৩৩ জন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ বিদ্যালয় শিক্ষা অধিকর্তার।
শিক্ষকদের শিক্ষাদানে জোরপূর্বক মনোযোগী করে তুলতে রাজ্যের বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে ধারাবাহিক পরিদর্শনের অংশ হিসেবে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আকস্মিক পরিদর্শন চালানো হয়েছে। বিদ্যালয় শিক্ষা অধিকর্তা এন. সি. শর্মার নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযান এবারে আরও ব্যাপকতা অর্জন করেছে, যা পূর্ববর্তী পরিদর্শনগুলোর তুলনায় অনেক বেশি বিস্তৃত।
এই পরিদর্শন ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল পর্যন্ত রাজ্যের দুটি জেলায় একযোগে পরিচালিত হয়। বিদ্যালয় শিক্ষা অধিকর্তার সঙ্গে ছিলেন যুগ্ম অধিকর্তা (মধ্যশিক্ষা) রাকেশ দেববর্মা, উপ-অধিকর্তা (বুনিয়াদি শিক্ষা) রুদ্রদীপ নাথ সহ একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। পরিদর্শনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চল জম্পুই পাহাড়ের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে সরেজমিনে তদন্ত। সাধারণত এসব এলাকায় বিদ্যালয় পরিদর্শকদের উপস্থিতি খুবই কম দেখা যায়। পরিদর্শনকারী দল ভাংমুন, সাবুয়াল, ফুলডংসাই, ত্রিপুরার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বেটলিংসিপসহ অন্যান্য প্রত্যন্ত এলাকার বিদ্যালয়গুলোতে যান। সেখানে পরিদর্শন শেষ করে কাঞ্চনপুর দশদা হয়ে উত্তর ত্রিপুরার অন্যান্য অঞ্চলেও অভিযান চালানো হয়।
রাজ্যের বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘ফাউন্ডেশনাল লিটারেসি ও নিউমারেসি (এফএলএন) সপ্তাহ’ কর্মসূচি চালু করেছে, যা চলবে ১ মার্চ পর্যন্ত। রাজ্যের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ভাষাগত ও গাণিতিক দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নেওয়া এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো:
- পাঠ্যবইয়ের অন্তর্ভুক্ত বিষয়বস্তুর সঠিক অর্থ বুঝতে পারা ও সাবলীলভাবে পড়ার দক্ষতা অর্জন।
- লেখার দক্ষতা ও গাণিতিক সমস্যার সমাধানের ক্ষমতা বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া।
- শিক্ষার্থীদের মৌলিক শিক্ষাগত দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান।
এই কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে বিদ্যালয় শিক্ষা অধিকর্তা এন. সি. শর্মার নেতৃত্বে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পরিদর্শন চালানো হচ্ছে। গত তিন দিনে জম্পুই, দশদা, কাঞ্চনপুর, দামছড়া, কলাছড়া, যুবরাজনগর, পানিসাগর, কুমারঘাট, কৈলাশহরসহ বিভিন্ন মহকুমায় পরিদর্শন সম্পন্ন হয়েছে।
পরিদর্শনের সময় কিছু বিদ্যালয়ে সন্তোষজনক অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেলেও, বেশ কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দায়িত্ব পালনে চরম উদাসীনতা এবং গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। শিক্ষাদান নিয়ে যথাযথ পরিকল্পনার অভাব, শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবস্তুর প্রতি আগ্রহ তৈরিতে অনীহা ও উদ্যমহীনতা দেখা গেছে। এসব কারণে কিছু বিদ্যালয়ে এফএলএন কার্যক্রম কাঙ্ক্ষিত মান অর্জন করতে পারেনি। এ ধরনের গাফিলতির পরিপ্রেক্ষিতে ৩৩ জন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের ডাইস নন করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, যেসব বিদ্যালয়ে এফএলএন কর্মসূচি দৃষ্টান্তমূলকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে, সেসব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রশংসা ও অভিনন্দন জানিয়েছে বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর। পরবর্তীতে তাদের শংসাপত্র প্রদানের ব্যবস্থাও করা হবে। শুধু উত্তর ত্রিপুরা নয়, খোয়াই জেলার কমলপুর, খোয়াই এমসি, ঊনকোটি জেলার বিভিন্ন মহকুমাসহ অন্যান্য জেলাগুলিতেও পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিদর্শন চলছে। বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এফএলএন সপ্তাহ চলাকালীন অন্যান্য জেলা ও মহকুমাতেও আরও ব্যাপক পরিদর্শন চালানো হবে। এর মাধ্যমে কর্মসূচির কার্যকারিতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া এবং শিক্ষার্থীদের মৌলিক শিক্ষাগত দক্ষতা নিশ্চিত করা হবে। বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পরিদর্শনের এই ধারা অব্যাহত থাকবে এবং কর্মসূচির মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতেও দপ্তর পিছপা হবে না।