মহিলা ও পন সংক্রান্ত মামলা নির্মূলের আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর!
ত্রিপুরা রাজ্যের মহিলাদের স্বনির্ভরতা ও সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বর্তমান সরকার। রাজ্যে পণ সংক্রান্ত মামলাগুলিকে সম্পূর্ণ নির্মূল করার লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। শুক্রবার আগরতলার ৩৩ নং পুর ওয়ার্ডের মহিলা স্বশক্তিকরণ কমিটির উদ্যোগে ‘স্বাবলম্বী নারী, স্বাবলম্বী ত্রিপুরা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা একথা জানান।
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ত্রিপুরায় পণ সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। তবে আমরা কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না। আমরা চাই, রাজ্যে এই ধরনের মামলাগুলির সংখ্যা শূন্যে নেমে আসুক। কোনো নারী যাতে এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন না হন, সেজন্য সরকার নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে।” তিনি জানান, পণপ্রথা প্রতিরোধের জন্য প্রশাসনিক স্তরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ৮ জন ডেপুটি কালেক্টরকে ডিস্ট্রিক্ট ডাউরি প্রহিবিশন অফিসার এবং মহকুমা শাসকদের ডাউরি প্রহিবিশন অফিসার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “নারীরা সমাজের চালিকাশক্তি। ঘরের মধ্যে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, সমাজেও তাঁদের সমানভাবে নেতৃত্ব দিতে হবে। মহিলাদের স্বশক্তিকরণের ওপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর উদ্যোগেই তিন তালাক প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে, যা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মা-বোনেদের জন্য এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।” তিনি বলেন, “আগের সরকার শুধুমাত্র মিছিল-মিটিংয়ে নারীদের ব্যবহার করত, কিন্তু আমাদের সরকার মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে তারা স্বাবলম্বী হচ্ছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস পাচ্ছেন।” মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, “শুধুমাত্র পুরুষদের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। বর্তমানে তারা পাইলট, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মহাকাশচারী থেকে শুরু করে ট্রেন চালানো এবং গাড়ি চালানোর মতো কাজেও নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আজ তাঁরা আর কোনো ক্ষেত্রেই পিছিয়ে নেই, বরং পুরুষদের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে চলেছেন।”
ত্রিপুরা রাজ্য সরকার ২০২২ সালে ত্রিপুরা স্টেট পলিসি ফর এমপাওয়ারমেন্ট অফ ওমেন চালু করেছে, যার মাধ্যমে মহিলাদের কল্যাণে একাধিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ও আরবান লোক্যাল বডির নির্বাচনে মহিলাদের ৫০% এর বেশি আসন সংরক্ষিত করা হয়েছে। এছাড়া, টিএসআর বাহিনীতেও ৩৩% সংরক্ষণ নিশ্চিত করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে নারী শক্তিকে এগিয়ে নিতে রাজ্য সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, “অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে অনেক মেয়েকে স্কুল ছাড়তে হয়। তাই রাজ্য সরকার ছাত্রীদের জন্য সমস্ত ধরণের ফি মুকুবের ব্যবস্থা করেছে।” তাছাড়া, গন্ডাতুইসায় একটি নতুন ৫০ বেডের ছাত্রী হোস্টেল স্থাপন করা হয়েছে। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় নারী শক্তি পরিচালিত পুলিশ স্টেশন গড়ে তোলা হয়েছে। আগে মহিলারা প্রশাসনিক কাজে ভয় পেতেন, কিন্তু এখন তারা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন এবং নির্ভয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দেশে এমএনরেগা প্রকল্পের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও আর্থিক স্বনির্ভরতা নিশ্চিত হয়েছে। আগে এই প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলাদের মজুরির অর্থ মধ্যস্থতাকারীদের হাতে চলে যেত, কিন্তু বর্তমানে প্রত্যেক শ্রমিকের মজুরি সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আগে মহিলারা রাজনৈতিক চাপের কারণে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য হতেন। কিন্তু এখন তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সরকারি প্রকল্পগুলির সুবিধা গ্রহণ করছেন।”
মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন যে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়। তিনি বলেন, “আমাদের সরকার নারীদের অধিকার রক্ষা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। শুধু ভাষণে নয়, বাস্তব কাজের মাধ্যমেই আমরা মহিলাদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি।”
এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ সভাপতি তথা সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, ডেপুটি মেয়র মনিকা দাস দত্ত, পুর কর্পোরেটর অভিজিত মল্লিক, সদর আরবান জেলার সভাপতি অসীম ভট্টাচার্য, বড়দোয়ালি মন্ডলের সভাপতি শ্যামল কুমার দেব, মার্কফেডের ভাইস চেয়ারম্যান সঞ্জয় সাহা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ। মহিলাদের স্বনির্ভরতা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ত্রিপুরা সরকার যেভাবে কাজ করছে, তা রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার নেতৃত্বে ত্রিপুরা মহিলাদের জন্য এক নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।