জানান। সাড়া না পেয়ে তিনি ২০২৩ সালের ১২ জুলাই দিল্লিতে মামলা দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ, যার ফলে পাঁচজন গ্রেফতার হলেও এতদিন পলাতক ছিলেন কাইজার দেববর্মা।
কাইজার দেববর্মা শিল্প দপ্তরের অতিরিক্ত অধিকর্তা থাকাকালীন খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদের দায়িত্বে ছিলেন। তখন তিনি মৌমাছি পালনের জন্য সুবিধাভোগীদের সরকারি সামগ্রী প্রদান না করে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেন। তার বিরুদ্ধে জমির জালিয়াতি ছাড়াও সরকারি অর্থ আত্মসাতের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
বাম আমল থেকেই কাইজারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। তিনি এক বাম নেত্রীর সহায়তায় খাদি পর্ষদকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছিলেন। ২০০৬ সালে রাজ্যে প্রথমবার যোগগুরু রামদেবকে এনে কোটি কোটি টাকা রোজগার করেন তিনি এবং শিল্প দপ্তরের অফিসার পদে দীর্ঘদিন থেকে নিজের ব্যাংক ব্যালেন্স ফুলিয়েছেন কাইজার।
পশ্চিম থানার বড়বাবু জানিয়েছেন, কাইজারকে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন জানানো হলেও আদালত তিন দিনের হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। তাকে জেরা করে এই কেলেঙ্কারিতে আরও কারা জড়িত রয়েছে, তাদের নাম জানার চেষ্টা করবে পুলিশ। তদন্তকারীরা আশা করছেন, কাইজারের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়ে আরও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা যাবে। ১৩৩ কানি জমি কেলেঙ্কারি ত্রিপুরার প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক মহলে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। শিল্প দপ্তরের প্রাক্তন অতিরিক্ত অধিকর্তা কাইজার দেববর্মার গ্রেফতারি প্রমাণ করে যে প্রশাসন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বদ্ধপরিকর। এই মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া কী মোড় নেয়, তা এখন দেখার বিষয়।