শিক্ষা

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুণগত শিক্ষাদানের প্রচেষ্টা!

“আজকের শিশুরাই আগামীদিনের ভবিষ্যৎ। তাদের ছোট থেকেই সঠিক শিক্ষা ও ভিত্তি মজবুত করার দায়িত্ব শিক্ষকদের।” বৃহস্পতিবার আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে অনুষ্ঠিত রাজ্য স্তরের টিচিং লার্নিং মেটেরিয়াল (টিএলএম) প্রতিযোগিতা কাম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে এ কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। তিনি বলেন, “বিল্ডিং নির্মাণের সময় ভিত মজবুত না হলে উপরে ওঠা যায় না, ঠিক তেমনই শিশুদের শিক্ষা জীবনেও শক্ত ভিত্তি তৈরি করা জরুরি। তাই শিক্ষকদের আরও উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।”

মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্য সরকার শিক্ষার মানোন্নয়নে নানান কর্মসূচি গ্রহণ করছে। বিশেষ করে, যোগ্য ছাত্রছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য ঋণ ও স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি (NEP) অনুযায়ী শিক্ষার উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেন, আগামী দিনে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে তারাই, যাদের কাছে জ্ঞান থাকবে। তাই জ্ঞান অর্জনের জন্য শিশুদের প্রথম থেকেই একটি শক্তিশালী ভিত্তি প্রয়োজন।”

মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০২৬-২৭ সালের মধ্যে মৌলিক সাক্ষরতা ও সংখ্যা গণনার দক্ষতা অর্জন করার লক্ষ্যে রাজ্যে ‘নিপুণ ত্রিপুরা’ মিশন চালু করা হয়েছে। ২০২১ সালের ৫ জুলাই কেন্দ্রীয়ভাবে নিপুণ মিশন শুরু হয় এবং ২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর ত্রিপুরায় ‘নিপুণ ত্রিপুরা’ চালু হয়। “ত্রিপুরায় নিপুণ মিশনের আওতায় ১.৫ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে, যেখানে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষক নিযুক্ত রয়েছেন। রাজ্যে ৪,২২৭টি সরকারি ও অনুদানপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ে এই কর্মসূচি চালু রয়েছে এবং ১০,১৮২ জন শিক্ষক ও ৯০ হাজার শিক্ষার্থীর কাছে নিপুণ ত্রিপুরার বিষয়বস্তু পৌঁছানো হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, “অনেকেই বলে, ত্রিপুরার ছাত্রছাত্রীরা ভালো ফল করছে না। তারা শিক্ষকদের দোষারোপ করে। কিন্তু আমরা সমস্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করছি, যাতে রাজ্যের সমস্ত বিদ্যালয় ভালো ফলাফল করতে পারে। নিপুণ ত্রিপুরার সাফল্যের মূল চালিকাশক্তি হলেন আমাদের শিক্ষকরা। তাদের প্রশিক্ষণ আরও উন্নত করা হচ্ছে, যাতে শিক্ষাদানের মান আরও বৃদ্ধি পায়।”

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শ্রেণিকক্ষে উদ্ভাবনী শিক্ষাদান খুব গুরুত্বপূর্ণ। টিচিং লার্নিং মেটেরিয়াল (TLM) ব্যবহারের ফলে ছাত্রছাত্রীরা আরও ভালোভাবে শিখতে পারে।” তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “একজন শিক্ষক হয়তো একাডেমিকভাবে খুব দক্ষ, কিন্তু যদি তিনি শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে বোঝাতে না পারেন, তাহলে তার শিক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি কার্যকর হবে না। অন্যদিকে, একজন শিক্ষক সহজভাবে পড়ানোর দক্ষতা রাখলে, শিক্ষার্থীরা তার প্রতি আগ্রহী হবে।”

মুখ্যমন্ত্রী জানান, “টিচিং লার্নিং মেটেরিয়াল প্রদর্শনী জাতীয় স্তরেও প্রশংসিত হয়েছে। এটি শিক্ষকদের মধ্যে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করেছে। রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে ৭ হাজারের বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকা অংশগ্রহণ করেছেন, যা গত বছরের তুলনায় ১৩৩ শতাংশ বেশি।”

রাজ্যে নিপুণ ত্রিপুরা মিশনের সঠিক বাস্তবায়নের জন্য ২০০ জন ব্লক রিসোর্স পার্সনকে মূল প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যারা পরবর্তীতে ১০,১৮২ জনের বেশি শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন— শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, শিক্ষা অধিকর্তা এন সি শর্মা, এসসিইআরটি অধিকর্তা এল ডার্লং, রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক শুভকারানন্দ মহারাজ, অন্যান্য সরকারি আধিকারিকগণ। অনুষ্ঠানে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত ও সম্মানিত করা হয়।

লংতরাই

শিল্প বাণিজ্য মেলায় লংতরাই ব্র্যান্ড সাংবাদিকদের সম্মানিত করলেন!

৩৫তম শিল্প বাণিজ্য মেলায় প্রতিদিন লংতরাই ব্র্যান্ড তাদের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের ব্র্যান্ডকে উপস্থাপন করছেন। এরই ধারাবাহিকতায়, গতকাল ৫ই ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিটে সাংবাদিকদের সম্মাননা জ্ঞাপন অনুষ্ঠান আয়োজন করেন, যা এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রইল।

সংবাদ মাধ্যম গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ বছর লংতরাই ব্র্যান্ড ১০ জন বিশিষ্ট সাংবাদিককে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করে। তারা হলেন—

  • আজকের ফরিয়াদ ও নিউজ টুডে থেকে শ্রী প্রণব শীল
  • দৈনিক অনলাইন থেকে শ্রীমতি স্বরূপা নাহা
  • প্রতিবাদী কলম থেকে শ্রী মিহির লাল সরকার
  • টাইমস ২৪ থেকে শ্রীমতি শেষাদ্রী দাশগুপ্তা
  • ত্রিপুরা অবজার্ভার থেকে শ্রী অভিজিৎ নাথ
  • সোশ্যাল বাংলা থেকে শ্রী বিশ্বনাথ চক্রবর্তী
  • স্যন্দন টিভি থেকে শ্রী বিষ্ণুপদ বণিক
  • স্যন্দন পত্রিকা থেকে শ্রী সেবক দেব
  • নিউজ ভ্যানগার্ড থেকে শ্রী মিল্টন ধর
  • ত্রিপুরা দর্পণ থেকে শ্রী প্রদীপ কুমার সাহা

এই সম্মাননা প্রদান শুধুমাত্র ১০ জন সাংবাদিকের স্বীকৃতি নয়, বরং গোটা সংবাদ মাধ্যমের প্রতি লংতরাই পরিবারের গভীর শ্রদ্ধার প্রতিফলন।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন লংতরাই ব্র্যান্ডের কর্ণধার শ্রী রতন দেবনাথ। তিনি সাংবাদিকদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা রাজ্য ও দেশের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। তিনি রাজ্যের সংবাদ মাধ্যমের দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিষয়ে আলোচনা করেন এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন আগরতলা প্রেস ক্লাবের সহকারী সম্পাদক শ্রী অভিষেক দে। তিনি লংতরাই ব্র্যান্ডের  মহৎ উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং রাজ্যের সংবাদ মাধ্যমকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে লংতরাই পরিবারের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

এদিন অনুষ্ঠানে লংতরাই ব্র্যান্ডের সিইও শ্রী ভবেশ দেবনাথ-ও উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের এই সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে লংতরাই ব্র্যান্ড সংবাদ মাধ্যমের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়েছে, যা নিঃসন্দেহে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

ক্ষমতা

আরো বেশি ক্ষমতা ভোগ করার জন্য প্রদ্যুৎ কিশোরের নতুন হুমকি!

 ক্ষমতায় থেকে মানুষকে সাহায্য করতে না পারলে ক্ষমতায় থাকার কি প্রয়োজন? তিপরা মথার সুপ্রিমো প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মা ফের মন্ত্রিসভা থেকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিলেন। যদিও এই ধরনের হুমকি তিনি আগেও দিয়েছেন, তবে এবার তার বক্তব্যে স্পষ্টতই রাজনৈতিক দূরবীসন্ধি রয়েছে। তিনি বলেন, “ক্ষমতা ভোগের জন্য নয়, জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য রাজনীতি করছি।”

তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। অনেকেই মনে করছেন, নিজের স্বার্থসিদ্ধি না হলেই প্রদ্যুৎ কিশোর এ ধরনের হুমকি দেন। কেউ কেউ বলছেন, এটি তিপ্রাসাদের প্রতি নতুন করে মগজ ধোলাইয়ের কৌশল মাত্র।

সামাজিক মাধ্যমে বুধবার এক বার্তায় প্রদ্যুৎ কিশোর দলের নেতাদের সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার, পানীয় জলের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার এবং জনসংযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানান। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তিনি বুঝতে পারছেন, তিপরা মথার মাটি ক্রমেই সরে যাচ্ছে, কারণ দলের অনেক নেতা ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, “ক্ষমতায় থেকে মানুষকে সাহায্য করতে না পারলে সে ক্ষমতার কোনো প্রয়োজন নেই।” পাশাপাশি, “সরকারের শরিক হয়ে যদি জনগণের উপকারে আসতে না পারি, তাহলে সে সরকারে থাকারও কোনো মানে নেই।” এই মন্তব্যকে রাজনৈতিক মহল তার প্রচ্ছন্ন হুমকি হিসেবেই দেখছে।

প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির কুচকাওয়াজে ত্রিপুরার ট্যাবলুতে রাজ্যের সংস্কৃতি তুলে ধরা হলেও তা যথাযথ হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রদ্যুৎ কিশোর। তিনি বলেন, “তিপ্রাসা সংস্কৃতির সঙ্গে অন্য সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটিয়ে ত্রিপুরার প্রকৃত ঐতিহ্যকে দুর্বল করা হয়েছে।” প্রদ্যুৎ অভিযোগ করেন, “৪০ বছর বামেরা তিপ্রাসাদের জন্য কিছু করেনি, আর বিজেপি এখন এডিসির ক্ষমতা খর্ব করছে।” তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা এডিসিকে সরাসরি অর্থ দেওয়ার দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন, যা তিপ্রাসাদের প্রতি বিমাতা-সুলভ আচরণ। তিনি আরও বলেন, “করোনার অজুহাতে ভিলেজ কাউন্সিল নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এখন তো মহামারি নেই। তাহলে কেন ভোট হচ্ছে না?”

রাজনৈতিক অভিজ্ঞদের মতে, এডিসির নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে, ধীরে ধীরে বিজেপি বিরোধিতার সুর চরাচ্ছেন ক্ষমতালোভী প্রদ্যুৎ কিশোর।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তিপরা মথার নেতাদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা এবং ক্ষমতালোভী আচরণ সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে। পাহাড়ের জনগণ বুঝতে পারছেন, তিপরা মথা ক্ষমতার লোভে রাজনীতি করছে, ফলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কমছে। গত বিধানসভায় গোপন রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে তিপরা মথা ভালো ফল করেছিল, কিন্তু এখন তাদের জনপ্রিয়তা কমছে। তাই প্রদ্যুৎ ফের নতুন কোন দূরবীসন্ধি পাকাচ্ছেন।

রাজনৈতিক মহলের মতে, এটি জনগণের অধিকার রক্ষার লড়াই নাকি শুধুমাত্র তার রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা। এডিসি নির্বাচনকে সামনে রেখে তিপরা মথার অবস্থান কী হবে, প্রদ্যুৎ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেন, তা এখন দেখার বিষয়।

লেকচৌমুহনী

লেকচৌমুহনী বাজারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে!

লেকচৌমুহনী বাজার ভেঙে ফেলার সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আজ প্রায় ৬০০-৭০০ ব্যবসায়ী আগরতলা পৌর নিগমের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড অফিস ঘেরাও করেন। ব্যবসায়ীদের দাবি, উপযুক্ত বিকল্প ব্যবস্থা না করে বাজার উচ্ছেদ করা চলবে না।

সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি মাইকিং করে জানানো হয়েছে যে লেকচৌমুহনী বাজার ভেঙে আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে অনেক ব্যবসায়ী এর বিরোধিতা করছেন। তারা মনে করেন, বাজার ভেঙে দেওয়া হলে তাদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। অন্যদিকে, প্রশাসনের দাবি, বাজারটি বর্তমানে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় রয়েছে, যেখানে টয়লেট, ইউরিনাল ও বাথরুমের পাশেই খাদ্যপণ্য বিক্রি হয়।ব্যবসায়ীরাও স্বীকার করেছেন যে এখানে মশা ও নানা ধরনের কীটপতঙ্গের উপদ্রব রয়েছে, যার কারণে তাদের প্রতি মাসে টিকা নিতে হয়।

সরকার চায় লেকচৌমুহনী বাজারকে আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে রূপান্তর করতে। যেহেতু এই বাজারটি আগরতলা স্মার্ট সিটির আওতাভুক্ত, তাই এর বর্তমান যানজটপূর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে উন্নত করা জরুরি বলে মনে করছে প্রশাসন। বর্তমানে অধিকাংশ ব্যবসায়ী রাস্তা দখল করে ব্যবসা চালাচ্ছেন, যার ফলে প্রায়শই যানজট লেগে থাকে। এমনকি, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দুর্যোগ মোকাবিলা বা অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই উন্নয়নমূলক কাজের বিরুদ্ধে একাংশের ব্যবসায়ী বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তারা চান না সরকার আধুনিকীকরণ করুক। অথচ এই বাজারে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা শুধু ব্যবসায়ীদের জন্য নয়, সাধারণ জনগণের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার কি বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করতে পারবে, নাকি আন্দোলন আরও তীব্র হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

ত্রিপুরায়

ত্রিপুরায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ওয়েল ট্যাংকার বন্ধের ডাক!

ভারতীয় প্রাইভেট ট্রান্সপোর্ট মজদুর মহা সংঘ, ত্রিপুরায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ওয়েল ট্যাংকার পরিষেবা বন্ধের ডাক দিয়ে কৃত্রিম জ্বালানি সংকট তৈরির প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। বুধবার দুপুরে ধর্মনগরে এক বিশাল মিছিল করে তাঁরা জেলা শাসকের অফিসের সামনে ধর্নায় বসেন।

সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরেই উত্তর ত্রিপুরা জেলায় ভারতীয় মজদুর সংঘের প্রাক্তন ও বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে মতানৈক্য ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চলছে। অভিযোগ, প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিপ্লব দাস ও তাঁর অনুগামীরা বর্তমান নেতৃত্বকে অফিস থেকে জোরপূর্বক বের করে দিচ্ছেন এবং তাঁদের ভয় দেখাচ্ছেন। এরই প্রতিবাদে ভারতীয় প্রাইভেট ট্রান্সপোর্ট মজদুর মহা সংঘের শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। বুধবার দুপুর আনুমানিক বারোটার সময় সংগঠনের শ্রমিকরা প্রতিবাদ মিছিল করে জেলা শাসকের অফিসের সামনে এসে ধর্নায় বসেন। যদিও জেলা শাসক অনুপস্থিত ছিলেন, তবুও চারজনের এক প্রতিনিধি দল মহকুমা শাসক সজল দেবনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্থায়ী সমাধানের দাবিতে ডেপুটেশন প্রদান করেন।

সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি অসীম দত্ত জানিয়েছেন, যতদিন পর্যন্ত এই ঘটনার স্থায়ী সমাধান না হবে, ততদিন ত্রিপুরায় ওয়েল ট্যাংকার পরিষেবা বন্ধ থাকবে। শ্রমিকদের উপর অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে তাঁরা যে কোনো মূল্যে লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

এই কর্মবিরতির ফলে ত্রিপুরা রাজ্যে জ্বালানি পরিবহন ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে প্রশাসন দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করতে উদ্যোগী হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারীরা।

বিশ্বের

‘ফোর্বস’ প্রকাশ করল ২০২৫ সালের বিশ্বের ক্ষমতা তালিকা!

আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সামরিক শক্তি, অর্থনীতি ও কূটনৈতিক প্রভাবের ভিত্তিতে ফোর্বস প্রকাশ করেছে ২০২৫ সালের বিশ্বের শীর্ষ ১০ ক্ষমতাধর দেশের তালিকা। এই তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে প্রথম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তবে ভারত আশানুরূপ স্থান অর্জন করতে পারেনি।

বিশ্ব মঞ্চে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাব থাকা সত্ত্বেও এই তালিকায় ভারত ১২তম স্থানে রয়েছে। যদিও অর্থনৈতিক শক্তির দিক থেকে ভারত বিশ্বে ৫ম বৃহত্তম অর্থনীতি, তবে সামরিক শক্তি, রাজনৈতিক প্রভাব এবং কূটনৈতিক সংযোগের বিচারে ভারত এখনো শীর্ষ ১০-এ প্রবেশ করতে পারেনি।

শীর্ষ ১০ দেশের তালিকাঃ

শীর্ষ ১০ দেশের তালিকা

যদিও বিশ্বের অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে ভারত বর্তমানে ৫ম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। তবে সামরিক শক্তি, আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং বৈশ্বিক প্রভাবের বিচারে অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় ভারত এখনো অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল–

  • সামরিক শক্তিঃ ভারতীয় সেনাবাহিনী শক্তিশালী হলেও প্রযুক্তিগত দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং রাশিয়ার তুলনায় অনেক পিছিয়ে। সামরিক গবেষণা এবং উন্নয়নের (R&D) ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে ভারতে কম বিনিয়োগ করা হয়।
  • কূটনৈতিক প্রভাবঃ ভারত অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য হলেও, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ না পাওয়ায় আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সীমিত প্রভাবশালী।
  • অর্থনৈতিক বৈষম্য ও সামাজিক উন্নয়নঃ অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও, ভারতে দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং অসমতা এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
  • প্রতিরক্ষা ব্যয়ঃ ২০২৫ সালে ভারতের সামরিক বাজেট অন্যান্য বৃহৎ সামরিক শক্তিধর দেশের তুলনায় কম। চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া প্রতিরক্ষা গবেষণায় বেশি বিনিয়োগ করে যা তাদের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখতে সাহায্য করছে।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল এবং আগামী এক দশকে এটি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।

india

 

  • অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিঃ ২০২৫ সালে ভারত ৫ম বৃহত্তম অর্থনীতি হলেও, ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ৩য় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারে।
  • প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধিঃ ভারত স্বদেশীয় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিকাশে বিনিয়োগ করছে এবং সামরিক উৎপাদন শক্তিশালী করছে।
  • আন্তর্জাতিক সংযোগঃ কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করতে ভারত বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তি, কৌশলগত জোট ও নিরাপত্তা সহযোগিতায় জোর দিচ্ছে।
  • সবুজ শক্তি ও টেকনোলজিঃ ভারত নবায়নযোগ্য শক্তি ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে যা ভবিষ্যতে তার ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিশ্বশক্তির মানচিত্রে ভারতের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময়। বর্তমানে ভারত বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং আগামী দশকে এটি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি দেশটি সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, কৌশলগত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মজবুত করা এবং বৈশ্বিক কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে।

ভারত বর্তমানে প্রতিরক্ষা খাতে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। দেশীয় অস্ত্র উৎপাদন, প্রযুক্তিগত গবেষণা ও সামরিক আধুনিকীকরণে মনোযোগ দেওয়ায় ভারত ভবিষ্যতে সামরিক শক্তির দিক থেকে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কৌশলগত জোট ও বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে বিশ্ব রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ভারতে পরিকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং নবায়নযোগ্য শক্তির উপর ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে ভারতের ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করবে। যদি সামরিক, প্রযুক্তি ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে আরও উন্নতি করা যায়, তবে আগামী দশকে ভারত শীর্ষ ১০ ক্ষমতাধর দেশের তালিকায় প্রবেশ করতে পারে এবং একটি বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হবে। তবে এর জন্য সরকারের আরও বিনিয়োগ, দক্ষ প্রশাসন এবং কৌশলগত পরিকল্পনার প্রয়োজন হবে।

দুর্যোগ

দুর্যোগ মোকাবিলার সচেতনতা ও প্রস্তুতি!

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার সচেতনতা ও প্রস্তুতি বাড়াতে দক্ষিণ জেলার শান্তির বাজার ডিগ্রী কলেজের মাঠে এক বিশেষ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এই মহড়ায় বিভিন্ন জরুরি পরিষেবা বিভাগ, ছাত্রছাত্রী এবং সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

মহড়ার দৃশ্যপট অনুযায়ী, কলেজ চলাকালীন সময়ে হঠাৎ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্প শুরু হতেই ছাত্রছাত্রীরা দ্রুত কলেজ ভবন থেকে বেরিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়। তবে ভূমিকম্পের ফলে কিছু শিক্ষার্থী ও কর্মী কলেজ ভবনের ভেতরে আটকে পড়ে এবং আহত হয়। উদ্ধারকাজে প্রথমে এগিয়ে আসে সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা। এরপর দমকল বাহিনী, টি এস আর বাহিনী এবং এন ডি আর এফ (ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স) যৌথভাবে উদ্ধার কার্যক্রম চালায়। আহতদের দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য মেডিকেল রিলিফ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করার নির্দেশ দেন।

এই মহড়ার মাধ্যমে দুর্যোগকালীন সময়ের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মহড়ার শেষে দক্ষিণ জেলার জেলাশাসক স্মৃতা মল (আইএএস) সংবাদমাধ্যমের সামনে জানান, “প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরি। এই মহড়ার মাধ্যমে সকলকে সচেতন ও দক্ষ করে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”

মহড়া শেষে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মহকুমাশাসক মনোজ কুমার সাহা, এন ডি আর এফ-এর আধিকারিক এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থেকে মহড়ার কার্যকারিতা ও ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনা করেন। এই বিশেষ মহড়ার মাধ্যমে দুর্যোগকালীন সময়ে জরুরি প্রতিক্রিয়া, উদ্ধারকাজ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপর্যয় মোকাবিলায় সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।