মহাশিবরাত্রির অমৃত কুম্ভস্নানে মন্ত্রী সুশান্ত

মহাশিবরাত্রির অমৃত কুম্ভস্নানে মন্ত্রী সুশান্ত!

মহাশিবরাত্রিতে সমাপ্ত বিশ্বের সর্ববৃহৎ মিলনকুম্ভ!

প্রয়াগরাজে ৪৫ দিন ধরে চলা মহাকুম্ভ, শেষ হলো মহাশিবরাত্রির পবিত্র তিথিতে। শেষ দিনের পূণ্যস্নানে ত্রিবেণী সঙ্গমে জনস্রোত উপচে পড়ল। প্রতি ১৪৪ বছর পর আসা এই মহাকুম্ভে পবিত্র স্নানের বিরল সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি লাখো পূণ্যার্থী। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, এবারের মহাশিবরাত্রিতে তৈরি হয়েছিল এক বিরল শুভ যোগ, যা এই মহাকুম্ভের মাহাত্ম্য আরও বাড়িয়ে তুলেছিল।

ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, মহাকুম্ভের শেষ দিনে অমৃতস্নান এক মহাসৌভাগ্যের বিষয়। এই বিশেষ সংযোগে স্নান করলে জীবনের সব বাধা-বিঘ্ন দূর হয় এবং শিবের কৃপালাভ হয়। তাই এদিন লক্ষ লক্ষ ভক্ত প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে সমবেত হয়ে পূণ্যস্নানে অংশ নেন। মহাশিবরাত্রির এই শুভ মুহূর্তে সস্ত্রীক পুন্যস্নান করেন ত্রিপুরার পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। তিনি এই ঐতিহাসিক কুম্ভমেলার সাক্ষী থেকেছেন এবং সনাতন সংস্কৃতির পরম্পরার সঙ্গে যুক্ত এই মহান ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে নিজেকে ধন্য মনে করেছেন। এর আগেই মুখ্যমন্ত্রী সহ রাজ্য থেকে বহু পুণ্যার্থী, সেখানে গিয়ে স্নান করেছেন।

গত ১৩ জানুয়ারি পৌষ পূর্ণিমার দিন থেকে শুরু হয়েছিল মহাকুম্ভ। দীর্ঘ ৪৫ দিন ধরে চলা এই ধর্মীয় আয়োজন শেষ হয় মহাশিবরাত্রির পুণ্যতিথিতে। এদিন মহাকুম্ভের শেষ স্নান অনুষ্ঠিত হয়, যা সনাতন ধর্মের অনুসারীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র বলে বিবেচিত। জ্যোতিষ মতে, মহাশিবরাত্রিতে এবারের কুম্ভে একাধিক শুভ যোগ তৈরি হয়েছিল। শিব যোগ, সিদ্ধ যোগ, বুধাদিত্য যোগ এবং ত্রিগ্রহী যোগের সমাপতনে এবারের মহাকুম্ভের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে, মীন রাশিতে বুধ, শনি এবং সূর্যের সংযোগ এই সময়ের পূজা-অর্চনাকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছিল।

বিশ্বাস করা হয়, এই শুভ যোগে স্নান ও পূজা করলে সমস্ত মনোস্কামনা পূর্ণ হয় এবং শিব-পার্বতীর কৃপাদৃষ্টি লাভ করা যায়। জ্যোতিষীদের মতে, এই ধরনের বিরল সংযোগে কুম্ভ স্নান করলে বহু গুণে ফল পাওয়া যায় এবং জীবন থেকে সমস্ত বাধা ও দুঃখ দূর হয়। ২০২৫ সালের মহাকুম্ভে প্রায় ৬০ কোটি পূণ্যার্থী অংশগ্রহণ করেছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। এ বছর বিভিন্ন দিনে বিশেষ স্নান অনুষ্ঠিত হয়েছে:

  • পৌষ পূর্ণিমা: প্রথম পূণ্যস্নান
  • মকর সংক্রান্তি: প্রথম অমৃত স্নান
  • মৌনী অমাবস্যা: দ্বিতীয় অমৃত স্নান
  • বসন্ত পঞ্চমী: তৃতীয় অমৃত স্নান
  • মাঘ পূর্ণিমা: পঞ্চম গুরুত্বপূর্ণ স্নান
  • মহাশিবরাত্রি: চূড়ান্ত ও সর্বশেষ পূণ্যস্নান

এই ছয়টি বিশেষ স্নানের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মানুষেরা নিজেদের পবিত্র করেছেন এবং মোক্ষ লাভের আশায় অংশগ্রহণ করেছেন। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, কুম্ভস্নান সমস্ত পাপ ধুয়ে দেয় এবং ব্যক্তি পরম মুক্তি লাভ করে।

কুম্ভমেলার উৎপত্তি পুরাণের সমুদ্রমন্থন কাহিনির সঙ্গে জড়িত। বিশ্বাস করা হয়, অমৃতভাণ্ড বহনকালে দেবরাজ ইন্দ্রের পুত্র জয়ন্ত চারটি স্থানে অমৃতের কয়েক ফোঁটা ফেলে দিয়েছিলেন—প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, নাসিক এবং উজ্জয়িনী। তাই এই চার স্থানে পর্যায়ক্রমে কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৫ সালের প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ সমাপ্ত হলেও ২০২৭ সালে পরবর্তী কুম্ভ অনুষ্ঠিত হবে মহারাষ্ট্রের নাসিকে। ধর্মপ্রাণ ভক্তরা ইতিমধ্যেই সেই কুম্ভের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।

মহাশিবরাত্রিতে শিবের আরাধনা ও ব্রত পালন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়, এই রাতে উপবাস রেখে শিবের পুজো করলে জীবনে সকল বাধা-বিপত্তি দূর হয় এবং সুখ-সমৃদ্ধি আসে। কুম্ভমেলার মতো মহাশিবরাত্রির স্নানও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, যাদের কুণ্ডলীতে পিতৃদোষ বা গ্রহ-নক্ষত্রের অশুভ প্রভাব রয়েছে, তারা এই দিনে গঙ্গাস্নান করে তা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তাই মহাকুম্ভের শেষ দিনে মহাশিবরাত্রির স্নান এক বিশেষ আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বহন করে।

২০২৫ সালের প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে। ধর্মীয় বিশ্বাস, জ্যোতিষশাস্ত্র ও আধ্যাত্মিকতার মিলনে এই মহাকুম্ভ ছিল এক অতুলনীয় আয়োজন। মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীসহ অসংখ্য পূণ্যার্থী এই মহাসমাগমে অংশগ্রহণ করে নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করেছেন। আগামী কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হবে ২০২৭ সালে মহারাষ্ট্রের নাসিকে। ধর্মপ্রাণ মানুষেরা সেই পবিত্র মুহূর্তের অপেক্ষায় রয়েছেন, যখন তাঁরা আবারও কুম্ভস্নানে অংশ নিয়ে পবিত্রতার স্পর্শ লাভ করতে পারবেন।