নজরদারির গাফিলতিতে ত্রিপুরার বাজারে ভুয়া ঔষধ।
ত্রিপুরায় ভুয়া ঔষধের আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে। ঔষধের গুণমান নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার কিউআর কোড বাধ্যতামূলক করলেও, রাজ্যে এই নিয়ম কার্যকর হয়নি। ঔষধ বিক্রেতাদের সচেতনতার অভাব, প্রশাসনের গাফিলতি ও ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের নিষ্ক্রিয়তার কারণে সাধারণ মানুষ ভুয়া ঔষধ সনাক্ত করতে পারছেন না। ফলে এই ঔষধ সেবনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ত্রিপুরার ঔষধ বাজারে ভুয়া ও অনুমোদনহীন ঔষধের ছড়াছড়ি নিয়ে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, ঔষধের গুণমান নিশ্চিত করতে প্রতিটি প্যাকেটে কিউআর কোড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে রাজ্যে এই নিয়মের কার্যকর প্রয়োগের কোনও লক্ষণ নেই। ঔষধ নিয়ন্ত্রণ বিভাগও (ড্রাগ কন্ট্রোল) এই বিষয়ে কোন নজরদারি চালাচ্ছে না, যার ফলে সাধারণ মানুষ নকল ঔষধের শিকার হচ্ছেন।
নির্দেশিকাঃ
ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভুয়া ঔষধ প্রতিরোধে কিউআর কোড স্ক্যানিং ব্যবস্থা চালু করেছে। এই কোড স্ক্যান করলেই ঔষধের উৎপাদক সংস্থা, ব্যাচ নম্বর, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ উত্তীর্ণের সময়সহ যাবতীয় তথ্য জানা যাবে। এর ফলে সহজেই ভুয়া ঔষধ চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। কিন্তু ত্রিপুরার অধিকাংশ ঔষধের দোকানে এখনও কিউআর কোড স্ক্যানিং ব্যবস্থা চালু হয়নি। বিক্রেতাদের একাংশ কিউআর কোডের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল নন। সাধারণ জনগণের মধ্যেও এই বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। ফলে তাঁরা যাচাই না করেই ঔষধ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন, যা তাঁদের স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রিপোর্টঃ
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে বাজারে থাকা প্রায় ৩ শতাংশ ঔষধ ভুয়া, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। বিভিন্ন রাজ্যে একাধিকবার ভুয়া ঔষধের কারবার ধরা পড়েছে, এবং ত্রিপুরাও এই তালিকায় নতুন নয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্রিপুরার মতো ছোট রাজ্যেও অনুমোদনহীন ঔষধের ব্যবসা চলছে গোপনে। বাজারে এমন কিছু ঔষধ পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলো কেন্দ্রীয় অনুমোদনপ্রাপ্ত নয় এবং কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। এর ফলে রোগীরা ঔষধ গ্রহণের পর উপযুক্ত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়ছেন।
গাফিলতিঃ
ত্রিপুরার ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগ রাজ্যে ভুয়া ঔষধ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। অনুমোদনহীন ঔষধের বিক্রি বাড়লেও ঔ অভিযান চালানো হচ্ছে না। ফলে ভুয়া ঔষধের ব্যবসা রমরমিয়ে চলেছে এবং সাধারণ মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, রাজ্যের অনেক ঔষধ দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ ও অনুমোদনহীন ঔষধ বিক্রি হচ্ছে, যা ক্রেতাদের অজান্তেই স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া ব্যবস্থা না নেওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
পরামর্শঃ
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ত্রিপুরায় দ্রুত কিউআর কোড ব্যবস্থা বাস্তবায়ন না হলে সাধারণ মানুষ আরও বেশি ভুয়া ঔষধের ফাঁদে পড়বেন। তাই এই সমস্যা সমাধানে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে –
✅ সরকারকে কিউআর কোড ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
✅ সংবাদমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে জনগণকে ঔষধের বৈধতা যাচাইয়ের পদ্ধতি সম্পর্কে জানানো প্রয়োজন।
✅ ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগকে আরও সক্রিয় হতে হবে এবং নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে।
✅ অনুমোদনহীন ঔষধ বিক্রির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রশ্নচিহ্নঃ
রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর ও ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের নিষ্ক্রিয়তায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা থাকলেও তা কার্যকর করতে রাজ্যের অনীহা কেন? প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজ্যের প্রশাসন যদি দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ত্রিপুরার বাজারে ভুয়া ঔষধের রমরমা চলতেই থাকবে। এতে সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে।
শেষ কথাঃ
ত্রিপুরায় ভুয়া ঔষধের ছড়িয়ে পড়া শুধুমাত্র স্বাস্থ্য সংকট নয়, এটি প্রশাসনিক ব্যর্থতারও পরিচায়ক। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের সঙ্গে কোনওরকম আপস করা যায় না। তাই সরকার, প্রশাসন এবং ঔষধ নিয়ন্ত্রণ বিভাগকে একযোগে কাজ করতে হবে। নয়তো পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।