সরকারি website গুলির লুডিং টাইম বেশি হওয়ায় কর্মীদের কাজ বিঘ্নিত!
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ডিজিটালাইজেশন এক অবশ্যম্ভাবী প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে। ভারতবর্ষ তথা ত্রিপুরা রাজ্যও এই ডিজিটাল বিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছে। সরকারি দপ্তরগুলিতে ইন্টারনেট ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কাজকর্ম চালানো এখন এক দৈনন্দিন বাস্তবতা। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির তথ্য আপলোড, সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণের জন্য নির্ভর করতে হয় সরকারি ওয়েবসাইটগুলির ওপর। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, এই ওয়েবসাইটগুলির ধীরগতি ও ত্রুটিপূর্ণ পারফরম্যান্সের কারণে বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত কর্মচারীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
প্রতিদিন অফিসে এসে কর্মচারীরা একটাই সমস্যার সম্মুখীন হন— ওয়েবসাইট চালু হচ্ছে না, সার্ভার ডাউন, বা ইন্টারনেট সংযোগ ব্যাহত। ফলে দাপ্তরিক কাজ সম্পাদন করতে ব্যাপক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। এর ফলে সাধারণ নাগরিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের নানান প্রয়োজনীয় পরিষেবা পেতে দপ্তর থেকে দপ্তরে ঘুরতে হচ্ছে, কিন্তু সমস্যার কোনো কার্যকর সমাধান মিলছে না। কর্মচারীরা কোনোভাবেই এই প্রযুক্তিগত সমস্যার জন্য দায়ী নন, অথচ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে দোষ চাপাচ্ছেন ওয়েবসাইট ব্যবহারকারী কর্মীদের ওপর।
বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত একাধিক কর্মচারীর মতে, ইন্টারনেট সংযোগ এবং সরকারি ওয়েবসাইটগুলোর অব্যবস্থাপনা এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে দিনে ৮ ঘণ্টা অফিস করেও প্রকৃতপক্ষে কাজ করার সুযোগ থাকে মাত্র ২-৩ ঘণ্টা। বাকি সময় পার করতে হয় ওয়েবসাইট চালুর অপেক্ষায়। এতে একদিকে সরকারি পরিষেবা যেমন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।
প্রযুক্তিবিদদের মতে, সরকারি ওয়েবসাইটগুলোর ধীরগতির অন্যতম কারণ হলো সার্ভারের অক্ষমতা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং দুর্বল ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ। অনেক ক্ষেত্রেই ওয়েবসাইটগুলো আপডেট না হওয়ায় সেগুলোতে ত্রুটি থেকে যায়, যা কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। পাশাপাশি, বিভিন্ন দপ্তরে ব্যবহৃত ইন্টারনেট কানেকশনের মান অত্যন্ত নিম্নমানের, যা সরকারি পরিষেবাগুলোকে আরও দুর্বল করে তুলছে।
সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, সরকার এই সমস্যার দিকে নজর দেবে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। সার্ভার আপগ্রেড, উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা, এবং ওয়েবসাইটগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশেষজ্ঞ দল নিয়োগ করা এখন সময়ের দাবি। তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তর যদি এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে ডিজিটালাইজেশনের লক্ষ্যে রাজ্যের অগ্রগতি ব্যাহত হবে। সরকারের উচিত অবিলম্বে ওয়েবসাইটের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রযুক্তিগত অবকাঠামো উন্নয়ন করা। আধুনিক সার্ভার, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ, এবং প্রশিক্ষিত প্রযুক্তিবিদ নিয়োগ করা জরুরি। সরকারি দপ্তরে একটি বিশেষ প্রযুক্তি সেল গঠন করা হলে এই সমস্যার সমাধান দ্রুত সম্ভব হবে। এছাড়া, কর্মচারীদেরও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার যাতে তারা ওয়েবসাইট ব্যবহারের ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে ওঠেন।
নাগরিকদের হয়রানি কমানোর জন্য অবিলম্বে ওয়েবসাইটের সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন সচেতন মহল। তারা মনে করেন, উচ্চস্তরের একশ্রেণীর আমলার অবহেলার কারণেই এই সমস্যাগুলো দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে। ওয়েবসাইট নিয়ে বড় ধরনের কোন আর্থিক দুর্নীতির কথাও তারা উড়িয়ে দেননি। তবে এখনই যদি ওয়েবসাইট গুলির সমস্যার সমাধানে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে সরকারি পরিষেবার বিশ্বাসযোগ্যতা বড় ধরনের সংকটে পড়তে পারে।