বেতার শাখার বেতাল দশা!

বেতার শাখার বেতাল দশা!

ত্রিপুরা পুলিশের বেতার শাখা বার্ধক্য জনিত রোগে ভুগছে!

পুলিশের বেতার শাখা বর্তমানে তীব্র কর্মী সংকটে ভুগছে। এই শাখার জন্য প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবতো রয়েছেই, তার উপর যারা কর্মরত আছেন, তাদেরকেও বিভিন্ন থানায় ডিউটি করতে পাঠানো হচ্ছে। এমনকি মাঝে মাঝে তাদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজেও নিয়োজিত করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, বছরখানেক আগে বেতার শাখাটি পোষ্টঅফিস চৌমুহনি থেকে স্থানান্তরিত হয়ে পশ্চিম জেলার এসপি ডিআইবি অফিসে চলে আসে। কিন্তু স্থানান্তরের পর থেকেই নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এই বিভাগের কর্মীদের। যে রুমটিতে থেকে বর্তমানে বেতার শাখাটি পরিচালিত হচ্ছে, সেটি অত্যন্ত ছোট এবং সেখানে কাজ করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। একই ঘরে সিভিল পুলিশ ও লিগাল সেলের কর্মীরাও কাজ করেন, ফলে স্থান সংকুলানের অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে।

অনেকে মনে করছেন, পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তৃপক্ষ হয়তো পরিকল্পিতভাবেই বেতার শাখার গুরুত্ব কমানোর চেষ্টা করছে। জানা গেছে, ডিআইবি অফিসের বর্তমান স্থানে বেতার যোগাযোগ পরিচালনার উপযুক্ত পরিবেশই নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এর আগে বড়দোয়ালি স্কুলের পেছনে ছিল বেতার শাখার কার্যালয়, যেখানে কিছুটা হলেও কাজের পরিবেশ ছিল। বর্তমানে যেখানে শাখাটি অবস্থিত, সেখানে কর্মীদের কার্যক্রম পরিচালনায় মারাত্মক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

এক সময় পুলিশের বেতার শাখার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এক থানা থেকে অন্য থানায় খবর পাঠানোর একমাত্র মাধ্যম ছিল এই বেতার যোগাযোগ। এখনো প্রত্যন্ত এলাকার থানাগুলো যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই সেই থানাগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা আদান-প্রদানের জন্য আজও বেতার শাখার উপরই নির্ভর করতেই হয়। ফলে প্রযুক্তির উন্নয়ন হলেও বেতার শাখার গুরুত্ব একেবারে কমে যায়নি। তবে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দাবি, আগের অবস্থানে বেতার শাখাটি রাখা সম্ভব হয়নি কারণ সেখানে সিগন্যাল পাওয়া যেত না। কিন্তু শহরেই যদি সিগন্যালের সমস্যা হয়, তাহলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিভাবে সংকেত পৌঁছানো সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। অনেকের মতে, এটি শুধুমাত্র একটি অজুহাত মাত্র

দীর্ঘদিন ধরেই এই বেতার শাখা অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে। এই শাখার কর্মীরা প্রমোশনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছেন এবং নতুন নিয়োগও দীর্ঘদিন ধরে হয়নি। রাজধানীতে মাত্র ছয়জন কর্মী দিয়ে চলছে এই গুরুত্বপূর্ণ শাখাটি। অথচ, একসময় মহকুমাগুলোতে বেতার শাখার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। থানাগুলোতে বার্তা প্রেরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করত বেতার শাখা। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পুরনো ব্যবস্থার পরিবর্তন অবশ্যই প্রয়োজন, তবে তার মানে এই নয় যে কার্যকরী একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগকে ধীরে ধীরে নিস্ক্রিয় করে ফেলা হবে। এখনো প্রত্যন্ত থানাগুলোতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠানোর জন্য বেতার শাখার উপর নির্ভর করতে হয়। তাহলে কেন এই অবহেলা? কেন এই বিভাগটিকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন এখন পুলিশের ভেতরেই ঘুরপাক খাচ্ছে।