শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুণগত শিক্ষাদানের প্রচেষ্টা!
“আজকের শিশুরাই আগামীদিনের ভবিষ্যৎ। তাদের ছোট থেকেই সঠিক শিক্ষা ও ভিত্তি মজবুত করার দায়িত্ব শিক্ষকদের।” বৃহস্পতিবার আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে অনুষ্ঠিত রাজ্য স্তরের টিচিং লার্নিং মেটেরিয়াল (টিএলএম) প্রতিযোগিতা কাম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে এ কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। তিনি বলেন, “বিল্ডিং নির্মাণের সময় ভিত মজবুত না হলে উপরে ওঠা যায় না, ঠিক তেমনই শিশুদের শিক্ষা জীবনেও শক্ত ভিত্তি তৈরি করা জরুরি। তাই শিক্ষকদের আরও উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।”
মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্য সরকার শিক্ষার মানোন্নয়নে নানান কর্মসূচি গ্রহণ করছে। বিশেষ করে, যোগ্য ছাত্রছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য ঋণ ও স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি (NEP) অনুযায়ী শিক্ষার উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেন, আগামী দিনে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে তারাই, যাদের কাছে জ্ঞান থাকবে। তাই জ্ঞান অর্জনের জন্য শিশুদের প্রথম থেকেই একটি শক্তিশালী ভিত্তি প্রয়োজন।”
মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০২৬-২৭ সালের মধ্যে মৌলিক সাক্ষরতা ও সংখ্যা গণনার দক্ষতা অর্জন করার লক্ষ্যে রাজ্যে ‘নিপুণ ত্রিপুরা’ মিশন চালু করা হয়েছে। ২০২১ সালের ৫ জুলাই কেন্দ্রীয়ভাবে নিপুণ মিশন শুরু হয় এবং ২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর ত্রিপুরায় ‘নিপুণ ত্রিপুরা’ চালু হয়। “ত্রিপুরায় নিপুণ মিশনের আওতায় ১.৫ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে, যেখানে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষক নিযুক্ত রয়েছেন। রাজ্যে ৪,২২৭টি সরকারি ও অনুদানপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ে এই কর্মসূচি চালু রয়েছে এবং ১০,১৮২ জন শিক্ষক ও ৯০ হাজার শিক্ষার্থীর কাছে নিপুণ ত্রিপুরার বিষয়বস্তু পৌঁছানো হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “অনেকেই বলে, ত্রিপুরার ছাত্রছাত্রীরা ভালো ফল করছে না। তারা শিক্ষকদের দোষারোপ করে। কিন্তু আমরা সমস্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করছি, যাতে রাজ্যের সমস্ত বিদ্যালয় ভালো ফলাফল করতে পারে। নিপুণ ত্রিপুরার সাফল্যের মূল চালিকাশক্তি হলেন আমাদের শিক্ষকরা। তাদের প্রশিক্ষণ আরও উন্নত করা হচ্ছে, যাতে শিক্ষাদানের মান আরও বৃদ্ধি পায়।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শ্রেণিকক্ষে উদ্ভাবনী শিক্ষাদান খুব গুরুত্বপূর্ণ। টিচিং লার্নিং মেটেরিয়াল (TLM) ব্যবহারের ফলে ছাত্রছাত্রীরা আরও ভালোভাবে শিখতে পারে।” তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “একজন শিক্ষক হয়তো একাডেমিকভাবে খুব দক্ষ, কিন্তু যদি তিনি শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে বোঝাতে না পারেন, তাহলে তার শিক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি কার্যকর হবে না। অন্যদিকে, একজন শিক্ষক সহজভাবে পড়ানোর দক্ষতা রাখলে, শিক্ষার্থীরা তার প্রতি আগ্রহী হবে।”
মুখ্যমন্ত্রী জানান, “টিচিং লার্নিং মেটেরিয়াল প্রদর্শনী জাতীয় স্তরেও প্রশংসিত হয়েছে। এটি শিক্ষকদের মধ্যে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করেছে। রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে ৭ হাজারের বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকা অংশগ্রহণ করেছেন, যা গত বছরের তুলনায় ১৩৩ শতাংশ বেশি।”
রাজ্যে নিপুণ ত্রিপুরা মিশনের সঠিক বাস্তবায়নের জন্য ২০০ জন ব্লক রিসোর্স পার্সনকে মূল প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যারা পরবর্তীতে ১০,১৮২ জনের বেশি শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন— শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, শিক্ষা অধিকর্তা এন সি শর্মা, এসসিইআরটি অধিকর্তা এল ডার্লং, রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক শুভকারানন্দ মহারাজ, অন্যান্য সরকারি আধিকারিকগণ। অনুষ্ঠানে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত ও সম্মানিত করা হয়।