রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি কমলো, মহার্ঘ পেট্রোপণ্য!
সাধারণ মানুষের জন্য বড় ধাক্কা! রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি কমিয়ে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। নতুন বাজেটে এলপিজি ভর্তুকি আরও কমানো হয়েছে, যার ফলে গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ওপর চাপ আরও বাড়বে। ২০১৪ সালে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি ক্রমাগত কমানো হয়েছে। মনমোহন সিং সরকারের আমলে যেখানে গ্রাহকরা প্রায় অর্ধেক ভর্তুকি পেতেন, এখন তা কমতে কমতে মাত্র দেড়শো টাকায় দাঁড়িয়েছে। এবারের বাজেটে ভর্তুকি কমে ১২ হাজার কোটিতে নেমেছে, যেখানে পূর্ববর্তী বাজেটে ১৪,৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল।
ভর্তুকি কমানোর ঘোষণার পরই বড় ধাক্কা খেয়েছে সরকারি তেল সংস্থাগুলোর শেয়ার। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী, ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে পেট্রোল-ডিজেলের দাম আবার বাড়তে পারে। বর্তমান সময়ে আগরতলায় পেট্রোলের দাম ৯৭.৫০ টাকা প্রতি লিটার।
অন্যদিকে গ্যাসের দাম বাড়ার পাশাপাশি নতুন অভিযোগ উঠেছে সিলিন্ডারের ওজনে কারচুপি নিয়ে। গ্রাহকদের অভিযোগ, ১৪.২ কেজির সিলিন্ডারে যথেষ্ট পরিমাণ গ্যাস থাকছে না। যেখানে আগে একটি সিলিন্ডার দিয়ে দেড় থেকে দুই মাস রান্না চলত, এখন তা এক মাসও টিকছে না। হোম ডেলিভারির কারণে গ্রাহকরা সিলিন্ডার মেপে নিতে পারছেন না, ফলে কোথায় কারচুপি হচ্ছে তা বুঝতে পারছেন না কেউই। প্রশাসনের কাছে বিষয়টি জানানো হলেও এখনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে যেসব গরিব পরিবার বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ পেয়েছিলেন, তাদের অনেকেই এখন আর নতুন সিলিন্ডার কিনতে পারছেন না। প্রায় ১০০০ টাকার বেশি দামে একটি সিলিন্ডার কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। ফলে বহু পরিবার গ্যাস সংযোগ পেয়েও সিলিন্ডার ব্যবহার করতে পারছেন না, বরং ঘরে সাজিয়ে রেখেছেন। গ্যাসের দাম বাড়ার পাশাপাশি কেরোসিনের মূল্যও লাগাতার বেড়ে চলেছে। রেশনে কেরোসিনের দাম প্রতি লিটার ৯৫ টাকা, আর খোলা বাজারে তা ১২০ টাকারও বেশি। ফলে অনেকেই আবার কাঠের উনুনের দিকে ফিরে যাচ্ছেন।
২০১৫ সালে মোদি সরকার ‘গিভ ইট আপ’ প্রকল্প চালু করেছিল, যার মাধ্যমে স্বেচ্ছায় ভর্তুকি ত্যাগ করা যেত। কিন্তু অনেকেই তা নাবুঝে ভুলবশত মোবাইলের ভুল অপশনে টিপে এই সুবিধা হারিয়েছেন। এছাড়া যেসব পরিবারের বার্ষিক আয় ১০ লক্ষ টাকার বেশি, তাদের ভর্তুকি কেটে নেওয়া হয়েছে।
সরকারের হিসাব বলছে, ২০১৫-১৬ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত এই ‘গিভ ইট আপ’ প্রকল্পে ৫৭,৭৬৮ কোটি টাকা সঞ্চয় করেছে কেন্দ্র। তবে গরিব ও মধ্যবিত্তরা আজ সেই সঞ্চয়ের বোঝা বয়ে চলেছেন। রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি কমানো, সিলিন্ডারের ওজনে কারচুপি, উজ্জ্বলা যোজনার সীমাবদ্ধতা এবং কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধি—সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে উঠছে।