ত্রিপুরা

ত্রিপুরা রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে বাড়ছে এইচআইভি এইডসের সংক্রমণ!

ত্রিপুরায় নতুন প্রজন্মের মধ্যে শিরাপথে ড্রাগস নেওয়ার প্রবণতা ভয়ঙ্করভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। একইসঙ্গে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এইচআইভি সংক্রমণ। বিশেষ করে রাজধানী আগরতলায় হোস্টেলগুলিতে ড্রাগসের রমরমা চলছে বলে জানা গেছে। আগরতলা পুরনিগম এলাকার তিনশতাধিক ব্যক্তি ইতিমধ্যেই এইচআইভি পজিটিভ বলে চিহ্নিত হয়েছেন।

আগাম সতর্কবার্তা সত্বেও, কার্যকরী পদক্ষেপ নেই

tripura aids

প্রায় এক বছর আগে আগরতলা পুরনিগমে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে মেয়র দীপক মজুমদার ও উপস্থিত ছিলেন। সে সময়ের ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির মিশন ডিরেক্টর দ্বীপ দেব্বর্মা জানিয়েছিলেন, শিরাপথে ড্রাগস গ্রহণের ফলে এইচআইভি সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, প্রতিটি পুর ওয়ার্ডে ড্রাগস ও এইচআইভির বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে। ক্লাবগুলোকেও যুক্ত করে প্রতিটি এলাকায় নেশার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সেই পরিকল্পনার কার্যকরী কোনো প্রয়াস চোখে পড়েনি, এবং প্রশাসনিক কোনো কঠোর পদক্ষেপ ও দেখা যায়নি। ফলে ক্রমাগত বাড়ছে শিরাপথে মাদক গ্রহণ এবং তার সঙ্গে বাড়ছে এইচআইভি সংক্রমণ।

হোস্টেলগুলিই ড্রাগসের প্রধান ঘাঁটি

উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে যে, রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রের কিছু হোস্টেলে চলছে মাদকের অবাধ কারবার। বিশেষ করে কৃষ্ণনগর ও ধলেশ্বর এলাকার কয়েকটি হোস্টেল চিহ্নিত হয়েছে, যেখানে ড্রাগসের সেবন ও বিক্রি দুটোই চলছে। প্রশাসন বিষয়টি জানলেও, আইনি জটিলতার কারণে এখনও পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। সূত্রের খবর, এক বছর আগে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কয়েকটি বয়েজ হোস্টেলে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করলেও, হোস্টেলের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা গার্ড ও হোস্টেল ইনচার্জদের কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যাতে নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত ছাত্ররা বাইরে বের হতে না পারে। কিন্তু এসব নির্দেশ যে কেবলমাত্র কাগজে-কলমেই রয়েগেছে, তা এখন স্পষ্ট

হোস্টেলের আশেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ও ইনজেকশনই প্রমাণ করে, কীভাবে তরুণ প্রজন্ম এই মরন নেশার শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামের সহজ-সরল ছাত্রদের টার্গেট করছে মাদক কারবারিরা। প্রথমে নামমাত্র মূল্যে ড্রাগস সরবরাহ করে তাদের আসক্ত করে তোলা হয়, তারপর তাদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ আদায় করা হয়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ভয়াবহ পরিস্থিতি

ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী এইচআইভি পজিটিভ হয়ে গেছে। পশ্চিম জেলার ৫৭টি স্কুল ও কলেজের ৬২ জন পড়ুয়া ইতিমধ্যেই এইচআইভি পজিটিভ বলে চিহ্নিত হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির কর্তৃক সমীক্ষায় জানা গেছে, ত্রিপুরায় প্রায় ৫৭০ জন স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া এই মারণ রোগে আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে, কারণ অধিকাংশ নেশাগ্রস্ত ছাত্র-ছাত্রী নিজেদের আড়ালে রাখার চেষ্টা করে। এদিকে, পশ্চিম জেলার পর দক্ষিণ ত্রিপুরা ও ধলাই জেলার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। শহরের ছয়টি নামী স্কুলে ২০-২৫ জন ছাত্র ইতিমধ্যেই এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছে।

সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ

শুধু এইচআইভি-ই নয়, ড্রাগস ব্যবহারের ফলে হেপাটাইটিস বি ও হেপাটাইটিস সি সংক্রমণের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ২০১৮ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বিশ্ব এইডস দিবসে এইচআইভি সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি রাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠিত কলেজের ছাত্রদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের কথা জানিয়েছিলেন। তখনই তিনি প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতা মূলক কর্মসূচি নেওয়ার জন্য। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রয়াস দেখা যায়নি। শুধু স্কুল-কলেজ নয়, নেশামুক্তি কেন্দ্রেও ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। আগরতলার ডনবস্কো এলাকার একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে ২৭ জন এইচআইভি পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে।

জনজাতি এলাকাতে দ্রুত ছড়াচ্ছে সংক্রমণ

এডিসির সংস্কৃতি দপ্তরের নির্বাহী সদস্য কমল কলই জানান, রাজ্যের প্রত্যন্ত জনপদেও এইচআইভি সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। একসময় কাঞ্চনপুর ছিল সংক্রমণের কেন্দ্রস্থল, কিন্তু বর্তমানে সিমনা থেকে কিল্লা পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় জনজাতি যুবক-যুবতীরা শিরাপথে ড্রাগস নিচ্ছে, ফলে দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়ছে এইচআইভি।

ড্রাগসের সরবরাহ

স্থানীয় সূত্রের খবর, অভয়নগর ও বটতলা বাজার এলাকা থেকে মাদকের একটি বড় চক্র পরিচালিত হচ্ছে। এখান থেকে রাজধানীর বিভিন্ন হোস্টেল ও সরকারি আবাসিকেও ড্রাগস সরবরাহ করা হচ্ছে। শিশুবিহার স্কুল সংলগ্ন একটি পরিত্যক্ত যাত্রীনিবাসেও ড্রাগসের রমরমা কারবার চলছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসন ড্রাগসের বিরুদ্ধে বারবার পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও, বাস্তবে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং দিনের পর দিন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আগামী দিনে ত্রিপুরার তরুণ প্রজন্ম ভয়াবহ সংকটে পড়বে। শুধু ভাষণ বা প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করাই এখন জরুরি। ত্রিপুরায় তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে এখনই যুদ্ধকালীন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। হোস্টেল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে কড়া নজরদারি চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সচেতনতা মূলক কর্মসূচি বাড়ানোর পাশাপাশি, ড্রাগস ও এইচআইভি সংক্রমণ রোধে প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুবা পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে, আর তার মাশুল দিতে হবে গোটা রাজ্যকে।

উত্তর

উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়নে, বাজেটে বড়সড় বরাদ্দ..!

উত্তর পূর্বাঞ্চলের সংযোগ বাড়াতে উড়ান প্রকল্পের আওতায় ১২০টি নতুন গন্তব্য যুক্ত করা হচ্ছে। এই অঞ্চলে ছোট বিমানবন্দর ও হেলিপ্যাড নির্মাণে জোর দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে আগামী ১০ বছরে ৪ কোটি যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।

শক্তি ক্ষেত্রে উন্নয়ন

উত্তর পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্ভরযোগ্যতা ও সহজলভ্যতা বাড়ানোর জন্য বাজেটে শক্তি ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি ২০২৮ সাল পর্যন্ত জল জীবন মিশনের সম্প্রসারণের কথাও বলা হয়েছে, যা গ্রামীণ এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহকে আরও দৃঢ় করবে।

কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে উন্নতি

কৃষি ক্ষেত্রে আসামের নামরূপে ১২.৭ লক্ষ মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য সারের সহজলভ্যতা বৃদ্ধি পাবে, যা কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি, আগামী ছয় বছরে এনএএফইডি (NAFED) এবং এনসিসিএফ (NCCF)-এর মাধ্যমে শস্য ও ডাল উৎপাদনে আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে উত্তর পূর্বাঞ্চলের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

নারী ক্ষমতায়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতি

গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করতে ডাক বিভাগের ভূমিকা বাড়ানো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (MSME)-তে নতুন উদ্যোগ এবং নারী ক্ষমতায়নে দ্বিতীয় পর্যায়ের “সক্ষম অঙ্গনওয়াড়ি” ও পুষ্টি সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।

পর্যটন ও গবেষণায় নতুন দিশা

উত্তর পূর্বাঞ্চলে পর্যটন, গবেষণা ও উদ্ভাবন, ডিজিটাল উন্নতি এবং স্থানীয় শিল্পের বিকাশেও বাজেটে জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষত, এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এই বাজেটের বরাদ্দ ও নীতি সংস্কারের ফলে অষ্টলক্ষীর আরও বেশি পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, শিল্প প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। কেন্দ্রের এই উদ্যোগ উত্তর পূর্বাঞ্চলকে দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

রান্নার

রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি কমলো, মহার্ঘ পেট্রোপণ্য!

সাধারণ মানুষের জন্য বড় ধাক্কা! রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি কমিয়ে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। নতুন বাজেটে এলপিজি ভর্তুকি আরও কমানো হয়েছে, যার ফলে গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ওপর চাপ আরও বাড়বে। ২০১৪ সালে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি ক্রমাগত কমানো হয়েছে। মনমোহন সিং সরকারের আমলে যেখানে গ্রাহকরা প্রায় অর্ধেক ভর্তুকি পেতেন, এখন তা কমতে কমতে মাত্র দেড়শো টাকায় দাঁড়িয়েছে। এবারের বাজেটে ভর্তুকি কমে ১২ হাজার কোটিতে নেমেছে, যেখানে পূর্ববর্তী বাজেটে ১৪,৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল।

ভর্তুকি কমানোর ঘোষণার পরই বড় ধাক্কা খেয়েছে সরকারি তেল সংস্থাগুলোর শেয়ার। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী, ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে পেট্রোল-ডিজেলের দাম আবার বাড়তে পারে। বর্তমান সময়ে আগরতলায় পেট্রোলের দাম ৯৭.৫০ টাকা প্রতি লিটার।

অন্যদিকে গ্যাসের দাম বাড়ার পাশাপাশি নতুন অভিযোগ উঠেছে সিলিন্ডারের ওজনে কারচুপি নিয়ে। গ্রাহকদের অভিযোগ, ১৪.২ কেজির সিলিন্ডারে যথেষ্ট পরিমাণ গ্যাস থাকছে না। যেখানে আগে একটি সিলিন্ডার দিয়ে দেড় থেকে দুই মাস রান্না চলত, এখন তা এক মাসও টিকছে না। হোম ডেলিভারির কারণে গ্রাহকরা সিলিন্ডার মেপে নিতে পারছেন না, ফলে কোথায় কারচুপি হচ্ছে তা বুঝতে পারছেন না কেউই। প্রশাসনের কাছে বিষয়টি জানানো হলেও এখনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে যেসব গরিব পরিবার বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ পেয়েছিলেন, তাদের অনেকেই এখন আর নতুন সিলিন্ডার কিনতে পারছেন না। প্রায় ১০০০ টাকার বেশি দামে একটি সিলিন্ডার কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। ফলে বহু পরিবার গ্যাস সংযোগ পেয়েও সিলিন্ডার ব্যবহার করতে পারছেন না, বরং ঘরে সাজিয়ে রেখেছেন। গ্যাসের দাম বাড়ার পাশাপাশি কেরোসিনের মূল্যও লাগাতার বেড়ে চলেছে। রেশনে কেরোসিনের দাম প্রতি লিটার ৯৫ টাকা, আর খোলা বাজারে তা ১২০ টাকারও বেশি। ফলে অনেকেই আবার কাঠের উনুনের দিকে ফিরে যাচ্ছেন।

২০১৫ সালে মোদি সরকার ‘গিভ ইট আপ’ প্রকল্প চালু করেছিল, যার মাধ্যমে স্বেচ্ছায় ভর্তুকি ত্যাগ করা যেত। কিন্তু অনেকেই তা নাবুঝে ভুলবশত মোবাইলের ভুল অপশনে টিপে এই সুবিধা হারিয়েছেন। এছাড়া যেসব পরিবারের বার্ষিক আয় ১০ লক্ষ টাকার বেশি, তাদের ভর্তুকি কেটে নেওয়া হয়েছে।

সরকারের হিসাব বলছে, ২০১৫-১৬ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত এই ‘গিভ ইট আপ’ প্রকল্পে ৫৭,৭৬৮ কোটি টাকা সঞ্চয় করেছে কেন্দ্র। তবে গরিব ও মধ্যবিত্তরা আজ সেই সঞ্চয়ের বোঝা বয়ে চলেছেন। রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি কমানো, সিলিন্ডারের ওজনে কারচুপি, উজ্জ্বলা যোজনার সীমাবদ্ধতা এবং কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধি—সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে উঠছে।

মাতা

মাতা ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা..?

লোভের বশবর্তী হয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত আনার চেষ্টা করছে একটা দুষ্টচক্র, সাথে জড়িত মন্দিরের পুরোহিতরাও। ঐতিহ্যবাহী মাতা ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের গরিমা আজ কলঙ্কিত! তাও আবার মন্দিরে নিয়োজিত পুরোহিত কর্তৃক। যা ধর্মপ্রাণ মানুষ কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

মন্দিরে নিয়োজিত পুরোহিতের অতিরিক্ত লোভের কারণে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত এক জনজাতি পরিবারের। ঘটনা মাতা সুন্দরী মন্দিরের বলি গৃহে। ঘটনার বিবরণে জানা যায় রবিবার এক জনজাতি পরিবার তার পারিবারিক সমস্যায় মাতা ত্রিপুরা সুন্দরীর কাছে মানত করেছেন যে একজোড়া পাঁঠা মন্দিরে নিয়োজিত পুরোহিত কর্তৃক মায়ের নামে উৎসর্গকৃত করে মন্দির চত্বরে ছেড়ে দেবেন। এই পর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। ব্যাঘাত ঘটে পুরোহিত কর্তৃক জোড়া পাঁঠা উৎসর্গ করে, সেই পুরোহিত নিজের হাত থেকে জোড়া পাঁঠা ছাড়তে চাইছিলেন না। এমনকি ওই জোড়া পাঁঠা সেই পুরোহিতের নিজের পছন্দের নির্দিষ্ট জায়গায় বেঁধে রেখেছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিমত।

যে জনজাতি পরিবার জোড়া পাঁঠা মন্দির চত্বরে ছেড়ে দেবেন বলে এনেছিলেন তাদের অনেক আকুতি মিনতির পরও পাঁঠা জোড়া আর ছাড়া হয়নি বলে অভিযোগ মন্দিরের তিন পুরোহিত তিমির চক্রবর্তী, বিজন চক্রবর্তী ও সঞ্জয় চক্রবর্তী-র বিরুদ্ধে। অবশেষে এক প্রকার বাধ্য হয়েই ওই জনজাতি পরিবার মন্দিরের অফিস গৃহে গিয়ে পুরো ঘটনাটি খুলে বলেন। পরে শোনা যায় অফিসের হস্তক্ষেপে পাঁঠা ছেড়ে দেওয়া হয়।ত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ ওই পুরোহিত এরই মধ্যে কয়েকজন পাঁঠা বেপারীকে খবর দেন পাঁঠা খরিদ করার জন্য। মন্দিরে উপস্থিত ধর্মপ্রাণ মানুষ যখন চেপে ধরেন ওই পুরোহিতকে তিনি বলেন “মন্দির চত্বরে ছাড়া যাবে না” সেটা ওনার পছন্দের জায়গায় উনার হাত দিয়ে ছাড়তে হবে এটাই নাকি মন্দিরের নিয়ম। এ ব্যাপারে মন্দিরের ম্যানেজার বাবুর সঙ্গে কথা বললে উনি জানান অনেকদিন ধরেই পাঁঠা নিয়ে এই অরাজকতা চলে আসছে। এ ব্যাপারে উনার কাছে খবর আছে কিন্তু কেউ কোন অভিযোগ করেনি বলে উনি এতদিন এর কোনো বিহিত  করতে পারেননি। আজকে প্রথম জনজাতি পরিবারটি অভিযোগ করাতে ঘটনাটা স্পষ্ট হলো।আর উৎসর্গকৃত জোড়া পাঁঠা মন্দিরের নিয়োজিত পুরোহিতের পছন্দের নির্দিষ্ট স্থানে ছাড়তে হবে এমন কোন আইন নেই। যিনি উৎসর্গ করবেন উনার ইচ্ছাতেই সবকিছু হয়। ম্যানেজারবাবু আরো বলেন এ ব্যাপারে মন্দিরের সেবাইত জেলা শাসককে সবকিছু জানানো হবে বিস্তারিতভাবে।

গত কয়েক মাস আগে মন্দিরের বলি গৃহের সামনাকে মাংসের বাজারে পরিণত করেছিল কিছুসংখ্যক টলুয়া। খবরের জেরে তা বন্ধ হয়েছিল কিছু সময়ের জন্য। বর্তমানে বলি গৃহকে পাঁঠা বাজারে পরিণত করতে চাইছে মন্দিরে নিয়োজিত একাংশ পুরোহিত। কোন এক অজ্ঞাত কারনে মন্দিরের ট্রাস্ট কমিটি একেবারে চুপ, এই নিয়ে সর্বত্র চলছে চরম গুঞ্জন। পুরোহিত কর্তৃক মন্দিরের ভিতরে এই অরাজকতা সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না  ফলে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠছে।