সরকারি দলের বিরোধী ভূমিকা

সরকারি দলের বিরোধী ভূমিকা!

সরকারি দলের সরকারের বিরুদ্ধে ডাকা বন্ধে নাজেহাল রাজ্যবাসী!

ত্রিপুরা রাজ্যে বিজেপি সরকারের শরিক দল তিপ্রা মথার ছাত্র সংগঠন তিপ্রা স্টুডেন্টস ফেডারেশন (TSF)-এর ডাকা বন্‌ধের জেরে রাজ্যের স্বাভাবিক জনজীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। রাজধানী আগরতলা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা অবরোধ, বিক্ষোভ ও আগুন জ্বালানোর ঘটনায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। আগরতলার সার্কিট হাউস সংলগ্ন গান্ধী মূর্তির পাদদেশে সংগঠনের পক্ষ থেকে সড়ক অবরোধ করা হয়। এতে শহরের বিভিন্ন সড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়, যা পরিবহন, জরুরি পরিষেবা ও সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে।

রাজ্যের প্রধান রেফারেল হাসপাতাল জিবি পন্থ হাসপাতাল ও আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজের (AGMC) দিকে যাওয়ার প্রধান সড়ক অবরোধের কারণে বহু অ্যাম্বুলেন্স ও রোগীকে অনেক সময় নষ্ট করে বহু পথ ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়েছে। বিশেষ করে, গুরুতর অসুস্থ রোগীদের সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। অনেক চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী হাসপাতালে পৌঁছাতে দেরি হয়, যার ফলে জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে।

অবরোধের কারণে ত্রিপুরার অন্যতম স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলিক্রস স্কুলের পরীক্ষার্থীরা বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। অনেক পরীক্ষার্থী যথাসময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেনি, যা তাদের একাডেমিক ভবিষ্যতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। রাজ্যের অন্যান্য স্কুল ও কলেজের স্বাভাবিক কার্যক্রমও ব্যাহত হয়। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা আগরতলা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানায়, ফলে যান চলাচল সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যায়। সংগঠনের তরফে রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যারিকেড বসিয়ে যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা হয়। গান্ধী মূর্তির পাদদেশে সড়ক অবরোধ করার কারণে, রাজ্যের প্রধান অফিসিয়াল কেন্দ্রস্থল গুলির যাতায়াতের পদ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে, ফলে অফিসগামী মানুষ, ব্যবসায়ী, রোগী ও সাধারণ নাগরিকদের চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। শুক্রবার বিধানসভার বাজেট অধিবেশন থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন আগেভাগেই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়। অতিরিক্ত পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়, যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়।

তিপ্রা স্টুডেন্টস ফেডারেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই আন্দোলন মূলত ককবরক ভাষার জন্য রোমান লিপির স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে করা হয়েছে। সংগঠন জানিয়েছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি নেওয়া হবে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে তিপ্রা মথার ছাত্র সংগঠন সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, যা রাজনৈতিক মহলে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের শরিক হয়েও সংগঠনটি রাজ্যের জনজীবন বিপর্যস্ত করে যে আন্দোলনে নেমেছে, তা নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই একে রাজনৈতিক চাপে ফেলার কৌশল হিসেবে দেখছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের শরিক দল হিসেবে তিপ্রা মথার ভূমিকা স্পষ্ট নয়। একদিকে সরকার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা, অন্যদিকে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সংগঠিত করা—এই দ্বৈত অবস্থান ভবিষ্যতে রাজ্যের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষ এই আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট দুর্ভোগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ব্যাহত করে এ ধরনের আন্দোলন কতটা গ্রহণযোগ্য, সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

TSF-এর আন্দোলন ককবরক ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে হলেও, এর ফলে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। সরকারের শরিক দল হয়ে এই আন্দোলন কতটা নৈতিক, তা নিয়ে রাজনৈতিক ও সাধারণ মহলে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, সরকার ও তিপ্রা মথার মধ্যে এই অবস্থানগত ফারাক কীভাবে সামলানো হয় এবং রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়।About Us