সন্তান বিক্রি! প্রশ্নের মুখে সরকার

সন্তান বিক্রি! প্রশ্নের মুখে সরকার!

সন্তান যেন বোঝা! প্রতিপালনে অক্ষম মায়ের হাতে বিক্রি সদ্যোজাত সন্তান!

সিমনা কাটাছড়া পাড়ায় সদ্যোজাত কন্যা সন্তান বিক্রির অভিযোগ ঘিরে গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকার, সরকারী সহায়তা ও প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে আবারও প্রশ্নের মুখে পড়ল রাজ্যের শাসক ব্যবস্থা। জনজীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণে সরকারের ব্যর্থতা এবং ‘ডাবল ইঞ্জিন’ উন্নয়নের খতিয়ান ফের একবার বিতর্কের কেন্দ্রে।

সূত্রে জানা গেছে, কাটাছড়া পাড়ার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ দাসের স্ত্রী লক্ষ্মীরানী দাস গত ৩০ এপ্রিল সিমনার কাতলামারা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এটি তাদের চতুর্থ সন্তান। কিন্তু জন্মের পর সদ্যোজাতকে বাড়ি না এনে, খোয়াইয়ের অজ্ঞাতপরিচয় এক পরিবারের হাতে তুলে দেন তাঁরা। পরিবারটি জানায়, আর্থিক অনটনের কারণে তারা শিশুটিকে বড় করে তোলার ক্ষমতা রাখে না। ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই প্রতিবেশী বাসনা দাস বিস্ফোরক অভিযোগ করেন, প্রসেনজিৎ ও লক্ষ্মীরানী অর্থের বিনিময়ে কন্যাসন্তান বিক্রি করেছেন। যদিও তারা বাচ্চাকে অন্য পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন, তবে কোন পরিবার এবং কত টাকার বিনিময়ে সেটি ঘটেছে, তা গোপন রেখেছেন।

এই ঘটনা সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পরে শিশুটিকে খোয়াইয়ের বাসিন্দা অপর্ণা দেববর্মা স্বামী সরিন্দ্র দেববর্মার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে স্পেশালাইজ এডাপশন এজেন্সী (আমাদের ঘর)-এ স্থানান্তরিত করা হয়। প্রশাসনের তরফে তদন্ত শুরু হলেও, আর্থিক লেনদেন এবং মানবিক অপরাধের ঘটনা কীভাবে স্থানীয় হাসপাতাল ও প্রশাসনের চোখ এড়াল, সেই প্রশ্ন উঠছে বারবার। হাসপাতালে কর্তব্যরত স্বাস্থ্য কর্মীদের ভূমিকা নিয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে। স্থানীয়দের একাংশ বলছেন, প্রশাসন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে, যা সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য ছিল।

টানা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কেন্দ্র ও রাজ্যে একই রাজনৈতিক দলের শাসন। সরকারি প্রচারে দাবি করা হচ্ছে— “ডাবল ইঞ্জিন সরকার” উন্নয়নের গতি দ্বিগুণ করেছে। কিন্তু সামাজিক সচেতন মহলের মধ্যে বাস্তব চিত্র ঠিক তার উল্টো। আর্থিক অনটন, কর্মসংস্থানের অভাব, স্বাস্থ্য পরিষেবার দুর্বলতা এবং সামাজিক সুরক্ষার ভয়াবহ ঘাটতি— সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ আজ অসহায়। এই শিশু বিক্রির ঘটনা তারই জ্বলন্ত উদাহরণ।

এক মা যখন নিজের সদ্যোজাত কন্যাকে বিক্রি করতে বাধ্য হন, তখন তা শুধুই ব্যক্তিগত ঘটনা নয়— এটা সরকারের চরম ব্যর্থতার প্রতীক। পুষ্টি প্রকল্প, জননীর স্বাস্থ্য সহায়তা, মাতৃত্বকালীন ভাতা বা অঙ্গনওয়াড়ি পরিষেবার বাস্তব অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। বেকারত্ব ও দারিদ্র্য আজ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মানুষ সন্তান জন্ম দেওয়ার পর তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কে থাকেন। যে রাজ্যে সদ্যোজাত শিশুকেও বিক্রির পথে ঠেলে দেওয়া হয়, সে রাজ্যে উন্নয়নের বুলি নিছক লোকদেখানো প্রচারমাত্র। একটি সমাজের উন্নতি নির্ভর করে তার দুর্বলতম অংশের নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত হচ্ছে, তার উপর। আর এই ঘটনাই দেখিয়ে দিল— সরকারের প্রচার যতই জোরদার হোক, মাঠ পর্যায়ে ন্যূনতম সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ।About Us