বিদ্যুৎ দপ্তরের বজ্রাঘাত

বিদ্যুৎ দপ্তরের বজ্রাঘাত!

বিদ্যুৎ বিল বিতর্কে ক্ষুব্ধ ত্রিপুরাবাসী!

ত্রিপুরা বিদ্যুৎ দপ্তরের কার্যক্রম নিয়ে ফের ক্ষোভে ফুঁসছে ত্রিপুরাবাসী। রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তর স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার বহু বছর পেরোলেও রাজধানী আগরতলাতেই এখনও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার ঘটনা বন্ধ হয়নি। সহজেই অনুমেয়, রাজধানীর বাইরের এলাকা গুলির অবস্থার।

বিদ্যুৎ দপ্তর বিল পেমেন্ট এবং ভোক্তাদের অনলাইন অভিযোগ নথিভুক্ত করার জন্য ‘বিদ্যুৎ বন্ধু’ নামে একটি অ্যাপস লঞ্চ করলেও অভিযোগ নথিভুক্ত করার কার্যক্রম বহুদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে।এছাড়াও অভিযোগ জানানোর জন্য চালু করা হয়েছিল ১৯১২ নাম্বার, কিন্তু তাতে ফোন করে সদুত্তর পাওয়া এখন সমুদ্র মন্থন করে অমৃত পাওয়ার মতো কঠিন হয়ে উঠেছে। বর্তমানে এই দপ্তর বিজেপির দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর মাননীয় মন্ত্রী শ্রী রতন লাল নাথের অধীনে রয়েছে। উল্লেখ্য, বিজেপি শাসনের প্রথম পাঁচ বছর তিনি শিক্ষা দপ্তরের দায়িত্বে ছিলেন এবং ঐ দায়িত্বে থাকাকালীন শিক্ষা দপ্তরকে “হরিদ্দার ঘাট”-এর কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে সাধারণের মধ্যে। আর এবার বিদ্যুৎ দপ্তরকে কোন ঘাটের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, সাধারণ মানুষ সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না।

আজ ১লা জুলাই বিদ্যুৎ দপ্তর ত্রিপুরাবাসীকে এক বড়সড় ‘উপহার’ দিয়েছে। সূত্র অনুযায়ী, গত এপ্রিল মাস থেকে রাজ্যে বর্ধিত বিদ্যুৎ বিল কার্যকর করা হয়েছে। কিন্তু আজ থেকে সেই বর্ধিত বিল গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে দেখানো শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ দপ্তরের বিল সেকশন জানিয়েছে, এপ্রিল থেকে পরিশোধিত বিলে পুনরায় বর্ধিত হারে বিল পরিশোধ করতে হবে, এবং আগামী তিন মাসের মধ্যে গত তিন মাসের বর্ধিত বিল মেটাতে হবে।

সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, একবার পরিশোধ করা বিদ্যুৎ বিলের উপর কীভাবে আবার বর্ধিত বিল চাপানো যেতে পারে এবং এর আইনসিদ্ধতাই বা কতটুকু রয়েছে? ত্রিপুরা বিদ্যুৎ দপ্তর একাধিপত্যের সুযোগ নিয়ে সরকারি পরিষেবাকে ব্যবসায় পরিণত করেছে। ত্রিপুরা বিদ্যুৎ দপ্তর সাধারণ মানুষের কাছ থেকে উচ্চ হারে বিল পরিশোধ করেও পরিষেবার নামে শুধু প্রতারণাই করে চলেছেন, গতকাল রাত ১০টা থেকে আগরতলার দুর্জয়নগর এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার অভিযোগ করা হয়েছিল বিদ্যুৎ দপ্তরে, কিন্তু ১৯১২ নম্বরে সারারাত ফোন করার পরও সকাল ৯.৩০ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরে আসেনি। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার কারণে শিশু, রোগী এবং সাধারণ মানুষ এই গরমের মধ্যে অকথ্য ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বলে খবর।

অপরদিকে, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে পাহাড় সমান বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে থাকলেও সেগুলি আদায়ের কোনো সদিচ্ছা নেই বিদ্যুৎ নিগমের। কিন্তু সাধারণ মানুষের একবার পরিশোধ করা বিলের উপর আবার বর্ধিত বিল চাপিয়ে দিয়ে দপ্তর কী প্রমাণ করতে চাইছে, তা সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্য হচ্ছে না। দিনভর বিল পরিশোধ করতে আসা গ্রাহকরা জানান, মাননীয় মন্ত্রী শ্রী নাথ যদিও ত্রিপুরার শিক্ষা দপ্তরকে ডুবিয়ে দিয়ে গেছেন, কিন্তু বিদ্যুৎ দপ্তরকে ঠিকই ভাসিয়ে ছাড়বেন। সাধারণ মানুষের মতে, সরকারি পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা ত্রিপুরা বিদ্যুৎ নিগম তার একচেটিয়া আধিপত্যের সুযোগ নিয়ে এখন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হচ্ছে ক্রমশ।

রাজ্যের সমাজ সচেতন মহলের বক্তব্য অনুযায়ী, বিজেপি শাসনকালে সরকারি কর্মচারী সহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পাক বা না পাক, পরিষেবা শুল্ক এবং মন্ত্রী বাহাদুরদের মাসোয়ারা ঠিকই বৃদ্ধি পাচ্ছে পর্যায়ক্রমে। তবে বর্তমানের এই বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধি, নিম্নমানের পরিষেবা এবং অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিজেপি তাদের জনসমর্থন হারাবে অতি শীঘ্রই, এমনই আশঙ্কা করছেন সমাজের বিশ্লেষক মহল।About Us