সাব্রুম সীমান্ত আবারো মাদক পাচারের করিডোর

সাব্রুম সীমান্ত আবারো মাদক পাচারের করিডোর!

আন্তর্জাতিক মাদকচক্রের নিশানায় দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম সীমান্ত!

ত্রিপুরার দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত সাব্রুম সীমান্ত ফের আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারীদের রুট ম্যাপে ফিরে এসেছে। রেল ও সড়ক পথে পুলিশের কড়াকড়ি এবং নিয়মিত ধরপাকড়ের জেরে পাচারকারীরা এখন সীমান্তবর্তী অঞ্চলকে মাদক পাচারের জন্য বেছে নিচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, থাইল্যান্ড ও মায়ানমার থেকে বাংলাদেশ হয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক এই রুট ধরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ঢুকছে।

পাচারের জন্য ব্যবহৃত এই করিডোরটি একসময় ‘সোনালী রুট’ নামে পরিচিত ছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফের সেই পুরনো পথকেই সক্রিয় করা হয়েছে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সক্রিয় মাদক চক্রগুলি থাইল্যান্ড ও মায়ানমার থেকে হিরোইন, চরস, ব্রাউন সুগার-এর মতো বিপুল পরিমাণ মাদক এনে বাংলাদেশে সংরক্ষণ করছে। সেখান থেকে মাদক পাচার করা হচ্ছে সাব্রুম সীমান্ত ঘেঁষা মাগরুম, বৈষ্ণবপুর, জলেয়া ও শিলাছড়ির ভগবান টিলা দিয়ে।

ত্রিপুরার দক্ষিণ সীমান্তের বহু এলাকায় এখনো কাঁটাতারের বেড়া নেই। যেসব জায়গায় সীমান্ত উন্মুক্ত, সেখান থেকেই সবচেয়ে বেশি পাচার হচ্ছে বলে জানা গেছে। এই অনিরাপদ সীমান্ত এলাকাগুলি আন্তর্জাতিক মাদকচক্রের জন্য ‘সুবর্ণ সুযোগ’ তৈরি করেছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও পাচারকারীরা নানা কৌশলে তাদের চোখে ধুলো দিয়ে পাচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ত্রিপুরার ভৌগোলিক অবস্থান পাচারকারীদের পক্ষে অত্যন্ত সুবিধাজনক। একদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম, অপরদিকে মিজোরাম, মণিপুর ও আসামের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুবাদে এই পথটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভিতরে দ্রুত মাদক প্রবেশের উপযুক্ত করিডোর হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রুট ধরে শুধু মাদক নয়, বহু আন্তর্জাতিক অপরাধচক্রের কার্যকলাপও তীব্রতর হতে পারে।

সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বহু যুবক-যুবতীকে মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে পাচারকারীরা তাদের দলে টেনে নিচ্ছে। স্থানীয় স্তরে ‘ক্যারিয়ার’ হিসেবে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। পুলিশের একাংশ মনে করছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় কর্মসংস্থানের অভাব এবং প্রশাসনিক নজরদারির ঘাটতি পাচারের বিস্তারে বড় ভূমিকা রাখছে। সম্প্রতি প্রায় প্রতি সপ্তাহেই রাজ্যের বিভিন্ন অংশ থেকে কোটি কোটি টাকার মাদকসহ পাচারকারীদের আটক করা হচ্ছে। তবু পাচারের ধারা থামছে না। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অনেক ক্ষেত্রেই বড় চক্রের মূল পরিকল্পনাকারীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো (Narcotics Control Bureau), বিএসএফ ও রাজ্য পুলিশের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকায় পুরো চক্র ভাঙা যাচ্ছে না।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা বারবার বলেছেন “নেশামুক্ত ত্রিপুরা” গড়ার কথা। কিন্তু মাদক পাচারের এই বিস্তার সেই প্রতিশ্রুতিকে কার্যত প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পাচারের বিরুদ্ধে শুধু কথা নয়, প্রয়োজন জোরালো প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও কেন্দ্রীয় সহযোগিতা। ত্রিপুরার সাব্রুম সীমান্ত যে আবার আন্তর্জাতিক মাদক পাচারের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠছে, তা এখন স্পষ্ট। প্রশাসনের উচিত দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো এবং পাচারকারীদের চক্র ভেঙে ফেলা; নাহলে এই চক্র এক সময় পুরো রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।About Us