স্মার্ট

স্মার্ট সিটিতে পথচারীদের পথ অবরুদ্ধ!

বেআইনি হকার ও টমটম চালকদের দখলে স্মার্ট সিটি!

আগরতলাকে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবে পরিস্থিতি তার বিপরীত। স্মার্ট সিটি পরিকল্পনা অনুযায়ী, শহরের প্রধান সড়কে রিকশা ও টমটম নিষিদ্ধ থাকার কথা। কিন্তু রাজধানীর বুকে এই নিয়মের কোনো বাস্তবায়ন নেই। বরং দিন দিন বেআইনি টমটমের সংখ্যা বাড়ছে, যার ফলে শহরের রাস্তাগুলো তীব্র যানজটে জর্জরিত এবং আগরতলা স্মার্ট সিটিকে পরিণত করেছে এক ব্যতিক্রমী স্মার্ট সিটিতে।

স্মার্ট সিটি প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী, আগরতলার প্রধান সড়কে কোনো টমটম চলাচল করতে পারবে না। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, টমটম ও রিকশার অনিয়ন্ত্রিত চলাচল রাজধানীর যানজটকে ভয়াবহ করে তুলেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন ও ট্রাফিক দপ্তরের কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। একসময় ট্রাফিক দপ্তর এই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিলেও, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তারা তা কার্যকর করতে পারেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।

শহরের ফুটপাতগুলো পথচারীদের চলাচলের জন্য বরাদ্দ থাকলেও, বর্তমানে তা হকারদের দখলে চলে গেছে। বিভিন্ন সময়ে পুর নিগম ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযান চালালেও, অভিযান শেষ হওয়ার কিছুদিন পরেই পুনরায় দখলদারি শুরু হয়। গত পুজোর আগে পুর নিগম একবার অভিযান চালালেও, বর্তমানে সেই একই অবস্থায় ফিরে গেছে শহরের ফুটপাত। বিশেষ করে পোস্ট অফিস চৌমুহনি থেকে কামান চৌমুহনি পর্যন্ত রাস্তার ফুটপাত পুরোপুরি দখল হয়ে গেছে, ফলে ক্রেতা ও পথচারীদের বাধ্য হয়ে মূল সড়কে হাঁটতে হচ্ছে, যা যানজটের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আগরতলা শহরকে যানজট মুক্ত করতে টমটমের জন্য নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, বর্ডার গোলচক্কর থেকে ফায়ার সার্ভিস চৌমুহনি, শংকর চৌমুহনি ও অন্যান্য গলি রাস্তায় নির্দিষ্ট স্টপেজ তৈরি করা হবে, যেখানে টমটমগুলো যাত্রী উঠানামা করবে। কিন্তু সেই পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হয়নি।

২০১৮ সালে বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকারের প্রথম মেয়াদে রাজধানীকে টমটম মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক নেতার ইন্ধনে তা আটকে যায়। অভিযোগ রয়েছে, কিছু রাজনৈতিক নেতা অবৈধভাবে টমটম চালানোর অনুমতি দিচ্ছেন এবং অনেক বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।

আগরতলার জনসংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি যানবাহনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে টমটম, ই-রিকশা ও অটোর অনিয়ন্ত্রিত চলাচল শহরের যানজটকে আরও তীব্র করে তুলেছে। যানজট কমাতে এবং পথচারীদের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের সুযোগ তৈরি করতে শহর থেকে টমটম অপসারণ, ফুটপাত দখলমুক্তকরণ এবং অবৈধ পার্কিং নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

শহরবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন চাইলে এই সমস্যা সমাধান করতে পারে। তবে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে এখন পর্যন্ত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শহরের পরিবহন দপ্তর ও ট্রাফিক বিভাগ যদি কঠোর নজরদারি শুরু করে, তাহলে আগরতলাকে সত্যিকারের স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।