‘ফোর্বস’ প্রকাশ করল ২০২৫ সালের বিশ্বের ক্ষমতা তালিকা!
আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সামরিক শক্তি, অর্থনীতি ও কূটনৈতিক প্রভাবের ভিত্তিতে ফোর্বস প্রকাশ করেছে ২০২৫ সালের বিশ্বের শীর্ষ ১০ ক্ষমতাধর দেশের তালিকা। এই তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে প্রথম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তবে ভারত আশানুরূপ স্থান অর্জন করতে পারেনি।
বিশ্ব মঞ্চে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাব থাকা সত্ত্বেও এই তালিকায় ভারত ১২তম স্থানে রয়েছে। যদিও অর্থনৈতিক শক্তির দিক থেকে ভারত বিশ্বে ৫ম বৃহত্তম অর্থনীতি, তবে সামরিক শক্তি, রাজনৈতিক প্রভাব এবং কূটনৈতিক সংযোগের বিচারে ভারত এখনো শীর্ষ ১০-এ প্রবেশ করতে পারেনি।
শীর্ষ ১০ দেশের তালিকাঃ
যদিও বিশ্বের অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে ভারত বর্তমানে ৫ম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। তবে সামরিক শক্তি, আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং বৈশ্বিক প্রভাবের বিচারে অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় ভারত এখনো অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল–
- সামরিক শক্তিঃ ভারতীয় সেনাবাহিনী শক্তিশালী হলেও প্রযুক্তিগত দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং রাশিয়ার তুলনায় অনেক পিছিয়ে। সামরিক গবেষণা এবং উন্নয়নের (R&D) ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে ভারতে কম বিনিয়োগ করা হয়।
- কূটনৈতিক প্রভাবঃ ভারত অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য হলেও, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ না পাওয়ায় আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সীমিত প্রভাবশালী।
- অর্থনৈতিক বৈষম্য ও সামাজিক উন্নয়নঃ অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও, ভারতে দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং অসমতা এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
- প্রতিরক্ষা ব্যয়ঃ ২০২৫ সালে ভারতের সামরিক বাজেট অন্যান্য বৃহৎ সামরিক শক্তিধর দেশের তুলনায় কম। চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া প্রতিরক্ষা গবেষণায় বেশি বিনিয়োগ করে যা তাদের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখতে সাহায্য করছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল এবং আগামী এক দশকে এটি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।
- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিঃ ২০২৫ সালে ভারত ৫ম বৃহত্তম অর্থনীতি হলেও, ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ৩য় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারে।
- প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধিঃ ভারত স্বদেশীয় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিকাশে বিনিয়োগ করছে এবং সামরিক উৎপাদন শক্তিশালী করছে।
- আন্তর্জাতিক সংযোগঃ কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করতে ভারত বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তি, কৌশলগত জোট ও নিরাপত্তা সহযোগিতায় জোর দিচ্ছে।
- সবুজ শক্তি ও টেকনোলজিঃ ভারত নবায়নযোগ্য শক্তি ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে যা ভবিষ্যতে তার ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিশ্বশক্তির মানচিত্রে ভারতের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময়। বর্তমানে ভারত বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং আগামী দশকে এটি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি দেশটি সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, কৌশলগত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মজবুত করা এবং বৈশ্বিক কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে।
ভারত বর্তমানে প্রতিরক্ষা খাতে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। দেশীয় অস্ত্র উৎপাদন, প্রযুক্তিগত গবেষণা ও সামরিক আধুনিকীকরণে মনোযোগ দেওয়ায় ভারত ভবিষ্যতে সামরিক শক্তির দিক থেকে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কৌশলগত জোট ও বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে বিশ্ব রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভারতে পরিকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং নবায়নযোগ্য শক্তির উপর ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে ভারতের ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করবে। যদি সামরিক, প্রযুক্তি ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে আরও উন্নতি করা যায়, তবে আগামী দশকে ভারত শীর্ষ ১০ ক্ষমতাধর দেশের তালিকায় প্রবেশ করতে পারে এবং একটি বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হবে। তবে এর জন্য সরকারের আরও বিনিয়োগ, দক্ষ প্রশাসন এবং কৌশলগত পরিকল্পনার প্রয়োজন হবে।