সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর হবে জনগননা। আর জনগননার ভিত্তিতে হবে বিভিন্ন রাজ্য বিধানসভা ও লোকসভার ডিলিমিটেশন বা সীমানা পুনর্বিন্যাস। এক্ষেত্রে বাড়বে আসনসংখ্যা। সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০২৫ সালে জনগননার কাজ শুরু হবে। জনগননার পরিসংখ্যান প্রকাশিত হওয়ার পর, ২০২৬ সালেই গঠন হবে ডিলিমিটেশন কমিশন। তাদের কাজ হবে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধিরহার এবং মোট জনসংখ্যা সহ কয়েকটি মাপকাঠি অনুযায়ী লোকসভা ও বিধানসভা আসনের সীমানা পুনবিন্যাস। ওই বর্ধিত লোকসভা আসনের ভিত্তিতেই ২০২৯ সালে হবে সাধারণ নির্বাচন। আর মোদি সরকারের টার্গেট অনুসারে যদি এক দেশ এক নির্বাচন নীতি কার্যকর হয়ে যায় তাহলে ২০২৮ সালের বদলে ২০২৯ সালে লোকসভার সাথে একসাথে হবে বিধানসভা ভোট৷ যদিও বিরোধী সিপিএম সহ বিরোধী দলগুলো এক দেশ এক নির্বাচন নীতির বিরোধীতা করে মাঠঘাট গরম করতে নেমে পড়েছে। রাজ্যেও ধারাবাহিক কর্মসূচি গ্রহন করেছে বিরোধী দলগুলো৷ তাদের বক্তব্য এক দেশ এক নির্বাচন নীতি কার্যকর হলে দেশের স্বার্বভৌমত্ব, অখন্ডতার উপর যেমন আঘাত আসবে তেমনি বিপন্ন হবে সংবিধান৷ ডিলিমিটেশনের ফলে রাজ্যে লোকসভা আসন বেড়ে হবে তিন আর বাড়বে বিধানসভার আসনও৷ বর্তমানে ৬০ আসন বিশিষ্ট রাজ্য বিধানসভায় জনজাতি সংরক্ষিত আসন রয়েছে ২০টি আর তপশিলি জাতি সংরক্ষিত আসন রয়েছে ১০টি৷ বাকি ৩০টি আসন সাধরন৷ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য ডিলিমিটেশনের ফলে রাজ্য বিধানসভায় কম করেও পাঁচ থেকে সাতটি আসন বাড়তে পারে৷ সদরের আসন সংখ্যাও বাড়বে৷ যেমন সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে বাধারঘাট বিধানসভা কেন্দ্রে। বেশি ভোটার রয়েছে এরকম বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ভেঙ্গে নতুন কেন্দ্র তৈরি করা হবে। দুর্বল আসনের পাশের কেন্দ্রেই যদি মজবুত ভোটব্যাঙ্ক থাকে, তাহলে দু’টি জুড়ে গেলে ধাক্কা লাগবে না গেরুয়া শিবিরে। এই আসন বিন্যাসই ভোটের অঙ্ক হতে চলেছে মোদির?
অতীত রীতির পরিবর্তন অবশ্য আরও হবে। ২০২৫ সালে জনগননা হলে সেই মতোই কার্যকর হবে ভবিষ্যতের জনগননার বৃত্ত। অর্থাৎ, আগামী দিনে প্রতি ১০ বছর অন্তর এই ২০২৫ সালকে ভিত্তি করেই হবে জনগননা। সবটাই ভোট অঙ্ককে মাথায় রেখে যে করা হচ্ছে তা বুঝতে বাকি নেই কারোর। যতটুকু খবর সীমানা পুনর্বিন্যাসে রাজ্যে লোকসভার দুটি আসন বেড়ে হবে তিনটি, ডিলিমিটেশনের পর আগামী লোকসভা নির্বাচন হবে তিনটি আসনে৷ জানা গেছে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর দিকে নজর মোদি-শাহের৷ বিজেপি প্রভাবিত উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর বিধানসভা কিংবা লোকসভার আসন সংখ্যা বাড়লেও সঙ্কট কমবে। দক্ষিণে এমনিতেই বিজেপির ভিত মজবুত নয়। সেখানে আসন কমলে কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদীদের লাভই বেশি। কিন্তু মোদির উদ্বেগ বাড়িয়েছে সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটের ফল। শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত বহু রাজ্যেই ধস নেমেছে বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে। আসন পুনর্বিন্যাস হলে গেরুয়া শিবির অঙ্ক কষবেই। মোট কথা ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলকে মাথায় রেখে ২০২৯ সালের ভোটের লক্ষে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে মোদি শিবির। সেই লক্ষকে মাথায় রেখেই নতুন পার্লামেন্ট হাউস তৈরি করা হয়েছে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের অভিমত, আসন সংখ্যা হতে চলেছে অন্তত ৭৮৮। জানা গেছে ডিলিমিটেশনের ফলে বিধানসভা আসন সংখ্যা বাড়লে এতে লাভবান হবে জনজাতিরাও৷ বাড়বে জনজাতি সংরক্ষিত আসন। তবে মোদি – শাহদের প্রাথমিক লক্ষ্যই বাংলা এবং উত্তরপ্রদেশ। এই দু’টি রাজ্যের আসন বাড়িয়ে তাদের দু’ভাগে ভেঙে দেওয়ার ফর্মুলা কাজে লাগানো হলেও বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অবশ্য শুধু বর্ধিত লোকসভা আসনের ভিত্তিতে ভোটের অঙ্কে থেমে থাকতে চাইছেন না। তাঁর টার্গেট ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন। এখানেই অঙ্ক শুরু মোদির।