সিপিআইএম পার্টির রাজ্য সম্মেলন

সিপিআইএম পার্টির রাজ্য সম্মেলনে কোটি টাকা খরচ!

সিপিআইএম সর্বহারার পার্টি হয়েও সম্মেলনে কোটি টাকার আড়ম্বর!

ডানকুনিতে চলছে সিপিআইএমের তিনদিনের রাজ্য সম্মেলন। অথচ, গরিবের পার্টি বলে পরিচিত এই দলটির সম্মেলনে কোটি টাকারও বেশি খরচ হচ্ছে! রাজ্যজুড়ে একের পর এক নির্বাচনী বিপর্যয়ের পর যেখানে সংগঠন চাঙ্গা করাই প্রধান লক্ষ্য হওয়ার কথা, সেখানে কেন এত আড়ম্বর? দলীয় কর্মী থেকে সাধারণ মানুষ— সকলের মধ্যেই উঠছে প্রশ্ন।

রাজ্য সম্মেলনে আসা ৫০০-র বেশি প্রতিনিধির জন্য রাজকীয় আতিথেয়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিল্লি রোড ও দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে ১৫টিরও বেশি হোটেল, লজ ও গেস্ট হাউস ভাড়া নেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন তাদের জন্য থাকছে চন্দননগরের জলভরা, চণ্ডীতলার গুড়ের মিষ্টি, জনাইয়ের মনোহরা এবং প্রসিদ্ধ রাবড়ির মতো সুস্বাদু খাবার। প্রতিনিধিদের সম্মেলনস্থলে আনার জন্য রিজার্ভ গাড়ির ব্যবস্থাও রয়েছে। এখানেই শেষ নয়! সংবাদমাধ্যমের কাছে দলের গোপন তথ্য যেন না পৌঁছায়, তার জন্যও নেওয়া হয়েছে কড়া ব্যবস্থা। প্রতিনিধি তালিকায় থাকছে সিরিয়াল নম্বর ও কোডিং, দেওয়া হচ্ছে ছবি-সহ আইডি কার্ড। এমনকি কোনও তথ্য ফাঁস যাতে না হয়, সেই কারণে কোনও পিডিএফ ফাইলও দেওয়া হচ্ছে না।

এক সময় বাংলার ছাত্র-যুব সমাজের মধ্যে সিপিআইএমের বিশাল প্রভাব ছিল। কিন্তু এখন আর আগের মতো উচ্ছ্বাস নেই তরুণদের মধ্যে। দলের সর্বভারতীয় নেতা প্রকাশ কারাট স্বীকার করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে ছাত্র-যুব আন্দোলনে অংশগ্রহণ থাকলেও পার্টিতে নতুন প্রজন্মকে ধরে রাখা যাচ্ছে না। কেরলের সঙ্গে তুলনা টেনে কারাট বলেন, “কেরলে পার্টির ২২% সদস্যের বয়স ৩১ বছরের নিচে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এই হার অনেক কম।” যদিও কেরলে নতুনদের জায়গা দেওয়ার কথা বলা হলেও, মুখ্যমন্ত্রী এখনো ৯০ বছরের এক প্রবীণ নেতা। তাই বাস্তবে তরুণ নেতৃত্ব গঠনের প্রক্রিয়া কতটা কার্যকর, সে নিয়েও প্রশ্ন থাকছে।

গত তিন বছরে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই ২৫ হাজার সদস্যের পার্টি সদস্যপদ খারিজ হয়েছে, যদিও নতুনদের অন্তর্ভুক্তি কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাচ্ছে। রাজ্য সম্পাদক মহঃ সেলিমও স্বীকার করেছেন, “নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্বে আনতে হবে, ছাত্র-যুব আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।” অনেক দিন ধরেই দলের অন্দরে আলোচনা চলছে যে, সিপিআইএম শহুরে পার্টিতে পরিণত হচ্ছে। গ্রামের মানুষের সঙ্গে যে সম্পর্ক আগে ছিল, তা অনেকটাই হারিয়ে গেছে। সম্মেলনে এই নিয়েও আত্মসমালোচনা হয়েছে। অনেক নেতাই মনে করছেন, ‘তোবড়ানো গাল, ভেঙে যাওয়া মুখ’-এর পরিবর্তে এখন দলে চকচকে মুখের আধিক্য দেখা যাচ্ছে। কৃষক-শ্রমিকদের পার্টি হওয়ার বদলে দল যেন শুধুই মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের দলে পরিণত হচ্ছে। তাই পার্টির অভিমুখ আবার গ্রামবাংলার দিকে ঘোরানোর কথা বলা হচ্ছে।

২০১১ সালে ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই নির্বাচনী লড়াইয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে সিপিআইএম। প্রতি সম্মেলনেই দল ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে পরিবর্তন আসেনি। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু প্রশ্ন একটাই— এত কিছুর পরেও কি আদৌ ভোটের ময়দানে দৃশ্যমান হতে পারবে সিপিআইএম? সম্মেলনে আড়ম্বর যতই থাকুক, দলের ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। পার্টির অভ্যন্তরে আত্মবিশ্লেষণ চলছে, তবে তার বাস্তব রূপায়ণ কতটা সম্ভব হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।About Us