সমবায় আন্দোলনকে আরো শক্তিশালী করার উপর জোর মুখ্যমন্ত্রীর।
সমবায় ক্ষেত্রের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে শক্তিশালী করা সম্ভব বলে মন্তব্য করলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। শুধু রাজ্য নয়, সমবায়ের প্রসারে দেশও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হবে। সমবায়কে কেন্দ্র করে দারিদ্র্য ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন সম্ভব বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। মঙ্গলবার, আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত “সমবায়ের প্রচার ও উন্নয়ন” সম্পর্কিত একদিনের রাজ্যভিত্তিক সম্মেলনের উদ্বোধন করে এই মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন ও রাজ্য সমবায় দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সমবায় আন্দোলন একটি রক্তপাতহীন আন্দোলন। এর মাধ্যমে সমাজ ও অর্থনীতি কিভাবে শক্তিশালী হতে পারে, তা অনেকেরই জানা নেই।” তিনি আরও বলেন, “সমবায় সমিতিগুলিকে শক্তিশালী করা গেলে দেশ আর্থিকভাবে আরও এগিয়ে যাবে। বর্তমানে ভারত অর্থনীতির দিক দিয়ে বিশ্বে পঞ্চম স্থানে রয়েছে, যা একসময় ১১তম স্থানে ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এখন আমরা তৃতীয় স্থানে ওঠার লক্ষ্যে কাজ করছি।” তিনি আরও জানান, এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য সমবায়ের সফলতা ও ব্যর্থতা বিশ্লেষণ করা। ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বের করে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা স্থির করাই এই আলোচনার অন্যতম উদ্দেশ্য।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে পৃথক সমবায় মন্ত্রক গঠনের পর সমবায় ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব গতি এসেছে। বিশেষ করে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সমবায় মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নীতিগত সংস্কার আরও গতি পেয়েছে। ত্রিপুরা সরকারের সমবায় দপ্তর প্রতি বছরই সমবায় সপ্তাহ উদযাপন করে। এতে আলোচনা সভা, প্রতিযোগিতা এবং অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়। ত্রিপুরার প্রায় ৪০ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে ৯ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমবায় সমিতির সঙ্গে যুক্ত। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এখন বাকি জনগণের মধ্যেও সমবায় আন্দোলনের চিন্তাভাবনা ছড়িয়ে দিতে হবে।” সমবায় মন্ত্রকের “সমবায়ের মাধ্যমে সমৃদ্ধি” শ্লোগানকে সামনে রেখে দেশে প্রায় ৫৪টি নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে,–
✔ প্যাক্স (Primary Agricultural Credit Society) সমিতিগুলির ডিজিটালাইজেশন
✔ দুগ্ধ ও মৎস্য সমবায় সমিতি গঠন
✔ প্যাক্সের মাধ্যমে ই-পরিষেবা চালু করা
✔ সমবায়ের মাধ্যমে পেট্রোল-ডিজেল ডিলারশিপ ও এলপিজি বিতরণ ব্যবস্থার অনুমোদন
ত্রিপুরায় ১০০% সমবায় সমিতিগুলিকে কম্পিউটারাইজড করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আসবে এবং দুর্নীতিও হ্রাস পাবে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার সমবায় সমিতিগুলিকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।
✔ ল্যাম্পস (LARGE AREA MULTI-PURPOSE SOCIETIES) ও প্যাক্সকে আর্থিকভাবে উন্নত করতে বিশেষ অনুদান
✔ সমবায় সংগঠনের কর্মীদের জন্য আয়কর ছাড়ের প্রস্তাব
✔ “প্রধানমন্ত্রী কিষান সমৃদ্ধি কেন্দ্র” প্রকল্পের সম্প্রসারণ
✔ নতুন “জাতীয় সমবায় নীতি” গঠনের পরিকল্পনা
সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, ন্যাশনাল কোঅপারেটিভ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিলীপ সাঙ্গানি, চিফ এক্সিকিউটিভ ড. সুধীর মহাজন, এবং সমবায় দপ্তরের সচিব তাপস রায় সহ অন্যান্য বিশিষ্টজনরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া বলেন, “সমবায় আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে সরকার আরও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।”
সমবায় খাতকে আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে ত্রিপুরাকে দারিদ্র্যমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কেন্দ্র ও রাজ্যের সমবায় নীতির ফলে আগামী দিনে ত্রিপুরার অর্থনীতিতে সমবায় ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে, এমনটাই আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।