দিল্লি

দিল্লিবাসীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর!

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সুযোগ্য নেতৃত্বে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় লাভ করল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। দীর্ঘ ২৭ বছর পর দিল্লির মসনদে প্রত্যাবর্তন করছে বিজেপি। এই জয়ের জন্য দিল্লির জনতাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা।

শনিবার আগরতলায় সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দিল্লি ভোটের ফলাফল প্রত্যাশিত ছিল। দেশের মানুষ জানেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশ কীভাবে এগিয়ে চলেছে। গরিব মানুষের কল্যাণে তিনি যেভাবে চিন্তাভাবনা করছেন, সেটারই প্রতিফলন এই ভোটের ফল।”

তিনি আরও বলেন, “দিল্লির মানুষ এতদিন আপ সরকারকে প্রত্যক্ষ করেছেন। কীভাবে তারা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছেন, তা সবার জানা। এবার দিল্লির জনতা প্রকৃত উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছে। এই জয়ের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এবং দিল্লির জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”

প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে শেষবার দিল্লির মসনদে বসেছিল বিজেপি। তখন সুষমা স্বরাজ ছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। এরপর কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি (আপ) পালা করে শাসন করেছে দিল্লিকে। দীর্ঘ ২৭ বছর পর বিজেপি দিল্লির ক্ষমতায় ফিরে এলো, যা দলটির জন্য এক ঐতিহাসিক সাফল্য।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা, উন্নয়নমূলক নীতিগুলি এবং বিজেপির সাংগঠনিক শক্তির সমন্বয়েই দিল্লির ভোটে এই জয় সম্ভব হয়েছে। দিল্লির রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে দিয়ে বিজেপি আবারও রাজধানীর শাসনভার গ্রহণ করতে চলেছে।

ত্রিপুরার

ত্রিপুরার বহুল আলোচিত চিটফান্ডগুলি হাইলাকান্দি কেন্দ্রিক!

ত্রিপুরার বহুল আলোচিত চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই (CBI) তিনজন পলাতক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে। জানা গেছে, অভিযুক্তদের মধ্যে মিন্নাতুল্লাহ বারভূইয়াকে হায়দ্রাবাদে, কামরুল ইসলাম বারভূইয়াকে আসামের হোজাইতে এবং ইমদাদুল্লাহ বারভূইয়াকে তামিলনাড়ুর ভেলোর থেকে আটক করা হয়েছে। তিনজনই আসামের হাইলাকান্দি জেলার বাসিন্দা এবং চিটফান্ড সংস্থা কামা প্রজেক্টস অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের পরিচালক বলে জানা গেছে। এই প্রতারণার মামলায় দীর্ঘদিন ধরে তারা পলাতক ছিলেন।

সূত্রের খবর, ত্রিপুরা সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে সিবিআই,  ত্রিপুরার পশ্চিম আগরতলা, কুমারঘাট এবং তেলিয়ামুড়া থানায় ২০১২-২০১৪ সালের মধ্যে দায়ের করা পৃথক তিনটি মামলা পুনঃনিবন্ধন করে। এই মামলাগুলি সিবিআইকে হস্তান্তর করে ত্রিপুরা পুলিশ। চিটফান্ড সংস্থা কামা ইন্ডিয়া প্রজেক্টস অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড অবৈধভাবে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করে এবং সেবি (SEBI), আরবিআই (RBI) কিংবা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ছাড়াই এই অর্থ লেনদেন চালিয়ে যায়। পরবর্তীতে এই সংস্থার পরিচালকরাই সম্পূর্ণ অর্থ আত্মসাৎ করে নেয়।

তদন্তের সময় প্রমাণিত হয় যে, অভিযুক্ত মিন্নাতুল্লাহ, কামরুল ইসলাম ও ইমদাদুল্লাহ—তিনজনই প্রতারণার মূল হোতা এবং তারা দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। আগরতলার বিশেষ সিবিআই আদালত তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। অবশেষে, হায়দ্রাবাদ, আসামের হোজাই ও তামিলনাড়ুর ভেলোরে কৌশলী অভিযান চালিয়ে সিবিআই তাদের গ্রেপ্তার করে।

এদিকে, সিবিআই ৩ ফেব্রুয়ারি আরও এক অভিযুক্ত বিকাশ দাসকে মহারাষ্ট্রের ভিওয়ান্ডি থেকে গ্রেপ্তার করেছিল। জানাগেছে সেও আসামের হাইলাকান্দিরই বাসিন্দা এবং ত্রিপুরা চিটফান্ড কেলেঙ্কারি মামলার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত। ২০১৩ সাল থেকে সে পলাতক ছিলেন, এবং ২০২৪ সালের ১৬ আগস্ট তার বিরুদ্ধে স্থায়ী পরোয়ানা জারি হয়। সিবিআই তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ২০,০০০ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল এবং অবশেষে অভিযান চালিয়ে তাকে পাকড়াও করে সংস্থাটি।

ত্রিপুরায় চিটফান্ড কেলেঙ্কারি মূলত বামফ্রন্ট সরকারের শাসনামলে ঘটে। তখন একাধিক অবৈধ চিটফান্ড সংস্থা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে প্রতারণা চালায়। ত্রিপুরার অসংখ্য সাধারণ মানুষ তাদের কষ্টার্জিত সঞ্চয় খুইয়েছে, কিন্তু আজও সেই অর্থ তারা ফেরত পায়নি। গত বছর ত্রিপুরা হাইকোর্ট চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে প্রতারিত গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য একটি বিশেষ পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছিল। সেই সূত্রে সিবিআই কেলেঙ্কারির নায়কদের আইনের জালে তুলতে সক্রিয় অভিযান চালাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে এই চিটফান্ড সংস্থাগুলি রাজনৈতিক আশ্রয়ে পরিচালিত হচ্ছিল। ফলে মূল অভিযুক্তদের অনেকেই এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। সিবিআই যদি কঠোর হয়, তাহলে এই চক্রের মূল হোতাদেরও আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। রাজ্যবাসী এখন চাইছে, প্রতারকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হোক এবং আমানতকারীরা তাদের হারানো অর্থ ফেরত পাক। এখন দেখার বিষয়, সিবিআইয়ের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয়।

স্মার্ট

বেআইনি হকার ও টমটম চালকদের দখলে স্মার্ট সিটি!

আগরতলাকে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবে পরিস্থিতি তার বিপরীত। স্মার্ট সিটি পরিকল্পনা অনুযায়ী, শহরের প্রধান সড়কে রিকশা ও টমটম নিষিদ্ধ থাকার কথা। কিন্তু রাজধানীর বুকে এই নিয়মের কোনো বাস্তবায়ন নেই। বরং দিন দিন বেআইনি টমটমের সংখ্যা বাড়ছে, যার ফলে শহরের রাস্তাগুলো তীব্র যানজটে জর্জরিত এবং আগরতলা স্মার্ট সিটিকে পরিণত করেছে এক ব্যতিক্রমী স্মার্ট সিটিতে।

স্মার্ট সিটি প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী, আগরতলার প্রধান সড়কে কোনো টমটম চলাচল করতে পারবে না। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, টমটম ও রিকশার অনিয়ন্ত্রিত চলাচল রাজধানীর যানজটকে ভয়াবহ করে তুলেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন ও ট্রাফিক দপ্তরের কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। একসময় ট্রাফিক দপ্তর এই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিলেও, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তারা তা কার্যকর করতে পারেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।

শহরের ফুটপাতগুলো পথচারীদের চলাচলের জন্য বরাদ্দ থাকলেও, বর্তমানে তা হকারদের দখলে চলে গেছে। বিভিন্ন সময়ে পুর নিগম ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযান চালালেও, অভিযান শেষ হওয়ার কিছুদিন পরেই পুনরায় দখলদারি শুরু হয়। গত পুজোর আগে পুর নিগম একবার অভিযান চালালেও, বর্তমানে সেই একই অবস্থায় ফিরে গেছে শহরের ফুটপাত। বিশেষ করে পোস্ট অফিস চৌমুহনি থেকে কামান চৌমুহনি পর্যন্ত রাস্তার ফুটপাত পুরোপুরি দখল হয়ে গেছে, ফলে ক্রেতা ও পথচারীদের বাধ্য হয়ে মূল সড়কে হাঁটতে হচ্ছে, যা যানজটের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আগরতলা শহরকে যানজট মুক্ত করতে টমটমের জন্য নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, বর্ডার গোলচক্কর থেকে ফায়ার সার্ভিস চৌমুহনি, শংকর চৌমুহনি ও অন্যান্য গলি রাস্তায় নির্দিষ্ট স্টপেজ তৈরি করা হবে, যেখানে টমটমগুলো যাত্রী উঠানামা করবে। কিন্তু সেই পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হয়নি।

২০১৮ সালে বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকারের প্রথম মেয়াদে রাজধানীকে টমটম মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক নেতার ইন্ধনে তা আটকে যায়। অভিযোগ রয়েছে, কিছু রাজনৈতিক নেতা অবৈধভাবে টমটম চালানোর অনুমতি দিচ্ছেন এবং অনেক বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।

আগরতলার জনসংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি যানবাহনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে টমটম, ই-রিকশা ও অটোর অনিয়ন্ত্রিত চলাচল শহরের যানজটকে আরও তীব্র করে তুলেছে। যানজট কমাতে এবং পথচারীদের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের সুযোগ তৈরি করতে শহর থেকে টমটম অপসারণ, ফুটপাত দখলমুক্তকরণ এবং অবৈধ পার্কিং নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

শহরবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন চাইলে এই সমস্যা সমাধান করতে পারে। তবে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে এখন পর্যন্ত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শহরের পরিবহন দপ্তর ও ট্রাফিক বিভাগ যদি কঠোর নজরদারি শুরু করে, তাহলে আগরতলাকে সত্যিকারের স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।