সাইবার ক্রাইম ইউনিটে

সাইবার ক্রাইম ইউনিটের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন!

সাইবার ক্রাইম ইউনিট কি ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে?

প্রতিদিনই বদলে যাচ্ছে প্রতারকদের কৌশল। আর সেই সঙ্গে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। ডিজিটাল লেনদেন এখন প্রতারণার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। অথচ রাজ্যের সাইবার ক্রাইম ইউনিট কার্যত অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছে।২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর রাজ্য পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ ইউনিটের অধীনে সাইবার ক্রাইম ইউনিট চালু হলেও এখনও পর্যন্ত তারা রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে কোনও স্পষ্ট তথ্য প্রকাশ করতে পারেনি। সচেতনতার উদ্যোগও নেই বললেই চলে। মাঝে মধ্যে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে দায় সেরেছে প্রশাসন, কিন্তু বাস্তবে তা যে একেবারেই যথেষ্ট নয়, তা বারবার প্রমাণিত হচ্ছে।

প্রতারণার জালে কোটি কোটি টাকা উধাও!

সরকারি রিপোর্ট বলছে, দেশে আগে প্রতি মাসে গড়ে দু’লক্ষ মানুষ ডিজিটাল লেনদেনে প্রতারণার শিকার হতেন। এখন সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে আড়াই লক্ষ। আগে মাসে প্রতারণার অঙ্ক সীমাবদ্ধ থাকত ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার মধ্যে, বর্তমানে তা কোনও কোনও মাসে ৫০০ কোটিরও বেশি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। নগদ লেনদেন ক্রমেই কমছে, ডিজিটাল লেনদেনের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে, আর সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে প্রতারকরা।

প্রতারকদের নতুন কৌশল!

বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রতারণার ঘটনা ঘটছে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। অনলাইনে বিভিন্ন শপিং পেজ খুলে প্রতারকরা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করছে। তারা আসল পেজের মতোই দেখতে ভুয়ো পেজ তৈরি করছে। সেখান থেকে কিছু অর্ডার করতে গেলে গ্রাহকের ফোনে একটি কোড বা ওটিপি পাঠানো হয়। অনেকেই না বুঝে সেই কোড প্রতারকদের জানিয়ে দিচ্ছেন, যার ফলে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পূর্ণ খালি হয়ে যাচ্ছে।

পুলিশের সতর্কতার বার্তা!

  • সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতারণা থেকে বাঁচতে নিম্নলিখিত সতর্কতা মেনে চলা জরুরি:
  • ওটিপি শেয়ার করবেন না: কোনও অবস্থাতেই অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে ওটিপি শেয়ার করবেন না।
  • অপরিচিত লিঙ্কে ক্লিক করবেন না: সোশ্যাল মিডিয়ায় সন্দেহজনক লিঙ্ক বা অফারে ক্লিক করার আগে যাচাই করুন।
  • ভুয়ো ওয়েবসাইট এড়িয়ে চলুন: কেনাকাটার সময় ওয়েবসাইটের ইউআরএল ঠিক আছে কিনা যাচাই করুন।
  • আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্ক হন
  • কোনও লেনদেন করার আগে যাচাই করুন এবং ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ব্যবহার করুন।

সাইবার ক্রাইম ইউনিটের ব্যর্থতা?

রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিয়ত সাইবার প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়ছে। কিন্তু এই ছয় বছরে কতগুলো অভিযোগ জমা পড়েছে, কতজন প্রতারিত হয়েছেন, কত কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে— এসব নিয়ে কোনও স্পষ্ট তথ্য নেই সাইবার ক্রাইম ইউনিটের কাছে। পুলিশের ওয়েবসাইটেও কোনও নির্দিষ্ট রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। রাজ্য পুলিশ এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট সাফল্যের কথা জানাতে পারেনি। ফলে প্রশ্ন উঠছে, সাইবার ক্রাইম ইউনিট আদৌ কতটা কার্যকর?

কঠুর পদক্ষেপের দাবি!

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতারণা ঠেকাতে আরও কঠোর আইন প্রয়োগ এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। রিজার্ভ ব্যাংক এবং এনপিসিআই নানা সচেতনতামূলক প্রচার চালালেও বাস্তবে প্রতারণা কমছে না। তাই কেবলমাত্র বিজ্ঞাপন দিয়ে নয়, বাস্তব পদক্ষেপ নিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করাই সাইবার ক্রাইম ইউনিটের প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত।