আজকের বাংলাদেশ, ভবিষ্যতের পাকিস্তান!
বাংলাদেশের ইতিহাস মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় বিজয়ের মাধ্যমে রচিত হয়েছে, যেখানে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বর্তমান সময়ের বাংলাদেশ সেই বিজয়ের মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। স্বাধীনতার মূল আদর্শ ভুলে গিয়ে দেশ এক উশৃঙ্খল, বিভক্ত এবং নৈতিকভাবে অধঃপতিত অবস্থায় পৌঁছেছে। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা ও আত্মস্বার্থপরতার কারণে আজও মীরজাফরের বংশধরদের মতো চরিত্র, দেশ পরিচালনা করছে, যারা নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে। সত্যিকারের দেশপ্রেমের অভাব, ইতিহাস বিকৃতি এবং জাতীয় ঐক্যের সংকটের ফলে বাংলাদেশ আজ বর্বরতার এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বারবার লাঞ্ছিত হচ্ছে।
“যে জাতি তার পিতাকে সম্মান করতে জানে না, সেই জাতি আর যাই হোক অন্তত সভ্য হতে পারে না। যার হাত ধরে বাঙালি জাতি তার মুখের ভাষা ফিরে পেল, মা বোনদের ইজ্জত বাঁচাতে পেরেছিল, ধর্মীয় সন্ত্রাসীদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছিল; তাঁকে অসম্মান করা, আর পুরো জাতিকে অসম্মান করা একই কথা। রাজনৈতিক মতানৈক্য থাকতেই পারে, রাজনীতির মোকাবেলা রাজনীতি দিয়ে করাটাই স্বাভাবিক। একটা গণতান্ত্রিক ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করে তাকে সরিয়ে দিয়ে, ঠিক ইতিহাসের মীরজাফরের ঘটনারই পুনরাবৃত্তি করলো এই বাংলাদেশী বাঙালি জাতি। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র, যা জাতির জন্য এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে;” বলে মন্তব্য করছেন তথ্যবিজ্ঞ মহল।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অস্থির সময় চলছে। ৫ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণের পর দেশজুড়ে ব্যাপক সাড়া পড়ে। এ ভাষণে তিনি জনগণকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানান। তবে তার বক্তব্যের পরপরই স্বঘোষিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অবৈধ সরকার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর দমন-পীড়ন শুরু করেছে। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী শুরু হওয়া এই অভিযানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, নির্যাতন এবং হামলা চালানো হচ্ছে। জানা গেছে, সরকারের উপদেষ্টা পর্যায়ে দুই দিনব্যাপী বৈঠক করে আওয়ামী লীগের আন্দোলন দমনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনার ভাষণের পর চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, গাজীপুর ও রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামে মৌলবাদী গোষ্ঠী, যারা দেশজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। পরিস্থিতি আরও সংকটপূর্ণ হয়ে ওঠে যখন ঢাকার ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি, শেখ হাসিনা ও অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয় এবং সেগুলো ধ্বংস করা হয়।সরকারের দমননীতির কারণে ইতোমধ্যে এক হাজারেরও বেশি আওয়ামী লীগ সমর্থক, প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী ও নারী শিল্পীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের অপরাধ ছিল জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভের ধ্বংসের বিরুদ্ধে কথা বলা। আজ সকালেই গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে সাবেক আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য চয়ন ইসলামকে। এছাড়া, রাতের আঁধারে অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তাদের আটক করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মুহাম্মদ ইউনূসের অবৈধ সরকার ক্ষমতা দখলের পর থেকেই নীতিগত ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। সরকার জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করছে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী শক্তিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে এবং একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে হাঁটছে। জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অবৈধ সরকারের কারণে বাংলাদেশকে সিরিয়ার মতো বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে।
দেশের পরিস্থিতি যখন ভয়াবহ, তখন একটি হাস্যকর ও লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে জামাতপন্থী কিছু বুদ্ধিজীবী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর জন্মবার্ষিকী পালন করেছে এবং উর্দু ও আরবি গান গেয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে উপহাস করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী এই ঘটনাগুলোর মাধ্যমে ইউনূস সরকার প্রমাণ করছে, তারা দেশকে পাকিস্তানি আদর্শে ফিরিয়ে নিতে চায়।
বাংলাদেশের চলমান সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করছে। কলকাতার এক টিভি টক শোতে বিশিষ্ট লেখক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী এক মৌলবাদী আলোচকের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা এখন যা খুশি করতে পারেন, কারণ আপনাদের সুযোগ আছে। কিন্তু ক্ষমতার সমীকরণ বদলে গেলে আপনাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, সেটা ভাবুন। এটা আপনাদের ভাবনার চেয়েও অনেক দ্রুত গতিতে ঘটবে।”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। আওয়ামী লীগকে দমন করার জন্য অবৈধ সরকার যে নৃশংস পদ্ধতি অবলম্বন করছে, তার বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ ক্রমশ সংগঠিত হচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে দেশে নতুন রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যা এই অবৈধ সরকারের পতনের বার্তা বহন করছে।