মন্ত্রী-বিধায়করাই পারে, একমাত্র নিজেদের বেতন নিজেরাই বাড়িয়ে নিতে!
মন্ত্রী-বিধায়কদের বেতন ভাতা সংক্রান্ত একটি বিল “বিধায়ক, মন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলনেতা, সরকারী চিফ হুইপ এবং অন্যান্য সদস্যদের বেতন, ভাতা, পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা (ত্রিপুরা) (নবম সংশোধনী) বিল, ২০২৪” আজ বিধানসভায় পাস হয়। এই নতুন বিল অনুযায়ী মন্ত্রী-বিধায়কদের বেতন ভাতা ও পেনশন প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিল অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী এখন থেকে ৯৭,০০০ টাকা বেতন পাবেন, উপ মুখ্যমন্ত্রীর বেতন হবে ৯৬,০০০ টাকা। অন্যান্য মন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধী দলনেতা এবং সরকারী চিফ হুইপের বেতন হবে ৯৫,০০০ টাকা।ডেপুটি স্পিকারের বেতন মন্ত্রীদের থেকে ১,০০০ টাকা কম এবং বিধায়কদের বেতন হবে ৯৩,০০০ টাকা। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য বিনোদন ভাতা ১৩,০০০ টাকা এবং অন্যান্যদের জন্য ১২,০০০ টাকা নির্ধারিত হয়েছে। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৯ সালে প্রথম বেতন ও ভাতা বৃদ্ধি কার্যকর হয়। তখন মুখ্যমন্ত্রীর বেতন ছিল ৫৩,৬৩০ টাকা এবং উপ মুখ্যমন্ত্রীর বেতন ছিল ৫২,৬৩০ টাকা। অন্যান্য মন্ত্রী, স্পিকার এবং বিরোধী দলনেতার বেতন ছিল ৫১,৭৮০ টাকা। চিফ হুইপ ৫০,৫১০ টাকা এবং বিধায়কের বেতন ছিল ৪৮,৪২০ টাকা। বিধানসভার সদস্যদের ভ্রমণ এবং দৈনিক ভাতা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে , প্রতি কিলোমিটার ৩৫ টাকা এবং দৈনিক ভাতা ত্রিপুরার মধ্যে ১,১০০ টাকা এবং ত্রিপুরার বাইরে ১,৫০০ টাকা। পেনশন সংক্রান্ত একটি বড় পরিবর্তনও বিলটিতে রয়েছে। প্রাক্তন বিধায়কদের পেনশন ৩৪,৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৬,০০০ টাকা করা হয়েছে, পারিবারিক পেনশনও ২৫০০০ টাকা থেকে ৪৮০০০ টাকা করা হয়েছে। এই বিলটি পেশ করে মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, বেতন, ভাতা ও পেনশনের এই সংশোধন খুবই প্রয়োজনীয় ছিল; কারণ মূল্যসূচকের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই বর্ধিত বেতন কাঠামোর ফলে সরকারের প্রায় অতিরিক্ত ১১ কোটি টাকার ব্যয় হবে। শ্রম দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এই বর্ধিত বেতন ভাতা ত্রিপুরার একজন সাধারণ কর্মচারীর থেকে প্রায় আট গুণ বেশি।
বিধানসভার সব সদস্যরা মুচকি হেসে এই বিল পাস করাতে সাহায্য করেন এবং বর্ধিত বেতন ভাতা গ্রহণ করেন। যদিও সাধারণ মানুষকে বোকা বানানোর জন্য বিরোধীতার কিছু নাটক মঞ্চস্থ করতে দেখা গেল বিরোধি দলনেতাকে। কিন্তু কর্মচারীদের বেতন ভাতা নিয়ে কাউকে কোন কথা বলতে শোনা যায়নি বিধানসভায়। উল্লেখ্য; সপ্তম বেতন কমিশনের লোভ দেখিয়ে ২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসেছিল শাসক দল বিজেপি। প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনেই সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকর করা হবে কথা থাকলেও, আজ পর্যন্ত কি তা পেয়েছেন কর্মচারীরা?
রাজ্য বিধানসভায় যতবারই মন্ত্রী বিধায়কদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি করা হয়, ততবারই সংবাদ মাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য, তখনকার বিরোধীরা বিরোধিতা করে থাকেন। অথচ পরবর্তী সময়ে তারা ঠিকই সেই বর্ধিত বেতন ভাতা গ্রহণ করেন। ভুলেও কাউকে কখনো দেখা যায়নি পরবর্তী সময়ে তা সারেন্ডার করতে। বুধবার রাজ্য বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী উপমুখ্যমন্ত্রী, বিধায়ক, মন্ত্রীদের বেতন ভাতা সংক্রান্ত বিলটি ধনী ভোটে পাস হয়। তখনও বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী প্রতিবাদ করেছেন। যেমনটা আজ থেকে পাঁচ বছর আগে করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। এটা তাদের দ্বিচারিতা বলে উল্লেখ করলেন পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী।সিপিআইএম দলের বিধায়করা মুখে কিছু বলতে না পারলেও তারা প্রকারান্তরে ট্রেজারি বেঞ্চের মন্ত্রী বিধায়কদের বলেন বেতন ভাতা হিসেবে তারা যা পান তার বেশিরভাগটাই পার্টি লেবি হিসেবে কেটে নেয়। কম টাকায় তারা পরিবার প্রতিপালন করবেন কি করে। ফলে তারাও চাইছিলেন বেতন ভাতা বৃদ্ধি করতে। কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারছেন না। বিরোধী কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মনের মতো পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী ও প্রস্তাব দিলেন যারা চান না মন্ত্রী বিধায়কদের ভাতা বাড়ুক তারা ইচ্ছে করলে সারেন্ডার করতে পারেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সিপিআইএম দল সেই নজির কিন্তু স্থাপন করেননি।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অন্যান্য মন্ত্রী এবং বিধায়কদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি হলেও সারাদেশে সর্বনিম্ন বেতন পাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী এবং অন্যান্য বিধায়করা; এটা নিয়ে বিধায়কদের আলোচনা করতে শোনা যায়। কিন্তু সম্পূর্ণ ভারতবর্ষের মধ্যে ত্রিপুরার কর্মচারীরা সবচেয়ে কম বেতনে কাজ করছেন এই বিষয়ে কাউকে কিছু বলতে শোনা যায়নি।