শিল্পোন্নয়নে অগ্রাধিকার ত্রিপুরায়, ‘স্কিল-উদয় তংনাই’ কর্মসূচির সূচনা!
সার্বিক শিল্পোন্নয়নের নিরিখে ত্রিপুরা এখন একটি ‘পারফর্মার স্টেট’ হিসেবে স্বীকৃত। রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষি, নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ পরিষেবা, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যসেবা সহ একাধিক খাতে কর্মসংস্থান এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
শুক্রবার নরসিংগড়স্থিত টিআইটি অডিটোরিয়ামে ‘স্কিল-উদয় তংনাই’ দক্ষতা প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সূচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’ অনুযায়ী উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির উন্নয়ন ছাড়া দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি জানান, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শান্তি ও উন্নয়নের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। বর্তমানে ত্রিপুরায় ছয়টি জাতীয় সড়ক, দ্রুতগতির ইন্টারনেট, উন্নত রেল ও বিমান পরিষেবা চালু হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রায় ১২টি সমঝোতা চুক্তি (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়েছে। ত্রিপুরার নিজস্ব সম্পদ কাজে লাগিয়ে রাজ্যকে শিল্পোন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাজ্যে রাবার শিল্পের প্রসার ঘটছে, এবং সম্প্রতি শিল্পপতি মুকেশ আম্বানির সঙ্গে বিনিয়োগ সংক্রান্ত আলোচনা হয়েছে। রাবার উৎপাদনে কেরালার পরেই রয়েছে ত্রিপুরা। এছাড়া, চা শিল্পের উন্নয়নের ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যার ফলে রাজ্যের চা এখন গুণমানে উন্নত ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় সক্ষম।
আগর শিল্পের বিকাশ নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী আশাবাদী। আগে এই খাতে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি শুরু হয়েছে। আগামী দিনে আগর শিল্পের বাজার ১০ হাজার কোটি টাকা ছোঁয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশে রাবার শিল্পের প্রসারের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও বর্তমান পরিস্থিতির কারণে কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে। তবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
রাজ্যের উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের আখাউড়ার সঙ্গে আগরতলার রেল সংযোগ তৈরি হয়েছে। এটি চালু হলে আগরতলা থেকে কলকাতা যেতে মাত্র ৭-৮ ঘণ্টা সময় লাগবে। মৈত্রী সেতু নিয়ে রাজ্যের মানুষের বড় আশা রয়েছে, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার হয়ে উঠতে পারে।
ত্রিপুরায় সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বগাফায় প্রায় ৬৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা এক বিরল ঘটনা। তবে সরকার দ্রুততার সঙ্গে কাজ করে মাত্র তিন-চার দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় এনডিআরএফ ও এসডিআরএফ-এর দল তৎপরতার সঙ্গে কাজ করেছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্তনা চাকমা, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, দক্ষতা উন্নয়ন দপ্তরের অধিকর্তা মহম্মদ সাজাদ পি এবং শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা সহ অন্যান্য আধিকারিকগণ। এছাড়া টিআইটির অধ্যক্ষ, ফ্যাকাল্টি সদস্য এবং ছাত্র-ছাত্রীরাও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।