স্টার্টআপ

স্টার্টআপ পলিসি ২০২৪

স্টার্টআপ পলিসিতে যুবক-যুবতীদের উন্নতি হলে দেশ তথা রাজ্যের উন্নতি হবে!

রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতীদের উদ্যোগপতি হিসেবে গড়ে তুলতে আজ থেকে চালু হলো রাজ্য সরকারের স্টার্টআপ পলিসি ২০২৪। যুবদের বিকাশ না হলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবসময় একথা বলেন। অথচ রাজ্যের পূর্বতন সরকার যুবদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোন পদক্ষেপ নেয়নি। আর বর্তমান সরকার যুবশক্তির বিকাশে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। শুক্রবার আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে ‘ত্রিপুরা স্টার্টআপ পলিসি ২০২৪’ এর সূচনা করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।

তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ২০১৯ সালে এই পলিসি শুরু হয়েছিল এবং আজ আমরা এটিকে আবার নতুনভাবে শুরু করলাম। শুধু আইটি ক্ষেত্র নয়, আমরা কৃষি, বাঁশ, খাদ্য এবং অন্যান্য খাতকেও এতে যুক্ত করেছি। অথচ আগের সরকারের সময়ে যুবরা কখনো সহযোগিতা পায়নি। যে কারণে তারা দিশাহীন হয়ে পড়ে। আর সব মানুষকে চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়। এই ধরনের পলিসি সত্যিই অপরিহার্য এবং আমি এই ধরনের পলিসি তৈরির সাথে যুক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটা সত্য যে যুবরা খুবই উদ্যমী এবং সক্ষম। তবে তাদের উদ্যম ও উৎসাহ সবসময় সঠিক দিশায় যায় না। এই পলিসি তাদের উদ্যমকে সঠিকভাবে চালিত করবে এবং যুবরা সরকারের কাছ থেকেও প্রয়োজনীয় সহায়তা পাবে। মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন বেকাররা যাতে জব ছার্চার না হয়ে; জব ক্রিয়েটর হতে পারেন, সেই লক্ষ্যে কাজ করছে রাজ্য সরকার। এই জাতীয় নীতি যুবদের নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি, এর মাধ্যমে তাদের শিল্পপতি বা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নগুলি পূরণ করতে সক্ষম হবে। এই ধরনের উদ্যোগ ‘এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা’ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। ব্যাংকগুলিও আরও ভাল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার লক্ষ্যে এই যুবদের আর্থিক সহায়তা দেবে। এই পলিসির অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে সমাজের সমস্ত স্তর থেকে যুবদের যুক্ত করে বেকারত্ব মোকাবিলা করা। মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, যখন এই উদ্যোগ শুরু হয়েছিল আইআইটি, আইআইএম, নিট সহ দেশের অন্যান্য কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সাথে নিবিড়ভাবে যোগাযোগের মাধ্যমিক এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। অল্প বয়স থেকেই তরুণদের আরও উঁচু জায়গায় নিয়ে যেতে এটা একটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। ১.২৫ লক্ষেরও বেশি ব্যাঙ্ক শাখা যুবদের উৎসাহিত করছে। আর এটা নিশ্চিত করছে যে দলিত, মহিলা এবং জনজাতিরা এই উদ্যোগের ফলে উপকৃত হচ্ছেন। ডাঃ সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুবদের বিকাশে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন নতুনত্ব ও নতুন সুযোগ ছাড়া দেশে কোনও প্রবৃদ্ধি হতে পারে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সর্বদা বলেছেন যে আমাদের প্রধান মানব সম্পদ যুবরা। যদি যুবদের বিকাশ করা হয় তবে দেশ বিকশিত হবে। ভবিষ্যতে, আমাদের অসংখ্য স্টার্টআপ পলিসি এই প্রবৃদ্ধিকে সহায়তা করবে। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী প্রণজিত সিংহ রায়, মুখ্যসচিব জিতেন্দ্র কুমার সিনহা, তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে সহ অন্যান্য পদাধিকারীগণ। স্টার্টআপগুলো যাতে সহজে সম্পদ, সহায়তা এবং তথ্য পেতে পারে, সেজন্য একটি বিশেষভাবে নিবেদিত ‘স্টার্টআপ ত্রিপুরা ওয়েব পোর্টাল’ ও উদ্বোধন করা হয় এই অনুষ্ঠানে। ত্রিপুরা স্টার্টআপ পলিসি বা নীতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এবং এর সুবিধাগুলি মানুষের সামনে তুলে ধরতে, সরকার স্টার্টআপ স্পার্ক ভ্যান চালু করেছে। এই ভ্যান ত্রিপুরার সমস্ত জেলায় সফর করবে এবং উদ্যমী উদ্যোক্তাদের সাথে যোগাযোগ করবে ও নীতির আওতায় থাকা বিভিন্ন উদ্যোগের প্রচার করবে। এই অনুষ্ঠানে একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়, যেখানে বিশিষ্ট জনেরা ত্রিপুরা ভিত্তিক স্টার্টআপগুলোর উদ্ভাবিত পণ্য ও পরিষেবাগুলি পরিদর্শন করেন।

মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে ত্রিপুরা স্টার্টআপ পলিসি-২০২৪’র সূচনার মধ্য দিয়ে ত্রিপুরা সরকার রাজ্যের উদ্যোক্তা পরিমণ্ডলে একটি রূপান্তরমূলক পরিবর্তন প্রত্যাশা করছে। এই নীতির উদ্দেশ্য হল, তরুণ উদ্ভাবকদের অনুপ্রাণিত করা, স্টার্টআপগুলির বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করা এবং কর্মসংস্থানের প্রচুর সুযোগ সৃষ্টি করা, যা রাজ্যের উজ্জ্বল এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করবে।

 

“ত্রিপুরা স্টার্টআপ পলিসি-২০২৪” অনুসারে প্রস্তাবিত আর্থিক প্রণোদনার সংক্ষিপ্তসার

1) ট্রাই-সিড ফান্ডিং:

স্বীকৃতি সনদ পাওয়ার পর, সমস্ত স্বীকৃত স্টার্টআপগুলো এককালীন ২ লক্ষ টাকা গ্র্যান্ট বা অনুদান পাওয়ার যোগ্য হবে।

2) স্টার্টআপ পরিচালনার খরচ ফেরত:

স্বীকৃত স্টার্টআপগুলোকে তাদের প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যয় করা খরচ, যেমন বিদ্যুৎ বিল, ভাড়া, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের খরচ ইত্যাদি ফেরত দেওয়ার জন্য প্রতি মাসে ২০,০০০/- টাকা করে প্রদান করা হবে। এই অর্থ প্রদানের প্রক্রিয়া স্টার্টআপ স্বীকৃতির শংসাপত্র’ প্রদানের তারিখ থেকে সর্বাধিক এক (১) বছর পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে। মহিলাদের নেতৃত্বাধীন স্টার্টআপগুলি অতিরিক্ত ১০% ফেরত পাবে, আর দিব্যাঙ্গ ব্যক্তিদের নেতৃত্বাধীন স্টার্টআপগুলি অতিরিক্ত ২০% ফেরত পাবে।

3) প্রোটোটাইপ স্টেজ বা প্রাথমিক পর্যায়ে আর্থিক সহায়তা:

যারা স্বীকৃত এবং শংসাপত্র-প্রাপ্ত স্টার্টআপ, তাদের নতুন পণ্যের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ নিয়োগ, কাঁচামাল বা উপাদান এবং অন্যান্য সম্পর্কিত যন্ত্রপাতির খরচের ক্ষেত্রে ২১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সহায়তা প্রদান করা হবে। তবে রাজ্যস্তরের স্টার্টআপ কাউন্সিলের দেওয়া ‘প্রুফ অব কনসেপ্ট’ (POC) অনুমোদনের পরই তা প্রযোজ্য হবে।

4) বিপণন/প্রচার সহায়তা:

নতুন উদ্ভাবিত পণ্য/পরিষেবা বাজারে পরিচিতি লাভের জন্য ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সহায়তা প্রদান করা হবে।

5) ট্যাক্স বা কর ফেরত:

স্টার্টআপ কোম্পানিগুলি যদি ত্রিপুরায় জিএসটি পরিশোধ করে, তবে তা ‘ত্রিপুরা শিল্প বিনিয়োগ প্রচার প্রণোদনা প্রকল্প’ (TIIPIS), ২০২২-এর আওতায় ফেরত দেওয়া হবে।

6) পেটেন্ট ফাইলিংয়ের ক্ষেত্রে ফেরত:

স্টার্টআপ কোম্পানিগুলি পেটেন্ট আবেদন দাখিল করা ও তার ব্যবস্থাপনার জন্য যে অর্থ ব্যয় করবে, সেই ক্ষেত্রে প্রতিটি ভারতীয় পেটেন্টের জন্য ২২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত তা ফেরত দেওয়া হবে। আর কোনো একটি বিষয়ে বিদেশি পেটেন্টের ক্ষেত্রে ₹১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ফেরত দেওয়া হবে।

7) এনজিআইএন (NGIN) উদ্যোগের অধীনে প্রতিষ্ঠানগুলিতে অনুদান:

*নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলিতে ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের জন্য ২১০ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করা হবে।

*প্রতিটি আয়োজনকারী বা মূল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ইনকিউবেশন সেন্টারের পরিচালনা খরচের জন্য প্রতি বছর ২৫ লক্ষ টাকা অর্থ প্রদান করা হবে।

* প্রতিটি প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর সর্বাধিক ৫টি প্রকল্পের জন্য ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অনুদান পাবে।

৪) ট্রাই-ইনফ্রা ফান্ড

একটি ট্রাই-ইনফ্রা ফান্ড (স্টার্টআপ ক্যাপিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফান্ড) ২২৫ কোটি টাকা প্রাথমিক তহবিল নিয়ে গঠিত হবে, যা রাজ্যের স্টার্টআপ বাস্তুতন্ত্রের জন্য হার্ড এবং সফট ইনফ্রাস্ট্রাকচারের উন্নয়নে সহায়তা করবে– যেমন ইনকিউবেটরগুলির ব্যবহারিক পরিকাঠামো, টেস্টিং ল্যাব, ডিজাইন স্টুডিও, টুল রুম, ভার্চুয়াল ইনকিউবেটর ইত্যাদি।

9) ত্রিপুরা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল:

২৫০ কোটি টাকা তহবিলের একটি ‘ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড’ বা “উদ্যোগ পুঁজি তহবিল” সৃষ্টি করা হয়েছে। যেখানে সম্ভাব্য স্টার্টআপের জন্য অর্থ সহায়তার টিকিট সাইজ বা অর্থ সহায়তার পরিমাণ বা সীমা হবে ২২৫ লক্ষ টাকা থেকে ২২ কোটি টাকা পর্যন্ত।